সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ। লন্ডন টাইমস নিউজ । ২৮ এপ্রিল। ২০১৯। হওয়াই(বা হোয়াই) -দ্য নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক, যারা মূলতঃ ব্রিটেনে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক চালু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেন ও চায়নার মধ্যে অনেকটাই সমঝোতা হয়ে আছে। চায়না হওয়াই কোম্পানি সেলক্ষ্যে কাজ শুরুও করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, চায়নার এই হওয়াই কোম্পানি মূলত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ইন্টেলিজেন্স সংস্থার নেটওয়ার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প এরই মধ্যে ব্রিটেনকে সতর্ক করে দিয়ে চায়নিজ এই কোম্পানিকে ব্রিটেনের ফাইভ জি নেটওয়ার্ক চালুর দায়িত্ব না দিতে প্রকাশ্যেই বলেছেন। মার্কিনীদের মতে, হওয়াই চায়নার রাষ্ট্রীয় ইন্টেলিজেন্স সংস্থার নেটওয়ার্ক।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে টেলিগ্রাফে হওয়াই নিয়ে ব্রিটেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বা এনএসসির বৈঠকের আলোচিত এই হওয়াই নিয়ে লিক ডকুম্যান্টস এবং পাচ কেবিনেট মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ, লিয়াম ফক্স, জেরেমি হান্ট, গ্যাভিন উইলিয়ামসন, প্যানি মর্ডান্ট্যের বিরোধীতার বক্তব্য মিডিয়ায় ফাস হয়ে পড়ে। এনএসসির এই হাই প্রোফাইল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের বিষয়াদি কিভাবে ফাস হলো কেবিনেট সেক্রেটারি স্যার মার্ক এ নিয়ে ইনকোয়ারির ঘোষণা দিয়েছেন। চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড বেইজিং এ রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ সামিটে যোগদান উপলক্ষ্যে বক্তব্যের এক ফাকে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবেও এব্যাপারে তদন্তের কথা স্বীকার করছেন।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, টাইমস, গার্ডিয়ান এ ব্যাপারে স্পেশাল বুলেটিন সহকারে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। ব্রিটেনের সব মিডিয়া ছাড়াও ওয়েস্টমিনিস্টার এখন ব্রেক্সিট ভাইরাসের মতোই হওয়াই ভাইরাসে আক্রান্ত।ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের রেডিও অ্যাপিসোডে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং সকলের মতামত নিয়ে প্রচার করছে।
https://www.ft.com/content/98e9cd7c-240a-438a-93f9-909eb89836c5
হওয়াই নিয়ে ইনকোয়ারির মুহুর্তেই আরো এক খবর ওয়েস্টমিনিস্টারের রাজনীতিতে তোলপাড় তুলেছে। আর তাহলো অনেক লর্ড, পিয়ার, এমপি, মন্ত্রী ব্যবসায়িক স্বার্থ রাশিয়া এবং বেইজিং কোম্পানির সাথে জড়িত কিংবা তারা বেইজিং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চাকরী, কনসাল্ট্যান্সি অথবা বিনিয়োগের মাধ্যমে বেনিফিশিয়ারি হচ্ছেন। এমনটাই সানডে টাইমস গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে।
এরই ফলে মন্ত্রীরা চাচ্ছেন এ নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাতে লর্ড পিয়ারদেরও আইনের আওতায় আনা একই সাথে ব্রিটেনের যে সব ব্যাংক বীমায় এবং কোম্পানিতে বিদেশী স্পাই(গোয়েন্দা) কর্মরত, তাদের ভিসার মেয়াস বা স্ট্যাটাস যাই থাকুক না কেন, তাদেরকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়ার নীতিমালা নতুন করে সাজাতে চান।
https://www.thetimes.co.uk/edition/news/cash-for-lords-crackdown-in-new-cold-war-3nn8wp0m0
সেজন্যে ইতোমধ্যেই নীতিমালার ড্রাফট তারা করেছেন(মন্ত্রী)।
ধারণা করা হচ্ছে, হওয়াই চায়নার সরকার নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার ৯৯% শেয়ার নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় সংস্থার। যদিও চায়না বলছে, হওয়াই নেক্সট জেনারেশন ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জনক হিসেবে নিজস্ব নেটওয়ার্ক এর রেপুটেশন অত্যন্ত পরিষ্কার এবং এটা কেবলই মোবাইল নেটওয়ার্কেই সীমাবদ্ধ।
আজ চায়নার অ্যাম্বাসাডর টেলিগ্রাফে লিখে জানিয়েছেন, ব্রিটেন হওয়াই ফাইভ জি নেটওয়ার্কে অংশ গ্রহণ করবে কিনা সেটা ইন্ডিপেন্ডলি সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্যের প্ররোচনায় নয় বা বিচ্ছিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে নয়। অ্যাম্বাসাডর লি আরো লিখেছেন, হওয়াই তার নিজস্ব রেপুটেশন ট্র্যাক রেকর্ডের অধিকারি বিশেষ করে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য।
https://www.bbc.co.uk/news/uk-politics-48082589
এদিকে ব্রিটেনের সিকিউরিটি সংস্থা, এনালিষ্ট আর গোয়েন্দারা চাচ্ছেন, হুওয়াই নেটওয়ার্কে ব্রিটেনের পূর্ণ ডাটায় অ্যাক্সেসের অধিকার এবং সিকিউরিটি ডাটা ভেঙ্গে ব্রিটেন সিকিউরিটি সংস্থা বিশেষ করে এনএসসি যাতে ঢুকতে পারে-সেই অধিকার থাকতে হবে। কেবিনেট এনিয়ে আলোচনা হয়েছে।
(স্যার মার্ক)
হওয়াই ফাইভ জি নেটওয়ার্ক ব্রিটেনে কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষিতে অনেক নাটকীয় তথ্য যে আরো প্রকাশিত হবে সন্দেহ নাই। অনেক রাঘব বোয়াল রাশিয়া এবং চায়নার ব্যবসায়িক লিংক প্রকাশিত হতেও পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎ কালের সর্ববৃহত বিজনেস ওয়ার চায়নার সাথে ইনট্রোডিউজ করেছে, যা তাদেরকে চায়নার সর্ববৃহত রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প থেকেও দূরে সরিয়ে রাখছে। এতো কিছুর পরেও ব্রিটেন এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে যোগ দিয়েছে। ব্রিটেন ইতোমধ্যেই সিল্ক রোডের আওতায় (২০১৭) চায়নায় গুডস নিয়ে ট্রেন পাঠিয়েছে। বিশ্বের ১২৬টি দেশ এই রোড এন্ড বেল্ট ইনেশিয়েটিভ প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে-শত বাধা বিপত্তি সত্যেও।
হওয়াই নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে চায়না ফাইভ জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্রিটেন এবং ইউরোপে মোবাইল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন এক বিপ্লব নিয়ে আসবে, যা ব্রিটেন এবং ইউরোপের অনেক জ্ঞাত-অজ্ঞাত বিষয় ও ইতিহাস ঐতিহ্যের ব্যাপারে তোলপাড় করে তুলবে-সময় এবং সুযোগ সেটাই হয়তো নির্দেশ করছে।