সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- লন্ডন থেকে
আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূতিকাগার ব্রিটেনের নির্বাচনে ব্যালট পেপার জালিয়াতিতে বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী কমিউনিটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই উভয় কমিউনিটির নিকটজন এবং কাছের নেটওয়ার্ক এসোসিয়েটসদের মাধ্যমে ব্যালট পেপার জালিয়াতির শিকার হয়ে থাকেন। ব্রিটেনের নির্বাচন কমিশনের এক রিপোর্টে আজ এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং গার্ডিয়ানে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশন মনে করে এই এথনিক মাইনোরিটির খুব কাছের নেটওয়ার্ক অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে মুক্ত-স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের মাধ্যম নির্বাচনের ব্যালট পেপারে ভোট প্রদানের পথে বাধা এবং এর অপ-ব্যবহার করে থাকে এই কমিউনিটির নিকটাত্মীয় নেটওয়ার্ক।
লিভারপুল এবং মানচেস্টার ইউনিভার্সিটির নাটসেন সেন্টার কর্তৃক প্রণীত এই রিসার্চে নির্বাচন কমিশন অবগত হয়েছে, বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানী কমিউনিটিতে বয়স্ক এবং বড়দের সম্মান দেয়া হয় এবং তারা তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন ব্যালট পেপারে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিশেষ করে তাদের কারণে কমিউনিটির নারী এবং তরুণ তরুণীরা তাদের অমতে ব্যালটে ভোট প্রদান করতে অনীহা প্রকাশ করেননা।
উল্লেখ্য গত ২০০০ সালে সর্বাধিক ভোট ও ব্যালট জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী কমিউনিটির মধ্য থেকে এবং সে সময় বড় ধরনের ভোট-ব্যালট জালিয়াতি ধরা পড়েছিলো।
লিভারপুল এবং মানচেস্টার ইউনিভার্সিটির রিসার্চ দল এই দুই কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে তারা এই ব্যালট জালিয়াতির ভিক্টিমের শিকার হিসেবে পেয়েছেন। যেখানে দেখা গেছে প্রতি চারজনই বিগত সময়ে এই ব্যালট ভিক্টিমের শিকার।
নির্বাচন কমিশন তাদের ফাইন্ডিংস এ পেয়েছে, ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার বা ভাষা সমস্যা, কমিউনিটির লয়ালটি, ডিস্ক্রিমিনিশান, প্রেসার, প্রার্থী নির্বাচন ইত্যাদি নানাবিধ কারণে এই ইলেক্টোরাল ফ্রড এর শিকার এবং ঝুঁকির মধ্যে এই কমিউনিটিদ্বয়। তবে গবেষণায় গবেষকদল দেখেছেন, প্রচলিত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতিতে মূলত এই ইলেক্টোরাল ফ্রড ভিক্টিমের শিকার- যা পুরো ফায়দা উঠাচ্ছে এই সব কমিউনিটির সব চাইতে নিকটজন ব্যালটে ভোট প্রদান প্রভাবান্বিত করে, কোন কোন ক্ষেত্রে চেকিং সিস্টেমের অনুপস্থিতে পরিবারের কর্তা হিসেবে নিকটজনের সহায়তায় ব্যালট পেপার ফিল করে ইলেকশন অফিসে জমা বা পোস্ট করে দিচ্ছে, এতে ঘরের নারীদের কোন মতামতকে প্রাধান্য বা তাদের কোন কোন ক্ষেত্রে অজানাই রয়ে যাচ্ছে। এই কিন- নেটওয়ার্ক এতো প্রভাবান্বিত যে নির্বাচন সেন্টারে সশরীরে ভোটের ক্ষেত্রেও নারী ও তরুণ –তরুণীদের ভোটের ক্ষেত্রে মতামত চাপিয়ে দেয়, ব্যালটে সিল দিতে, আর তারা তাদের বয়স্কদের কথায় নিজের অজান্তে ও অমতে ভোট দিয়ে থাকে- যা ইলেক্টোরাল ফ্রড হিসেবেই বিদ্যমান আইনে বিবেচিত। আর এই ফ্রডের জন্য বিদ্যমান আইনে কারাদন্ডেরও বিধান রয়েছে। অথচ তারা ভিক্টিম হচ্ছে। এবং সেটা বাংলাদেশী –পাকিস্তানী কমিউনিটিতে সর্বাধিক।
গবেষকদল জানিয়েছেন, মেইনষ্ট্রীম রাজনৈতিক দলগুলোতে তারা এই সমস্যা চহ্রিত করে ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে তাদেরকে মিডলম্যান- কিন-নেটওয়ার্কের উপর খুশীই পেয়েছেন। কারণ এই মধ্যস্থকারী কাছের লোকজনই এই ইলেক্টোরাল ফ্রডের সাথে জড়িত ওতোপ্রোতভাবে।
পোস্টাল ভোটারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী পাকিস্তানী কমিউনিটিতে প্রক্সি ভোট প্রদানের তথ্যও তারা পেয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে আজ নির্বাচন কমিশন বলেছেন, আগামী মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে এই সব জালিয়াতি রোধে বিশেষ করে পোস্টাল ভোটের জালিয়াতি রোধে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে। ইলেকশন আইনে কোন প্রতিদ্বন্ধি পোস্টাল ভোট হ্যান্ডেল করা অফেন্সিভ বিবেচিত হয়- তাই নির্বাচন কমিশন পূণরায় তাদের ষ্ট্যাটুটরি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছেন।
ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশনের চেয়ার জেনি ওয়াটসন এ ব্যাপারে বলেন, নির্বাচনে ভোট-ব্যালট জালিয়াতি হয়েছে- এটা প্রমাণিত এবং এই সব জালিয়াতির সাথে জড়িত প্রার্থী এবং ক্যাম্পেইনররা, ভোটাররা এর শিকার। এবং এসব রোধে সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে, সকল পরিকল্পনা প্রস্তুত। নির্বাচনী কাজে জড়িত এবং নির্বাচনে সকল কমিউনিটির সকলকে গ্রহণযোগ্য আচরণ অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলে তিনি জানালেন।
28th January 2015, London