Submitted by syed shah salim… on Tue, 09/07/2013 – 9:48pm
লন্ডনের অভিজাত ভেন্যূ ইমপ্রেস সেন্টারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে কাউন্সিলর টিউলিপ সিদ্দিকীর বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান হয়ে গেলো গতকাল রোববার।বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এতে যোগ দেন।
ঐ সময় শেখ হাসিনাকে মুখে বেশ কষ্টের সাথে হাসি মেখে আত্মীয়-পরিজন ও অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায় বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত দুজন অতিথি জানিয়েছেন।শেখ হাসিনার চোয়ালে চিন্তার রেখা সারাক্ষণ ছিলো, কোথায় যেন অজানা এক শঙ্কা চোখে-মুখে স্মিত হাসির আড়ালে বার বার উঁকি দিচ্ছিলো বলে আগতদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন আড়ালে-আবডালে। শেখ হাসিনার সাথে এই সময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় হাই কমিশনার মিজারুল কায়েস, শেখ হাসিনার পুত্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, আওয়ামীলীগের যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দ, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার জিম ফিজপ্যাট্রিক, কীথ ভাজ, ফ্রাঙ্ক ডবসন, ষ্টিফেন টিমস সহ আরো কয়েকজন সম্মানিত সাংসদ। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে যখন উপস্থিত হন তখন ইমপ্রেস ভেন্যূতে আগে থেকে উপস্থিত ব্রিটেনের বাঙালি ও ভারতীয় শিল্পীদের দ্বারা নাচে-গানে ও রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত এক গীতি নাট্যের আলেখ্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে অতিথি ও আমন্ত্রিতদের মুগ্ধ করে তুলে। হরেক রকমের জুস ও রঙ্গিন পানীয়ের সাথে বাংলাদেশী, থাই, ইটালিয়ান আর ইংলিশ ডিশের সাথে ঐতিহ্যবাহী ইন্ডিয়ান মজাদার ডিশের ভূয়সী প্রশংসা অনেকেই করেছেন।বাংলাদেশের কিংবা আল-জাজিরা, বিবিসির কোন সাংবাদিককে এই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি ঘেষতে দেয়া হয়নি।অনেক সাংবাদিক এবং ফটো সাংবাদিক চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনার মন্তব্য নেয়ার, গাজী পুর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবির প্রতিক্রিয়া জানার, অতিরিক্ত নিরাপত্তা হেতু সাংবাদিকদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। বোধগম্য কারণে শেখ হাসিনা ও তার আশে-পাশের কর্তা ব্যক্তিদেরও এই পারিবারিক বিবাহের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বেশ তটস্থ দেখা গেছে।কেননা টিউলিপের বিয়ের সম্বর্ধনা এমন এক সময় হলো, যার ১২ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরাট উলোট-পালট ও তুল-কালাম এক বাজিমাত করে ফেলেছেন ১৮ দলের মান্নান। আওয়ামীলীগ ও মহাজোট এমন কি খোদ শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদ, তোফায়েলের মতো জানু রাজনীতিবিদের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরার তিন মন্ত্রীর সর্বাত্মক ম্যাকানিজম কাজে লাগেনি। জনগণ আওয়ামীলীগকে লাল কার্ড শুধু নয়, এ যেন মহা এক প্রলয়ের অগ্রিম বার্তা পরিষ্কারভাবে দিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বোধগম্য কারণে তাই ইমপ্রেসের মতো পারিবারিক অনুষ্ঠানেও ও ভিআইপিদের উপস্থিতেও তেমন সরব থাকতে পারেননি।আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও নেত্রী গাজীপুরে হেরে তাই খেই হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হয়েছে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের, যারা নিজে থেকেই বললেন।
উল্লেখ্য শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের প্রথম বারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর হন।তার স্বামী ক্রিস একজন খ্রীষ্ঠান, ক্যামব্রিজের গ্র্যাজুয়েট, ব্রিটিশ সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা।ইতিমধ্যে টিউলিপ আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং খুব শীগ্রই পার্টির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থিতা প্রকাশিত হবে বলে টিউলিপের নিকটজন এবং ক্যাম্পেইন সমর্থকদের আশাবাদ রয়েছে।লন্ডনের হ্যামষ্টেড ও কিলবার্ণ সংসদীয় আসনে গত বিশ বছর ধরে ব্রিটেনের বিখ্যাত অভিনেত্রী গ্ল্যান্ডা জ্যাকসনের অবসরে লেবারের এই আসনে টিউলিপ সিদ্দিকীর মনোনয়নে স্থানীয় লেবারও বেশ আশাবাদী। বর্তমানে কাউন্সিলের আর্টস, কালচার ও হ্যারিটেজের বিষয়ে কাজ করছেন টিউলিপ। তবে এই সংসদীয় আসনে লেবার দলের আরো দুজন শক্ত প্রতিদ্বন্ধি রয়েছেন। সেকারণে টিউলিপের মনোনয়ন খুব একটা সহজতর হবে বলে মনে হয়না।
http://www.youtube.com/watch?v=pJ5x4jPRlvw&feature=em-share_video_user
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লন্ডনে বিএনপি, ১৮ দল, জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। দোকানের দোকানে নেতাদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ আর মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে সেই আনন্দের মাত্রা ছড়িয়ে ব্রিটেনের সর্ব প্রান্তে এখন চলছে। ১৮ দল, হেফাজত, জামায়াত দারুণ উজ্জীবিত।পূর্বলন্ডনে এলএমসি ও ব্রীকলেনের মসজিদের মুসল্লিদের সাথে করমর্দনে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফতি সদর উদ্দিন গাজীপুরে আওয়ামীলীগের বিপুল ভোটের পরাজয়ে আলেম-উলামার সমাবেশে নির্বিচারে নির্যাতন, হত্যা, রাজনৈতিক নেতাদের নিপীড়ন, আর আওয়ামীলীগের নাস্তিকদের লালন ও পালনের বিরুদ্ধে জনতার সম্মিলিত প্রতিবাদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মুফতি সদর উদ্দিন আওয়ামীলীগকে নাস্তিকদের সহচর হিসেবে উল্লেখ করে ইতিপূর্বে তিনি লন্ডনের সমাবেশে আওয়ামীলীগকে ভোট প্রদান নাজায়েজ হিসেবে ফতোয়া দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন, যা এখনো বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ইউটিউবে রয়েছে।বিশ্বনাথ প্রবাসী সিলেটীরা মনে করেন, ইলিয়াস আলীকে গুম আওয়ামীলীগ করেছে, যার জবাব সিলেট সহ সারা দেশে আওয়ামীলীগ পেতে শুরু করেছে।আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতা ও কর্মীবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের বর্তমান কর্মকাণ্ড ও সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, সাংসদ, ছাত্রলীগের গুণ্ডামিকে দোষারোপ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেছেন, নেত্রীর অহেতুক গালিগালাজ আর খালেদা জিয়ার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য আওয়ামীলীগের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। এদের অনেকেই এই সময়ে শেখ হাসিনার টিউলিপের বিয়ে উপলক্ষে লন্ডনে ব্যক্তিগত সফর যুক্তিযুক্ত মনে করেননি। তাদের কথা হলো, নেত্রীকে জনগণের সঠিক তথ্য যেমন দেয়া হচ্ছেনা, দেশে যেমন চাটুকারেরা নেত্রীকে বিভ্রান্ত করছে, এখানেও নেত্রীকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখে জনগণ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে কার্যত নেত্রীকে মুষ্টিমেয়র হাতের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। যা বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য নিতান্তই বেমানান। প্রবাসীদের কোন দাবি-দাওয়াই কার্যত নেত্রীর কাছে যথাযথ ভাবে উত্থাপিত হয়নি, যা অনেক ভালো ফল থেকে আওয়ামীলীগকে আরো বঞ্চিত করা হলো। প্রবাসীদের ক্ষোভ আগামী সাধারণ নির্বাচনে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।গাজীপুর নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া শত চেষ্টা করেও আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি, কারণ তারা ভীষণ ব্যস্ত , প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে।এদিকে বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস অধ্যাপক মান্নানের বিজয়ে ১৮ দলের প্রতি জনগণের আস্তার বহিঃপ্রকাশের সাথে সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি আরো বলেন যতদিন না আওয়ামীলীগের জুলুম, নির্যাতন, দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারবেন ১৮ দল ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে।