সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-লন্ডন থেকে
ব্রিটেনের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের সংগঠণ এবং জাসদ, আওয়ামীলীগ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কমিউনিস্ট পার্টি, গণজাগরণ মঞ্চ, শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ এসোসিয়েশন এর ব্যানারে সম্মিলিতভাবে শত শত প্রবাসী বাঙালি, পেশাজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মীবৃন্দ হাউস অব পার্লামেন্টের সামনে মানব বন্ধন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অফিস ১০ নম্বর ডাউনিং ষ্ট্রীটে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিলো সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, হত্যা, নির্যাতন ও বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার ও এসব তাণ্ডবলীলা বন্ধ সহ দুষীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবী সম্বলিত নানা রঙের ব্যানার। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের প্রবাসী বাঙালিরা একে অন্যের হাতে হাত ধরে সারি বদ্ধ ভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে মানব বন্ধনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা সকলেই ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের জনগণের উপর যে ভয়াবহ হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে দশম সংসদ নির্বাচনের অব্যাহতি পর পরই– তার বেদনায় ও শোকে সকলেই ব্যথিত ও মর্মাহত। প্রত্যেকের চোখে মুখে তাই প্রতিবাদের ভাষা ছিলো সোচ্চার। যেন একেকজন প্রবাসী একেকজন প্রতিবাদী এক জনসমুদ্র হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে। প্রত্যেকের হ্রদয় আহত ও ক্ষত বিক্ষত। যেমন আহত ও বিক্ষুব্ধ কবি লেখক শামীম আজাদ, তেমনি মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, সমভাবে আহত রাজনৈতিক নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। তাইতো এরা সকলেই আজ এক কাতারে হাতে হাত রেখে ঠায় দাড়িয়ে-যেন প্রতিবাদের সকল ভাষা আজ এক মোহনায় এসে মিলিত হয়েছে।
মানব বন্ধন অর্গেনাইশনের লিড সংগঠন সিডিআরএমবি মানব বন্ধন থেকে পায়ে হেটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় সংগঠনের পক্ষে পুষ্পিতা গুপ্তা বলেন, আমরা সকলে এই জঘন্য ন্যাকারজনক হত্যা ও তাণ্ডবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার। আমরা এর যথাযথ বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দ্রুত দাবী জানাচ্ছি। সেখান থেকে অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের হাই কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে তারা যথাশীগ্র সম্ভব স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পৌঁছে দিবেন।
এসময় মানব বন্ধনে এসে সহমর্মিতা প্রকাশ ও একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ফিটজ প্যাট্রিক এমপি, লিবারেল ডেমোক্রেটের হাউস অব লর্ডের ডেপুটি লিডার লর্ড ডোলাকিয়া, অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিউম্যান রাইটস এর চেয়ার লর্ড এভিভ্যুরি।
মানব বন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে গিয়ে ফিটজ প্যাট্রিক এমপি বলেন, তিনি ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশের এই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতনের বিষয় উত্থাপন করবেন। তিনি আশা করছেন, রোশনারা আলী এমপি, জেরেমি করবিন এমপি এই ডিবেটে অংশ গ্রহণ করবেন।
লর্ড এভিভ্যুরি এ সময় এই বার্বারিক এটাক এর নিন্দা জ্ঞাপন করে মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন।
মানব বন্ধনে সংগঠনের পক্ষ থেকে মিহির সরকার, পুষ্পিতা গুপ্তা, প্রশান্ত বড়ুয়া উপস্থিত সকল প্রবাসী বাঙালি ও সংগঠনদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের বিষয় শুনানিতে উঠছে। ইতিমধ্যে চার্লস টানক এমইপি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে রিজ্যোলুশন ফরওয়ার্ড করার সংবাদ নিশ্চিত করেছেন, যেখানে তিনি কড়া ভাবে এই সহিংসতার সমালোচনা ও প্রতিবাদ করেছেন।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪, লন্ডন।