ম্যালকম বার্জের আত্মহত্যা, আমাদের হাউজিং বেনিফিট- যে প্রশ্নের উত্তর এখনো মিলছেনা

ম্যালকম বার্জের আত্মহত্যা, আমাদের হাউজিং বেনিফিট- যে প্রশ্নের উত্তর এখনো মিলছেনা

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ- লন্ডন থেকে

London Borough of Newham logo

ম্যালকম বার্জ বয়সের দিকে প্রায় ৬৬ বছরের কাছাকাছি। পেশায় একজন গার্ডেনার। থাকতেন নিউ হাম কাউন্সিল বারাতে। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি যখন তার অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার দেখাশুনার জন্য কেয়ারার হিসেবে বাগানের কাজ ছেড়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন, তখন থেকেই তিনি হাউজিং বেনিফিট, কাউন্সিল বেনিফিট সহ অন্যান্য সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, যেহেতু ক্লেইম করেছিলেন এবং এওয়ার্ডের জন্য যোগ্য হয়েছিলেন।

 

কিন্তু ২০১৩ সালে ব্রিটেনের বেনিফিট সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আসলে স্বাভাবিকভাবেই ম্যালকম বার্জের বেনিফিটেও প্রভাব পড়ে, যেমন পড়ে এদেশের হাজারো মানুষের বেনিফিটে। চ্যান্সেলর অসবর্ণ নানা যুক্তি, গঠন মূলক এবং একই সাথে কৃচ্ছ্রতার নামে ব্যয় সংকোচন সহ অন্যান্য ব্যবস্থায় ভারসাম্য এবং সেই সাথে জাতীয় অর্থনীতি ও আর্থিক ভারসাম্য, প্রবৃদ্ধির অধোগতি থেকে উর্ব্ধগতি করার জন্য নানান পদক্ষেপ ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় অনেক দল ও গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এলেও মোটামুটি সকলেই তাতে চ্যান্সেলরের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছিলেন, যদিও ব্রিটেনের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ তাতে এফেক্টেড হয়েছিলেন-যার রেশ চলছে।

 

এই অবস্থায় ম্যালকম বার্জ নির্ধারিত হাউজিং বেনিফিট ৮৯.৩৯ পাউন্ড থেকে নেমে আসে ৪৪.৭৫ পাউন্ড প্রতি সপ্তাহে। কিন্তু অন্যান্য সকল বেনিফিটের মতোই এ ক্ষেত্রে ব্যাকলগ পেমেন্ট থাকার কারণে ম্যালকম বার্জকে নিউহাম কাউন্সিল পুরো হাউজিং বেনিফিট ৮৯.৩৯ পাউন্ড করেই দিয়ে যাচ্ছিলো এবং সেটা চলছিলো ঐ সময়ের পরবর্তী চার মাসের অধিক সময় পর্যন্ত।

 

ম্যালকম বার্জ একই সময়ে পেনশন ক্রেডিটের এওয়ার্ড ভুক্তও ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি অথবা তাকে বুঝানো হয়নি তখনো, যখন তিনি ২০১৩ সালের জুন মাসে কাউন্সিল থেকে চিঠি পান ৮০৯.৭৯ ওভার পেমেন্ট হিসেবে কাউন্সিল তার কাছে এটা আদায় করবে অথবা রি-পেমেন্টের জন্য কিংবা তার বেনিফিট থেকে রিডাকশনের মাধ্যমে। সাধারণত: এই তিন অবস্থার মাধ্যমে কোন এক অবস্থায় বা পর্যায়ে কাউন্সিল ওভার পেমেন্ট রিকভারি করে থাকে।

 

জানা যায়, ম্যালকম বার্জ কাউন্সিলের এমন লেটারে বিস্মিত শুধু হননি। যোগাযোগ করলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো এই পয়সা তাকে ফেরত দিতে হবে। ম্যালকম বার্জ আরো হতবাক হয়েছিলেন কারণ তিনি তখনো মনে করতে পারেননি এই ৮০০ পাউন্ড এর বিষয়টি।

 

তিনি শুধু কাউন্সিলকে বলেছিলেন আমি এই বেনিফিটের দ্বারা বেচে থাকছিনা, আমি সারভাইভ করছি।

 

কাউন্সিল তাকে সরাসরি কোন মিটিং এর ব্যবস্থায় বিভিন্ন পয়েন্টের পরামর্শ এবং ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ওয়েব সেবা নিতে বা এর সমাধানের পথ দেখিয়েছিলো, যা ম্যালকম বার্জের কাছে ছিলো অনভিপ্রেত এবং তার আয়ত্মের বাইরে। কারণ তিনি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আর বর্তমানে ওয়ান স্টপ শপ ইত্যাদির মাধ্যমে বেনিফিট অফিসার এখন কারো সাথে দেখা করার খুব একটা সুযোগ সীমিত আর টেলিফোন সেবা সেটাও দীর্ঘ সময় এবং ধৈর্যের ব্যাপার- যা একজন পেনশনার বাগানের পেশাজীবীর কাছে ছিলো প্রায় অনভিপ্রেত।

 

কাউন্সিলের কন্টিনিউ ডিমান্ড কোনভাবে ম্যালকম মেনে নিতে পেরে অবশেষে আত্মহত্যা করে বসেন।  ব্রিজ ওয়াটার টাউন হল আজ গত ২৮ জুনে আত্মহত্যার সময়ে ম্যালকম বার্জের লেখা নোট ইনক্যুয়েস্টে তারা শুনেন, তাতে লেখা আছে,  আমি বাচার জন্য চেষ্টা করছিনা বরং আমি সার্ভাইভের জন্য চেষ্টা করছি।

 

ওল্ড সমারসেটের করোনার মাইকেল রস বলেন, ম্যালকম বার্জ মৃত্যু অবশ্যই একটা ট্র্যাজিক কেস এবং আমাদের বেনিফিট সিস্টেম পরিবর্তনের শিকার তিনি।

 

কাউন্সিল স্বীকার করেছে তারা প্রকৃত ফেয়ারনেস করতে ব্যর্থ এবং পেমেন্ট ব্যাকলগ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তারা আরো স্বীকার করেছেন তারা লেটারে কনফিউজড ছিলেন এবং সিস্টেম থেকে লেটার ক্লোজ করে দিয়েছিলেন কোন রেসপন্স না পেয়ে।

 

ইনক্যুয়েস্ট আরো জানতে পেরেছেন, নিউহাম কাউন্সিল ম্যালকম বার্জের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ ছিলেন এবং তারা তার কোয়ারির জবাব দেননি।

 

মাইকেল রস এখন নিউহাম কাউন্সিলকে লিখবেন যে তারা পুরোপুরি সমস্ত ফ্যাক্টস এস্টাবলিশড করতে ব্যর্থ হয়েছেন  এবং অথরিটির সাথে যোগাযোগের জন্য এটা মোস্ট ভালনারেবল একটি দৃষ্টান্ত।

 

একজন ম্যালকম বার্জ আত্মহত্যা করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন এখনকার বেনিফিট সিস্টেম পরিবর্তনের মাধ্যমে হাজারো লাখো নিরীহ পরিবার পরিজনের জীবন কতো ভয়াবহ ও দুর্বিসহ করে তোলা হয়েছে। এভাবে কাউন্সিল অসংখ্য পেনশনার এবং যারা সত্যিকারের বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে বেনিফিট দিয়ে পরবর্তীতে ম্যালকম বার্জের মতোই ওভার পেমেন্ট দেখিয়ে ডিমান্ড নোটিশ প্রদান হরহামেশা অনেকের কাছে থেকে শুনা যায়। ম্যালকম বার্জ যেমন বেনিফিট অফিসারের সাথে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়েছেন, একইভাবে হাজারো মানুষ কন্টাক্ট পয়েন্টে সরাসরি সাক্ষাতে ব্যর্থ হন, কেননা এখন সার্ভিস উন্নত করার নামে এইসব সার্ভিস পয়েন্ট অধিকতর সহজ সেবার নামে চালু রয়েছে।

 

এছাড়াও, আজকাল কোন কারনে কোন বেনিফিট যদি আপনার বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যখন রি-কনসিডার বা পূণর্বিবেচনা করে আবার দেয়া হয়, তাহলে আর ব্যাকলগ বেনিফিট না দেয়ার যথেষ্ট নিয়ম চালু রয়েছে, অর্থাৎ যখন পূণর্বিবেচনা করা হয়, কেবল তখন থেকেই দেয়া হয়। কাউন্সিলের ভুলের কারণে কিংবা বেনিফিট সেকশনের ভুলের কারনে বেনিফিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার তারিখ থেকে বেনিফিট দেয়ার সেই আগেকার নিয়ম এখন আর চালু নেই, যা অনেকের কাছে ম্যালকম বার্জের মতোই বিস্ময় শুধু নয়, হতবাক যেমন করে তেমনি অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে- যা আজকের বেনিফিট অফিসারেরা আর বিবেচনায় নিতে চাননা- ফার্স্ট ট্র্যাকের সার্ভিসে।

 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ম্যালকমের ইনক্যুয়েস্টে যেমন কাউন্সিল জবাব দিয়েছেন, আমরা ১০টি লেটার ম্যালকম বার্জকে দিয়েছি, তিনি কোন জবাব দেননি, ওভার পেমেন্ট রি-পেমেন্টের ব্যাপারে। কাউন্সিল আরো জানান, বার্জের বক্তব্যের এই কনটেক্সটটি তাদের কাছে নেই- যা তিনি কাউন্সিলকে দিয়েছিলেন, ঐ সময়ে তার মনের অবস্থা জানিয়ে।

 

কনসিকোয়েন্স যখন উদ্ভূত হয়, তখন প্রতিষ্ঠান থেকে এরকম জবাবই হয়- কিন্তু  ভুক্তভোগী যারা- তারা জানেন এর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে কতো ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। কাউন্সিলের জবাব সেক্ষেত্রে কি – আজো জানা যায়নি।

 

লন্ডন ০৩ ফেব্রুয়ারি- ২০১৫ ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *