হেফাজতের অবরোধ, লাস্ট কল, অপারেশন শাপলা এবং আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব-

হেফাজতের অবরোধ, লাস্ট কল, অপারেশন শাপলা এবং আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব-

টেলিভিশনের পর্দায় যখন একের পর তাণ্ডব, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের মুহুর্মুহু ফাকাগুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম এ কোন বাংলাদেশ আমি দেখছি ? এমন অভাবনীয়, গুলি,টিয়ারশেল,আগুন,সাউন্ড গ্রেনেড এই সব শব্দ আর তাণ্ডব ও নারকীয় দৃশ্য কেবল মাত্র বৈরুত, প্যালেস্টাইন, সিয়েরা লিওন, ইথিওপিয়া, রোয়ান্ডায় মিডিয়ার বদৌলতে আমরা দেখতে অভ্যস্ত হয়েছিলাম, যা সেই সব দেশের নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্যাবলী, সেখানকার সরকার, প্রশাসন, জনগণ ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেই সবের মধ্যেই স্বাভাবিক দিন-যাপন করে থাকেন। কিন্তু বৈরুত-প্যালেষ্ঠাইনের সেই সব নারকীয় দৃশ্য আমার বাংলাদেশে! সেটাতো আমার কল্পনারও বাইরে। ১৯৭১ সালের পর যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি কিংবা যে নতুন প্রজন্ম ৭১ এর পরে যে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক গণ্ডী ও পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, তার বা তাদের কাছে এমন দৃশ্য রীতিমতো সাক্ষাত যুদ্ধ ক্ষেত্রের ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হামলা বা মোকাবেলা করারমতো অবস্থা, যা এই প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ও কপ্লনারও বাইরে।

ইতিহাসের নানা পাঠ-পরিক্রমায় এতোদিন আমরা শুধু হত্যা-ধর্ষণ, কিংবা তারও আগে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজ কর্তৃক কাল্পনিক এক অন্ধকূপ হত্যার অভিযোগের কথা যেমন আমরা পড়ে এসেছি, একইভাবে ভারতের ইতিহাসে জালিয়ান ওয়ালা বাগের ট্র্যাজেডি বা হত্যাযজ্ঞের কথা কম-বেশী সকলেই পড়েছি, সেই সাথে স্পেনের রাণী ইসাবেলা কর্তৃক মুসলমানদের সাথে তাচ্ছিল্য ও নিষ্ঠুর পরিহাস ও ধোঁকার সাথে এপ্রিল ফুল বানিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কাহিনী আমরা শুধু পড়েছি, কখনো-কখনো নাটক-সিনেমায় সেই সব কাহিনী নিয়ে নাট্যরূপ বা কল্প-কাহিনী চিত্র আমরা দেখেছি। বাস্তবে আমরা কেউই সেই সব নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কখনো দেখেছি এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে, অথচ সেই সব ঐতিহাসিক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আমাদের মানস পটে ঐতিহাসিকরা এমনকরে একে দিয়েছেন, আজকের একুশ শতকের পৃথিবীতে কেউ যখন সেই সব ঘটনা বা ঐতিহাসিক দলিল পাঠ করে চলেন, তখন নিজেকে আবিষ্কার করেন এক একজন অন্ধকূপ ট্র্যাজেডির অপ-বাদিত, নির্যাতিত নায়ক, জালিওয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ভিক্টিম কিংবা এপ্রিল ফুলের সেই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের মুসলমান ভাই-বোনদের সহযোদ্ধা হিসেবে, যারা ঐসময় এপ্রিল ফুলের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন।

ঢাকা অবরোধের সময় হেফাজতের তাণ্ডব যখন দেখছিলাম, তখন মন-প্রাণ এমন করে কেঁদে উঠেছিলো, আর আমার চোখের সামনে, বিশ্বাস করুন, প্রিয় পাঠক, তখন ভেসে উঠছিলো ৩০ লক্ষ নর-নারীর কঙ্কাল দেহ। খোদার ক্বসম, আমি তখন পাগলের মতো এদিক-সেদিক ছুটে বেরিয়েছি, প্রাণান্ত চেষ্টা করেছি, টেলিফোনের কাছে বার-বার ছুটে গিয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় আকর্ষণ করে বার্তা পৌঁছানোর আকুল মিনতি করেছি, আমার সোনার বাংলা মাকে নিয়ে আর খেলা করোনা। হেফাজতের নারকীয় তাণ্ডব দেখছিলাম, আর চোখের জলে বুক ভিজে চলছিলো, বার বার মানস পটে ভেসে উঠছিলো সালাম-বরকত-রফিক-জব্বার,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মরহুম মাওলানা ভাসানী, কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী,মেজর জিয়াউর রহমান, কর্ণেল তাহের, খালেদ মোশাররফ, মেজর মঞ্জুর, মেজর জলিল, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সহ সিদ্দিক মাষ্টার,সেলিম-দেলোয়ার-তিতাস-ময়েজউদ্দীন-ডাঃ মিলন-নূর হোসেন সহ অসংখ্য অগণিত শহীদের মুখ আর ভাবছিলাম, এই জন্য কী এতো শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমার বাংলা মা আজকের এই তাণ্ডবের জন্য মুখ-বধির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ? নিজেকে বড় অসহায় আর এতিম মনে হলো। নিজের পায়ের তলা থেকে মনে হচ্ছিলো একেক এক করে শক্ত মাটির প্রাচীর ধ্বসে পড়ছিলো।

একটু পরে যখন টেলিভিশনের নিউজটা আবার রিপিট হতে দেখলাম, তখন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে যে সব হেফাজত কর্মী ধাওয়া করে দোকান, বই, কোরআন শরীফে আগুন লাগিয়ে তাণ্ডব করছিলো, তাদের অধিকাংশই ক্লিন-সেইভ অথচ সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়া। রেকর্ডকৃত খবরের অংশ যতই ফরওয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড করি, একই দৃশ্য বার বার দেখতে পাই, অথচ সবকটা মিডিয়া বেমালুম সেই অবিশ্বাস্য দৃশ্য অবলীলায় যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই-কর্তার ইচ্ছা প্রণিধানযোগ্য এমন করেই চেপে যাওয়ার দৃশ্য দেখে বিস্ময়ের ভার যেন আরো বাড়তে থাকে। এতো হাজারো পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া থাকতে কী করে সেই অবস্থা সকলের অগোচরে থাকলো- কিছুতেই যেন বিশ্বাস হতে চায়না।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা আমাদের এই অহংকারের গণ-মাধ্যম বলা যায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে যথেষ্ট সাহসিকতার সাথে দেশ ও জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ চিত্র প্রকাশ করে আসছিলো, যা রীতি-মতো অনেক উন্নত ও সভ্য দেশের কাছে ঈর্ষনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক এক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে বাংলাদেশের ইমেজ গড়ে উঠেছিলো। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ১৯৮৩ সালের এরশাদের সামরিক শাসনের পর থেকে সেই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার মধ্যে ভোগবাদী এবং স্বার্থান্বেষী দলবাজি আমাদের মিডিয়াকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, সেখান থেকে সত্যিকারের গণ-মানুষের সাংবাদিকতার বদলে এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেতা-নেত্রী ও হিজ অর হার মাস্টার্স ভয়েসে ভূমিকায় কে কতোটা পারদর্শী এমন কাজেই বেশী মনোযোগী, ফলে প্রকৃত সংবাদ এবং সংবাদের মূল্যায়ন থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত ও প্রশ্ন সাপেক্ষ। আওয়ামীলীগের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে যে দলটি বায়তুল মোকাররমে শিবিরের সহযোদ্ধা হয়ে নারকীয় তাণ্ডব এবং পবিত্র কোরআন শরীফ আগুনে পোড়ালো, তাকে একজন অপরাধী হিসেবে সনাক্ত করতে বাধা কোথায় ? যে অপরাধ করে, সে যেই হউক, সে অপরাধী। মাত্র কিছুদিন আগে সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন, খুনিকে খুনী বলতে বাঁধা কোথায় ? তাহলে আজকে দেবাশীষকে বাঁচানোর জন্যে হেফাজতের ঘাড়ে দুষ চাপানো হচ্ছে কেন? কারণ এভাবেতো ভয়ঙ্কর এই সব অপরাধী আস্কারা পেয়ে সমাজ-সভ্যতাকে তছ-নছ করে দিবে।

আমেরিকার ট্রেভর জোন্সকে সকলেই একজন উন্মাদ-বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে জানেন। সে জন্য ট্রেভর জোন্সের অন্যায় কাজকে কেউ কখনো সমর্থন বা তাকে ভালো লোক বলে সার্টিফাই করার জন্য কাউকে সাফাই গাইতে দেখা বা শুনা যায়নি। পবিত্র আসমানি কিতাব, মহা-গ্রন্থ আল-কোরআনকে যে জ্বালালো, তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় না এনে তাকে রক্ষার জন্য নানা গল্প-কল্প-কাহিনী প্রকাশের মাঝে নিজেদের হীনমন্যতাই প্রকাশ পাচ্ছে। নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় চলেছে, একটু হলেও ভেবে দেখুন।নাহলে ঐ বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে বলে লোকদের জড়ো করে মজা নিয়ে সত্যিকারভাবে একদিন যখন রাখাল ছেলেটিকে বাঘে আক্রমণ করে, তখন তার সাহায্যে যেমন কেউ আসেনি, ঠিক একইভাবে মানবতার শত্রু, ভয়ঙ্কর এইসব অপরাধীদের বাঁচানোর কুফল হিসেবে বিপদ যখন আসবে, তখন কাউকেই কাছে পাবেননা, একথা ভুলয়ে গেলে বড় ভুল করা হবে।

আবার এতোবড় অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচী দিয়ে হেফাজতের উচ্ছৃঙ্খল অরাজনৈতিক আচরণ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।একই সাথে বলবো, হেফাজতের বিগত অহিংস বিশাল সমাবেশের শোডাউন দেখে যে বা যারা হেফাজতকে দিয়ে পাকিস্তানের ডঃ তাহিরুল ক্বাদরীর আন্দোলন বা মিশরের তাহ্রীর স্কয়ারের আন্দোলনের আদলে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বা হেফাজতকে উৎসাহিত করেছিলেন, তারাও ছিলেন নিতান্তই বিভ্রান্ত ও অদক্ষ নাবিক। কেননা, ডঃ তাহিরুল ক্বাদরী শুধু পাকিস্তানে নয়, সারা বিশ্বে স্বীকৃত ও ব্যাপকভাবে পরিচিত এক ইসলামিক স্কলার, তার রয়েছে বিশ্বব্যাপী মিনহাজ-উল-কোরআন নামের সুসংগঠিত এক শক্তিশালী অরাজনৈতিক সংগঠন। একইভাবে মিশরের তাহরীর স্কয়ারের সম্মিলিত তারুণ্যের পেছনে পাহাড়ের মতো শক্তি নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলো মুসলিম ব্রাদার হুড- যার রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী, মিশর এবং তার নিকটবর্তী অঞ্চল সমূহে। এহেন অবস্থায় ডঃ ক্বাদরীর ডাকে পাকিস্তানে ইসলামাবাদ অবরোধ কিংবা মিশরের তাহরীর স্কয়ারে যখন দিন-রাত অবরোধ চলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই এবং তাদের নিজেদের উদ্যোগে বিশ্বের তাবৎ নামকরা সহ সকল ধরনের মিডিয়া দিন-রাত সেখানে উপস্থিত থেকে সংবাদ কাভার করে চলছিলো। হেফাজতের এতোবড় একটা অবরোধ কর্মসূচী, যা কিনা একমাস আগে থেকেই নির্ধারিত ছিলো, সেখানে উচিৎ ছিলো,হেফাজতকে উৎসাহিত করা কিংবা হেফাজতের ফায়দা ঘরে তুলার আগে সারা বিশ্বের মিডিয়া যাতে সেখানে অবস্থান করে, এমন নিশ্চিত ব্যবস্থা করা। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে (আমি বলবো ইচ্ছে করেই) বিশ্ব মিডিয়াকে শাপলা চত্বরে উপস্থিতির কার্যকর ব্যবস্থা না করে যে বা যারা হেফাজতের এই এতোবড় লাগাতর অবরোধের ব্যবস্থা করেছিলেন, তারা মারাত্মক এক ভুল যে করেছিলেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। পাকিস্তানের ডঃ তাহিরুল ক্বাদরীর আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতার কথা বাদ দিলেও মিশরের তাহরীর স্কয়ারের এতো সফলতা রাতারাতি হতোনা, হোসনী মোবারকের পতন অনিবার্য হতোনা, যদিনা মিডিয়া তাহরীর স্কোয়ারের সাথে লাগাতর থাকতো। আর আজকের যুগে মিডিয়া যেকোন হাওয়াকে ওলট-পালট করে দেয়ার জন্যই যথেষ্ট, যার প্রমাণ হেফাজত এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

রাজনীতিতে পাল্টা কর্মসূচী, চ্যালেঞ্জ-কৌশল থাকবেই, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে একরাতের খেলায় সরকারকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া যেমন গ্রহণ যোগ্য নয়, একইভাবে রাতের অন্ধকারের, বাতি নিভিয়ে, মিডিয়াকে সরিয়ে দিয়ে অপারেশন শাপলা চত্বর সেটাও গ্রহণ যোগ্য নয়। ডেইলি স্টারের লাস্ট কল শিরোনামের বিরোধী নেত্রীর ফোনালাপের সংবাদের সত্যতা যদি থেকে থাকে, তবে সেটা অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ, কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও আল্লামা শফি সেটার সত্যতা অস্বীকার করেছেন, তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায়। কেননা, সন্দেহ সন্দেহই, তবুও সন্দেহের সিঁড়ি বেয়ে আসে প্রমাণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রমাণ করবে কারা ? যারা করবে, তারাওতো সমানভাবে অপরাধী।

শাপলা চত্বরের অপারেশনের ১৫/১৬ ঘণ্টা আগে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য অশালীন, অরাজনৈতিক এবং প্রতিহিংসামূলক, যা হেফাজতের মতো রাজনীতিতে অপরিপক্ষ এক শক্তিকে জামাত-শিবির-আর ১৮ দলের খপ্পরে আত্মাহুতি দিতে ঘিয়ের মতো কাজ করে। আওয়ামীলীগ নেত্রী নিজেও জানেন আলেম-উলামাদের কাছে সৈয়দ আশরাফ-মোহাম্মদ হানিফ-হাসান মাহমুদদের মতো নেতৃত্বের খুব একটা গ্রহণ যোগ্যতা যেমন নেই, ঠিক একইভাবে আলেম সমাজকে সঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করার জন্য এই টিম নিতান্তই এক অপরিপক্ষ, যেমন মায়ের কাছে দুধের শিশু। আলেম-উলামাদের সাথে নেগোসিয়েশন করার জন্য আওয়ামীলীগের উচিত ছিলো মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ-মরহুম জিল্লুর রহমানের মতো বা এই সমান পর্যায়ের নেতৃত্বের হাতে দায়িত্বে দেয়া।আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বের ব্যর্থতার ফলে হেফাজত বিএনপি ও জামাতের কাছে আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয়। কেননা, বিএনপি এবং জামাত যেমন হেফাজতকে নিজেদের বলয়ে নিতে তৎপর , একইসাথে আওয়ামীলীগ সাধ-আহ্লাদ করে হেফাজতকে ঢাকা নিয়ে এসে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারে। এই যখন অবস্থা তখন আওয়ামীলীগ তার অস্তিত্বের ও গদি রক্ষার প্রয়োজনে যে কঠিন এবং মারমুখী ভূমিকা প্রদর্শন করে, মানবতা ও যুক্তির খাতিরে অবশ্যই তা যেমন নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য, একইসাথে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে আগামী ইতিহাস আওয়ামীলীগকে সমানভাবে দায়ী করবে-তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবরোধ নস্যাৎ করে রাতের অন্ধকারে অপারেশন শাপলা চত্বর করে আপাতত: ক্ষমতার মসনদ ঠিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও ইতিহাসের এই দায় থেকে আওয়ামীলীগ কিছুতেই পার পাবেনা।কেননা, পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে রাতের অন্ধকারে, বাতি নিভিয়ে, এমনকরে নিরীহ- নিরস্র জনতার উপর ঘেরাও করে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত একেবারেই বিরল, ইতিহাসের সেই অন্ধকূপ হত্যাকেও হার মানিয়েছে।

আবার কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে অপারেশন শাপলা ট্র্যাজেডিকে( অবশ্যই নিন্দনীয় এবং জঘন্য কাজ হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য)মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন ২৫শে মার্চের কালোরাতের সাথে তুলনীয় করে চলেছেন, তাদের সকলের সাথে বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে বিনীত অনুরোধ করছি, ৭১ সালের ২৫শে মার্চের ভয়াবহ কালোরাতের হত্যাযজ্ঞের সাথে অপারেশন শাপলাকে তুলনীয় করাটা কিছুতেই ন্যায় সঙ্গত হবেনা। কেননা, এতে জড়িয়ে আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, যেখানে দেশ স্বাধীনের পূর্বে হানাদারদের ও তাদের দোসরদের হাতে লক্ষ-লক্ষ নারী-পুরুষ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো, বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে, প্রতিটি বাঙালির প্রাণের স্পন্দনের সাথে শত-লক্ষ শহীদের আত্মা মিশে আছে।২৫শে মার্চ সেই শহীদের আত্মা আমার বাংলা মায়ের প্রাণের স্পন্দন, নাড়ির বন্ধন-যা বিচ্ছিন্ন হবার নয়। আমরা অবশ্যই অপারেশন শাপলার তীব্র নিন্দা জানাই, আমাদের শত-সহস্র-অযুত ধিক্কার দিয়ে এর নিন্দা জানাই, একই সাথে এই রাতে প্রকৃত পক্ষে কী ঘটেছিলো, একটি স্বাধীন-নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের বিচার বিভাগীয় কিংবা দেশী-বিদেশী এক্সপার্টদের সমন্বয়ে গঠিত উন্নত, নিরপেক্ষ, স্বাধীন, তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে প্রকৃত অবস্থা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হউক। অপারেশন শাপলা কারো কোন অতি মাত্রায় ক্ষমতা প্রয়োগের সেই সীমাহীন অপরাধকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হউক, সে যেই হউক না কেন।

আওয়ামীলীগ মজ্জাগত ভাবেই ক্ষমতাসীন হয়েই একব্যক্তির স্বৈরশাসন কায়েম করে থাকে, সেটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। ১৯৭১ সালের এই দলের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক অবস্থার কারণেই হউক আর তাদের মুদ্রা গত স্বৈরাচারী মানসিকতার কারণেই হউক, দলটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একুশ শতকের এই পৃথিবীতে এতো চড়াই-উৎরাই এর পরেও দলটি এখনো গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ রপ্ত করতে অভ্যস্ত নয়। আর তা নয় বলেই এতো বৃহৎ দল হয়ে গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েও বাংলাদেশের জনগণের জীবন-মান উন্নয়নের, একই সাথে সুস্থ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ চালু করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। বর্তমানে এ দলের কার্যক্রম এবং সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে মনে হয় আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব চরম দেউলিয়া,ঋণগ্রস্ত বিকারগ্রস্ত। আর এই রকম দেওলিপনা দল ও তার নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ কতোটুকু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে, সেটাই এক বিরাট প্রশ্ন। একই রাজনৈতিক দেউলিয়া ও অভাবগ্রস্ত অবস্থায় বিরোধীদল-বিএনপিও। আর এই যখন বিকারগ্রস্ত রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তাহলেতো সংঘাত, সহিংসতা, নির্বিচারে হত্যা, খুন, আগুন বাংলাদেশের জনজীবনে লেগেই থাকবে, বরং এখন তা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।আমাদের এই দেউলিয়া রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃত্ব কী একটু উদার মন-মানসিকতা নিয়ে দেশের নিরন্ন জনতার জান-মালের হেফাজতের দায়িত্বে কথা সদয়ের সাথে বিবেচনা করবেন, নাকি আরো উন্মত্ত ও পেশীসূলভ আচরণ করবে্ন, আগামীদিনের রাজনীতির গতি-পথই তাই বলে দিবে।সেই পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া আমাদের আর কোন গত্যন্তর নেই।

Salim932@googlemail.com
9th May 2013.UK.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *