দেশে একের পর এক গুম,গুপ্ত হত্যা,খুন,রাহাজানি,বেড়েই চলছে।যখন-তখন যাকে ইচ্ছা তাকে বলা হচ্ছে ডিবি,এনএসআই,রাব,গোয়ান্দাবিভাগের লোকজন নানান ছলা,কলা,কৌশলের আশ্রয় নিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বরাবরই প্রতিটি গুম,গুপ্ত হত্যা,খুনের পর সরকারের এই সব বাহিনী বরবরের মতো অস্বীকার করে আসতেছে।
গত বুধবার রাতে বি,এন,পি,র সাংগঠণিক সম্পাদক,সাবেক এম,পি এবং সিলেটের জনপ্রিয় নেতা এম,ইলিয়াস আলীকে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে বিশেষ বাহিনীর লোকজন তার গাড়ীর ড্রাইভার সহ রাতের বেলা বিশেষ কায়দায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।বরাবরের মতোই সরকারের সকল বিশেষ বাহিনী এবং পুলিশ বিভাগ ইলিয়াস আলী তাদের হেফাজতে না থাকার কথা অস্বীকার করে চলেছেন,স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এজেন্সীগুলো যেভাবে অস্বীকার করে থাকেন।তাহলে প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে জ্বলজন্ত সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ,বিশেষ করে বিরুধীদলের শক্তিশালী এক দক্ষ সাংগঠণিক সম্পাদক লক্ষ কোটি চোখের সামনে থেকে হাওয়া হয়ে গেলো কি করে? ইলিয়াস আলীর কাছে কি আলাদিনের কোন যাদুর মন্ত্র আছে নাকি,যা ফুতঁ করে সে সবার সামনে থেকে হাওয়ায় মিশে যাবে?
সন্দেহ নেই ইলিয়াস আলী একজন দক্ষ রাজনীতিক,দক্ষ সংগঠক,অসীম সাহসী জাতীয়তাবাদী এই লড়াকু সৈনিকের যেমন রয়েছে অসংখ্য ভক্ত,অনুরাগী,একই ভাবে রয়েছে তার দলের ভিতরে ও বাইরে রাজনৈতিক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত শত্রুও।কিন্তু দলের ভিতরে গাপটি মেরে থাকা এমন কোন উপদল কিংবা এই রকম নিখোজ বা কিডন্যাপ করার মতো সাহস কেউ রাখেন বলে সাধারণ কোন জনগনও বিশ্বাস করবেনা।রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে এমন কেউ নেই যে এককভাবে ইলিয়াস আলীকে কিডন্যাপ বা গুম করার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারেন,সরকারের বিশেষ মদদে, এবং অবশ্যই সরকারের বিশেষ বাহিনীর সরাসরি সহযোগীতা ছাড়া কারো পক্ষে ইলিয়াস আলীকে গুম করার মতো বুকের পাঠা খুব কম লোকেরই আছে।
আমি এই কারণে আমার এই ধারণা এবং মিথ প্রকাশ করতেছি যে,কারণ ব্যাক্তিগতভাবে আমি ইলিয়াস আলীকে খুব কাছে থেকে দেখে এসেছি, বিগত ১০টি বৎসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালিন সময়ে ইলিয়াস আলীকে আমি কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো,যদিও আমি তার কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড কিংবা তাদের রাজনীতির সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত ছিলামনা।অসম্ভব রকম জেদি,ত্যাগী,সাহসী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং নেত্রীর প্রতি এমন অনুগত রাজনৈতিক সৈনিক আজকের যুগে বড় বিরল।ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনাকে দেখতে হবে সেই রকম দৃষ্টিকোণ থেকে।এটাকে নিছক হেলা-ফেলা করে দেখলে চলবেনা।বিএনপির চলমান সরকার বিরুধী আন্দোলন এবং নেত্রীর অনুগত সৈনিককে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে বরং সরকারের লাভ-লোকশানের যে হিসেব-নিকেশ করে এজেন্সীগুলো করে এমন জঘন্য কাজ করেছে,তার ফল কিন্তু কোন কালেই ভালো হয়নাই,আর এ ক্ষেত্রেতো হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।বরং সরকারের জন্য এটা তাদের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে।এই মুহুর্তে বাংলাদেশে আওয়ামীলিগের অন্যায়,অত্যাচার,জুলুমের সবচাইতে সোচ্চার এই লড়াকু সৈনিককে কে বা কারা গুম করছে,যে কেউই সহজেই আচ করতে পারতেছেন।
দ্বিতীয়ত–যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেই, সরকারের কোন এজেন্সী কিংবা সরকারের কোন মদদে কোন বাহিনী তাকে গুম করেনি, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, কে এই দুঃসাধ্য কাজটি করলো? বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তৃতীয় কোন শক্তি যেমন জঙ্গী কোন গোষ্টী তাকে গুম করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেনাতো?যদি তাই হয়,দেখতে হবে জঙ্গী কোন তৎপরতা বিরোধী এমন কোন কাজে ইলিয়াস আলীর সম্পৃক্ততাতো আদৌ কখনো ছিলো কিনা,এরকম কিছু শুনিনি বা চোখে পড়েনি,যাতে তাদের কাজের প্রধান বাধা হিসেবে তাকে তারা দেখতে পারে,কিংবা তাকে গুম করে সরকারের কাছ থেকে এমন কোন ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এই ধরনের কোন বোকামীতো কোন জঙ্গীগোষ্টী করে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছেনা।
তৃতীয়ত– আন্তর্জাতিক কোন এজেন্সী বিশেষত র-এবং তার ল-এনফোর্সম্যান্ট কিংবা এর অনুগত কেউ হয়তো সক্রিয় থাকতে পারে,ইলিয়াস আলীর টিপাইমুখ বাধ বিরোধী আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকা পালন হেতু,যেহেতূ র-এবং তার সহযোগী রাতের অন্ধকারে কিছুদিন আগেও সিলেটের রাগীব-রাবেয়া হাসপাতাল থেকে রাতের অন্ধকারে জোর পূর্বক কতিপয় মেডিক্যাল ছাত্রকে তূলে নিয়ে গিয়েছিলো তাদের দেশে,যদি তাই হয়ে থাকে,সে ক্ষেত্রে সরকার এর গ্রীণ সিগন্যাল অবশ্যই এতে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।বেশ কিছু সূত্র বেশ কিছুদিন থেকে র এবং তার এজেসীর ঢাকা অবস্থানের সুস্পষ্ট উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলো।এরকম কোন ক্ষেত্রে সরকার কিছুতেই তার দায় এড়াতে পারেনা।
চতুর্থতঃ আওয়ামীলিগ সুরঞ্জিত ইস্যুতে বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলো,তার উপর আবার সুরঞ্জিত বাবু যেখানে নিজে পদত্যাগ করেছেন,সেখানে প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে(যদিও দুনিয়ার কোথাও এমন নজির নেই)তাকে আবার দপ্তরবিহিন মন্ত্রী করে এক লেজে-গোবরে অবস্থা করে ফেলেছেন,তার উপর অতি চালাকি করে সেই এপিএস,কর্মকর্তা,কমান্ডেট এর সাফাই এর মধ্য দিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত নিজেদের অজান্তেই দিয়ে যাচ্ছেন,সরকার এর এমন কোন ক্রেডেবিলিটি নেই যে এ ক্ষেত্রে তাদের কথা বা তাদের তৈরি গল্প জনগণ বিশ্বাস করবে,এই যখন অবস্থা জনগণের দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে,এবং বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতংক তৈরি করে তাদেরকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সরকারের এক ঢিলে দুই পাখি মারার রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য এতে থাকার বেশ জোরালো ইঙ্গিত বহন করতেছে।যে দৃষ্টিকোন থেকে দেখা হউক না কেন সরকার কিছুতেই এর দায় এড়াতে পারেনা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়,গত তিন মাসে দেশে খুন,গুম,গুপ্ত হত্যা বেড়েই চলেছে।প্রথম তিন মাসে খুনের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ৯৫০টি-যা জানুয়ারিতে ৩৩৬টি,ফেব্রুয়ারিতে ২৭৬টি,মার্চ মাসে ৩৩৮টি,তিন মাসে গুপ্ত হত্যা সংঘটিত হয়েছে জানুয়ারিতে ৩১,ফেব্রুয়ারিতে ৯০,মার্চ মাসে ৯৩,আর খোদ রাজধানীতে খুন সংঘটিত হয়েছে ৮২টির ও বেশী,এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যা ৮৩,আর আহত ছয় হাজারেরো বেশী,আর বিচারবহির্ভূত হত্যা ৩৫টির মতো ঘটেছে বলে রেকর্ডভূক্ত হয়েছে,আর রেকর্ডের বাইরে এই সংখ্যা আরো বেশী এমনকি দ্বিগুন হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
দুষে-গুণে মানুষ,চলার পথে চলতে গিয়ে কিংবা রাজনীতির ময়দানে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার জন্য নানান কৌশল,ফিকির করা হয়ে থাকে,এটা স্বাভাবিক।তাই বলে প্রতি পক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে একে বারে খুন কিংবা গুম করে ফেলতে হবে,এটা কোন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি? এটাতো কোন কৌশল হতে পারেনা? এটা আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়,এমন জঘন্য ভয়াবহ অপসংস্কৃতি এবং দূষ্ট খেলা থেকে সরকার যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে ততই জাতির মঙ্গল।
দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্যই সরকার এবং তার সকল বাহিনীর কাজ।কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা কি দেখতেছি, সরকার তার কাজ-কাম ফেলে দিয়ে দিনে দিনে গুম,খুন-খারাবি আর গুপ্ত হত্যার মতো আদিম,বর্বর খেলায় মেতে উঠেছে,যা জাতির জন্য অশনি এক শংকেত বয়ে আনতেছে।
যখন-তখন যাকে খুশি তাকে ধর-পাকড়,আতংকগ্রশ্ত ও গুপ্ত হত্যার শিকার করে, ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে,ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা যাবেনা,ডর-ভয় দেখিয়ে জনতার বাধ-ভাঙ্গা জোয়ারের গতিকে রুখা যাবেনা,যুগে যুগে কেউ পারেনি,আওয়ামীলীগ কি করে পারবে,এই অসম্ভব কে সম্ভব করতে? আ স ম আব্দুর রব নারায়ণ জঞ্জের জনসভায় যথার্থই বলেছেন, দেশে এখন জাহান্নামের মতো অবস্থা বিরাজ করছে,সরকারের বিরুদ্দ্বে কেউ মুখ খুললেই তাকে বিশেষ বাহিনী ধরে নিয়ে যাচ্ছে,মামলা-মোকদ্দমা নয়তো গুম করে ফেলতেছে,এর নামতো গণতন্ত্র নয়।আতংকতন্ত্রের আরো এক নাম বর্তমান মহাজোট সরকার।সরকারের বিরুদ্দ্বে কেউ মুখ খুললেই তাকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলা হচ্ছে।সহসী যূদ্দ্বা,জাতীয়তাবাদী লড়াকু সৈনিক ইলিয়াস আলীকে সরকারই গুম করে ফেলে এখন সাধু সাজার, কিছুই না জানা ভান করতেছে,এই ভাবেতো একটা দেশ চলতে পারেনা।ইলিয়াস আলীকে গুম করে রাখা যাবেনা,ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দিতেই হবে।
সরকারের মনে রাখা উচিৎ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।যারা আজ এই সব গুম,গুপ্ত হত্যার মতো জঘন্য রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আমাদের মতো গরীব দেশে চালু করে চলেছেন,জনগণের কাঠ গড়ায় একদিন তাদেরকে আসামী হয়ে জবাবদিহি করতে হবে।
ইলিয়াস আলীকে যে বা যারা গুম করে নোংড়া খেলায় মেতে উঠেছেন অবিলম্বে তাদের বোধোদয় হউক,আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুন,নয়তো ভয়াবহ করুণ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে,আমরা চাই ইলিয়াস আলীকে আবিলম্বে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় জনগণের কাতারে ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই আশা করা কি বাতুলতা হবে?
18th April 2012,uk।