ডেভিড ক্যামেরনের এমপি পদেও রিজাইনঃ সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং ক্যামেরন যুগের অবসান

ডেভিড ক্যামেরনের এমপি পদেও রিজাইনঃ সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং ক্যামেরন যুগের অবসান

সৈয়দ  শাহ সেলিম আহমেদ-

 

কনজারভেটিভ পার্টি যখন দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে এবং প্রচন্ড জনপ্রিয় লেবার সরকারের বিপরীতে বিশেষ করে ব্লেয়ার-ব্রাউনের বিপরীতে একচ্ছত্র নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো- ঠিক তখনি কনজারভেটিভ দলে উইটনি থেকে উঠে আসা এক তরুণ দল মাতিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতির লাইম লাইটে শুধু এলেননা, সেদিন কনজারভেটিভের কনফারেন্সে উপস্থিত থেকে সেই তরুনের দৃপ্ত উচ্চারন আর বলিষ্ট নেতৃত্ব প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তারা সকলেই স্বীকার করেছিলেন, কনজারভেটিভ দল দীর্ঘদিন পর একজন নেতা খুঁজে পেয়েছে, যে দলকে ক্ষমতায় নিতে পারবে। তরুন ক্যামেরন সত্যিই কনজারভেটিভ দলকে কোয়ালিশনের মাধ্যমে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, অর্থনীতিতে চরম কৃচ্ছ্রতা নীতি অবলম্বন করেও মাত্র ৫ বছরের সময়ের ব্যবধানে দলকে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে পূণরায় ক্ষমতাসীন করেছিলেন। আর ক্যামেরনও নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে চলেছিলেন।

cameron-resign

 

 

 

 

 

 

 

 

ক্যামেরন যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তখনি ইউরোঁপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে নিজের প্রত্যক্ষ ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রাজনীতির চালে ভুল চালটি দিয়ে ফেলেন, যার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা হয়েও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা আর জনরায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ক্যামেরন নিজের ইমেজ সংকট উদ্ধারে সক্ষম হলেও ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্ক ব্রিটেনে চাঙ্গা থামাতে পারেননি।বরং বৃদ্ধিই শুধু হচ্ছেনা, নানা সংকট ও আস্থার ইমেজ সংকটে ব্রিটিশ রাজনীতি এখন হাবুডুবু খাচ্ছে।

 

আজকে নাটকীয় ভাবে ডেভিড ক্যামেরন আবার নিজ সংসদীয় আসনে আর এমপি থাকতে চাননা বলে ইস্তফা দিয়েছেন এবং বলেছেন তার এই এমপি পদে পদত্যাগ ইমিডিয়েট এফেক্ট হবে। অক্সফোর্ড শায়ারের উইটনি আসনে ক্যামেরনের এই পদত্যাগের ফলে এখানে বাই-ইলেকশন হবে।

 

ডেভিড ক্যামেরনের এই নাটকীয় পদত্যাগে ব্রিটেনের রাজনীতিতে চলছে তোলপাড়। কেউ কেউ বলছেন, ক্যামেরন প্রাইম মিনিস্টার থাকাকালে গ্রামার স্কুলের বিরোধীতা করেছিলেন। বর্তমান প্রাইম মিনিস্টার টেরেজা মে গ্রামার স্কুল ফিরিয়ে আনতে চান। সরাসরি মে` র সাথে   ক্যামেরনের  এই দ্বব্ধ কনজারভেটিভ পার্টিকে করে তুলবে ব্যতিব্যস্ত অথবা নানা আলোচনা ও বিতর্কের জন্মই শুধু নয়, ব্রেক্সিট প্রসেসিং এবং গ্রামার স্কুল ইস্যুতে ক্যামেরন মুখ খুললে টেরেজা মে কেবিনেট শুধু বিব্রত নয়, নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। অবশ্য ক্যামেরন আইটিভির সাথে সাক্ষাতকারে এমন প্রেডিকশন উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন একই সময়ে তার পদত্যাগ কেবলমাত্র কাকতালীয় মাত্র, অন্য কোন কারণ নয়।

cameron-sa

 

 

 

 

 

 

 

 

একজন পাস্ট ইমিডিয়েট সাকসেসফুল প্রাইম মিনিস্টার সাধারণতঃ তার উত্তরসূরীর অনেক কিছু নিয়ে মুখ খুলেননা কিছুকাল বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। যেহেতু তিনি এমপি রয়ে গেছেন, ব্রেক্সিট ইস্যু পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া ট্রিগার করলে বা কমন্সে গ্রামার স্কুল ইস্যু উত্থাপিত হলে বিতর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। ক্যামেরন সব কিছু স্বাভাবিক ও বিতর্ক এড়াতে একই সাথে পাস্ট ইমিডিয়েট প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে পেছনের বেঞ্চে বসাটাও শোভনীয় মনে করেননি হেতু – পদত্যাগ করেছেন বলে রাজনৈতিক  বুদ্ধারা সেটাই বলছেন। কিন্তু রাজনীতির অন্ধর মহলের খবরাখবর যারা রাখেন, তারা জানেন গ্রামার স্কুল ও ব্রেক্সিট ইস্যুতে ক্যামেরন পার্লামেন্ট বিতর্কে অংশ নিলে টেরেজা মে জন্য দলীয় প্রধানের পদে এককভাবে ইমেজ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে।বিশেষ করে আইটিভির পলিটিক্যাল করাসপন্ডেন্ট পল ব্রান্ডের টুইট থেকে এ প্রশ্ন সামনে এসেছে বড় আকারে। পল টুইট করেছেন, সাবেক এডুকেশন সেক্রেটারি নিকি মর্গানের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, টেরেজা মের গ্রামার স্কুল প্ল্যানকে কমন্স সভা সমর্থন করবেনা। নিকি মর্গান জানিয়েছেন। তাই কোন ধরনের ধুম্রজাল সৃস্টি হওয়ার আগেই ক্যামেরন নিজেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।

 

মাত্র কয়েকমাস আগেও ব্রিটেন ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অত্যন্ত পাওয়ারফুল এক প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে যিনি ক্ষমতায় ছিলেন, একটি মাত্র ভুল রাজনীতির চালে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে চলে যেতে হয়েছে। আপাতঃ দৃষ্ঠিতে ক্যামেরন যুগের অবসান মনে হলেও ৭৪,০০০ পাউন্ডের সাংসদের চাকুরী ছেড়ে,  ক্যামেরনকে যারা কাছে থেকে দেখেছেন, তারা বলছেন, ক্যামেরন হয়তো নিজেকে অন্য কোন এক সাকসেসফুল পার্সন হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। সেজন্যে হয়তো পদত্যাগ করেছেন এমপি থেকেও।

nicki

 

 

 

 

 

 

 

 

(সাবেক এডুকেশন সেক্রেটারি নিকি মর্গান)

ডেভিড ক্যামেরনের আগে লেবার দলের আরো এক প্রভাবশালী নেতা টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন ক্ষমতা থেকে সরার পর বক্তৃতা আর ইউএন এনভয় ও আত্মজীবনী লিখে প্রচুর কামিয়েছেন, একই সাথে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন। ব্লেয়ার বক্তৃতা, আত্মজীবনী, জাতি সংঘ মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এনভয় ছাড়াও প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি ২৫০,০০০ পাউন্ড করে আয় করেছেন। আর গর্ডন ব্রাউন  আফটার ডিনার স্পীচ ও ইউ এন এডুকেশন এনভয় হিসেবে ৬৫,০০০ পাউন্ড করে আয় করেন। সেজন্যে, কেউ কেউ মনে করছেন, ক্যামেরন হয়তো সেরকম কিছুও করতে পারেন।

may-n

 

 

 

 

 

 

 

 

এদিকে টেরেজা মে, লেবার নেতা জেরেমি করবিন, সাবেক কনজারভেটিভ নেতা কেনেথ ক্লার্ক ডেভিড ক্যামেরনের প্রশংসা করে গণমাধ্যমে অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন। টেরেজা মে বলেছে, ক্যামেরনের সাথে কাজ করতে পেরে তিনি গৌরবান্বিত, জেরেমি করবিন ক্যামেরনের জন্য ভবিষ্যত শুভ কামনা করেছেন। আর কেন ক্লার্ক বলেছেন,  ব্রেক্সিট প্রশ্নে ক্যামেরন একজন এক্সিডেন্ট আর্কিট্যাক্ট, যার সাকসেস ইতিহাসে ঢেকে দিলো বলে মন্তব্য করেছেন।

https://www.youtube.com/watch?v=H9E8oRz6iFk

salim932@googlemail.com

12th Sept 2016, London.