মাহে রমজানে হাদীসের আলোকে তারাবীহ নামাজের রাকায়াত নিয়ে কিছু কথা-

মাহে রমজানে হাদীসের আলোকে তারাবীহ নামাজের রাকায়াত নিয়ে কিছু কথা-

মাহে রামাদান বা রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ রহমত স্বরুপ।আল্লাহর রাসূল,জান্নাতের মালিক রহমাতুল্লীল আলামীন জনাব রসূলে করীম মোহাম্মাদুর রাসুল্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,শাবান মাস আসার সাথে-সাথে এই বলে দোয়া করতেন,আল্লাহ আমাকে শাবান মাসের নিয়ামত দিয়ে মালামাল করে দিয়ে রামজান পর্যন্ত পৌছে দেও।কোরআন এবং হাদীসে এই রমজান শরীফ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান এবং প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে,সাথে সাথে এর অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।এক রেওয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে,রোজাদারের পুরুস্কার স্বয়ং আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে প্রদান করবেন।

এই রমজান মাস আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার জন্য রহমত-বরকত-মাগফেরাত হিসেবে অভির্ভূত হয়ে থাকে।হাদীস শরীফে(সহীহ বোখারী,সহীহ তিরমিযি,ইমাম হাম্বলী,ইবনে ক্বাসীর,প্রভৃতি)বর্ণিত আছে,একদা জুমআর খুৎবা প্রদানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা রাখেন,তখন বলেন আমীন,দ্বিতীয় সিড়িতে যখন পা রাখেন,তখন বলেন আমীন,তৃতীয় সিড়িতে যখন পা রাখেন,তখন বলেন,আমীন।নামায শেষে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই তিনবার অস্বাভাবিক ধরনের আমীন,আমীন,আমীন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,আমি যখন মিম্বরেরপ্রথম সিড়িতে পা রাখি,তখন জিব্রাইল আলাইহিসাল্লাম ওয়ী নিয়ে আসেন,বলেন,হালাক বা ধবংস হয়ে যাক,সেই সব ব্যাক্তি,যে তার বা তাদের মা-বাবা কিংবা উভয়ের একজন বা দুজনকে পেলো,অথচ খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারলোনা,এর জবাবে আমি বললাম আমীন।দ্বিতীয় সিড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল বললেন,ধবংস হয়ে যাক,সেই সব,যে রমজান মাস পেলো,অথচ নিজের গুণাহ-খাতা মাফ করে জান্নাত হাসিল করতে পারলোনা,জবাবে বলেছি আমীন । তৃতীয় সিড়িতে যখন পা রাখলাম,জিব্রাইল বললেন,ধবংস হয়ে যাক,সেই সব যার সামনে আমার রাসূলুল্লাহর নাম নেওয়া হলো,অথচ সে দুরুদ শরীফ পড়লোনা,জবাবে বলেছি আমীন।

প্রিয় পাঠক ভেবে দেখুন ফেরেসতাদের শর্দার জিব্রাইল আল্লাহর তরফ থেকে ওহী নিয়ে দোয়া করেছেন আর নবী-রাসূলদের সর্দার,সারা বিশ্বজাহানের জন্য রাহমাতুল লীল আলামীন,বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার জবাবে বলেছেন আমীন।আসমান-জমীন ধবংস হয়ে যেতে পারে,কিন্তু আল্লাহর রসূলের আমীন কিছুতেই মিথ্যে হতে পারেনা।বলা যায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই দোয়াতে সীল বা মোহর মেরে দিয়েছেন।

রমজান মাসে আমরা জানি এশার নামাজের পর জামায়াতের সাথে তারাবীহ নামায আদায় করে থাকি,যা বিশেষ ফজিলত এবং সূন্নত হিসেবে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে-বিদেশে এক শ্রেণীর টেলিভিশন চ্যানেলে এবং মিডিয়াতে দেখা যায়,অহেতুক কিছু রেফারেন্স টেনে বিভিন্ন মাযহাবের কথা বলে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত,কারো কারো জন্য আট রাকায়াত, আবার কারো কারো জন্য বিশেষ চার রাকায়াতের কথা বেশ জোরে-শোরে বলা হয়ে থাকে।এই নিয়ে দেখা যায় অনেকের মাঝে বিভ্রান্তি,কেউ-কেউ কিছুদিন থেকে ইমেইলে এই সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপনের আনুরোধ করেছেন।মূলত সে লক্ষ্যে আমার এই লেখার অবতারণা।চলুন সরাসরি হাদীস শরীফ থেকে আমরা এই ব্যাপারে যে সারমর্ম আছে তা খুজে দেখি।

এই ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু,যাকে হাদীস শাস্রের সবচাইতে নির্ভর যোগ্য সর্বাধিক হাদীস উপস্থাপক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সহীহ বোখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ,তিরমিযি শরীফ,ইমাম আবু হাণিফা,ইমাম মালেক,ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল,ইমাম ক্কাসীর,আবু দাঊদ,বায়হাক্কী,ষোয়াব-আল-ঈমান,কাণজুল ঈমান,ইত্যাদিতে-তিনি বলেছেন,রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যিনি বা যারা রমজান মাসে দিনের বেলা সকল প্রকার পাণাহার থেকে বিরত থাকবেন,পূর্ণ বিশ্বাস ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার বা মাফি চাইবেন,রাতের বেলা নামায-এবাদত করবেন,লাঈলাতুল ক্কদরের রাতে এবাদত করবেন,আল্লাহ পাক তাকে বা তাদেরকে মাফ করে দিবেন।তিনি আরো বলেছেন,রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়,শয়তানকে তালাবদ্দ্ব করে রাখা হয়।এখানে নামায বলতে তারাবীহকে বুঝানো হয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ পড়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন তার বর্ণিত হাদীসে,পরবর্তীতে হাদীস ব্যাখ্যাকারীরা আবু হুরায়রার হাদীসকে সবচাইতে নির্ভর যোগ্য বলেছেন।

হযরত সাঈব বিন য়্যাযিদ বলছেন, আমরা সাহাবীরা বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তে অভ্যস্থ হয়েছিলাম এবং খলিফা হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব-এর সময় থেকে সর্ব সম্মত ভাবেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ পড়ার স্বীকৃতি প্রতিষ্টিত হয়ে যায়(এটা মিরক্কাত আল মাফাতিহ-আনওয়ারুল হাদীস গ্রন্থের ভলিয়ূম ২ এর পৃষ্টা ১৭৫ এ বর্ণিত হয়েছে)।

সাহাবী হযর যাইয়দ ইবনে রুমান রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাবের সময় থেকেই রমজানে ২৩ রাকায়াত(২০ রাকায়াত তারাবীহ,তিন রাকায়াত ভিতর নামায) প্রচলিত হয়ে আসছে,যা আমরা অভ্যস্থ ছিলাম।

একই রকম বিশ রাকায়াতের বর্ণনা আল্লামা আলা দীন আবু বকর ইবনে মাসূদ  আল ক্কাসানী এবং বদর-আল-দীন এর ঊম্মাতুল ক্কারী গ্রন্থের হাদীসের বর্ণনাতে বিশ রাকায়াত তারাবি নামাযের কথা বলা হয়েছে,রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রেফারেন্স থেকে উদ্বৃত হয়েছে।

ইমাম তিরমিদি বলেছেন তিনির তিরমিদি শরীফে চ্যাপ্টার ওরশীপিং নাইটস অফ দ্য রামাদান পৃষ্টা ৯৮ তে বলেছেন, মেজরিটি সকল স্কলার,খলিফা, ইমাম,হাদীস বয়ানকারী,সাহাবী রাজিয়াল্লাহু আনহু সকলেই একমত তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত।ঊমর-আল ফতোয়াতে হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অন্য সকল সাহাবী বিশ রাকায়াতের কথায় মতামত দিয়েছেন।ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক,ইমাম সূফিয়ান আল তাওহরী,ইমাম শাফি, সহ অন্য সকল ইমাম তারাবীহ বিশ রাকাত বলে অভিমিত জোর দিয়ে উল্লেখ করে মতামত প্রদান করেছেন।

বাবুল ফেইথ ঈনায়া এ শরীয়াই নূক্কায়ায়হ ইমাম মোল্লা আলই আল ক্কারী ইমাম বায়হাক্কীর অনুরুপ বিশ রাকাত তারাবীহ বলে মতামত দিয়েছেন,যেখানে তাদের মতে হযত আবু বকর,হযরত ওমর,হযরত আলী,হযরত ওসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুদের রেফারেন্স টেনে মতামত বর্ণিত হয়েছে।

একইভাবে তাতোয়াই মারাক্কাই আল ফতোয়া(পৃ-২২৪)বলা হয়েছে আমীরুল মো-মেনীন হযরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহু বিশ রাকায়াত তারাবীহ   পড়েছেন এবং সেভাবে সকলেই পড়েছেন,বিশ রাকায়াতের ব্যাপারে খলিফা নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যেইয়ি আল দীন ইবনে ণোজাইম আল মিসরী,ইমাম হানাফী,ইমাম শাফেই,ইমাম গাজ্জালী,ফতোয়াই আলমগীরী,ইবনে আবেদীন আল শামী, সহ অসংখ্য সাহাবী,ইমাম,ফতোয়ার গ্রন্থে তারাবীহ বিশ রাকায়াত বলে অভিমত দেওয়া হয়েছে।ফতোয়া আলমগীরীর সাথে ফতোয়াই সিরায়ায়াইতে ও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব,হযরত ওবাঈব অবনে ক্কায়াব একই মত দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন।(হাদীসের রেফারেন্স গ্রন্থ ফিক্কাহ আল মিল্লাহ,হযরত আল্লামা মুফতী জালাল আদ দীন ,দিল্লী থেকে ২০০১ ১৪২১ হিজরী প্রকাশিত)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত বলে সঠিক এবং এতে কম-বেশী করার কোন মানে হয়না।তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে রাত ব্যাপী দীর্ঘ লম্বা নামায পড়েছেন,রাসূলুল্লাহর সকল সাহাবীহ রাজিয়াল্লাহু আনহু গণও একই মত পোষণ করেছেন।

এমতাবস্থায় অন্য কোন ভাবে তারাবীহ নামাজ কমানোর কোন অথেনটিক সুযোগ নেই।

রমজানের প্রথম দশ দিন এই দোয়া পড়তে পারেন, যা আল-হাকিম,ইমাম ইবনে হাব্বান আর আবু দাঊদ শরীফে বলা হয়েছে,আর তা হলো- লা ইলাহা ইল্লা আনতা,আল্লাহুম্মা আস্তাগফিরুকা লী জানবি ওয়া আসআলুকা রাহমাতিকা, আল্লাহুম্মা যিদিনী ঈলমা ওয়ালা তূযিগ ক্কালবী বাআয়দা ঈজ হাদাইতানী ওয়া হাবলী মিন লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়ায়াহাব,-যার মানে হলো আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই,ও আল্লাহ আমি তোমার কাছে আমার গুনাহ মাফি চহিতেছে,আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি,ও আল্লাহ আমাকে জ্ঞান দান করো,আমার হ্রদয়-মন-অন্তকরণ কে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে সঠিক পথে পরিচালিত করো,এবং তোমার দয়া থেকে আমার জন্য ক্ষমা মঞ্জুর করো,অবশ্যই তুমি ক্ষমা প্রার্থনাকারী দয়ালু দাতা।

আরো সহজ এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে তিরমিয শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়াহদীনী ওয়ারযুক্কনী।প্রথম দশ দিনে বেশী বেশী করে এমন দোয়া করা উচিৎ।

অবশ্যই বেশী বেশী করে কোরআন তেলাওয়াৎ করা জরুরী,কারণ এই রমজানেই কোরান নাযিল হয়েছে।

রমজানের দ্বিতীয় দশ দিন কোরআন তেলাওয়াতের সাথে সাথে বেশী বেশী করে এই দোয়া করা যেতে পারে,যা সহীহ বোখারী শরীফে ভলিউয়ূম ৮ এর পৃষ্টা ২১২-৩ এর নাম্বার ৩১৮ তে বলা হয়েছে, আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আব্দুকা,ওয়া আনা আলা আহদীকা, ওয়াহদীকা মা-স ত্বাথায়তা আঊয়্যূযুবিকা মীন শাররী মা-স থাথায়তা আবু-উ-লাকা বিনিঈমাতিকা আলাঈয়া,ওয়া আবু-উ-বিযানবী ফাগফিরলী ফাইন্নিহু লা ইয়াগফিরু জুনুবা ইল্লা আনতা।

রমজানের তৃতীয় দশ দিনে বেশী বেশী করে এই দোয়া করা যেতে পারে,যা আবু-দাঊদ, আহমদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,আর তা হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ানাঈমাহা ওয়া বাহজাতাহা ওয়া আউয়ূযুবিকা মিনান নারি ওয়া সালা সিলিহা ওয়া আগলালিহা।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা আর তা থেকে পরিপূর্ণ সকল নেয়ামত আহরণ করার তৌফিক দান করুন,আমিন।

আল্লাহ পাক সকলের সহায় ও মঙ্গল করুন-এই হউক আমাদের প্রার্থনা।

Salim932@googlemail.com

13th July 2012,UK.

My all links are as:- www.priyo.com click on syed shah salim ahmed blog

www.bdnews24.com/bangla/click on blog salim ahmed 

www.amarblog.com…………click on syedssalimahmed blog

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *