সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,যুক্তরাজ্য থেকে
সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে একেবারে নর্থইষ্ট অব ইংল্যান্ডের টাইন এন্ড উইয়ার নদীর তীর ঘেষে ক্যাথারিণ কুকসন শহর বলে খ্যাত ছোট্র-ছিম-ছাম গোছানো এক শহরের নাম সাউথশীল্ডস।এই সাউথশীল্ডস মূলত নর্থ টাইন সাইড বারার মধ্যে অবস্থিত।একসময় এই শহর শিপিং ব্যাবসার জন্য বিখ্যাত ছিলো,আজও দুনিয়া জোড়া এর খ্যাতি পরিব্যাপ্ত।আইরিশ সমুদ্রের একেবারে টল-মলে কালো-নীল এই দুই রঙ এর পানির এক অপুর্ব সমাহার দেখা যায়, এই সাউথশীল্ডস এর এক পাশ ঘেষে গাড়ি দিয়ে যে পথ চলে গেছে সান্ডারল্যান্ড,নিউক্যাসল হয়ে,সেই পথ অনুসরণ করে চলতে-চলতে আপনাকে বিমুগ্ধ করবেই।
সাউথশীল্ডস শহরে ঢুকার পথে-পথে ক্যাথারিণ কুকসনের লিখিত নানান পংক্তি সাঝিয়ে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে-ধারে,সাগর সন্নিকটে পার্কটিকে নর্থটাইনসাইড বারা তাদের এই স্বনামধন্য মহীয়সীর নামে ক্যাথারিণ কুকসন পার্ক নামে অভিহিত করে সুন্দর করে সাঝিয়ে রেখেছেন,যা পর্যটকদের ও শিশুদের দারুণ আকর্ষণ করে।
ভিন দেশের এই শহরে ঢুকার পর থেকেই আপনাকে নিজ থেকেই ফিল করবেন,কোথায় যেন বেশ আপন আপন মনে হয়।কারণ শহরের প্রাণকেন্দ্র মার্কেট প্লেস থেকে পুর্ব-দক্ষিণে সোঝা হেটে বিখ্যাত সুপার ষ্টোর আসডা-ওয়ালমার্ট পেরিয়ে আপনি গিয়ে পরবেন একেবারেই চির আপন,চিরন্তন বাঙ্গালীর বসবাসে মুখরিত প্রাণ-চঞ্চল ওসেন রোড এর বিখ্যাত কারী ব্যাবসার এই একচ্চত্র বাংলাদেশীদের স্বর্গ রাজ্যে।দীর্ঘ-লম্বা এই ওসেন রোড এর এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত যে দিকে তাকাবেন,সে দিকে দেখবেন বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের নানা রঙ আর নানা বাহারি নামের ভিন্ন রং,কালার মাখিয়ে খাবারের হোটেল-রেস্তোরা ব্যাবসা,যা সারাক্ষণই কাষ্টমারদের আনাগোণায় থাকে মুখরিত।বলা হয়ে থাকে এই ওসেন রোড কখনো ঘুমায়না।সেই সকাল থেকে শেষ রাত অবধি,কোনটা একেবারে ফজরের নামাজ অবধি খোলা থাকে,প্রতিটা রেস্তোরাই কাষ্টমারদের উপস্থিতিতেই থেকে সদা ব্যাস্থ।
ওসেন রোড এর দুই পার্শ্বেই রয়েছে বাংলাদেশীদের সকল রেস্টুরেন্ট ব্যাবসা।একসময় যে দু একটা অন্য দেশীদের খাবারের হোটেল ছিলো,বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের পদচারণা ও দাপটে তারাও সেখানথেকে ব্যাবসা ঘুটিয়ে কিংবা বাংলাদেশীদের কাছে বিক্রি করে চলে গেছেন।এখানে সারা-দিন-রাত ব্যাবসা চলতে থাকে,বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আলো জলমলে রাতের বেলা ব্যাবসার প্রসার বাড়তে থেকে মধ্যরাত অবধি।
ওসেন রোড এর নাইট লাইফ খুব ঝলমলে,নানা বর্ণের মানুষ,নানা ধর্মের ছেলে-মেয়েরা এখানে রাতের বেলা নাইট-লাইফ উপভোগ করতে ঝড়ো হয়ে থাকেন।ইদানিং সব কিছু ছাড়িয়ে বিদেশীদেরকে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশী আকর্ষণ করে আর তা হলো বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত রেষ্টুরেন্ট এর খাবার।কারণ রেষ্টুরেন্ট ব্যাবসায় বাংলাদেশীদের একচ্ছত্র আধিপত্য।বাংলাদেশীদের হোটেলের খাবারের মান ও খুব উন্নত,দামও তুলনামূলকভাবে সকলের সাধ ও নাগালের মধ্যে,আর বাংলাদেশীদের সেবার মানতো আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
ওসেন রোডে কমকরে হলেও শতাধিক বাংলাদেশীদের নতুন ও পুরনো রেষ্টুরেন্ট রয়েছে।বলা হয়ে থাকে একবার যে ওসেন রোডে পাত্তি গেড়েছে,তাকে আর পিছনে ফিরে তকাতে হয়নি।
এই ওসেন রোডে বাংলাদেশীদের সব চাইতে প্রাচীনতম ব্যাবসা প্রতিষ্টান যেমন রয়েছে মাষ্টার সাহেবের ষ্টার অব ইন্ডিয়া,আনোয়ার মিয়া,সানু(মরহুম)মিয়া ভ্রার্তৃদ্বয়ের আশা বালতি হাউস,মমতাজ রেষ্টুরেন্ট,মাহতাব মিয়ার(শুরুতে) ইন্টারন্যাশনাল,একইভাবে রয়েছে আজকের প্রজন্মের প্রতিনিধি যারা বাংলাদেশের আলোবাতাসে লালিত হয়ে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ভিন দেশের এই শহরে এসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ত্ব করে রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায় বাংলাদেশীদের সুনামকে আরো একধাপ এগিয়ে নয়ে চলেছে,তাদের মধ্যে রয়েছে ক্যাফে ইন্ডিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর নূর আহমদ কিনু মিয়া,মুফতি বোরহান উদ্দীন সহ আরো অনেকেই।
মাত্র কিছুদিন আগেও এই দুই ব্যাবসায়িক পার্টনার অন্যের রেষ্টুরেন্ট এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন,নিজেদের সততা,অধ্যবসায়,আর পরিশ্রম আর কাজের প্রতি একাগ্রতাই এনে দিয়েছে তাদেরকে সাফল্য,বর্তমানে নূর আহমদ এন্ড পার্টনার টিম সাউথশীল্ডস এর মাটিতে বেশ কিছু বাংলাদেশী ব্যাবসা প্রতিষ্টান পরিচালনা করার সাথে সাথে বাংলাদেশেও ব্যবসা প্রতিষ্টানে সাফল্যের সাথে ইনভেষ্টম্যান্ট করে চলেছেন।পাশা-পাশি বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস উদযাপণ সহ প্রাবাসীদের সকল কর্মকান্ডে সমানভাবেও সক্রিয় হয়ে আছেন।প্রবাসে বাংলাদেশ থেকে আগত নেতা-নেত্রীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ ও সংবর্ধনাও প্রদানে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সাংসদীয় আসনের একেবারে নিকটবর্তি হওয়াতে,একই সাথে ব্রিটেনের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ ডেভিড মিলিব্যান্ড এর সংসদীয় আসন এই সাউথশীল্ডস হওয়াতে বাংলাদেশী ব্যাবসায়িদের সাথে গড়ে উঠেছে লেবার পীয়ার ও দলীয় নেতাদের সাথে বিশেষ সখ্যতা,তার উপর বাংলাদেশীদের পরিবেশিত উন্নতমানের খাবার এক্ষেত্রে রেখেছেও এক বিশেষ ভূমিকা।সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ ডেভিড মিলিব্যান্ড বেশ কয়েকবার নূর আহমদের ক্যাফে ইন্ডিয়াতে আগমণই করে ক্ষান্ত হননাই,তাদের খাবারে ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে মিঃ মিলিব্যান্ড ক্যাফে ইন্ডিয়াতে কারি কুকিং এ অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশীদের সাথে একাত্নতা পোষণ করে সহমর্মিতার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপণ করেছেন।ক্যাফে ইন্ডিয়ার নিজস্ব ওয়েব সাইটে www.cafeindia1.com ভিজিট করে যে কেউ সেই সব ক্লিপ অতি সহজে দেখতে পাবেন,যাতে মিঃ মিলিব্যান্ড এর ঐ সাহসিকতা পূর্ণ বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের উৎতসাহ মূলক ব্যাক্তিগত প্রশংসা ও সুনামের বিশেষ দাবি রাখে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালিন মিলিব্যান্ড এর বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের সাথে ঐ সব একাত্ততা তখনকার সময়ে ব্রিটিশ লোকাল প্রিন্টিং মিডিয়ায়ও বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলো।
ওসেন রোডে বর্তমানে রেষ্টুরেন্ট ব্যাবসার পাশাপাশি আজকের প্রজন্ম নতুন নতুন ব্যাবসা যেমন মোবাইল ফোনের ব্যাবসা,ট্রাভেলস ব্যাবসা,গ্রোসারী ব্যাবসা ছাড়াও চ্যারিটিমূলক অনেক সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্টানের সাথে জড়িত হওয়ার তোড়-জোড় দেখা যাচ্ছে,এ ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ও বেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
9th May 2012.
PUBLISHED BANGLANEWS24.COM,deshebideshe.com, amadersylhet.com