Home » কলাম » একজন ইউনুস এবং আওয়ামীলীগ ও তার সরকার প্রসঙ্গে-

একজন ইউনুস এবং আওয়ামীলীগ ও তার সরকার প্রসঙ্গে-

একজন ইউনুস  আওয়ামীলীগ এবং তার সরকার প্রসঙ্গে কিছু কথা-

 

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

ডেন মার্কে জন্ম নেওয়া আজকের ব্রিটেনের স্থায়ী বাসিন্দা হিলি আমিন পেশায় একজন শিক্ষক।এর আগে তিনি আকুপাংচার চিকিৎসা সহ অলটারনেটিভ থেরাপি সংক্রান্ত নানা বিষয়েও প্রাতিষ্টানিক পড়া-শুনা ও ডিগ্রী নিয়েছেন,১৯৯০ সালে এই ভদ্র মহিলা বিয়ে করেন ব্রিটেনে বসবাসরত সৌদী ধনকুবেরকে,যিনি পেশায় একজন আকুপাংচারিষ্ট, ঐ ধনকুবেরের ক্লিনিকে কাজ করার সময় হিলির সাথে ভদ্র লোকের প্রেম এবং তার পর বিয়ে,বিয়ে পর ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে দুজনের বসবাস, সেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত ইংলিশ স্কুলে এক শিক্ষকতার সাথে নিজেকে জড়ানো এবং তার পর তাদের বিয়ের নানান ঘটনা, চার ছেলে বাবা কর্তৃক কিডন্যাপ হওয়া এবং কিডন্যাপের পর ব্রিটেনে ফিরে এসে নানান এজেন্সীর সহায়তা নিয়েও সৌদীতে অবস্থানরত স্বামীর কোন সন্ধান করতে না পারা, অনেক ঝক্কি-ঝামেলার পর যখন খোজ পাওয়া গেলো, তখন সৌদী কর্তৃপক্ষের অনমনীয়তা ও কঠোর নিরাপত্তামূলক আইন ভেদ করে কি করে তিনি অবশেষে তার ছেলেদের সন্ধান পেলেন ও ব্রিটেনে কি করে নিয়ে এলেন, সেই সব নানান কষ্টের ও লোমহর্ষক ঘটনার সুন্দর এক বিশ্লেষণ করেছেন, তার রচিত রি-ইউনাইটেড ইন দ্য ডেজার্ট বইতে।বইটি ব্রিটিশ লাইব্রেরী পাবলিকেশন্স ডাটা অনুমোদিত এবং জনপ্রিয় টিভি আইটিভির সাবেক নিউজ এডিটর ডেভিড মেইকলি বইটি প্রকাশে তাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করেছেন।এই বইটি এবং এর গল্পের ছোট্র ছেলেদের মায়ের কাছ থেকে গোপণে অপহরণ করে মায়ের বুক খালি করার ঘৃন্য এক নাটকের চড়াই উৎরাই এর কথা এই কারণে বললাম যে, গ্রামীণ ব্যাংক এবং ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস কে নিয়ে বর্তমান সরকারের ঘৃন্য নেতিবাচক খেলা এবং তার ভাড়াটে বুদ্ধ্বিজীবীদের তাতে আগ বাড়িয়ে নানা ঘটনা ও কাহিনীর প্রপাগান্ডা উল্লেখ করে বাজার মাতিয়ে রাখার অবস্থা দেখে আমার কেবল হিলি আমীনের জীবনে ঘটে যাওয়া ঐ গুম-অপহরণের শ্বাস-রুদ্ধ্বকর ঘটনাসমূহ এবং তৎপরবর্তী তার জীবনে কঠিণ সময় পার করার অবস্থার কথাই মনে হচ্ছে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী, ধনকুবের, এবং সমগ্র ক্ষমতা,প্রশাসন এর হর্তা-কর্তা, তার বিপরীতে ভিকটিম হিসেবে একজন অসহায় মা, সাধারণ এক স্কুল শিক্ষক, যার সাথে কখনো কোন প্রশাসন সহয়ক হিসেবে হাজির হয়নি, এমনকি তার দীর্ঘ এই ব্যাক্তিগত ব্যাটলের সঙ্গী কেবলমাত্র একক উদ্যোগে নানা চ্যারিটিমুলক কাজের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে সৌদী ভ্রমণ এর খরচ এর টাকা সংগ্রহ সেখানে গমণ করে কঠিণ অবস্থার মুখোমুখী হয়ে যৎসামান্য আইনের সহায়তায় সফল হওয়ার চিত্র ছাড়া আর কোন সঙ্গী সাথী ছিলোনা।বাংলাদেশ নামক এই গরীব দেশটিকে বিশ্বসভায় যিনি এতো সম্মানিত করলেন, যে বাংলাদেশ সব সময় কেবলমাত্র বন্যা, সাইক্লোন,টর্ণেডো, সিডর এর মতো ভয়াবহ অবস্থা হলে বিশ্ব সভায় শিরোনাম হওয়ার খ্যাতি, সেই বাংলাদেশকে একজন ইউনুস তার নিরলস পরিশ্রম, মেধা, আর কর্মগুণ দিয়ে সারা বিশ্বে এক অসম্ভব দামে উন্নীত করে অনেকের ঈর্ষার কারণ করে তুললেন, সেই বাংলাদেশ এবং তার সরকারের ক্ষমতাসীন গোষ্টী বিনা উস্কানী ও অযথা হয়রানী ও হেনস্থা করার জন্য যেন উঠে-পড়ে লেগে গেছে, অবস্থা দৃষ্টেতো তাই মনে হয়।শুধু কি তাই, খোদ সরকার প্রধান লন্ডন মিশনে প্রবাসী বয়োবৃদ্ধ্ব কলামিষ্ট এর সাথে হোটেলে গোপণ শলা-পরামর্শ করে ইউনুস খেদাও মিশনে বেশ আট-সাট ঘেটেই মাঠে নেমেছেন দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারিনি।ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, একসময় এই প্রবাসী সাংবাদিকই স্বৈর শাসক বলে খ্যাত এরশাদেরও পক্ষে কলম ধরেছিলেন, জনতার প্রবল বাধ ভাঙ্গা স্রোতের কাছে তিনি পরাভূত হয়ে আবার আওয়ামীলীগের বুদ্ধ্বিজীবির কাতারে চলে গিয়েছিলেন।

যুক্তির এবং পাল্টা তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম, সরকারের ভাষ্য মতে, ইউনুস মার্কিন মুল্লুকে নালিশ করেছেন।সস্তা প্রচারণার স্বার্থে আমিও সরকারের সাথে একমত হয়ে গেলাম। কিন্ত আমাকে এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা, একজন মা তার ভুমিষ্ট সন্তানকে যখন অনেক কষ্টে আর পরিশ্রমে একটু হ্রষ্ট-পুষ্ট করে বড় করে, তখন হঠাৎ করে অন্য একজন এসে চাচা,মামা,খালা পরিচয়ে সেই সন্তানকে নিয়ে টানা-হেচড়া করলে মা হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই তার সন্তানের জীবন বিপন্ন হওয়ার বিষয়ে উদ্ভিগ্ন না হয়ে পারেননা।এর পরেও যখন মা দেখেন তার সন্তানের জীবন মারাত্মক ভাবে বিপন্ন, সেই মা অবশ্যই সন্তানকে রক্ষা করার জন্য তার জীবন বাজী রেখে সব কিছুই করবেন।ইউনুস এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কিছু করেছেন বলে মনে হয়না, যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, আওয়ামীলীগ এবং ঐ প্রবাসী ও তাদের ভাড়াটিয়া বুদ্ধ্বিজীবিরা ইউনুসের দেশ প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।তাদের জ্ঞাতার্থে এটুকুই বলতে চাই, দেশ প্রেম কী এতো টুনকোজিনিষ, যে কাচের আঘাতেই ভেঙ্গে পড়ে? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ্বের সময় ইউনুস ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনিস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, সেই সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ্বের সময় বিশ্ব জনমত গঠণে বলিষ্ট ভুমিকা রাখেন, যার স্বাক্ষী আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।চাইলেই অনায়াসে মার্কিন মুল্লুকে লোভনীয় ডলারের চাকরীতে আরাম আয়েশে জীবন অতিবাহিত করতে পারতেন,যেমন করে আজকের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী থেকে সরকারের অনেক হর্তা-কর্তারা করেছিলেন, কিন্ত ইউনুস তা না করে দেশের টানে ফিরে এসে যোগ দেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।১৯৭৪ দূর্ভিক্ষ ইউনুসের চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক প্রভাবের ফলেই আজকের এই গ্রামীণ ব্যাংক।আর এই গ্রামীন ব্যাংক দাড় করাতে গিয়ে এই লোকটি তার জীবনের সকল মেধা আর শ্রম অকাতরেঢেলে দিয়ে সারা বিশ্বে পাগলের মতো ছুটে বেড়িয়ে অনেক ডোনার আর দাতা সংগ্রহ করে যুৎসই অর্গেনাইজেশন হিসেবে যখন গ্রামীণকে দাড় করিয়ে দিলো, তখন মাসী হয়ে আপনি লুট-পাট করার হীন মানসিকতা থেকেই নানা তথাকথিত অনিয়ম আর প্রচলিত আইনের মার-প্যাচ এর দোহাই দিয়ে একে কি করে করায়ত্ম করা যায়, তার ফন্দি ফিকিরে ব্যাতিব্যাস্ত।গ্রামীণ ব্যাংক চলে তার নিজস্ব অধ্যাদেশ এবং ধারা বলে, যা ১৯৮৩ সালে এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় এসে, আজকের অর্থমন্ত্রী মুহিতের পরামর্শে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি করে এর আইনের কাঠামো স্বাধীন করে গঠণ করেছিলেন, তার পরেও রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের খবরদারী।অথচ আজ আবার সেই সব পূর্ণাঙ্গ আইন থাকা স্বত্তেও শুধু মাত্র ইউনুসকে অপসারিত ও হেনস্থা এবং অন্যান্য সরকারী ব্যাংকের মতো গ্রামীণের মূলধনকে লুট-পাট করার জন্যই নতুন করে আইন পরিবর্তন তথা এমডি নিয়োগে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো করার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্টা এবং এর কার্যক্রম ও কাঠামো অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের গঠণ প্রণালী ও কাজের সাথে এক নয়, তাহলে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে এর তুলনা কেন করা হচ্ছে।

আর একজন ইউনুসের বিদেশী টাকার উৎস খোজার মানে কী? সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রী, সচিব, বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি,এম,পি কি ধোয়া তুলসী পাতা? খোজ নেওয়ার জন্য বেশী দূর যাওয়ার দরকার নেই, সরকার প্রধানের ঘর থেকেই চোখ বুলানো শুরু করলেই প্রত্যেকেরই বিদেশের মাটিতে একাধিক নামে বেনামে একাউন্ট ও সম্পদ রয়েছে।ইউনুসের বিদেশী টাকার উৎস খোজার আগে দয়া করে নিজেদের স্বচ্ছতার জবাব দিন। ইউনুসতো দেশের জন্য এতো কিছু করে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে টাকা থাকতেই পারে, কারণ এতো বড় মাপের একজন কনসালট্যান্ট ও গবেষকের থাকাটাই স্বাভাবিক।কিন্ত আপনি সরকার প্রধান,আপনি একজন মন্ত্রী, দলের নেতা, এম,পি, দেশের জন্য কোন বড় কাজটা করেছেন, যে দেশের সম্পদ বাইরে নিয়ে পাহাড় গড়ে তুলেছেন, জবাব দিবেন কী? প্রবাসী বয়োবৃদ্ধ্ব ঐ কলামিষ্ট প্রবাসে থেকে দেশের জন্য কি এমন সম্মান ও সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছেন যে প্রবাসে থেকেও তিনি সরকারের ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছেন সমানভাবে, যেমনভাবে একজন মন্ত্রী প্রটৌকল পেয়ে থাকেন।আপনি কি বলবেন এটা কোন আইনে বৈধ? ইউনুসের বিচার ও হেনস্থা ও দূর্ণীতি খোজার আগে নিজেদের স্বচ্ছতার প্রমাণ দেওয়া কি যুক্তি সঙ্গত নয়?

সরকার প্রধান হিসেবে শুধু নয়, দিনের পর দিন আপনি অগণতান্ত্রিক ও দলীয় সেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রীর পদ ও দলীয় পদ-পদবীর একচ্ছত্র মালিক ও ক্ষমতার সাধ ভোগ করবেন, দলীয় তহবিলের কোনরুপ স্বচ্ছ হিসাব ছাড়া ভোগ করবেন, আবার ইউনুসের গড়া প্রতিষ্টান থেকে জোর করে ইউনুসকে নামিয়ে দিবেন, তারপর আবার তাকে হেনস্থা করার জন্য উঠে-পড়ে লেগে যাবেন।আপনি প্রশাসনের একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যাবহার করে, প্রশাসনের সব কটা যন্ত্রকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যাবহার করে একজন ভদ্র, শিক্ষিত, স্বজ্জন, জাতির নিবেদিত প্রাণ, জাতির শ্রেষ্ট এক সন্তান-যে কিনা নিতান্তই কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে, যার আশে-পাশে নেই কোন দলীয় ক্যাডার,পুলিশী প্রটেকশন, নেই কোন মাসলম্যান, অথচ আপনার আছে এই সব কিছুই,তার উপর রয়েছে নানান বাহিনী ও ভাড়াটে একদল তোষামোদকারী,যারা আপনার ক্ষমতা থেকে নামার সাথে সাথেই হাওয়ায় মিশে যাবে,তাদের নিয়ে আপনি ইউনুস এর বিরুদ্ধ্বে এক প্রকার যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন, এটা কি কোন সভ্য সমাজে ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলে? আগে নিজে দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গণতান্ত্রিক ভাবে দলীয় নের্তৃত্ত্ব প্রতিষ্টার পথ করে দিন, দুই দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশের উন্নতিতো অনেক করেছেন, এবার অন্যদের সৃজনশীল নেতাদের দেশের কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিন, তার পর ইউনুসের ইস্তফার কথা যদি বলতেন, বাংলাদেশ আপনার পাশে থাকতো, বিশ্ব সভায় আপনি হতেন সম্মানিত।নিজে থাকবেন বার বার, আর ইউনুস থাকলেই দূষ?এটা কী গণতন্ত্র?এটাই কী সুশাসনের লক্ষণ?

০২)

ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস যখন গ্রামীণ ব্যাংকের স্বপ্ন দেখেন কিংবা এই রকম কোন কাজ করার কথা ভাবেন, তখন আমাদের প্রচলিত কোন ব্যাংক, প্রশাসন, কোন শিল্পপতি, আওয়ামীলীগের কোন নেতা-কর্মী, আর আজকের আওয়ামী ঘরানার কোন বুদ্ধ্বিজীবি, এমনকি প্রবাসী কোন জাদরেল সাংবাদিক কলামিষ্ট কেউই বলতে পারবেননা ঐ সময় একজন নিরীহ, অসহায়, দরিদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ একজন শিক্ষককে কোনভাবে সহায়তা করেছেন, কোন ধরনের মানসিক সাপোর্ট করেছেন, কোন প্রশাসনিক বা দলীয় আনুকুল্য পাওয়ার জন্য একটূখানি টেলিফোনে সুপারিশ করেছেন,কোন পত্রিকায় কলাম লিখে ইউনুসের কাজে সহায়তা করেছেন- এই রকম কোন ধরনের সাহায্য,সহযোগীতার কথা কেউ ঘুনাক্ষরেও বলতে পারবেননা।সেদিনকার কঠিণ বাস্তবতার সময় একজন সাধারণ শিক্ষক তার নিজস্ব মেধা-মনন-চিন্তা-চেতনা, ঐকান্তিক ইচ্ছা,লক্ষ্যে পৌছার দৃঢ়তা, একাগ্রতা,আর পকেটের সম্বল ১০০ টাকাই ছিলো, তাবত পৃথিবী ঘুরে এরকম একটি সাকসেসফুল তাও আবার সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবার মতো অসাধারণ এক ক্ষমতা ও সঞ্জীবনী শক্তির আধার- হাজারো চেষ্টা করে আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস যখন গ্রামীণ ব্যাংক অনেক কাঠ-ঘর পুড়িয়ে দাড় করান, তখনতো আওয়ামীলীগ এবং তার নেত্রী শেখ হাসিনা ও প্রবাসী কলামিষ্ট  তেমনভাবে তাকে সাহায্য করেছেন, শুনিনি, ইউনুসের স্বপ্ন গ্রামীণ ব্যাংক যখন আথুর ঘরে তখনো শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের বড় দল, প্রবাসী কলামিষ্ট বুদ্ধ্বিজীবি জনপ্রিয়তার আসনে সমানভাবে তুঙ্গে।ইউনুস যখন তার কর্মক্ষমতা আর মেধা দিয়ে একের পর এক গ্রামীণ ব্যাংকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, গ্রামীণ জনপদে অভূত পূর্ব সাড়া জাগাতে সক্ষম হচ্ছিলেন, শুধু কি তাই, বিশ্ব পরিমন্ডলে যখন একের পর নিজের দৃপ্ত পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনওতো আওয়ামীলীগ প্রধান বড় দল এবং প্রবাসী ভাড়াটিয়া বুদ্ধ্বিজীবি কলামের জগতে খ্যাতিতে শীর্ষে।বিগত ২০ বৎসরের অধিক সময় ধরে ডঃ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তখনতো ইউনুসের বিরুদ্ধ্বে কিছু বলার মতো সময় আওয়ামীলীগ নেত্রীর ছিলোনা, বিগত ৯৬ সরকারের সময়ও ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক খারাপ ছিলোনা,নোবেল পাওয়ার পরে কি এমন ঘটনা ঘটলো জাতির সকল কাজ-কর্ম পেছনে ফেলে একেবারে গোটা রাষ্ট্র যন্ত্রকে নিয়ে একজন মাত্র লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরী করে একের পর আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ করে চলেছেন।এই কী আমাদের গণতান্ত্রিক সুশাসনের লক্ষণ, রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধ্বে এই ভাবে কী কেউ এর আগে ব্যাবহার করেছেন?।অলিম্পিকের ক্রীড়া অনুষ্টানে এসে প্রবাসী ঐ কলামিষ্ট বুদ্ধ্বিজীবির সাথে একান্তে ৪৫ মিনিট হোটেল স্যুটে ইউনুস বিরুধী প্রপাগান্ডা চালানোর সফল পরিকল্পণার অংশ হিসেবেই শেখ হাসিনার স্বদেশ যাত্রার ২/৩ দিনের মাথায় প্রবাসী কলামিষ্টের নানা গল্পের ও থিওরীর আদলে একজন মাত্র ব্যাক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কর্তৃক অসম যুদ্ধ্ব শুরুর সরাসরি ইঙ্গিত কোন অবস্থাতেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্ত্বশীল ও নিরাপত্তামূলক আচরণ প্রদানের প্রমাণ মিলেনা।ঐ প্রবাসী কলামিষ্টের এই বয়সে যেখানে জাতির বিবেক হিসেবে আভির্ভুত হওয়ার কথা, সেখানে তিনি দলীয় আনুগত্য এমনভাবে প্রদর্শন করে চলেছেন যে, একজন জ্ঞানী-গুনী,কর্মঠপ্রাণ চঞ্চল সৃজনশীল ইউনুসকে অসীম ক্ষমতাধর অস্রে-সশ্রে সজ্জিত ব্যাক্তি বানানোর উদ্ভট এক পরিকল্পণা নিয়ে মাঠে সক্রিয় দেখে বড় লজ্জা হয়, এই কী আমাদের অগ্রজদের অবস্থা? তাহলে কাদের কাছ থেকে আমরা শেখবো?সারা দেশে এতো সমস্যা থাকতে, বিদ্যুৎ অসহনীয় অবস্থা, রাস্তা ঘাটের ঝড়া-ঝীর্ণ অবস্থা, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের তান্ডব ও প্রকাশ্যে অস্র নিয়ে হামলা, এই সব কিছুই ঐ প্রবীণের দৃষ্টিতে খারাপ মনে হয়না, ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে উদ্ভেগই কেবল তাকে মনোকষ্ট দিয়ে চলে।যুগের পর যুগ ধরে  একজন শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের দলীয় প্রধান হিসেবে, তিনি যা বলবেন তাই দলীয় সব এম,পি, নেতা-কর্মীকে পুতুলের মতো মেনে চলতে হবে,তিনিই দলের সকল পদ-পদবী বন্টন করবেন, তার সামনে-পেছনে কেউ বিরুধীতা করে দলে থাকতে পারবেনা, সুরঞ্জিত বাবুর হাতে নাতে টাকা কেলেংকারীর ঘটনা, শাওন এম,পির পিস্তলের গুলিতে দলীয় কর্মী নিহত হওয়া, অথচ শাওন নির্দোষ, নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যাকান্ড, দলীয় পরিচয় থাকায় এম,পি,মন্ত্রী ভাই আত্মীয় সবাই খালাস, বিরুধী এম,পি ইলিয়াস গুম, এই সবের কিছুই আওয়ামীলীগ প্রধান এবং ঐ প্রবীণ কলামিষ্টের দৃষ্টিতে খারাপ মনে হয়না, যতটা খারাপ মনে হয় ইউনুসের গড়া প্রতিষ্টানে ইউনুসের এম,ডি থাকাটাই খারাপ মনে হয়।

০৩)

 

বৃহৎ শক্তি আমেরিকার নাক গলানোর কথা বলে ইউনুসের আমেরিকান লবি ব্যাবহারের সুন্দর গল্প আওয়ামীলিগ এবং তার বুদ্ধ্বিজীবিরা ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছেন।এক্ষেত্রে তারা বেশ সফল বলতেই হবে।ইউনুস কী এতোই ক্ষমতাশালী যে আমেরিকার কোন কাম-কাজ নেই, ইউনুসের মতো এক ব্যাক্তির পেছনে তার সব স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পেছনে লেগে যাবে। ভন্ডামীর একটা সীমা থাকা দরকার।আমেরিকা তার স্বার্থ ছাড়া এক পাও নড়েনা, আর সাধারণত ক্ষমতাসীনদের সাথে আমেরিকার দহরম এটা অপেনসিক্রেট, আমেরিকা তার ঐ নীতি থেকে এখনো সরে আসেনি, আওয়ামীলীগ আমেরিকার জন্য এমন কোন হুমকী নয় যে, আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধ্বে চলে যাবে, আমেরিকার পারপাস ভারতের আশা আকাঙ্ক্ষা সবই এখন একই সূত্রে গাথা,আওয়ামীলীগকেইতো আমেরিকার এখন বেশী দরকার, ইউনুসের কাছেতো আমেরিকার কোন ডিমান্ড নেই,আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ দেখার মতো ইউনুস এমন কেউ নন, যতটুকু আওয়ামীলীগের দ্বারা হবে, সুতরাং বানোয়াট কল্প কাহিনী ছড়িয়ে কোন লাভ নেই।আমেরিকার সাম্প্রতিক আফগান,ইরাক,লিবিয়া ইন্টারভেনশন কী বলে ইউনুস কে দিয়ে তাদের পারপাস সার্ভ হবে, যতটূকু দল হিসেবে আওয়ামীলীগের দ্বারা সম্ভব?আপনি পান থেকে চুন খসলেই রাষ্ট্রদূতের দরবারে নালিশ করতে আত্মসম্মানে লাগেনা, আর একজন মাত্র ব্যাক্তিকে সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে গলা টিপে ধরে থাকবেন, সে তার বাচার পথ খোজবেনা, তা কি করে হয়?অবশ্যই ইউনুস যদি দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন নালিশ বা ধর্ণা দেওয়ার জন্য মার্কিন বা ইউরোলবী কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন, সেটা নিন্দনীয়, কিন্ত তার আগে দেখতে হবে, মার্কিন কিংবা ইউরোলবী একজন ব্যাক্তির কথায় হুট করে মাঠে কেন নামবে? একটি মাত্র প্রতিষ্টান, যা বাংলাদেশীদের, সেই প্রতিষ্টানের জন্য মার্কিন কিংবা ইউরোলবীর কী এমন দায় পড়লো যে, গণতান্ত্রিক সরকারের আড়ালে যে দলটি ক্ষমতায় অধিষ্টিত তাকে বাদ দিয়ে একজন ব্যাক্তির পেছনে পড়ে থাকার? মার্কিনীরা কিংবা ইউরোপীয়রা আমাদের মতো এতো বোকা কিংবা হুজোগী নয়,তাদের কাছে এই সব ব্যাক্তি ক্যারিশমা একেবারে তুচ্ছ। তাছাড়া, আজকের বিশ্বের বাংলাদেশের অতি কাছের শক্তিশালী বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে চেতিয়ে বা ভারতের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে কোন দেশই এখানে কিছু একটা করার সাহস যেমন রাখেনা, আর যদি করে তবে এই রকম উদ্ভট ডিপ্লোমেসী বুমেরাং হতে বাধ্য।সারা বিশ্ব এখন জানে, আওয়ামীলীগের ভারত লবী খুবই শক্তিশালী এবং ভারতের প্রথম পছন্দের দল আওয়ামীলীগ এবং তার নেত্রী।

এমনিতেই একজন ব্যাক্তিকে নানাভাবে হেনস্থা ও টানা-হেচড়া করেও আপনাদের যখন শান্তি মিলেনাই, এখন আবার খোদ মার্কিন মুল্লুককে টেনে এনে কী ফাদ পাততে চান?

০৪)

আরেকজন প্রথিত যশা সাংবাদিকতো নিজের পত্রিকার অবস্থান ধরে রাখার জন্য সরকারের অনুকুল্য পাওয়ার লক্ষ্যে ইউনুসের কাছে ১২/১৪ টি প্রশ্ন করে বসে আছেন।সারা দেশে এতো অপকর্ম ঘটে চলছে, তখন উনার মনে এতো প্রশ্ন জাগেনা, প্রশ্ন শুধু ইউনুসকে নিয়ে।নোবেল পাওয়ার পর ইউনুস যদি উনাকে একক সাক্ষাতকার দিতেন, আর আওয়ামীলীগ সরকার দলগত ভাবে যদি ইউনুস বিরোধী না হতো, তাহলে হলফ করে বলতে পারি, এককালীন আদর্শের লড়াকু ঐ সাংবাদিক ভাই কোন অবস্থাতেই ইউনুসের বিরুদ্ধে যাওয়াতো দূরে থাকুক, পারলে একধাপ এগিয়ে এসে ইউনুসের পাশে এসে দাড়াতেন।আমরা বড় অসহিষ্ণু জাতি, কোন ভাবে অন্যের নাম-ধাম সহ্য করতে পারিনা, তাবেদারী করতে পারলেই এখানে লোকে সবাই ভালো মনে করে,খালি যেন-তেন ভাবেই হউক আমি এবং এই আমিত্ব জাহির করার জন্য হেন কোন কাজ নেই যে আমরা করতে পারিনাবিখ্যাত লেখক ইয়ান বুরুমা লেখা পড়া করেছেন হল্যান্ড এবং জাপানে, বহু বছর তিনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন, দেখেছেন এখানকার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন, মিশেছেন জনগণের সাথে নিবিড় ভাবে, তার বেশ কিছু জনপ্রিয় গ্রন্থ আছে, তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো, গডস ডাষ্ট, এ জাপানীজ মীরর উল্লেখযোগ্য।২০০১ এ নিউইয়র্ক থেকে তার আরো এক  জনপ্রিয় নন-ফিকশন গ্রন্থ বাড ইলিমেন্টস নামে প্রকাশ হয়, যা একইসাথে ব্রিটেন থেকেও পাবলিশ করা হয়।এই গ্রন্থে তিনি চায়নিজ সরকারের দমন-পীড়ন, তিব্বতের দালালাইলামার সংগ্রাম, তিয়েনমান স্কোয়ারের ছাত্র বিক্ষোভ, ইউএস,হংকং,চায়না সম্পর্ক অতি সুন্দরভাবে উপস্থাপণ করেছেন।এই বাড ইলিমেন্টস- এর শুরুতে ইয়ান বুরুমা সাইমন লেইসের ট্রান্সলেশনে দ্য এনালেক্টস অফ কনফিউসিয়াস কে এই ভাবে উপস্থাপণ করেছেন, পাঠকের সুবিধার্থে এখানে তা হুবুহু তুলে ধরা হলো-

…”Is there one single maxim that could ruin country?”

জবাবে কনফিউসিয়াস বলছে, Mere words could not achieve this. There is a saying , however: The only pleasure of being a prince is never having to suffer contradiction”, if you are right and no one contradicts you, that’s fine, but if you are wrong and no one contradicts you- is this not a case of One single maxim that could ruin a country?”

 

নিঃসন্দেহে ইউনুস তা নন, এটা বলা যায়, তাহলে কেন এতো বিরোধীতা?

জনগণের পাহাড় সমান সমস্যা সমাধানে নাকাল সরকার কী জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরানোর নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে? মজার ব্যাপার হলো, ইয়ান বুরোমা তার গ্রন্থের শেষে এসে বলতেছেন, পেইজ নম্বর ৩৪১, there was a sign on the front, I tried to read what it said, something about the millennium, a millennium monument, and then I could just make out the year 2000, except that the figure 2 had already broken in half. আরেকটূ এগিয়ে তিনি বলছেন, but by now the yellow cloud obliterated everything, even the year 2000 had disappeared from view. আওয়ামীলীগ এবং তার সরকার ও ভাড়াটিয়া বুদ্ধিজীবিরা এমনিতেই অনেক আগেই ইউনুসকে নিয়ে অনেক হেনস্থা করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বলা যায় একরকম জবরদস্তিমূলক  অবস্থার পরিবেশ তৈরী করে নামিয়ে দিয়ে এখন আবার গ্রামীণের রেখা থেকে ইউনুসকে একেবারে ওয়াইপ আউট করার হীন এক পরিকল্পণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে জাতি হিসেবে আমরা আতংকিত হই, কারণ যে জাতি তার শ্রেষ্ট সন্তান ও জ্ঞানী-গুণীর কদর করতে জানেনা, অহেতুক কাদা ছুড়াছুড়ি করে, সে জাতির কপালে কলংকের কালো টিপ কখনো মুছা হয়না।আওয়ামীলীগ এবং তার সরকার ও সহযোগী যোদ্ধারা কী একটু ভেবে দেখবেন। কনফিকশন, কনফিউশন আর কনফিউসিয়াস দিয়ে আর তৈরী করে দেশ শাসন যেমন করা যায়না, সুশাসন আশা করা যায়না, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও উন্নতি আশা সুদূঢ় পরাহত থাকে।

Salim932@googlemail.com

8th August 2012.UK.

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!