উদ্দীন থেকে আর আলী-আমাদের সকল ভালোবাসা আর আশার আলো-

উদ্দীন থেকে আর আলী-আমাদের সকল ভালোবাসা আর আশার আলো-

।। সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ ।।

salimব্রিটেনে বাঙ্গালীর বসবাস এবং এর ইতিকথা বেশ দীর্ঘ এবং অনেক চমকপ্রদ উপাক্ষ্যান । শুরুতে বাঙ্গালীর জন্য ব্রিটেনের এই প্রাগৈতিহাসিক সাম্রাজ্যে বসবাস এবং মিশে যাওয়া এতো সহজ ছিলোনা বরং ছিলো কন্টকাকীর্ণ । নানা ঘাত-প্রতিঘাত,নানান উত্তান-পতন, অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে বাঙ্গালী আজ ব্রিটেনের মুল ধারায় সংযোযিতই শুধু হন নাই,এর চিন্তা-চেতনা আর অনেক ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারনী অনেক কিছুতেই বাঙ্গালীর দৃপ্ত পদ-চারণা আজ অনেক বেশী ব্যাপৃত, কোন-কোন ক্ষেত্রে অনেকের হিংসার ও জিগাংসার কারনে পর্যবসিত হয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি,শিল্পকলা,ব্যাবসা,প্রসাশন-সর্ব সেক্টরে আজ বাঙ্গালীর সমান পদ চারনা।আমাদের নতুন প্রজন্মতো অনেকের কাছে রীতিমতো ঈর্ষার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে,সুযোগ আর যথাযথ ক্ষেত্র পেলে বাঙ্গালীও যে অনেক কিছু করতে পারে, আজকের রাষ্ট্রদূত আনোয়ার আলী,টাওয়ার হ্যামলেটস এর নির্বাচিত এক্সিকিউটিব মেয়র লুতফুর রহমান,মানচেষ্টার এর ব্যাবসায়ী এবং ব্রিটেনের মুলধারার অর্থনীতিতে প্রভাবশালীর তালিকার উপরের দিকে যার নাম অত্যন্ত যত্নের সাথে নেওয়া হয় তিনি আমাদের ইকবাল আহমেদ,ব্রিটেনের কারী ইন্ডাষ্ট্রিকে যিনি তার মেধা আর শ্রম দিয়ে শিল্পের আসনে নিয়ে এসেছেন এবং যে শিল্পের পুরষ্কারকে একটা স্থায়ী উন্নত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্টিত করেছেন,তিনি আমাদের এনাম আলী,ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আইনসভা লর্ড সভার সদস্য ও লেবার দলীয় সম্মানীত পিয়ার ছাতকের পলা মঞ্জিলা উদ্দীন থেকে আজকের লেবার দলীয় সম্মানিত পার্লামেন্ট সদস্য, সিলেটের বিশ্বনাথের অহংকার, বাঙ্গালীর আরো এক উদীয়মান রত্ন-তারকা,যিনি ইতিমধ্যে নিজের কর্ম-কান্ড দিয়ে শুধীজনের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন,ব্রিটেনের শিক্ষায় শিক্ষিত আমাদের রোশনারা আলী-আমাদের সকল গর্ব আর অহংকারের উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা,ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস আর ইভিনিং ষ্টাণ্ডার্ড– যার মধ্যে আগামীদিনের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সুপ্ত-প্রতিভা দেখতে পেয়ে মন্তব্য করেছে, ব্রিটেন হয়তো আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রোশনারাকে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।

রোশনারা একদিকে যেমন রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে অনন্য এক সমাজকর্মী হিসেবেও নিজেকে সর্বদা নিবেদিত রেখেছেন।লন্ডনের ইষ্টএন্ডে বড় হওয়া রোশনারা স্কুল জীবন কেটেছে টাওয়ার হামল্যাটস এর মালব্যরী গার্লস হাই স্কুলে,পড়েছেন বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্টান অক্সফোর্ড থেকে দর্শন,রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি বিষয়ে নিয়েছেন স্নাকোত্তর ডিগ্রী।পুথিগথ বিদ্যাকে নিজের জীবনে ধারন করে বাস্তবতার সমন্নয় করে নিজ বারা বেথনাল গ্রীণ এবং বো এলাকার জনগণের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে, একইসাথে জনকল্যাণে দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে জড়িয়ে পড়েন লেবার পার্টিতে,সেখানে নিজের যোগ্যতা আর কর্ম অভিজ্ঞতার ফল স্বরূপ লেবার পার্টির টিকেট নিয়ে ২০১০ সালে সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রীণ-বো এলাকা থেকে বিপুল ভোটে প্রথম বাঙ্গালী এম,পি হিসেবে পার্লামেন্টে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নেন।

সাংসদ হবার আগে,২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রোশনারা কৃতিত্বের সাথে কাজ করেন হোম অফিসে একজন টিম লীডার হিসেবে।সেখান থেকে তিনি যোগ দেন দ্য ইয়ং ফাউন্ডেশনে, এখানে তিনি একজন এসোসিয়েট ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দেন ২০০৫ সালে এবং ২০১০ সাল পর্‍্যন্ত কর্মরত ছিলেন।তারও আগে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্‍্যন্ত তিনি ইনষ্টিটিউট ফর দ্য পাবলিক পলিসি রিসার্চ এ একজন রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।উল্লেখ্য এটা অত্যন্ত সম্মান জনক পেশা,যে কোন একজন গ্রাজুয়েট/পোষ্ট গ্রাজুয়েট এর জন্য পাবলিক পলিসি রিসার্চ এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করা বিরাট এক সৌভাগ্যজনক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, যেখানে নিজের কর্ম দক্ষতা ছাড়াও অনেক জ্ঞানী-গুনীজনের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ ছাড়াও রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের অনেক খুটিনাটি বিষয় যেমন অবগত হওয়া যায়, তেমনি অনেক তথ্য-উপাত্ত্য সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাই ছাড়াও এগুলো বিশ্লেষণ এবং ইমপ্লিমেন্টশনের প্রায়োগগীতা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।নীতি-নির্ধারণী বিষয়,আইন-কানুন প্রণয়ন,বাস্তবায়ন,জনপ্রশাসনে জনকল্যাণের লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পণা মুলত হাতে খড়ি এখান থেকে তিনি শুরু করেন।তৎকালীন লেবার দলীয় নীতি-নির্ধারণী,কর্মী-সমর্থক আর নির্বাচক মন্ডলী রোশনারার কর্ম-দক্ষতা,আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় অভিভূত হয়ে তাকে বেথনাল-গ্রীণ-বো এলাকায় পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য যথার্থই উপযুক্ত মনে করেছিলেন,যার ফলশ্রুতি স্বরূপ আজকের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর নির্বাচিত সদস্য।

রোশনারা ভালোবাসেন জনগনের সাথে থেকে জনকল্যাণমূলক কাজ করে যেতে, কাজ পাগল রোশনারা অত্যন্ত সহজ-সরল,সাধা-সিধে জীবন যাপন করেন।রোশনারার বিনয়ী স্বভাব সর্ব মহলে প্রশংসিত, অতি সম্প্রতি তার বাংলাদেশ সফর কালে বাংলাদেশের আরো দুজন নেত্রীর প্রতি সম্মান ও বিনয় প্রকাশের নিমিত্তে যেমন তিনি বলেন,খালেদা-হাসিনা-উনারা আমার মুরুব্বী,আমার শ্রদ্বার আসনে অধিষ্টিত,এতে হাসিনা-খালেদা যেমন সম্মানিত হন, একই সাথে রোশনারাও হোন সম্মানিত এবং গৌরবান্বিত।

আমাদের চারিপাশের অনেক অসংগতি আর অনেক সুখ-দুঃখের সাথে জড়িয়ে আছে এক রাশ আশা আর হতাশা,আশা-নিরাশার প্রতিনিয়ত দোলাচলে বাঙ্গালীর নিরন্তর সংগ্রামের একরাশ আশার এবং আগামী স্বপ্নের অমিত অযুত এক শক্তির আলোর নাম রোশনারা আলী,যেমন করে অন্য সকল প্রথিত যশা,খ্যাতিমান সব বাঙ্গলীর নাম শ্রদ্বা,আবেগ আর ভালোবাসায় বুক উজাড় করে এক নিঃশ্বাসে নেয়া যায় । রোশনারা নিজ কর্মগুন আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, এবং বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে চলে বাঙ্গালীর সৌর্য-বীরত্ত্ব গাথা ব্রিটিশ ইতিহাসে আরো উজ্জ্বল করে তুলবেন,নিয়ত এই আশাই করি।সাথে সাথে এই আশাও করি,রোশনারা ব্রিটিশ-বাঙ্গালী শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষানুরাগী হিসেবে ব্রিটিশ মূলধারায় তাদের অংশগ্রহণার্থে সীমিত সাধ্যের মধ্যে হলেও অংশগ্রহণমূলক কর্মপরিকল্পণা নেওয়ার উদ্যোগ নিবেন, তাতে যেমন আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য পথ উম্মুক্ত হবে, একই সাথে রোশনারাও হবেন আরো সমৃদ্ব এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ত্ব।

সাংসদ রোশনারা যেমন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন, আশার আলো দেখান,পলা মজ্ঞিলা উদ্দীন ও ব্যাতিক্রম কিছু ছাড়া সমান ভাবে অনুপ্রাণিত করেন।অতি সম্প্রতি সানডে টাইমস তাদের লীড নিউজে ব্যারোনেস উদ্দীনকে নিয়ে সংবাদ ছেপেছে,যা রীতি মতো উদ্বেগজনক। কোন প্রকারের বিতর্কে না গিয়ে বিনয়ের সাথে শুধু এটুকুই বলতে চাই,একজন পলা উদ্দীন যখন ব্যারোনেস হয়ে যান, তখন যেন আমরা বাঙ্গালীরা নোবেল জয়ী ডঃ ইউনূসের ভাষায় অনেক উপরে উঠে যাই,যেখান থেকে আমাদেরকে আর কেউ নামাতে পারবেনা।“ আমি বিশ্বাস করি এবং দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি ব্রিটেনের সর্বোচ্চ সভা লর্ড সভার একজন সদস্য হওয়ার পরে একজন পলা উদ্দীনের আর কিছু চাওয়ার এবং পাওয়ার থাকতে পারেনা,সেখান থেকে আমরা সাধারন জনগন ব্যারোনেস উদ্দীনকে নীচের দিকে নামতে দেখতে চাইনা, বরং চাই উত্তরোত্তর সাফল্য,তাই ছোট-খাট ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র স্বার্থ জলাঙ্গলী দিয়ে, ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থের প্রতি অবিচল শ্রদ্বা আর ভালোবাসা স্বরুপ সম্মান দিয়ে, একই সাথে আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাথা উচু করে গর্বিত ব্রিটিশ-বাঙ্গালী হিসেবে লেবার পিয়ার হিসেবে লর্ড সভায় পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশনে আবার সমাসীন হবেন,বাঙ্গালীর হ্রদয় নিংড়ানো অযুথ ভালোবাসা রইলো আপনার চলার পথের পাথেয়।

জয় হউক চিরন্তন বাঙ্গালীর।

(Salim932@googlemail.com

Published amadersylhet.com,probash.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *