সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,ইউ,কে থেকে-
গত ১৩-ই জুন ২০১২, হোম সেক্রেটারী তেরেসা মে,ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নন-ইউরোপীয়নদের ইকোনমিক জোনের বাইরের লোকদের জন্য নতুন ফ্যামিলি ভিসা সংক্রান্ত বিবৃতিতে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ব্যাপক এই কড়াকড়ি আইনের ঘোষণা দেন,বিশেষ করে আর্টিক্যাল-৮,ইউরোপীয়ন কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস সংক্রান্ত রুলসের কথা ব্রিটিশ আদালতের বিচারপতিদের খানিকটা পাশ কেটে যাওয়ার পরামর্শ সংক্রান্ত বিধিমালা বা সংকেত,এই বিষয়ে ইমিগ্রেশন এর যে সুযোগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের লোকজন ভোগ করতেন,বলা যায় সেটা অনেকটাই রহিত হয়ে গেলো।
আজ ১৩ জুন ২০১২ পার্লামেন্ট ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যে বিধি-মালা আপডেট করলো তা আগামী ০৯ জুলাই ২০১২ সাল থেকে কার্যকর হবে।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ০৯ জুলাই থেকে নতুন আইনে নয়া আবেদন করতে হবে।
সংশোধিত নতুন আইনে যা বলা হয়েছে বা যে সব নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে,সেগুলো হলো-
০১)বার্ষিক আয় সংক্রান্ত–
নতুন পারিবারিক ভিসায় স্বামী কিংবা স্ত্রী ব্রিটেনে আনার ক্ষেত্রে এখন থেকে বার্ষিক আয় লাগবে ১৮ হাজার ৬ শত ষ্টার্লিং বা পাউন্ড।এক্ষেত্রে একজন সন্তান থাকলে স্পনসরকে দেখাতে হবে ২২ হাজার ৪ শত পাউন্ড বার্ষিক আয়,আর আতিরিক্ত অধিক সন্তানের জন্য ২ হাজার ৪ শত পাউন্ড করে প্রতিটি সন্তানের জন্য আয় বা ইনকাম স্পনসরকে প্রদর্শন করতে হবে।
আগের নিয়মে যেখানে স্বামী বা স্ত্রীকে মাত্র ১৩ হাজারের কিছু উপরে বার্ষিক ইনকাম দেখালেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হতো,দেখা যাচ্ছে বর্তমান নিয়মে তা রহিত করে ইনকাম প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিবারের জন্য অনেকটাই কঠিণ করা হয়েছে।
০২)সময়সীমা–
প্রবেশন পিরিয়ডে বলা হয়েছে,বর্তমান আইনে একজন স্বামী কিংবা স্ত্রী তথা পরিবারের লোকজনে ব্রিটেন প্রবেশের পর লিভ টু রিমেইন ইন্ডিফেনিট ৫ বছর করা হয়েছে,আগে যেখানে ছিলো ২ বছর,তা রহিত করে এই নতুন ৫ বছরের বিধান করা হয়েছে।
০৩)৪ বছরের বিধান বাতিল–
আগে কোন দম্পতি ব্রিটেনের বাইরে একত্রে ৪ বছর বসবাস করলে ব্রিটেনে ইমিডিয়েট সেটেলম্যান্ট হওয়ার সুযোগ পেতেন,বর্তমান আইনে সেটা একেবারেই রহিত বা বাতিল করা হয়েছে।
০৪)নতুন বি-১ লেভেল পাশ করা সংক্রান্ত-
স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে বসবাসের জন্য প্রত্যেক নন-ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের অক্টোবর-২০১৩ থেকে চলে আসা লাইফ ইন দ্য ইউ কে ইংরেজী টেষ্টের পাশাপাশি নতুন বি-১ লেবেল তথা কমন ইউরোপীয়ান ফ্রেইম ওয়ার্ক অব রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজ,পাশ করতে হবে,যদি না তাদের ক্ষেত্রে কোন ব্যাতিক্রম এপ্লাইয়ের যোগ্য না হোন।
০৫)বয়স্কদের ক্ষেত্রে-
এখন থেকে বৃদ্ধ্ব-বৃদ্ধা বাবা-মা বা পারিবারিক বয়োবৃদ্ধ লোকদের বৃটেনে এনে বসবাসের ক্ষেত্রে স্পন্সরকে প্রমাণ করতে হবে যে তার কাছ থেকে সেবা গ্রহণের জন্য তার বয়স্ক বা-মা তার উপর নির্ভরশীল হয়ে আছেন,যদিনা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন,তবে ভিসা পাবেননা বা ব্রিটেনে আনতে পারবেননা।এছাড়া বাবা-মা কে আনার জন্য ব্রিটেনের বাইরে থেকে আবেদন করতে হবে,অর্থাৎ ব্রিটেন থেকে ভিজিট ভিসায় এনে সুইচ করার পুরনো বিধান বাতিল করা হয়েছে।
এপিল প্রথা বাতিল-
নতুন আইনে পারিবারিক ভিসা আবেদন প্রত্যাখাত হলে এপিল করার যে সুযোগ দেওয়া হতো,বর্তমান আইনে তা একেবারে বাতিল করা হয়েছে।এক্ষেত্রে আবেদন কারিকে নতুনকরে আবেদন করতে হবে।এটা নিয়ে আগ থেকেই অনেক বিতর্ক চলে আসছিলো,১১-ই মে ২০১২ সাবজেক্ট টু দ্য পাসেজ অব ক্রাইম এন্ড কোর্ট বিল- যা পাবলিশড করে ,তাতেও অনেক রেস্ট্রিকশন ছিলো,কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই এপিল সিষ্টেম বাতিল করা হলো।
মজার ব্যাপার হলো মানবাধিকার সংগঠনগুলো ছাড়া সরকারের শরিক দল লিবারেল বা বিরুধী লেবার এই বিলের ব্যাপারে তেমন জোরালো কোন আপত্তি করেনাই,বরং লেবার নেতা মিলিব্যান্ড আর্টিক্যাল-৮ এর ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনাকে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন ( ১৩ জুন ২০১২,বিবিসি,কো,ইউ,কে)।
বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে বাংলাদেশ,পাকিস্তান,ভারত এর পারিবারগুলো বেশী এফেকটেড হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।সর্বাধিক এফেকটেড হবে বাংলাদেশী পরিবার বলে ইমিগ্রেশন এক্সপার্টরা অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।
এব্যাপের আরো বিস্তারিত জানার জন্য লগ ইন করুন-www.ukba.homeoffice.gov.uk/sitecontent/newsarticles/2012.june/13-family-migration.
অথবা ইমিগ্রেশন রোলস HC 194 and ECHR সংক্রান্ত নির্দেশিকা দেখতে পারেন,যেখানে সবিস্তারের বর্ণনা করা আছে।
16th June 2012.