সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদঃ লেবার দলীয় লিডার জেরেমি করবিনকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আদতেই বামপন্থী এই নেতা এখন সকল এস্টাবলিশম্যান্ট ( ডান-বাম, টোরি-লেবার) এর মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছেন। ব্রিটিশ এস্টাবলিশম্যান্ট যেকোন মূল্যে জেরেমি করবিন ট্রেনকে রুখে দিতে চায়। ব্রিটেনের সিরিয়া বিমান হামলা ইস্যুতে নানা প্লট সাজানো হয়েছিলো- করবিনকে থামিয়ে দিতে। কিন্তু জেরেমি করবিন লেবারের অফিসিয়াল নীতি যুদ্ধবিরোধী নীতিকে এমনভাবে সমুন্নত রাখলেন, সাপও মারলেন লাঠিও ভাঙ্গলোনা। এর পর পরই করবিন বিরোধী গ্রুপ ব্যর্থ হয়ে করবিনের স্বাস্থ্যগত ইস্যু সামনে নিয়ে এসে কোনঠাসা করতে উদ্যত হয়। ওল্ডহ্যাম- রয়টন বাই ইলেকশনে লেবারের জয়- করবিন বিরোধীদের মাথায় বাজ পড়ে। জেরেমি করবিন পন্থীরাও নড়ে চড়ে বসেন। তারাও করবিন ট্রেনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চান- সামনে বাধার পাহাড়কে ভেঙ্গে তছ নছ করে দিতে ছক সাজাচ্ছেন।
জানা গেছে, সিরিয়ায় ভোটাভুটিতে হেরেই করবিন পন্থীরা পার্লামেন্টে ব্যাক রুমে আলোচনা বসেন। নতুন ষ্ট্র্যাটেজী সাজান। তারা ঠিক করেন করবিনের যুদ্ধ বিরোধী আহবান সত্যেও শ্যাডো কেবিনেটের প্রভাবশালী লেবার এমপি, ফ্রন্ট বেঞ্চের এমপি, হুইপরা বিমান হামলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন ও ভোট দেন। করবিন ট্রেনের চালকেরা ৬৬ জন এমপি (২১ জন ফ্রন্ট বেঞ্চ সহ), ৩ জন হুইপকে চিহ্নিত করেন করবিন বিরোধী হিসেবে।
করবিনের ট্রেনের চালক, ষ্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আর নীতি নির্ধারনীরা চারটি বিষয়ে একমত হয়েছেন, আর তা হলো-
০১) বিরোধী দলীয় হুইপ রুজী উইন্টারটন সহ অ্যালেন ক্যাম্পবেল, কোনার ম্যাকগিন, হলি লিঞ্চ– সিরিয়ায় বিমান হামলা সমর্থন করেছেন।বিরোধী হুইপ রুজী উইন্টারটন লিডারের পক্ষে না থেকে বরং ভোটের সময় নীরব ভুমিকা পালন করেছেন আর বাকী তিন হুইপ নেতার আহবানে সাড়া না দিয়ে ভোট দিয়েছেন বিমান হামলার পক্ষে। জেরেমি করবিন ট্রেন এখন এই চারজনকে তাদের ট্রেনের যাত্রী থেকে বাদ দিতে চান- এবং সূত্র বলছে, আসন্ন নিউ ইয়ারেই সেটা রিশাফল হয়ে যাবে।
০২) শ্যাডো ডিফেন্স সেক্রেটারি মারিয়া ঈগল, বিজনেস সেক্রেটারি অ্যাঞ্জেলা ঈগল, শ্যাডো ফরেন সেক্রেটারি হিলারি বেন পার্লামেন্টে সিরিয়ায় বিমান হামলা সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন, ভোটও দিয়েছেন-করবিন ট্রেনের ভিআইপি কেবিন থেকে তাদের নামিয়ে দেয়া হবে নিউ ইয়ারে
০৩) স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় সংসদীয় আসনগুলোতে আরো অধিক বামপন্থীদের ডিসিলেক্ট এর ব্যবস্থা করে করবিন ট্রেনের যাত্রী করা
০৪) নতুন করে সংসদীয় আসন পুণর্বিন্যাস হতে যাচ্ছে। এটাকে করবিন পন্থীরা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। নতুন আসন পুণর্বিন্যাসে ৬৫০ আসন থেকে কমিয়ে ৬০০ আসন করা হচ্ছে। করবিন ট্রেনের চালক ও ডিরেক্টরেরা এই পুণর্বিন্যাসের আসনে করবিন পন্থীদের আগামী ২০২০ সালের নির্বাচনে সংসদীয় আসনের প্রার্থী করবিন পন্থীদের প্রার্থী মনোনয়ন দান নিশ্চিত করা- সেজন্যে এখন থেকে ষ্ট্র্যাটেজি নির্ধারন ও কাজ শুরু যাতে তৃণমূলে সিগন্যাল চলে যাওয়া- জেরেমি করবিনের ট্রেনের যাত্রী হলেই সংসদীয় আসনে প্রার্থী, যদিও তৃণমূলে করবিন ট্রেনের যাত্রী বিশাল, তারপরেও এটাকে সুযোগ হিসেবে তারা নিচ্ছেন।
কারণ হিসেবে সূত্র বলেছেন, আমাদের পার্টিতে বাম-পন্থীদের সংকট চলছে, তাই আমরা চাই বাম ঘেষাদের পার্টিতে নিয়ে এসে করবিন ট্রেনের যাত্রী করতে।
“There are not enough Left-wing MPs in the parliamentary Labour party and we need to change that. Every constituency is going to be redrawn so we can protect some people and get rid of others.”
আর করবিন বিরোধী এমপিদের একজন জানিয়েছেন,আমরা জানি খড়গ আসছে। এতে পার্টির মধ্যে স্থায়ী সিভিল ওয়ার শুরু হয়ে গেলো। আমরা সেজন্যে প্রস্তুত।
করবিন ট্রেনের ষ্ট্র্যাটেজি নির্ধারনকারীরা বলছেন, আমরা চাই ২০২০ ইলেকশনে আমাদের লোকদের অন-বোর্ড করতে। প্রতিটি সংসদীয় আসন পুণর্বিন্যাস হচ্ছে- আমরা সেই সুযোগে বিরোধীদের বাদ দিয়ে নিজেদের লোকদের যাত্রী করতে কাজে লাগাবো।
লেবার দলের উচ্চ পদস্থ সিনিয়র অফিসিয়াল বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে দলে যা ঘটেছে, কোনভাবেই সেই ঘটনার আর পুণরাবৃত্তি হতে দিতে চায়না। আগামী নিউ ইয়ারে নিউক্লিয়ার ট্রাইডেন ইস্যুতে পার্লামেন্ট আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। লেবার দলের কেন্দ্রীয় অফিসিয়াল সিনিয়র এই নেতা বলেন, ট্রাইডেন ইস্যুতে লেবার দলের শ্যাডো কেবিনেট, এমপি আর দলীয় নেতার টিমের মধ্যে অচলাবস্থা ও প্রকাশ্য বিরোধ কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন।
অবস্থাদৃষ্ঠে মনে হচ্ছে জেরেমি করবিন টিম করবিন বিরোধীদের বাদ দিয়ে নতুন করে শ্যাডো কেবিনেট সহ পলিসি নির্ধারনী টিম, স্থানীয় আসনগুলোতে করবিন পন্থীদের নমিনেশনের মাধ্যমে নিজদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে যাচ্ছেন। যদিও বিরোধীরা এই অবস্থাকে স্থায়ীভাবে দলের মধ্যে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করছেন। কিন্তু জেরেমি করবিন ট্রেন এখন স্লোভাবে অথচ পরিকল্পিতভাবে মুভিং হচ্ছে- সন্দেহ নাই।
salim932@googlemail.com
06th Dec. 2015,London