লেখাটি বাংলা পোস্টের জন্য- লন্ডনের বাংলা পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
গত সপ্তাহে অনেক নাটকীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর এক অবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলো। এমন এক নির্বাচন, এমন এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং তার মধ্যদিয়ে এমন এক সরকার গঠিত হয়েছে, যা বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। রাজনীতি বিজ্ঞানেতো নয়ই, গোটা বিশ্বের সমসাময়িক কালের কোন ইতিহাস ঘাটাঘাটি করেও এর জুরি মেলা ভার। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এবং আওয়ামীলীগ ও এর নেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই গিনেস বুক রেকর্ডের দুর্লভ এক অধিকারী হয়েও যেতে পারেন। অতি উৎসাহী আওয়ামীলীগের কোন বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষী সেটা ট্রাই করে দেখলেও দেখতে পারেন। বলা যায়না এর ফলে হয়তো নেত্রীর কৃপা দৃষ্টি পেয়েও যেতে পারেন, যেখান থেকে ভাগ্যের সোনার হরিণের চাকাটা অনায়াসেই ঘুরে যেতে পারে।
আব্রাহাম লিংকন কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল অথবা আধুনিক ব্রীফ হিস্ট্রি অব টাইমের জনক হপকিন্স হয়তো এমন গণতন্ত্রের নয়া রূপ দেখে আশ্চর্য হয়ে বলে দিতে পারবেন বা পারতেন এই হলো ডেমোক্রেসি মেইড ফ্রম বাংলাদেশ। কেননা আজকের যুগ ব্রান্ডের যুগ। আর বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অনেক ক্ষেত্রেই নিত্য নতুন ব্র্যান্ড আর ডিজাইনারের অতি লোভনীয় এক অংশীদার, যেমন আমাদের গার্মেন্টস আর ম্যালামাইন কিংবা জুট ইন্ডাস্ট্রি আবার এর বিপরীতে আছে জিঞ্জিরা ইন্ডাস্ট্রি। অর্থাৎ বিশ্বের কোথাও যদি নতুন কোন পণ্য হউক সেটা যত ব্যয় বহুল প্রযুক্তি কিংবা মোটর গাড়ীর ক্ষেত্রে, জিঞ্জিরা নামক ফ্যাক্টরির ঐ দোকানীদের কাছে চাওয়ামাত্রই পরেরদিন সেই একই পন্য অতি সস্তায় হুবহু নকল করে পাওয়া যাবে, যাকে অনেকেই বলে থাকেন মেইড ইন জিঞ্জিরা। বিদেশীরাও সেটা আজ ভালো করে জানে।
ঢাকার রাজনীতিতে প্রো-লিবারেশন ও প্রো-পোলারাইজেশনের পক্ষের বৃহৎ অংশের জনগণের অভিমত হলো বিএনপি চলমান রাজনৈতিক সংকটে বড় ভুল চাল খেলে ফেলেছে। তাদের মত হলো, যেহেতু সারা বাংলাদেশে বিএনপি এবং ১৮ দলের পক্ষে জনমত তথা ৮৭% এর উপরে জনমত তাদের পক্ষে সর্বত্র, কোন কোন ক্ষেত্রে আরো বেশী, সেই অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে বড় ভুল করে বসেছে। তাদের যুক্তি হলো, বিএনপি যদি নির্বাচনে যেতো, তবে সুশীল সমাজ সহ বার্গেনিং ষ্টেক হোল্ডাররা এবং বিদেশী দূতেরা সহ সকলে মিলে যত কম রিস্ক ফ্যাক্টর করে বিএনপির জন্য নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে পারতো, সেক্ষেত্রে নির্বাচনে জনগণ বিএনপির পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটাতে পারতো, যেমন করে ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছিলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। তাদের অভিমত এক্ষেত্রে আরো হলো, এর ফলে বিএনপি জয়ী হলেও যে আশঙ্কা করা হচ্ছে আওয়ামীলীগ ভোট কারচুপি ও প্রশাসন ব্যবহার করে ভোটের রায় পাল্টে দিতো, তাহলে বরং আওয়ামীলীগের জন্য হিতে বিপরীত হতো। তাদের মতে, এর ফলে জনগণ খুব সহজেই নিজেদের উদ্যোগে রাস্তায় নেমে আসতো, যেমন করে বিগত সিটি নির্বাচনে মেয়র মহীউদ্দিনের নির্বাচনী ফলাফল বিএনপি পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করলে জনগণ নির্বাচন কমিশন চতুর্দিকে ঘেরাও করে ফলাফল প্রকাশে বাধ্য করেছিলো, একই অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম এরশাদের সময় আ স ম আবদুর রবের নির্বাচনী ফলাফলে। তাদের মতে, দেশ বিদেশের এতো মিডিয়া আর বিদেশী পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ফলাফল পাল্টে দেয়ার খেলা এতো সহজ হতোনা এবং তা করলে বিদেশীরা সহ সকল স্থরের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো-সরকারের পতন আপনা আপনিই হয়ে যেতো। রাজনীতি বিজ্ঞানের গাণিতিক এবং বৈশ্বিক সূত্র আর নিকট অতীতের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই পক্ষের মতামত যথেষ্ট গুরুত্বের দাবী রাখে।
কেননা বিএনপির নির্বাচনের বয়কটের ফলে আওয়ামীলীগ যেমন একতরফা নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে যায়, আবার অপরদিকে হঠাত করে তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা বিদেশী দূত সহ নির্বাচনী বার্গেনিং পয়েন্ট সমূহ এবং সমঝোতার রাজনীতির ষ্টেকহোল্ডারদের আহত করে, যতটা না আশান্বিত করেছিলো বিগত বছর সমূহে তারেক রহমানের রাজনৈতিক বক্তব্য, ততোটাই আশাহত ও ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে করে তুলে বিতর্কিত ও ইমেজ সংকটে ফেলে দেয়। যে বিচারেই দেখা হউক না কেন তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা কোন সুস্থ রাজনীতির চর্চা হয়নি। তারেক কি তাহলে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর খেলার শিকার ? সেটা সময়ই বলে দিবে।
আবার এর বিপরীতে, হার্ড লাইনের রাজনীতির ছক যারা কষেন, তাদের বক্তব্য আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়া যথার্থ, যদিও তথ্য উপাত্ত কিংবা ভোটের রাজনীতির হিসেব নিকেশ তাদের কাছে খুব একটা মুখ্য নয়। এই অংশে যারা জড়িত তারা সকলেই ভোটের রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে কোন কালেই ছিলেননা। এখনো নেই। তাদের মত হলো, আওয়ামীলীগ গোঁজামিল দিয়ে এবং ভারতের সহায়তায় নির্বাচন করতে পারলেও এই সরকার বেশীদিন ঠিকবেনা। আপাতত: দৃষ্টিতে তাদের যুক্তি অনেকখানি গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এখনকার বিশ্ব রাজনীতির সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রীতি নীতি ও ঘটনাপ্রবাহ যারা বিশ্লেষণ করেন, খবর রাখেন, তাদের ধারনা এর থেকে একটু ভিন্ন।
সেই তৃতীয় পক্ষের মত হলো, ১৯৯৬ সালের যে নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন থাকা সত্যেও বিএনপি মাত্র ১৫ দিনের মতো ঠিকেছিলো। ৯৬ এর নির্বাচনের সেই অবস্থাকে সামনে এনে অনেকেই ভাবছেন বা বলছেন, এবারও আওয়ামীলীগ ঠিকবেনা বা পারবেনা।
এই মতের সাথে একমত হওয়ার আগে, আমাদেরকে একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে ধারনা থাকতে হবে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্বাবধায়ক নামক একটা বিষয় জড়িত ছিলো এবং তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের সাথে আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত অনেকখানি মিল হলেও এর অন্তর্নিহিত বিষয়ে অনেক বিস্তর ব্যবধান যেমন রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সবচাইতে শক্তিশালী ডেমোক্রেটিক সরকারের এবং একই সাথে তাদের মিত্রদের একই অবস্থানে থাকার সুস্পষ্ট অবস্থান হেতু ৯৬ সালের মতো অবস্থা এবারকার কোন অবস্থাতেই হবেনা। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এখানে আলোচনার সুযোগ কম থাকায় শুধু মাত্র মোটা দাগের একটা কথাই বলতে পারি, ৯৬ সালের সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের যে সুযোগ ছিলো, আজকের বিরাজমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও বাধা হেতুসেনাবাহিনীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বা ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ একেবারেই নাই। তার উপর রয়েছে, সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনীর ভিতরকার বর্তমান ষ্ট্রাকচার, যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে ব্রিটেন আমেরিকার মতো সেনাবাহিনীর বিন্যাস কাঠামো এই সরকার করে ফেলায় এই দিক থেকে সবচাইতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত একটা বিরাট ফ্যাক্টর। ইতিহাস বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের চেয়ে ভারতের সমর্থন যে সরকারের পক্ষে থাকে, মূলত বাংলাদেশে সেই সরকার দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেই পাকিস্তান আমল থেকে ৯৬ পর্যন্ত এমনকি আজকের দিন পর্যন্ত সরাসরি আমেরিকা যে পক্ষে নেয়, বাংলাদেশে সেই সরকারের পতন ততো দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। যেমন ইয়াহিয়া, ৯৬ খালেদা সরকার, একইভাবে ৯০ এরশাদের সরকার ( রাজীব গান্ধী যতদিন এরশাদের প্রতি সমর্থন রেখেছিলেন, এরশাদ ততোদিন সোনায় সোহাগা ছিলেন)। ভারতের সমর্থনের সাথে তাদের মিত্র এবং কৌশলের অংশীদার চীন রাশিয়া প্রচ্ছন্নভাবে হাসিনার সরকারের পেছনে থাকবে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাসিনার সরকারের জন্য খুব একটা বাধা হয়ে দাঁড়াবেনা। কেননা ভারতপরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে হাসিনার সরকারের জন্য তারা কাজ করবে। আমেরিকা ইউনূস পুনর্বাসন এবং পদ্মায় ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কিংবা বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক থ্রি-ডি সিসমোগ্রাফিক- যা তারা আগেই হাসিনার সরকারের সাথে চুক্তি করে ফেলেছে, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে চাপ প্রয়োগ করে টিকফায় সই করিয়ে নিয়েছে– সুতরাং তারাও হাসিনার জন্য খুব একটা বাধা হবেনা। তাদের কাছে স্বার্থটাই বড়। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথা সারা বিশ্বের কোথাও এখন আর কেউ শুনেনা। কেননা এরা নিজেরাই দেনার দায়ে জর্জরিত। তবে এরা তাদেরকে এখনো বড় লাট হিসেবেই ভাবে। এখানেই সমস্যা রয়ে গেছে। ব্রিটেন যখন আশ্বস্ত হয়ে যাবে, হাসিনার সরকারের কাছ থেকে ডিএফআইডি প্রকল্প সহ অন্যান্য ব্যবসায়িক এবং শেল, গ্লাসগো আর এরোস্পেসের ব্যবসার সুবিধা আদায় করে ফেলবে, তখন ব্রিটেন অবস্থান বদলাতে থাকবে, যা সাধারণত: তারা করে থাকে।
বিএনপির জন্য সবচাইতে বড় রাজনৈতিক যে মিত্র এবং একই সাথে বর্তমান রাজনীতির বাজারে যে হট ইস্যু আর তাহলো জামায়াত শিবির। আওয়ামীলীগের সবচাইতে বড় সাফল্য হলো, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগে এবং জামায়াতের অতি তাণ্ডবের ফলে জনমনে প্রচার প্রোপাগান্ডা করে বিরোধীদলকে জামায়াতীকরণ এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গি করনে একীভূত করে ফেলেতে পেরেছে। বিএনপিকে এখন সেই অবস্থা থেকে কৌশলে বেরিয়ে আসতে হবে।
ডেমোক্রেসি মেইড ফ্রম বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের হলেও তাবত দুনিয়ার ন্যায় ডেমোক্রেসির আবশ্যিক শর্তই হলো আলাপ আলোচনা এবং সংলাপ। অথচ তারেক রহমান লন্ডনে প্রেস কনফারেন্স করে সংলাপ একেবারেই নাকচ করে দিয়েছেন। এর ফলে ডিপ্লোম্যাট এবং ভোটের রাজনীতির ষ্টেকহোল্ডারদের কাছে নিজের অজান্তেই নেগেটিভ সিগন্যাল দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতেইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে জঙ্গি কানেকশন ত্যাগ এবং তারেক রহমানকে আর কোন রাজনৈতিক বক্তব্য ও ভিডিও বার্তা না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। আর তারই ফল হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া কৌশলে বলতে বাধ্য হয়েছেন জামায়াত প্রশ্নে জোট সাময়িক এবং স্থায়ী নয়।
বিএনপি যত দ্রুত সংলাপ প্রশ্নে সামনে আগাবে ও চাপ সৃষ্টি করবে, সরকার ততো দ্রুত সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে।বিএনপি সংলাপ ও সমঝোতা বর্জন করে যত অবরোধ হরতাল ও হত্যা সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত হবে, সরকার ততো কঠোর হবে এবংসংলাপ দীর্ঘায়িত ও বর্জন আওয়ামীলীগের ভোটার বিহীন হাস্যকর সরকারের তামাসার নাটক দীর্ঘায়িত করবে।তামাসার নাটক করে হাসিনার সামনে এখন বিকল্পের রাস্তা খুলে গেছে। আবার সংলাপের বিপরীতে শুধুমাত্র জামায়াতের উপর ভর করে গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ঘটানোর মতো পরিস্থিতি, দলীয় শক্তি, কর্মীদের সেরকম উজ্জীবিত অবস্থা ও নেতাদের সেই রকম কোন মন মানসিকতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনুপস্থিত। কেননা নিজামীর রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ শুরু হয়ে যাবে। যে মেরুকরণের অগ্রভাগে মাহি বি চৌধুরী, পার্থ, অলি, মওদুদ, নাজমুল হুদা, কাদের সিদ্দিকী সহ আরো অনেকেই শরিক হয়ে যাবেন-রাজনীতির ছক সেভাবেই আগাচ্ছে, যেভাবে এরশাদ-জাফরের খেলা হয়েছিলো।
বিএনপির রাজনীতির সব চাইতে বড় ব্যর্থতা, দেশীয় রাজনীতির বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বর্তমান রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সম্পর্কে অজ্ঞতা।
জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে, জামায়াত ও তারেক রহমান, জামায়াত-বিএনপির ন্যায় একাকার হয়ে গেলে আগামীর বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি ও বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেবে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। বিশ্ব রাজনীতির এবং উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণে এমন ধারনা বার বার প্রমাণিত। অতি কট্টর এবং জঙ্গি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক নির্ভর রাজনীতির সংস্পর্শে বিশ্বের বড় বড় নামকরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও স্রোতের বিপরীতে অবস্থান করে হারিয়ে গেছেন। আগামীর নেতৃত্বের নিরাপদ ও অবারিত রাখার জন্য বিএনপি অবশ্যই এই দুয়ের মধ্যে বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট করতে হবে তাদের নিজেদের কাজ, কর্ম ও রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে। নতুবা মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি অসংখ্য সমর্থন থাকা স্বত্বেওজামায়াত শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য ও তাণ্ডবের বিপরীতে জাতীয়তাবাদী শক্তির সীমাহীন ও লজ্জাজনক পরাজয় ও নতজানু নীরবতা বিএনপি বিগত পাঁচ বছরে যেমন অক্ষরে অক্ষরে টের পেয়েছে, একইভাবে ৯০ এর রাজপথ ও রাজনীতির মাঠের নিয়ামক শক্তি ও বিএনপির প্রধান শক্তি ছাত্রদলের মতো বিশাল সংগঠন অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামের সময় পুলিশী তাড়াখেয়ে মাছের চোখের ন্যায় মিন মিন করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মধ্যে সংবাদ পত্রে বিবৃতি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা। বিএনপিকে সেই সব উপলব্ধি যেমন করতে হবে, এর গভীরে গিয়ে ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারের সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন আর জাসদের বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ন্যায় ছাত্রদলও একসময় ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।
আবার, বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আজ এই ভূরাজনীতির একেবারে সেন্টারে অবস্থিত। সেজন্যে এখন বাংলাদেশকে ঘিরে যেমন ভারত ভাবে, সমান তালে আমেরিকাও ভাবে। ঠিক তেমনি করে ভাবে ব্রিটেন, ইউরোপ এবং চীন। এই সব ষ্টেকহোল্ডারদের নীতি ও পলিসি, ব্যবসা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ সকল কিছুই কোনভাবেই একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা করে দেখার আর সুযোগ নেই। শুধু আমেরিকা, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক নীতি ও পলিসি হোল্ডারদের মন যুগিয়ে বা ফেভারে নিয়ে রাজনৈতিক গেইম খেললে হবেনা, পাশের দেশ ভারত এবং চীনকে সমানভাবে রাজনৈতিক কৌশলের অংশীদার করে নিতে হবে। আজকের যুগে কেবলমাত্র ভারত বিরোধী জিগির তুলে রাজনৈতিক পুরনো কৌশলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত আবার শুধুমাত্র ইসলামিকীকরণ কিংবা ইসলামিক কান্ট্রিদের সাথে কৌশল ঠিক করে সামনে এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ সীমিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের ফরেন পলিসি তথাকথিত প্রবাসী রাজনীতিবিদ আর জামায়াত লবিষ্টদের জোয়ারে সাজালে বা নিরূপণ করে বিএনপি মারাত্মক ভুল করেছে সেটাই প্রমাণিত। আজকের যুগে ইউরোপীয় ও ব্রিটিশরা কখনো ইনক্লূসিভ কতোটুকু পর্যায় পর্যন্ত মেনে চলে বা রক্ষা করে সেসব বিনয়ের সাথে বিএনপিকে আগে ভাগে জানতে হবে।
অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং বিশ্ব কূটনীতিতে ত্রি-ডি যেমন ডঃ মোমেন, ডঃ গওহর, আবুল মাল আব্দুল মুহিত- এই তিনজন আওয়ামীলীগের জন্য শত সমালোচনার পরেও বিশাল এসেট, হাসিনা সেটা ভালোকরেই জানেন। আর জানেন বলেই এই ত্রিরত্ন বা ত্রি-ডি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ভেতরকার কূটনীতি ও রাজনীতি আর অর্থনীতি এমন দক্ষ ও সুচারুভাবে সামাল দিয়েছেন, অত্যন্ত বেহায়াপনা ও তামাশা পূর্ণভাবে একেবারে স্রোতের বিপরীতে থেকেও হাসিনা আজব এক নির্বাচন করে সরকার গঠন করে ফেলেছেন। বিএনপিকেও জঙ্গি সন্ত্রাসীর দিকে না ঝোঁকে বরং এই রকম এসেট খুঁজে বের করে কাজ শুরু করে দিতে হবে, যদি সাফল্য আশা করে।
(চলবে)
Salim932@googlemail.com
১২ জানুয়ারি ২০১৪, লন্ডন