সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-যুক্তরাজ্য থেকে,
মাহফুজুর রহমান,আজকের জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান,ছিলেন গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী,জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ইভা রহমানের স্বামী।নিজ চ্যানেল হওয়ার সুবাধে বিভিন্ন অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হয়ে নসিহত করার কসরত এটিএন এর বদৌলতে দেখার সৌভাগ্য,দুর্ভাগ্য দুটোই হয়।শরীরের অঙ্গ-ভঙ্গী প্রদর্শন করে ছন্দহীন নীতি বাক্য কষ্টের সাথে যখন আওড়াতে দেখি তখন বড় কষ্ট হয়,তারপরেও বেচারার ভাবভঙ্গী হজম করে নিতে হয়,কারণ তিনিতো আবার চ্যানেল এর মালিক,হর্তা-কর্তা।
মাঝে মধ্যে আবার ধর্মীয় অনুষ্টানেও বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান,আল্লাহ পাকই জানেন তিনি যে কত বড় আলেম।তা না হলে কি বড়-বড় হুজুরেরা পর্যন্ত বসে থাকেন তার বাণী-নসিহত শুনার জন্য।
ইদানিং মাহফুজুর রহমান সাহেব নামের আগে ডঃ লিখে থাকেন।কোন বিষয়ে যে উনি কোন থিসিস লিখে বিশ্বের না জানি কোন নামী-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চার,প্রফেসরদের টেক্কা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন,তা কেবল গবেষণারই দাবি রাখে।সমাজে বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এই রকম ডঃ উপাধি বা খেতাব স্ব-প্রণোদিত হয়ে লিখতে বিশ্বের আর কোন সমাজকর্মী,নেতা কে দেখা যায়না,ব্যাতিক্রম কেবল মাহফুজুর রহমান এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
তো এই মাহফুজুর রহমান দেখলেন,এতো টাকা কামালাম,নাম-যশ-খ্যাতি সবই হলো,জনপ্রিয় চ্যানেল এর মালিক হলাম,মন্ত্রী,সচিবরা এতো তোয়াজ করে,নিজেও সরকারি লোকদের তেলমারি,আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় অনেক ব্যাবসা-পাতি পেলাম,তেল মেরে-মেরে আখেরতো অনেক গোছালাম,নামের আগে পিছে অনেক কিছুইতো লাগালাম,শেখ মুজিবকে নিয়ে কিছু ধার করা বুদ্ধ্বিজীবিদের লেখা নিয়ে নিজের নামে চালিয়ে ডকুমেন্টারি বানালাম,হাসিনা-রেহানার কাছাকাছি চলে এলাম, কিন্তু লোকে এখনো আমাকে শিল্পী ইভার স্বামী হিসেবেই বেশী চিনে।সেই দুঃখ মনে পুষে বিলেতে যখন বেড়াতে এলেন,সিলেটীদের আতিথেয়তা নিয়ে বেশ বিদেশী পেগ গিলে আর হুশ ঠিক রাখতে পারেননাই,আর সিলেটীদের নিয়ে অর্বাচিন কথা-বার্তা না বললেতো জাতে উঠা যায়না,তাই আলোচনার কেন্দ্রে থাকার সেই অদম্য নোংরা মানসিকতা থেকে গত সপ্তাহে লন্ডন সফরকালে সিলেটীদের নিয়ে তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে গেলেন।কতো বড় আহাম্মক,আর বড় বেওকুব হলে নিজ দেশের একটি এলাকার লোকদের সম্পর্কে এমন কটূক্তি করতে পারেন,মাহফুজুর রহমান নিজে তার প্রমাণ দিয়ে গেলেন।তার ডঃ এর ডিগ্রীরও প্রমাণ দিয়ে গেলেন খোলাসা ভাবে।বাংলা সাহিত্যের পন্ডিত ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ঐ সব লোকদের উদ্দেশ্যে যথার্থই বলেছিলেন শিক্ষিত মূর্খ্য।
মাহফুজুর রহমান,চ্যানেলের মালিক ঠিকই হয়ে গেছেন,টাকা,খ্যাতি,যশ ঠিকই কামিয়েছেন,কিন্তু ইজ্জত-সম্মান কামাতে পারেননি,না হলে এমন বেওকুব এর মতো ঢালাও মন্তব্য করতেননা।বাংলাদেশের ইতিহাস,ঐতিহ্য,ভূগোল না জানলে, যা হয়,আপনার এমন নোংরা মন্তব্যই তাই বলে দেয়।আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া যে কোন ছেলে-মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে সিলেটের অতীত ইতিহাস,ঐতিহ্য,সভ্যতা,সংস্কৃতি হড়-হড় করে বলে দেবে।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জন্মেরও বহু আগ থেকে এই সিলেটীদের রয়েছে গৌরবজনক অধ্যায়,এর রয়েছে সুবিশাল,সুবিন্যস্ত ঐতিহ্য।সিলেটীদের আতিথেয়তা,ভদ্রতা শুধু দেশে-বিদেশেই সমাদৃত নয়,বাংলা সাহিত্যের আরো এক উজ্জ্বল প্রতিভা,অতি মিষ্টভাষায়, রসালো ভাবে যিনি গল্প-উপন্যাসকে সহজলভ্য করে পাঠক হ্রদয়ে সমাদৃত করে খ্যাতি অর্জন করে আছেন,সেই প্রয়াত সৈয়দ মুজতবা আলী তার সাহিত্য কর্মে সিলেটীদের সেই সব গুণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন,সাহিত্য সচেতন,শিক্ষিত,স্বজ্জন মাত্রই তা জানেন।জানেননা শুধু আপনি।যে জায়গায় বসে মিডিয়ার সাথে থেকে সিলেটীদের ভাষা আর ভদ্রতার জ্ঞান দান করে তাচ্ছিল্য করেছেন,সেখানেও আতিথেয়তা নিয়েছেন এই সিলেটীদের,অথচ সিলেটীদের বুকে ছুরিকাঘাত করতে পিছুপা হননি,ধিক শত ধিক আপনাকে।আপনার এই নোংরা মানসিকতার সমালোচনা ওই সব বোদ্দ্বা লকজন করবেননা,কারণ আপনার চ্যানেলে একটু খানি ছবি প্রদর্শনের লোভ-টোপ তারা ঘিলে ফেলেছেন।তাই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছেন আপনি।
এই সিলেটের মাটিতে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশকে ধন্য করেছেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রী চৈতন্য,দেওয়ান আজরফ,হাসান রাজা,কবি দিলওয়ার,আশহর আলী চৌধুরী,আসদ্দর আলী চৌধুরী,বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানি,রিয়ার এডমিরাল এম এ খান,এ এস এম কিবরিয়া,হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী,ব্রিগেডিয়ার মজুমদার,আবুল মাল আব্দুল মুহিত,সাইফুর রহমান,প্রফেসর ডাঃ মালেক,প্রফেসর শাহলা খাতুন,প্রফেসর রাশেদা কে চৌধুরী,সি এম শফি সামি,আজকের ব্রিটেনের প্রথিত যশা ব্যাবসায়ী ইকবাল আহমেদ এম,বি,ই,এনাম আলী,ব্যারিষ্টার আরশ আলী,সাংসদ রুশনারা আলী,মেয়র লুতফুর রহমান সহ অসংখ্য অগনিত গুনীজন,যাদের খ্যাতি দেশ-বিদেশে সমাদৃত।কৈ এদের কেউ কিংবা তাদের পূর্বপুরুষদেরতো কেউ কখনো বলেনি অভদ্র বা অশিক্ষিত ছিলেন কিংবা এখন ভদ্র হয়ে গেছেন,বরং যুগের পর যুগে থেকেই সেই সব লোকদের ভদ্রতা আর সহজ সাবলিল সুন্দর মাতৃভাষা জ্ঞানের ও চর্চার পারঙ্গমতা অতি উচ্ছতার সাথে প্রশংসিত হয়ে থাকে।সাইফুর রহমান যখন অর্থমন্ত্রী,তখন তার সাক্ষাত,কৃপা লাভের জন্য আপনার সে কি চেষ্টা এবং চ্যানেলকে সহায়তা কি ভুলেই গেছেন?
সাগর-রুণির হত্যাকান্ড নিয়ে অপমানকর মন্তব্য করতেতো ঠোটে লাগার কথা নয়।কারণ চোর কি কখনো বলে যে আমি চুরি করেছি।ছোট্র বাচ্চা মেঘের স্বীকারোক্তি নিয়ে সিডি জব্দের জুজুর ভয় বাংলাদেশে দেখাবেন,যেখানে যে মাল চলে,এখানে এতো হালকা জিনিষ চলেনা।কারণ সিঙ্গাপুরে,আমেরিকায় এক সময় কি কান্ড ঘটিয়েছেন,সেই সব সিডিওতো অনেকের কাছে আছে।এতোদিন যা বলেননি,হঠাৎ করে বিদেশ বিভূইয়ে এসে নিজ প্রতিষ্টানের কর্মরতা সাংবাদিক সম্পর্কে এমন নোংরা মন্তব্য কেন করলেন?ব্যাক্তিগত কৈফিয়তের বদৌলতে সাগর-রুণির ব্যাপারে হাল্কা রিউমার তুলে নিজেকে আড়াল করার ব্যার্থ চেষ্টা করার কি দরকার ছিলো?এমনিতে সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের সাথে দহরম-মহরম থাকার কারণে এতোদিনে যা করার তাতো করেই ফেলেছেন,তার উপর আজে-বাজে বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্য কি?নিজে একটা নিউজ প্রতিষ্টানের কর্ণধার হয়েও কি করে অধীনস্ত সাংবাদিক সম্পর্কে নেহায়েত গল্প সাঝানোর চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়ে যাই।তার উপর এখন আবার বলছেন খন্ডিত বক্তব্য মিডিয়ায় এসে ভুলবুঝাবুঝি হচ্ছে।কারণ অপরাধ যারা করে,তারা যত স্মার্ট ও আধুনিক ভাবে সম্পন্ন করুক না কেন,নিজেদের অজান্তে হলেও কোন না কোন ভাবে ভুল একবারের জন্য হলেও করবে।উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের গোয়েন্দা এবং আইন-শৃংখলা বাহিনী যদি অপরাধীর পেছনে নিছক সন্দেহ করে হলেও চুপটি মেরে তথ্য,ক্লূ,প্রমাণ সংগ্রহে লেগে থাকতো দীর্ঘদিন,তাহলে অবশ্যই অনেক অপরাধীর চেহারা প্রকাশ হতো।
শাহজালাল,শাহপরাণ,গাজী বোরহান উদ্দীন আর সামসুদ্দিন (রঃ) প্রিয় ভূমির এই সিলেটীদের যে বা যারা অপমান আর অপদস্ত করতে সচেষ্ট হয়েছেন,তাদের দিকে পেছনে ফিরে তাকান।আল্লাহর গজব থেকে কেউ রেহাই পায়নাই,হোক সে যত বড় শিল্পী,নেতা,এমনকি মাওলানাও,কেউ রেহাই পায়নাই।কোন না কোন ভাবে শাস্তি তারা পাচ্ছে।আমারতো মনে হয়,আপনার উপরও গজব আসতেছে,যদি রক্ষা পেতে চান,তবে তওবা করে ক্ষমা চান,কারণ আল্লাহ পাক তওবাকারিকে বড় পছন্দ করেন।আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করুন,এটাই চাই।
2nd June 2012.UK.