নয়াদিল্লী এবং পেন্টাগনের সিগন্যাল সেনাবাহিনী ইন্টারভেন করবেনা: রায়টের অশনি সংকেত!

নয়াদিল্লী এবং পেন্টাগনের সিগন্যাল সেনাবাহিনী ইন্টারভেন করবেনা: রায়টের অশনি সংকেত!

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী খেলা চলছে। ক্ষমতাসীন সরকার তাদের ছক মোতাবেক নির্বাচনী দৌড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হাসানুল হক ইনু বিবিসিকে বলেছেন সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রী সভা পদত্যাগ করবে। বিবিসির উপর্যুপরি প্রশ্নের বিপরীতে মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অত্যন্ত সুকৌশলে বিবিসিকে জানিয়েছেন, সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী সভা গঠনের পরেও আলোচনার দরজা খোলা থাকবে, যেমন করে শেখ হাসিনা এবং হানিফ, আমুও বলেছেন

বিএনপি ক্রমেই হার্ড লাইনে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এবং দেশ-বিদেশের সকল বাঙালি বড় উদ্বিগ্ন । ব্যবসায়ীরা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর এখন শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের উদ্যোগ নিয়েছেন। ডিপ্লোম্যাটরাও দৌড় ঝাপ করছেন, দুই নেত্রীকে সমঝোতার টেবিলে নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ডঃ আকবর আলী খান এবং সুলতানা কামাল যেমন বলেছেন এখন আর ফর্মাল সংলাপের মতো কোন পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। যা করতে হবে, ইনফর্মালি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইনফর্মাল সংলাপের মতো রেকর্ড খুব একটা ভালো নয় । ইতিমধ্যে সরকার গ্রামীণ ব্যাংক এক্ট সংসদে পাশ করেছে।ইউনুস এতে তার নাখোশের কথা দৃঢ়তার সাথেই জানিয়েছেন। বিএনপি আবারো ৯৬ ঘন্টার হরতাল থেকে শুরু করে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে অবরুদ্ধ করে দেয়ার হার্ড লাইনের আন্দোলনের কথা জানিয়েছে। সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা বেড়েই চলছে। জামায়াত-শিবিরের একশন এখন আর চোরা গুপ্তা হামলাতে সীমাবদ্ধ নেই। ১৫ তারিখ থেকে হেফাজত মাঠে নামবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ হবে তাতে সন্দেহ নাই।
পাবনার সাথিয়ায় যে নারকীয় তাণ্ডব হয়ে গেলো-নির্বাচনী এবং আন্দোলনের ঠেলায় এতো বড় তাণ্ডব থেকে গোটা বাংলাদেশ ও মিডিয়া একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেয়াতে আমাদের মানবিক দায়িত্ব আর চিন্তা-চেতনা আজকে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সহজেই অনুমেয়। এতো নারকীয় তাণ্ডব হয়ে গেলো-অথচ সরকারি ও বিরোধী দল একেবারেই নিশ্চুপ। কমিউনিস্ট পার্টির মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম কেবল ব্যতিক্রম। তিনি আজকে আওয়ামীলীগকে দায়ী করে নিজের মতামত প্রকাশ্যে দিয়েছেন। অন্তত একজন হলেও-তো এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। কে দায়ী সেটা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে যারাই এ নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ সাধন করেছে, তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা জানাই। কারণ তারা মানবতার শত্রু, দেশের শত্রু। ধারণা করা হচ্ছে, সাথিয়ার এ বিষয়টা নিয়ে উভয় রাজনৈতিক দলই মোক্ষম সময়ে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলবে। কেননা ধ্বংসযজ্ঞের পরেও আকস্মিক নীরবতা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ইঙ্গিত দেয়। ভয় হয়, ক্ষমতা লিপ্সু এই দুই রাজনৈতিক দল সাথিয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে দেশে না রায়ট লাগিয়ে দেয়। বিবেকহীন, মানবিক জ্ঞানহীন, ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক দল ও নেতারা যে কোন অমানবিক কর্মকাণ্ড করতেও পিছু হটবেনা।আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস কিন্তু সে কথাই বলে।

হঠাৎ করে সিইসির সেনাবাহিনী ছাড়া তিনশত আসনে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়-অন্য আলামতের ইঙ্গিত দেয়। সরকার জানে, নয়াদিল্লীর মাধ্যমে পেন্টাগন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার সিগন্যাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সেনাবাহিনী রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় ইন্টারভেন করবেনা। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে পেন্টাগন তাই করেছে। পেন্টাগন দেখেছে, পোস্ট ওয়ার তাদের এই ডিপ্লোম্যাসি অনেক কার্যকর। পেন্টাগনের সাথে নয়াদিল্লী এই প্রশ্নে একমত। দুই মহারথী যখন এক হয়ে যায়, তখন অনেক নাটকীয় ঘটনাই যে এখনো বাকী তা বুঝতে বাকী থাকেনা। যেমন করে মোশাররফ এরেস্ট হলেন, আবার এতো চার্জের পরেও একেবারে রিলিজ হয়ে গেলেন। পেন্টাগনের এখনকার খেলা অতি পলিটিক্যাল ডিপ্লোম্যাসি হয়ে আছে, তাদের সমর ডিপ্লোম্যাসি পেছনে পরে গেছে। শেখ হাসিনার সরকার এখন এই সংবাদে আরো উজ্জীবিত। হাসিনার সরকার এখন সর্বদলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন সেনাবাহিনীর মাধ্যমে, আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রেখে, সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। একই সাথে হাসিনার সরকার বিএনপি ও ১৮ দলকে ভাঙ্গার উদ্যোগ নিয়েছে। দুদুকের মামলার খড়গ ও অন্যান্য মামলা ইস্যুতে আমান, খোকন, দুদু, খোকাকে সরকার কোনভাবেই যদি গুলশানের অফিসে অন্য নেতাদের টপকে অপরিহার্য করে তুলতে পারে, তাহলে হাসিনা জানেন, একেবারে বাধাহীনভাবেই নির্বাচন করে ফেলতে পারবেন। সরকার দেশী বিদেশী নানা সোর্সের মাধ্যমে বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করতে কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের তথ্যে সরকার দেখছে, তৃণমূল বা মাঠের নেতাদের কাছ থেকে খালেদা জিয়া একেবারেই বিচ্ছিন্ন। সরকার মূলত: এই বিশাল গ্যাপের সুযোগটাই নিবে। আর এই গ্যাপের সুযোগে সরকার চাচ্ছে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচী নস্যাৎ করে দিতে। সরকার বেশী উদ্বিগ্ন হেফাজত ও জামায়াত শিবিরের ক্যাডারদের নিয়ে। সেজন্য সাঁড়াশী অভিযানে বিজিবি ও সেনাবাহিনী নামবে।শিবিরের ক্যাডারদের ধরতে র্যা ব ফাঁদ পেতে এগুচ্ছে। ঢাকার সরকার ও নির্বাচন প্রশ্নে নয়াদিল্লীর মিডিয়ার ট্যাগ অব ওয়ার এখন ওপেন সিক্রেট। নয়াদিল্লীর হয়ে মিডিয়ায় ফ্রন্ট ওপেন করে আছেন বিডিনিউজের সুবীর ভৌমিক। বিএনপির সবচাইতে বড় ব্যর্থতা, দুই বার ক্ষমতায় থেকেও মিডিয়া বান্ধব হতে পারলোনা, যার খেসারত খালেদা জিয়া এখন এই টার্মে পুরোপুরিই দিচ্ছেন করুন ও নিষ্ঠুর সব পরিস্থিতির মোকাবেলার মাধ্যমে।

এদিকে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানকে ব্রিটেন থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। দুই দেশের বন্দী প্রত্যার্পন চুক্তি এক্ষেত্রে বড় সহায়ক এবং বিগত দিনে হাসিনার সরকার ব্রিটেনের আবেদনে সীমাহীন সহযোগিতা দেয়ায় এক্ষেত্রে সরকার সফল হবে বলে নীতি নির্ধারকদের ধারনা। ঢাকার যুক্তরাজ্য দূতাবাসের কর্মকর্তার এ বিষয় পর্যালোচনার মন্তব্যে সরকার আরো শক্ত হয়ে এগুচ্ছে। যদিও বিদ্যমান বন্দী প্রত্যার্পন চুক্তি এবং বর্তমান ব্রিটেনের এক্সট্রাডিশন এক্ট সহ এ বিষয়ে আদালত, হোম সেক্রেটারি, রিকুয়েস্ট থেকে শুরু করে এরেস্ট পর্যন্ত অনেক লম্বা এক ব্যাপক প্রসেস- সরকার তা জেনেশুনেই এগুচ্ছে। এক ঢিলে দুটি নয়, সরকার এক্ষেত্রে ব্যাপক এক লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। আশু যে লক্ষ্য বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক অনুরাগীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া, বিএনপির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের এজেন্টদের লাইম লাইটে নিয়ে আসার পথ করে দেয়া, নির্বাচন করে ফেলা। রাজনীতিতে একে অন্যকে ঘায়েল করে বাজীমাত করার খেলা আরো কতোকাল চলবে।

মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিচারে দেশ-বিদেশের মুক্তিকামী জনগণ যতোনা খুশী, ঠিক ততোটাই তৎপর মঈনুদ্দিনের আইনজীবী টমি ক্যাডমেন ও লর্ড কার্লাইল। মঈনুদ্দিন ও আশরাফ ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সেবার নামে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের পেট্রন, অঢেল টাকা আর ডলারের বিপরীতে ট্র্যাইব্যুনলকে প্রশ্নবিদ্ধ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও জনমতকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। মুক্তিকামী শক্তিগুলো বড় অগোছালো ও একে অপরের প্রতিদ্বন্ধি। ক্ষমতা কেন্দ্রিক খেলায় নিজেরা দিশেহারা। সব মিলিয়ে দেশের আগামী দিনগুলোর জন্য বড় অশনি এক সংকেত বিরাজ করছে। দুই নেত্রীই পারেন কেবল সে অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দিতে, স্বস্তি দিতে।

salim932@googlemail.com
6th November 2013, london.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *