এ কোন ব্রিটেন- বাসের মধ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ(ভিডিও)

এ কোন ব্রিটেন- বাসের মধ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ(ভিডিও)

252

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- লন্ডন থেকেঃ আমরা এমন বর্ণবাদী আচরণ, এমন সহিংস, ঘৃন্য আচরন কিংবা ধর্মীয় গোড়ামী ও বিদ্বেষের আচরনের সাথে কম বেশী পরিচিত। এটা যে দেশে দেশে ঘটেনা এমন নয়। কম বেশী সকল ক্ষেত্রে ও স্থানে প্রায়ই নানান ঘটনা প্রবাহে ক্ষোভ-জ্বালা প্রশমিত হয় নানানভাবে। বিদ্বেষ আচরনের শিকার হয়ে অনেকে শারিরীকভাবেও লাঞ্চিত হওয়ার খবর সংবাদ পত্রের পাতায়, রেডিও টেলিভিশনে এসে থাকে মাঝে মধ্যে। অতীতে এরকম কাছাকাছি  ঘটনা লন্ডনের রাস্তায় বিশেষ করে এথনিক মাইনোরিটির লোকজন সাদাদের দ্বারা হয়েছেন- তারও ইতিহাস আজ অতীতই নয়, ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত। আজকের সভ্যতায়, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সেই সব ঘৃণ্যতার, অসভ্যতার কোন স্থান নেই। কিন্তু তা বললেইতো আর হয়না। সারা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান-উন্নতি আর বিত্ত বৈভব, ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল খ্যাত লন্ডনের রাজপথে পাবলিক বাসে এরকম নোংরা ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ বা ঘৃণ্য আচরন- সে যার প্রতিই হউক, কোনভাবেই কাম্য নয়। ব্রিটেনের সমাজের ভিতরে ঘৃনা আর ইসলামোফোবিয়া কতো গভীরে প্রোথিত- পাবলিক বাসে একজন অন্তঃস্বত্বা নারীকে লাথি দিয়ে….. কিংবা ফা….তোমার নিজ দেশে ফিরে যাও, যেখানে বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে.. এমন অশ্লীলতা কতোটুকু গ্রহণ যোগ্য- বোধগম্য নয় কোনভাবেই। বাসের মধ্যে এতো লোক থাকা সত্যেও কেউ সমগোত্রীয়(কালো) নারীকে থামানোর অথবা ন্যুনতম প্রতিবাদ করার মতো অবস্থায় না দেখে আরো অবাক লেগেছে- এই কি ব্রিটেনের সভ্যতা। ব্রিটিশ জাতি সাহসী এবং সভ্যতা, সংস্কৃতি আজকে এতো বেশী আত্যস্থ করেছে যে, এরকম নোংরামি অন্যায়ভাবে কাউকেই করতে দেয়না। এক্ষেত্রে কেন এমন হলো ?

প্রতিনিয়ত রেডিও টেলিভিশনে ইসলামোফোবিয়া প্রচার- এর নেগেটিভ দিক আজ এই সমাজে দানা বাধতে শুরু করেছে। নাহলে থার্ড এবং ফোর্থ জেনারেশনের ব্রিটিশ নারীর মুখ থেকে এমন অশ্লীলিতা বের হয় কি করে। বর্ণবাদী আচরন বললে ভুল হবে এই কারণে এমন আচরন এর কেব্দ্র স্থলে বিদ্ধ কালো বর্ণবাদী– নতুন এক রূপ পরিগ্রহ লাভ করেছে, যা বিদ্বেষই শুধু ছড়ায়।

এই কালো কিন্তু আজ অনেক আশা ভরসার স্থান হয়ে আছে– তাহলে অহেতুক বিদ্বেষ কেন?অলিম্পিকে মো ফারাহর গোল্ড মেডাল জয়, সম্প্রতি নাদিয়া হোসাইলের ব্রিটিশ বেকিং অফ জয়, সাজিদ জাভিদ, রোশনারা, টিউলিপ, রূপা, সীমা, সাঈদা সকলেই কালো– যা ব্রিটিশদের আশা ভরসা ও গর্বের। এই সোসাইটির ইন্টেগ্রিটি, এই সোসাইটিতে সকলের অবদান সমানভাবে, কারো কম কারো বেশী। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান সুযোগ ও অধিকারের দাবীদার।

প্রত্যেক নাগরিকের যেমন সমান সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকার রয়েছে, তেমনি নাগরিক হিসেবে সকলের দায় দায়িত্বও রয়েছে। দুষ্ঠের দমন শীষ্টের পালনের জন্য যেমন আইন শৃঙ্খলা, সঠিক শিক্ষা দীক্ষার জন্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, তেমনি রাষ্ট্রের আলো বাতাসে লালিত পালিত নাগরিকদেরও রয়েছে কিছু নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। নাগরিকদের সেই নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে অবহেলা অবজ্ঞা দেখা দিলেই বাসে পথে ঘাটে এরকম অশ্লীলতা ও নোংরামি ছড়াবে। যা আজ একভাবে দেখা দিয়েছে, কাল ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন মাত্রিকে দেখা দিবে। তখন এই অশ্লীলতা দেখবেনা কে কালো, কে সাদা। কারণ অশ্লীলতা অশ্লীলতাই- এর কোন জাত, ধর্ম, বর্ণ, রঙ নেই। তাই এখনি সময় এর বিরুদ্ধে  সোচ্চার হওয়ার- রাষ্ট্র ও জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে নোংরামি রুখে দিতে হবে। কারণ রাজনীতি থাকবে- রাজনীতির জায়গায়। সমাজ থাকবে ন্যুনতম মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রীয় নর্মস, আদর্শ, শৃঙ্খলার দ্বারা ও জাতীয় মূল্যবোধের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ।

সমাজের সকল কর্ণার থেকেই প্রত্যেকেরই সমান দায়িত্ব রয়েছে এই সমাজের সুন্দর শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অশ্লীলতা পরিহার করা। পত্রিকা, মিডিয়া, এনজিও, সরকার, দাতব্য সংস্থা- সকলেরই দায়িত্ত্ব আছে এ ক্ষেত্রে। সবাই মিলেই সেই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হবে।

salim932@googlemail.com

17th October 2015, London

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *