সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
লন্ডন থেকে
বেশ কিছুদিন থেকেই মুক্তমনা, ব্লগার, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত ইত্যাদি নামের তকমায় বাংলাদেশে একের পর এক হত্যাকান্ড চলছিলো। হত্যাকান্ডগুলো ঘটার পর মার্কিনীভিত্তিক সাইট অনলাইন থেকে এসব হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি বা দায় জানিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই সব হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আইএস এর সম্পৃক্ততা শুধু নাকচই নয়, বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রে আইএস এর অস্তিত্ব স্বীকার করা হচ্ছিলোনা। শেখ হাসিনার সরকারের তরফ থেকে এই সিগন্যাল আইএস- এর মুরুব্বীরাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলো– ধরেই নেয়া যায়। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি এবং ভারতীয় শক্তি আইএসের আড়ালে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে- সেটা বার বার সিগন্যাল ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনাতেই কেবল নয়, প্রকাশ্যে বিবৃতিতে দিয়ে আসছিলো। আবার সরকারের কতিপয় মন্ত্রী যেভাবে মাদ্রাসা কেন্দ্রিক জঙ্গিবাদকে দায়ী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যস্ত, ঠিক সেখানে শেখ হাসিনার সরকারের একেবারে ভিতরের অংশ এই মতের সাথে একমত নয়, যেমন নয় পেন্টাগন এবং নয়াদিল্লী ও ও ব্রিটেনের এমআইসিক্স। আবার ভারতীয় গোয়েন্দা র– এর দক্ষিণ দক্ষিণ ব্লক আর ওয়াশিংটন(পেন্টাগনের লবি নয়) আর ব্রিটিশ সোয়াত– জঙ্গিবাদের সাথে মাদ্রাসাকে সম্পৃক্ততা বড় করে দেখছেন বা দেখাতে ব্যস্ত। শেখ হাসিনার ইনার লবি, পেন্টাগন, নয়াদিল্লী, এমআইসিক্স- এর বক্তব্য দুইশ বছরের উপরের পুরনো মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করেনা। গোয়েন্দা খেলার ও চালের জগতে কাউকে না কাউকেতো হারতেই হবে– তার খেসারতও দিতে হয় কঠোর ও ভয়াবহভাবে। বাংলাদেশ এখন সেই খেলার নির্মম ট্র্যাজেডির গল্পের উপাখ্যান শুধু নয়, বাস্তব এক পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করার আগে আমাদেরকে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। লন্ডন সহ বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের একই সাথে ধনীর দুলালদের আইএস এর সাথে জড়িয়ে পড়ার কিছু সিনারিও আমরা দেখে আসি।
প্রেক্ষিত ব্রিটেন এবং বাংলাদেশী কমিউনিটিঃ
কিছু তথ্য বা প্রারম্ভিক চিন্তা ভাবনা, যেমন ০১) বিবিসি গত ৮ আগস্ট ২০১৪ একটি রিপোর্ট করে, যেখানে বলা হয়েছে, ওল্ড বেইলি কোর্টে ব্রিটিশ বাংলাদেশী লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের একজন আফসর আলী ইলেক্ট্রনিক ফাইল নিজের সাথে রাখার জন্য, যেগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করার জন্যে, কোর্ট তাকে অভিযুক্ত করেছেন।বলা হয়েছে ২৭ বছরের এই আফসর আলী র্যাডিক্যাল মুসলিম ক্ল্যারিক ওমর বাকরির সাথে সহযোগি হয়ে বা আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ৯/১১ আক্রমণের সাথে সম্পৃক্ততায় দুষী সাব্যস্থ করেন। ০২) গত ২০ মে ২০১৪ প্রভাবশালী প্রিন্টিং এবং অনলাইন দৈনিক গার্ডিয়ান পোর্টস মাউথের ৩১ বছর বয়স্ক মাসুদুর রহমান চৌধুরীকে কনভিকশন করা হয় সিরিয়ান সন্ত্রাসীদের সাথে জিহাদি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অপরাধে ০৩) পোর্টসমাউথের দ্য নিউজ এ একই সময়ে পোর্টস মাউথ থেকে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী জিহাদিষ্ট ২৫ বছরের হামিদুর রহমান সিরিয়ায় নিহত হওয়ার সংবাদটাও দেশে এবং বিদেশে আলোড়ন এবং ব্রিটিশ মিডিয়ায় টক অব দ্য ষ্টোরি ছিলো, ০৪)২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ডেইলি মেইলে ঢাকায় ব্রিটিশ বাংলাদেশী সামিউন রহমান আইএস সন্দেহে প্রথম গ্রেপ্তারের সংবাদ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। আগস্টের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহে বিবিসি অনলাইনে ৬ ব্রিটিশ বাংলাদেশীকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সন্দেহে গ্রেপ্তারের যে সংবাদ প্রচারিত হয়, ডেইলি টেলিগ্রাফ ২৩ আগস্ট ২০১৪ তে যে রিপোর্ট প্রকাশ করে সেখানে তাদের রিপোর্টের এক স্থানে এসে উল্লেখ করে বাড বয় অব বাংলাদেশ হিসেবে।
এই সব তথ্য উপাত্ত ঘাটলে আমরা মূলত দেখি আর তা হচ্ছে, গত ২৫শে আগস্ট ২০১৪ থেকে ২রা অক্টোবর ২০১৪ পর্যন্ত, এমনকি তারও কিছু আগ থেকে একদিন দুদিন পর পরই, ব্রিটেনের মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট, মেইল, গার্ডিয়ান, এক্সপ্রেস ইউকে আইএস এর সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের ধারাবাহিক রিপোর্ট মিডিয়ায় বেশ ফলাও করে প্রচার করছে, একই সাথে এই প্রচারণার বা রিপোর্ট প্রকাশের সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্রিটিশ মুসলমানদের বিশেষ করে ইউটিউবে ব্রিটিশ মুসলিম জিহাদিষ্ঠ কর্তৃক আহ্বান প্রচার, ডেভিড ক্যামেরন কর্তৃক ব্রিটেনের মাটিতে জঙ্গিদের হামলার আশংকার সতর্ক বার্তা আর বিবিসির রিপোর্টে মার্কিন সাংবাদিক জন ও সম্প্রতি ব্রিটিশ চ্যারিটি ওয়ার্কার অ্যালেন হেনিং জিম্মি ও তার পরে শিরচ্ছেদের ভিডিও বার্তা প্রকাশ- এই দুয়ের মধ্যখানে সময়ে বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, টেলিগ্রাফ ও মেইল সেপ্টেম্বরের শেষ আর অক্টোবরের একেবারের শুরুর দিকে পর পর কয়েকটি রিপোর্ট ব্রিটিশ বাংলাদেশী মুসলমানদের আইএসের জিহাদি কার্যক্রমে যোগদান- ব্রিটেন সহ বিশ্বময় বাংলাদেশী তরুন-তরুণী আর এই ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি আলোচনার শিরোনামে চলে আসেন।
এই তথ্য সারণী এবং রিপোর্টগুলোকে আমরা একপেশে বলছিনা বা ডিফেন্ড করছিনা যদিও কখনো কখনো ইন্ডিপেন্ডেন্ট, গার্ডিয়ানের মতো প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্যের বিভ্রান্তি কিংবা ভুল তথ্য পরিবেশন করে সেই গুলো প্রত্যাহারের রেকর্ডও রয়েছে। কিন্তু এখানে সেই সব প্রশ্ন অবান্তর, যেহেতু তথ্য একেবারে জ্বলজন্তভাবে উপস্থিত এবং প্রমাণ সহ স্বঘোষিতভাবেও স্বীকৃত, যা মিডিয়ার বদৌলতেও সারা বিশ্বের জনগণ জেনে গেছেন। সেকারণে প্রকাশিত তথ্য বা রিপোর্ট নিয়ে নতুন কোন প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ খুব একটা নেই। তবে ব্যতিক্রম শুধু ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া সামিউন রহমান- যাকে নিয়ে বিবিসি নিজেদের তথ্যের শেয়ারের মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করেছে, যা পত্র পত্রিকায় ৫ অক্টোবর ২০১৪ তে প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রিটেন হলো মাল্টিকালচারাল সোসাইটি এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক মত চর্চার এক সুন্দর সহাবস্থানের দেশ। এখানে আইনের মাধ্যমে একজন অপরাধী, একজন শীষ্ঠের সকল অধিকারগুলো সমুন্নত ও গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আজ থেকে বহু বছর কেবল নয়, গত ৮০ দশকেও অনেক বর্ণবাদী অত্যাচার সত্যেও ব্রিটেনে ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুণেরা অত্যন্ত সুনামের সাথে সকল সেক্টরেই নিজেদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এখানকার সোসাইটিতে বেড়ে উঠা কিছু আগের প্রজন্মও মূলত নিজেদের কর্মদক্ষতা ও সমাজের শান্তি- শৃঙ্খলা বজায় ও কমিউনিটির হারমোনি রক্ষায় অন্যান্য যেকোন কমিউনিটির কাছে ঈর্ষনীয় অবস্থায় ছিলেন। ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে লিবার্টি, এমনেষ্টি, মানবাধিকার, সমাজকর্মী সকল মহলেই বাংলাদেশী কমিউনিটি ছিলেন অত্যন্ত প্রশংসিত, আমাদের তরুণদের প্রশংসায় সকলেই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। যার ফল আমরা দেখি বিগত সময়ে ব্রিটিশ মূলধারার লাইমলাইটে চলে আসেন একজন মরহুম তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, ইকবাল আহমেদ এমবিই, এনামুল হক, ডঃ ওয়ালি তসর উদ্দিন এমবিই, ডঃ আব্দুল বারী এমবিই থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, রোশনারা আলী এমপি, আজমল মাশরুর, লুতফুর রহমান সহ আরো অনেকে( সবার নাম নেয়ার সুযোগ নেই তাহলে কলেবর বৃদ্ধিই পাবে শুধু)।আর আজকের কাউন্সিলর, মিডিয়া কর্মীদের সাফল্য ব্রিটেনে বেশ চমকপ্রদ ও আশাব্যঞ্জক।অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে ৯/১১ এবং ৭/৭ বোমাবাজির পর থেকে ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুণদের সম্পৃক্ততা নিয়ে অনেক কানা ঘুষা এবং কখনো কখনো এ নিয়ে ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে কোথাও কোথাও এ নিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটি এবং মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের সম্মুখীন হওয়ার সংবাদও শুনা যায়। কারো কারো এ নিয়ে রস্তা ঘাটে তিক্ত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখী হতে হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে কমিউনিটি এতো নামী দামী এমনকি ব্রিটিশ মূলধারার সোসাইটি ও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার ও অবদান রাখার জন্ম দিয়েছে, অন্যান্য যেকোন কমিউনিটির তুলনায় শান্তি, সপ্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বে সেতুবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে কমান্ডেবল ভুমিকা রেখে চলেছিলো, ৮০ দশকের পর থেকে সেই কমিউনিটির তরুণেরা হঠাত করে ভিন্ন পথে তথা র্যাডিক্যাল ইসলামোফোবিয়া এবং জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসূত্র কেমন করে স্থাপিত হয়ে গেলো- সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে বিস্তর।কেননা এই ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিগত ৭০ বছরের পেছনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এরকম জঙ্গি কার্যক্রমের কিংবা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে জড়িয়ে পড়ার কোন রেকর্ড নেই, বরং এই কমিউনিটির সচেতন তরুণেরা বরাবরের মতোই সবার আগে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
স্কাই টেলিভিশন নিউজ সহ সর্বত্র সেই ইমামদের বার্তা প্রকাশিত হয়েছে।তা সত্যেও সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পজিটিভ হওয়া সত্যেও আমাদের কিছু কিছু তরুণ এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন যা আমরা বিশ্ব মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হয়ে মর্মাহত হয়ে পড়ি। সমাজ বিজ্ঞানী এবং দর্শন শাস্র নিয়ে যারা অধ্যয়ন করেছেন সকলেই জানেন একজন সন্তানের সুশিক্ষার প্রথম কারিগর বাবা মা ও পরিবার। আমাদের ব্রিটেনের বাংলাদেশী মুসলিম পরিবার এখনো অন্য যে কোন কমিউনিটির এমনকি ব্রিটিশ মূলধারার পরিবার প্রথা থেকেও দৃষ্ঠান্ত হয়ে আছে। যা হর হামেশা অফিস আদালত ও টেলিভিশনের নানা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ বাংলাদেশী পরিবার প্রথার সুনাম করা হয়ে থাকে।
৯০ এর দশকের পর বিশেষ করে ৯/১১ বা লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে বোমাবাজির পর যেখানে একজন আফ্রিকান(সোমালিয়ান) নারী তার জের ধরে বাসের মধ্যে বোমার আঘাতে নিহত হয়েছিলেন, সেই সময়ের কিছু আগ থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম, ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুনেরা হঠাত করে ডাইভার্টেড হয়ে একেবারে বিপরীত এক অবস্থানে বা তথাকথিত ইসলামি বিপ্লবের নামে আল-কায়েদা আর আজকের আইএস জিহাদি জঙ্গি তৎপরতার সাথে সংশ্লিষ্টতা। কিছু সংখ্যক ভিন দেশীয় ব্রিটিশ মাইনোরটি কমিউনিটির তথাকথিত র্যাডিক্যাল ইসলামিক নেতারা নিজেদের কমিউনিটির তরুনদের রিক্রুট না করে বরং ব্রিটেনের সব চাইতে সম্ভাবনাময় ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুণদের সেদিকে আকৃষ্ট এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রচারনার আড়ালে ব্রেন ওয়াশ সুদক্ষভাবে চালিয়ে যায়।আর আমাদের পূর্বসূরী বয়োজ্যেষ্ঠ সহজ সরল মা-বাবারা তথাকথিত র্যাডিক্যাল সেই ইসলামিক ইমামদের আলখেল্লা আর হর-হামেশা ইসলাম, মুসলমান, (আর তুলনামূলক সহজ চিত্র এতো নিপুণতর সাথে ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরে), যা দেখে তারা সকলেই ভাবতে থাকেন, ছোট ছোট কচি প্রানগুলো বেশ ইসলামিক আদর্শে( ব্রিটেনের মতো বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে থেকেও) অনুপ্রাণীত হচ্ছে এবং সে নিয়মিত নামায মসজিদ আর মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি পড়ে এমন সুন্দর সহজ সরল জীবন যাপন করছে- তাতে অভিভূত হয়ে যান। কিন্তু আড়ালে আবডালে এই সহজ আল-খেল্লার আবরনে এই ভিনদেশী র্যাডিক্যাল ইসলামিক নেতারা কচি ও কোমল প্রাণদের ৯/১১ আর ৭/৭ এর ভয়াবহতার সুযোগে তিক্ততা আর তথাকথিত জিহাদি কার্যক্রমে অনুপ্রানীত করে কোমলমতি বাংলাদেশী কিশোর আর তরুণদের বিভ্রান্ত করছেইনা শুধু গোটা কমিউনিটির সম্ভাবনার সকল স্বপ্ন, সাধকে অত্যন্ত কৌশলে হেয় ও হেইট কার্যক্রমের মাধ্যমে ধ্বংস করার এক হীন ষড়যন্ত্রের ব্যাপক এক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।সাধারণ সামাজিক দৃষ্টিতে এই হলো পূর্ব প্রজন্মের উত্তর প্রজন্ম নিয়ে ভাবনা চিন্তা।
এ নিয়ে বেশ চমকপ্রদ কিছু বাস্তবতার নিরিখে তথ্য দিয়ে ইভনিং ষ্ট্যান্ডার্ডে ক্রিস্টিয়ান মুসলিম ফোরামের মুসলিম ফ্যামিলি স্পেশালিষ্ট আকিলা আহমেদ যা লিখেছেন তার কিয়ত অংশ এখানে হুবহু তাই তুলে ধরলাম- …”We must also address the alienation young British Muslims experience. They are constantly told to integrate yet come up against discriminations, from the lawyer denied work because she wears a hijab, to the banker asked to shave off his beard. There high rate of Muslims leaving schools without qualifications, when they do get work it is often low paid and they are more likely to report being passed over for promotion or treated unfairly because of their faith. At each step they find their identity under scrutiny and their loyalty questioned. They must always be treated as equal citizens”.ঠিক একই জায়গায় একই পত্রিকায় দ্য মার্চ দাট শ্যোক ব্লেয়ার- এন ওরাল হিস্ট্রির লেখক ইয়ান সিন ক্লেয়ার মন্তব্য করতে গিয়ে শেষাংশে লিখেছেন,…” Despite cameron`s Blair circa 2000 style claim that IS poses “a clear and present danger to the UK”, I am not aware of any verifiable evidence that shows this. What we can say is the destruction that will be caused by the UK air strikes on Iraq will likely increase the terror threat to londoners.” তারপরই রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল জুলিয়ান একই জায়গায় লিখেছেন, “ It is in our interests however to engage and defeat Islamic State, not turn a blind eye as some argue, because of the threat is present, “ ঠিক তার পরেই তিনি লিখেছেন এভাবে We have been very bad in allowing the canker that fuels jihadism to grow..” শুধু মাত্র ব্রিটেন এবং জিহাদিষ্ট আইএস ও ব্রিটেনের মুসলমান, তরুন নিয়ে কেমন আলোচনা হরহামেশা হচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্যই কিছু চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরলাম।
সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে শায়ান আহমেদ।তিনি বলেন, এটাকে ঠিক এভাবে শুধু দেখলে চলবেনা। তিনি দৈনিক এক্সপ্রেসের ৭/৭ নিয়ে বোমাবাজির পর মুসলমান নেতাদের বক্তব্য পয়েন্ট আউট করে আরেকটু যোগ করতে চান এই ভাবে, এখানে কিছু অপর্যাপ্ত তথ্য যা বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অনুপস্থিত, পরিবার ও সন্তান সন্তুতিদের সাথে গ্যাপ এবং সচেতনতার অভাব, কেবলমাত্র কনজারভেটিভ চিন্তা ভাবনা বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ঝাকিয়ে বসার কারণে প্রচলিত রিক্রেয়েশন আর মাইন্ড রিলাক্সেশনের স্বল্পতাহেতু, একই সাথে প্রচলিত সমাজের উর্ধবমুখী ডিমান্ডের সাথে সরবরাহের ঘাটতি বা সোসাইটিতে তার অবস্থান তুলে না ধরার ব্যর্থতা- এই সব এলিম্যান্টস সমূহের কারণে ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুনেরা অনেকটাই বিপথগামী হওয়ার জিহাদি স্রোতে অনেক আগেই নাম লিখিয়েছেন, যাতে পোর্টসমাউথের ৬ তরুণের এরেস্ট কিংবা সিরিয়ায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি জিহাদিষ্ট নিহতের ট্র্যাজেডির কথাই শিরোনাম হয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বরং এই লিষ্ট আরো বৃদ্ধি পাবে যা এই কমিউনিটির বিগত দিনের শ্রেষ্ট অর্জনগুলোকে বিরাট এক প্রশ্নের মুখোমুখী দাড় করিয়ে দেয় ।
ব্রিটেনে আছেন বিগত ৪০ বছর ধরে।বাংলাদেশী কমিউনিটি সহ সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদনার সাথে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন,বর্ণবাদী কার্যক্রম প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির ক্যাম্পেইনে সরাসরি জড়িতও ছিলেন, কমিউনিটি এবং মূলধারার রাজনীতি, সংবাদ কর্মীদের সাথে যোগসাজুষ রাখেন এমন একজন লন্ডন রিপোর্টার্স ইউনিটের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কতিপয় তরুণ বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘোরপাক খাচ্ছেন, আইএসের মতো জঙ্গিদের সহযোগি হয়ে সিরিয়া ইরাকে গিয়ে যুদ্ধ করছে। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। এই জঙ্গিদের এবং জঙ্গি ততপরতার বিরুদ্ধে পরিবার, সমাজ, আমাদের কমিউনিটির সকলকে আরো সচেতন করে তুলতে হবে।নতুবা আমাদের কমিউনিটির ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমরা কেউই রক্ষা পাবোনা।এ ক্ষেত্রে এই এওয়ারনেস জাগিয়ে তুলার জন্যে আমাদের টেলিভিশন, রেডিও, পত্র পত্রিকা বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে।
এ নিয়ে কথা হয় লন্ডনের প্রবীন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, লন্ডন বাংলার সম্পাদক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সঙ্গে। টেলিফোনে তিনি জানালেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি সব চাইতে শান্তি প্রিয় কমিউনিটি- যেকোন বিচারের দিক থেকে মূল্যায়ন করা হউক না কেন, এর সুস্পষ্ঠ প্রমাণের ট্র্যাক রেকর্ডের অধিকারি আমরা। তিনি আরো বলেন , সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কোন কাজে বাংলাদেশীরা কখনো জড়িত ছিলোনা, এখনো নেই। আমি জানিনা এ ব্যাপারে আমাদের তরুনেরা মোটিভেটেড হচ্ছে কিনা, তবে বিদ্যমান তথ্যের ভিত্তিতেও আমি আশা করি আমাদের কমিউনিটির তরুনেরা এ সবের সাথে জড়িত নন।বিগত সময়ে একজন কালো লোকের হত্যাকান্ড নিয়ে লন্ডন ও ব্রিটেন জুড়ে যে তান্ডব চলছিলো- সেখানেও বাংলাদেশী কমিউনিটি জড়িত হওয়ার কোন রেকর্ডও নেই। আইএস নামক জঙ্গি সংগঠণ যে কার্যক্রম করছে, ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীকে শিরচ্ছেদ করছে- এসবের তীব্র প্রতিবাদ আমরা করি এবং সাথে সাথে এটাও বলতে চাই ইসলাম আইএসের এই সব অমানবিক কর্মকান্ড সমর্থন করেনা।আমাদের তরুনদের এই অন্যায়কারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইএস একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠন। ইসলামের নামে ধোঁকা দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানের ইমেজ নষ্ট করতেছে । আমরা এর নিন্দা জানাই।
আইএস নামক ইসলামিক ষ্ট্যাট এক বছরের কিছু সময় ধরে ইসলামের নামে হঠাৎ করে উগ্র মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে, তরুণ-তরুনীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে, বিশেষ করে ব্রিটেনের তরুন-তরুনী মুসলমান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক এক সাড়া আর হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।আইএস এমন সব কর্মকান্ড করছে, এমন জঘন্য কায়দায় সমস্ত মানবতাকে ভুলুণ্ঠিত করে বর্বর আর নির্মম কায়দায় জিহাদী কার্যক্রমের নামে শিরচ্ছেদের নামে যে সব ভিডিও বার্তা ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে তাবত মানবতাকামী আর ইসলামিক দুনিয়ার সকল স্কলার, ইমাম আর বিশেষজ্ঞগণ আইএস এর কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ ইসলামিক শরীয়া ও নিয়মা-কানুনের বিরোধী বলে মতামত দিয়েছেন। ব্রিটেনের ১০০ ইসলামিক স্কলার আর সারা বিশ্বের হাজারো নামী দামী স্কলাররা প্রকাশ্যেই বলছেন আইএস অনৈসলামিক এবং ইসলাম সম্মত নয় এমন বর্বর কর্মকান্ড করছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের তিন বাংলাদেশী স্কুল পড়ুয়া তরুনী পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সিরিয়ায় আইএসের সাথে যোগ দেয়ার জন্য তার্কি বর্ডার হয়ে গমণ করেছেন বলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পণা করছে প্রভাবশালী সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া।তিন তরুনী শামীমা(১৫), খাদিজা(১৬) আর আমিরা আব্বাসী(১৫) সিরিয়া গমনের প্রেক্ষিতে ব্রিটেন সরকারের নড়ে চড়ে বসে। সর্বত্র একই আলোচনা এ কেমন করে ঘটলো বা সম্ভব হলো। ব্রিটেনের বিগত কয়েক দশক ধরে যে বাংলাদেশী পরিবারগুলোর শান্তি প্রিয় হিসেবে যে সুখ্যাতি ছিলো, তা মূলত ধুলায় মিশিয়ে যাচ্ছে, শুধু মাত্র এই তিন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর জন্যেই নয়, বরং আইএস জিহাদী কার্যক্রমের পর থেকে ব্রিটেনের বাংলাদেশী পরিবারগুলোর তরুন-তরুনীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।মসজিদে মসজিদে কাউন্সিল আর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ইমাম সাহেবগণ আইএসের জঙ্গিদের ইন্টারনেট সাইবার আক্রমন আর মগজ ধোলাইয়ের হাত থেকে ছেলে মেয়েদের রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও কৌশল নিয়ে দিকনির্দেশনাও প্রদান করা হয়। এতো কিছুর পরেও থামছেনা আইএস এর এই জঙ্গিদের সাথে বাংলাদেশী পরিবারগুলোর সম্পৃক্ততা।
রেহেনা সন্তানদের নিয়ে সিরিয়া গেছেন–
শামীমা, খাদিজা, আমিরার পর এবার ব্রিটেনের আরো এক বাংলাদেশী পরিবারের বধু স্বামীকে ফেলে আপন সন্তান সন্তুতি নিয়ে আইএস জিহাদীদের সাথে শরীক হওয়ার জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বলে আরব নিউজ, ডেইলি মেইল আর স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে এই সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, রেহেনা বেগম নামের এই বাংলাদেশী মা তার আট বছরের শিশু সন্তান আর তিন বছরের কন্যাকে নিয়ে তুরস্কের বর্ডার হয়ে সিরিয়া গমন করেছেন বলে ব্যাপকভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। আরব নিউজ, ডেইলি মেইল সূত্র জানিয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী এই রেহেনা বেগম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বাংলাদেশী, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হিথরো হয়ে ইস্তাম্বুল যান, সেখান থেকে তিনি অভ্যন্তরীন ফ্লাইট ধরে তুরস্কের আরো এক শহর গাজিয়ানটেপ গমন করে বর্ডার ক্রস করে সিরিয়ায় পৌছেছেন বলে বলা হচ্ছে।
রশিদের গ্রেপ্তার-
এদিকে পুলিশ মোহাম্মদ আল-রশিদ নামের একজন সিরিয়ানকে আইএস কার্যক্রমে গ্রেপ্তার করেছে। তার ল্যাপটপে পুলিশ এই রেহেনা বেগমের ডিটেইলস আইডি সহকারে পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শামীমা, খাদিজা, আমিরাকে সিরিয়া যেতে সাহায্যকারী হিসেবে পুলিশ এই গেপ্তারকৃত রশিদ সাহায্য করেছে, তারই( সিরিয়ানের) সহযোগীতায় রেহেনা বেগম শিশু সন্তানদের নিয়ে সিরিয়া গমন করেছেন।কারণ পুলিশকে রশিদ জানিয়েছে সে ব্রিটিশ যোদ্ধাদের সাহায্য করছে সিরিয়া যেতে, আফ্রিকান ও অস্ট্রেলিয়ানদেও এবং তার ল্যাপটপে আরো দুজন ব্রিটিশের আইডি পুলিশ পেয়েছে, তাদের বয়স হলো ১৯ এবং ২৯।
রেহেনার স্বামী আজিজুল বলেন-
রেহেনা বেগমের স্বামী আজিজুল ইসলাম একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। তিনি ঘটনার প্রেক্ষিতে হতবাক এবং শোকে মুহ্যমান। দুটি অবুঝ শিশু সন্তানের জন্য তিনি এক সাগর দুঃখের পাহাড় তার বুকের মধ্যে চেপে আছে বলে বিলাপ করছেন। আজিজুল ইসলাম বলেন, দুটি শিশু সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী ফিরে আসবেন। তিনি আরো বলেন, তার এই সিদ্ধান্ত তার দুটি অবুঝ শিশু সন্তান সহ তাদের পুরো জিন্দেগি ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজিজুল বলেন, আইএস ইসলামের নাম নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমার ধর্ম ইসলাম হত্যা সমর্থন করেনা। তিনি বলেন, একজন মুসলিম মাত্রই জানেন পবিত্র কোরআন এমন হত্যা সমর্থন করেনা। তিনি বলেন, পুলিশ জানিয়েছে তার স্ত্রী তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরে গিয়েছেন, যা আইএসের সাথে যোগ দেয়ার জন্য সিরিয়ায় পৌছার সব চাইতে পপুলার গেট-ওয়ে।৩৬ বছর বয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভার আজিজুল বলেন এটা অত্যন্ত বেদনা দায়ক আমার স্ত্রী আইএসের সাথে যোগ দেয়ার জন্যে ঘর ছেড়েছেন, দুটি সন্তানের জন্যে আমার খুব কষ্ট হয়। মাস খানেকের মতো হলো আজিজুল তার সন্তানদের দেখতে পাননি। আজিজুল আরো বলেন, আমি বুঝতে অক্ষম সে কেন গেলো? তার দুটি সন্তান রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব ঘর, তারপরেও কেন সে গেলো? এমন অনেক ব্রিটিশ রয়েছেন তুরস্কে হলিডেতে যান, আমার মনেই হয়না সে আইএসের সাথে যোগ দিয়েছে, কেননা এখনো আমি বিশ্বাস করি সে ফিরে আসবে। আমরাও বিশ্বাস করি। তাই যেন হয়। এই রেহেনা এক সময় রয়াল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডে চাকুরী করতেন বলে স্থানীয় বাংলাদেশী সূত্র উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এমন করে সংসার ফেলে, ব্রিটেনের মতো উন্নত জীবন ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমন করে দুঃখের পাহাড় মাথায় নেয়ার জন্য তরুন তরুনীরা কেন যাচ্ছে বিপথে ? সময় এসেছে আমাদের সেই সব ভাববার। স্বামী আজিজুলের কাছ থেকে জানা গেছে, তার স্ত্রীকে যখন তিনি বিয়ে করেন, তখন সে নামায-কালাম বা এতো ধার্মিক ছিলোনা। সে স্বাভাবিক এক ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুনী ছিলো। ছিলো খুব উচ্ছ্বল। হঠাত করে তার স্ত্রীর মধ্যে এক ব্যাপক পরিবর্তন তিনি লক্ষ্য করলেন। হিজাব পড়া শুরু, নামায পড়া, ধর্মীয় আলোচনায় যাওয়া। তিনি ভাবছেন ভালোইতো। আল্লাহর নাম নেয়া সেটা ভালো কাজ।কিন্তু এমন পরিবর্তন তিনি ভাবতেও পারেননি। একেবারে জিহাদি কাজে যোগদান।
রিসার্চাররা প্রাথমিক লক্ষনগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন-
একদল রিসার্চরাও দেখেছেন, হঠাত করেই আমাদের তরুন-তরুনীদের মধ্যে এক ধরনের ফ্যানাটিক ইসলামিক এক পরিবর্তন দেখা দেয়। যা তারা আগে কখনো করতোনা। নামায পড়া, ধর্মীয় আলোচনা, অত্যধিক মাত্রায় গোগল সার্চের মাধ্যমে ইসলামিক নামে বেনামের তথাকথিত আধ্যাত্মিক ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য শুনতে অত্যধিক মনোযোগ, ক্লাস, কাজ সব ফেলে দিয়ে সেই দিকে ঝুকে পড়া, ইসলামিক ড্রেস পরিধান, আর আল্লাহু আকবার ইত্যাদি ধবনি সব কাজের ব্যাপারের শোকরিয়া আদায়ের সাইন হিসেবে উল্লেখ, বিজ্ঞান, জ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প সব কিছুকেই অবজ্ঞা আর ইসলামের বিরোধী হিসেবে দেখা, কোরআন অধ্যয়ন না করে কোরআনের নাম নিয়ে ইন্টারনেটে শেখা ঐ ধর্মীয় বক্তার বক্তব্য প্রচারে ও আলোচনায় মত্ত থাকা, ঘন ঘন মোবাইল ফোনে ফিস ফিস করে দিনে রাত আল্লাহ রসূলের নাম নিয়ে অপর প্রান্তের সাথে আলোচনা, ফেস বুকে, ওয়াটঅ্যাপে চ্যাট, ভাইভারে কথা বার্তা যখন তখন, ক্লাসের ফাঁকে, কাজের ফাঁকে, অপরিচিত আল খেল্লা ধারীদের সাথে যোগাযোগ সখ্য, মুখে ক্লিন শেভের পরিবর্তে দাঁড়ি ইত্যাদি লক্ষণগুলো হঠাত এবং নাটকীয়ভাবে ছেলে মেয়েদের মধ্যে আসা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এ সব দেখলে অভিভাবক ও পরিবারের কর্তাদের সতর্কভাবে পর্যালোচনা করে খুন শান্ত ও মোলায়েম এবং যত্নের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সেই ফ্যানাটিক আইএস কানেকশন থাকে, যাতে ফিরে আসে- সেই কার্যক্রম, কাউন্সেলিং, পরামর্শ, সহযোগীতা করা জরুরী। কারণ এই অবস্থায় আরো কঠোরতা ও অত্যধিক শাসন আবার লাগামছাড়া- উভয়ই হীতে বিপরীত হবে। আইএস হলো প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী এবং আধুনিক সব প্রযুক্তি তাদের আয়ত্মে। তারা সন্তানদের মগজ ধোলাইয়ে ওস্তাদ। এদের কাছ থেকে বা এই সব সন্ত্রাসী জঙ্গিদের খপ্পড় থেকে আপনার আমার সকলের সন্তানদের রক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।কোমলপ্রাণ একবার বিঘড়ে গেলে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা অনেক কষ্টসাধ্য এক কাজ।
মাওলানা নূরুল ইসলাম-খতিব-শেড ওয়েল মসজিদঃ
শেডওয়েল মসজিদ- শুক্রবার জুম্মার পূর্বে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেডওয়েল মসজিদের খতিব মাওলানা নূরুল ইসলাম বলেছেন, দুনিয়ার সমস্ত আলেম ওলামা আর ইসলামিক স্কলার ও মুফতীগন একমত, আইএস হলো সন্ত্রাসী সংগঠণ। এদের কার্যক্রম ইসলাম ও ইসলামী শরীয়া বিরোধী। তিনি বলেছেন, আজকের যুগে, হযরত ঈসা আলাইহিওয়াসাল্লামের আসার আগে ইসলামিক দুনিয়ার সাথে অন্য কোন জাতি গোষ্ঠী গোত্রের কোন জিহাদের প্রয়োজন নাই, নিষিদ্ধ। ইসলাম এলাও করেনা এই ধরনের জিহাদি কার্যক্রম। তাই সাবধান সকল মা বাবা ভাই বন্ধু বিনীতভাবে আপনার সন্তানদের প্রতি তীক্ষ্ণ লক্ষ্য রাখবেন, যাতে গোগল, ইন্টারনেট, ইউটিউব, ফেসবুক,ভাইভার, ওয়াটসঅ্যাপ, ট্যাঙ্গো, লাইন ইত্যাদির মাধ্যমে আইএস এর জঙ্গিদের সাথে কানেকশন যাতে না হয়। সাবধান, তাহলেই বড় বিপদ, বড় মুসিবত ডেকে আনবেন। আইএস একটি জঙ্গি সংগঠণ।
থেরেসা মে মসজিদ বন্ধ করে দিতে চান-
ব্রিটেনের হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে বলেছেন, উগ্রপন্থাদের কে সহযোগীতা করছে কতিপয় মসজিদ। তিনি চান এই সব মসজিদ বন্ধ করে দিতে, যারা তরুন-তরুনীদের বিপথগামী করছে। থেরেসা মে পরিকল্পনা করছেন মসজিদ সহ হেইট প্রিচার বন্ধ করে দিতে। একই সাথে শরীয়া কোর্ট রিভিউ করতে-কেননা এটা ইসলামিক নারীদের ফ্যানাটিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এক পরিকল্পনার মাধ্যমে থেরেসা মে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে এই সকল ফ্যানাটিক কার্যযক্রমের মসজিদ সমূহ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আঞ্জাম চৌধুরীর মতো উগ্রপন্থী প্রিচার যারা ব্রিটিশ মূল্যবোধে বিষ ছড়িয়ে দিতেছে ও সমাজে বিতৃষ্ণা ছড়াচ্ছে, উগ্রপন্থাকে লালন ও সহযোগীতা করছে, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিবে।
‘আইএসে’ যোগ দেয়া বা সাপোর্ট করা হারাম’
বৃটেনের লিডিং ইসলামিক স্কলার ও খতিব মাওলানা শেখ ওসামা বিন হাসান ফতোয়া দিয়েছেন, সিরিয়া ইরাকি সুন্নি আইএস বিদ্রোহীদের ডাকে তাদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করা কিংবা আইএস জঙ্গিদের সহায়তা করা হারাম।
সানডে টাইমসে শেখ ওসামা বিন হাসান তার এই ফতোয়া প্রকাশ করেছেন। সানডে টাইমসের রিপোর্ট মতে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্তের আরো ছয়জন লিডিং ইসলামিক স্কলার ও খতিবরা শেখ ওসামা বিন হাসানের ফতোয়াকে সমর্থন করেছেন।
শেখ ওসামা বিন হাসানসহ ছয় ইসলামিক স্কলারদের মতে, বৃটিশ জিহাদিস্ট যারা সিরিয়া ও ইরাকের আইএস বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এবং আর্থিকসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন, তারা সবাই নিজ সোসাইটি ও দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। ইসলাম কখনো এরকম কাজ সমর্থন করে না বলে তারা জানান।
এই সিনিয়র ইসলামিক স্কলারদের মতে, মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব হলো সিরিয়া ও ইরাকের মজলুম মুসলমান ও মানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসা। তবে নিজেদের সোসাইটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে কোনোভাবেই নয়।
ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সিও এই সিনিয়র ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্য সমর্থন করে জানিয়েছেন, আইএসকে কোনো ইসলামিক রাষ্ট্র বা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না।
উল্লেখ্য , ১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাপী ডেথ ফতোয়া দিয়ে ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলেন। ওই সময় স্যাটানিক ভার্সেসের রচয়িতা সালমান রুশদীর মৃত্যুদণ্ড ফতোয়া ইরান ঘোষণা করেছিলো। ইরানও আইএস কে ইসলাম বিরোধী বলেছেন
ইরাক, ইরান, রাশিয়া, সিরিয়ার জয়েন্ট ইনফরমেশন সেন্টার এবং –
এক সময় পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং আদর্শ ও রাজনৈতিক ইস্যুতে একে অন্যের বৈরি ছিলো যারা, তারা আজকে সময়ের প্রয়োজনে, বৈশ্বিক রাজনীতি, কূটনীতি আর পরাশক্তির বিপরীতে নতুন জোট গড়ে নিজেদের শক্তিমত্তা ও অবস্থান জানান দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে দরকষাকষি, কিংবা কূটনৈতিক ও সমর নীতিতে তুলনামূলক ভাবে একটা ভালো অবস্থানে অথবা নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে হউক আর পশ্চিমা শক্তির বিপরীতে একাট্রা হউক– যেভাবেই দেখা হউক না কেন, ইরান, ইরাক, সিরিয়া আর রাশিয়া এই চার দেশ একত্রিতভাবে কট্রর সন্ত্রাসী, জঙ্গি আইএস ( সাবেকী নাম আইএসএল, আইএসআইএস )এর বিরুদ্ধে জয়েন্ট ইনফরমেশন সেন্টার খোলার জন্য ঐক্যমত্যে পৌছেছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্বস্থ কূটনৈতিক এক সূত্রে অবগত হওয়া গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, সেই জয়েন্ট ইনফরমেশন সেন্টারটি হবে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে। এই ইনফরমেশন সেন্টারটির প্রাথমিক কাজ যদিও বলা হচ্ছে আইএস এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়া- কিন্তু টার্গেট গোল হলো মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে সার্বিক তথ্য সমন্বয়, সংগ্রহ, এনালাইসিস, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ ইত্যাদি। রয়টার্স পরিবেশিত সংবাদে এই পর্যন্ত সেদিন বলা হলেও এখন পর্যন্ত আর পর আর কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। কেননা ইতোমধ্যে আইএস ভয়াবহ রূপ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
আই এস ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অংশ-
তেহরান রেডিও পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, আইএস ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ট্রেনিং প্রাপ্ত অথবা ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অংশ। খদ ইরানী সূরার উচ্চ পদস্থরা এই অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ প্রেক্ষিত এবং ইউএন চ্যাপ্টার এইটঃ
একজন সাবেক জেনারেল, যিনি জাতি সংঘের পিস কিপিং মিশনে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তার সাথে একান্তে আলাপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং আফটার ম্যাথ নিয়ে ভারত, আমেরিকা, চীনের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়ে যা জানা গেলো, তা হলো- (জাতি সংঘের পিস কিপিং এ চ্যাপ্টার সেভেন পর্যন্ত সরাসরি জড়িত সেই সেনা জেনারেল বললেন) , আমেরিকা এবং ভারত ও গণচীন সকলেই চায়, বাংলাদেশে একটা ভঙ্গুর সরকার থাকুক। দুর্বল সরকার থাকলে তাদের উদ্দেশ্য সাধনে সুবিধা হয়। আমেরিকা জানে ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার গনতান্ত্রিক কাঠামোহীন দুর্বল সরকার। আবার জনগণ মতপ্রকাশ করতে না পারায় সরকারের প্রপ্তি আস্থাহীন হওয়াতে আমেরিকা চাচ্ছে, ভারত এখন সব দলের সাথে সাথে নেগোসিয়েশনের টেবিলে থাসুক।এদিকে চীন হলো সবচাইতে ইমার্জিং এক শক্তি। এখানে তার গার্মেন্টস, আইটি, গভীর সমুদ্র বন্দর, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদের উপর নিরবচ্ছিন্ন অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে চীন বদ্ধ পরিকর। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সাপ্লাই বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক গভীর সমুদ্র বন্দরের আধিপত্য কিংবা অবাধ যাতায়াত চায় চীন। আমেরিকা সেখানে ভাগ বসাতে চায়। ভারত চায় তার আধিপত্য, তবে চীনকে সাথে নিয়ে। আবার আমেরিকা দ্বৈত নীতি বহাল রাখছে, আবার ভারতকেও ক্যাপ্টেন্সি থেকে বাদ দেয়নি।
আমেরিকা বুঝে গেছে, অগণতান্ত্রিক পন্থায় গঠিত যে সরকার, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সামলাতে অকার্যকর। সে খবর ভারত, আমেরিকা জানে। চীনের ভূমিকা খর্ব করতে আমেরিকার গোপন চাল হলো, বিরাজমান সংঘাত ও ভঙ্গুর দুর্বল সরকারের সুযোগে নয়াদিল্লীর নেতৃত্বে জাতি সংঘের চ্যাপ্টার এইট বাস্তবায়ন। পিস কিপিং এর নামে ভারতের নেতৃত্বে বাংলাদেশে জাতি সংঘের সৈন্য মোতায়েন করা। নিকট অতীতে এই রকম রাজনৈতিক অস্থিরতায় আফ্রিকা, সেনেগাল, রোয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, সিকিম, নানান অঞ্চলে জাতি সংঘ রিজিওনাল বাহিনীর নেতৃত্বে পিস কিপিং সৈন্য মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের দেশপ্রেমিক সৈনিকেরা বাংলাদেশের এই সব অস্থিরতা নিয়ে জাতি সংঘের নেতৃত্বে চ্যাপ্টার এইট বাস্তবায়নের ছক নিয়ে অবগত। সেনাবাহিনী চেইন অব কমান্ড মানতে বাধ্য কিন্তু ম্যাসেজটা জনগণকে পৌছাতে চান যে চ্যাপ্টার এইট বাংলাদেশে আসছে।
সেনাবাহিনীর এই জেনারেল আরো বললেন, অতীতের মতো কোন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কখনোই বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে কোন কাজে আসেনি।যেমন আসেননি জেনারেল ওসমানী, শফিউল্লাহ, জেনারেল হারুন, আর এরশাদতো সবচাইতে ব্যর্থ এক সাবেক জেনারেল।
জাতি সংঘ পিস কিপিং এর এই সাবেক জেনারেল বললেন, আমেরিকা, ভারত, চীন আর জাতি সংঘের পিস কিপিং ইউনিট যখন বাংলাদেশ বিষয়ে চ্যাপ্টার এইট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে, তখন অন্য এক খেলার ইঙ্গিত দেয়। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সচেতন সকল নাগরিক, দেশ প্রেমিক রাজনীতিক, বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার সচেতন জনগণ কি করেন। বাংলাদেশের জনগণকে ডিসাইড করতে হবে ।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিত- তিন স্তরের সন্ত্রাস ও পৃষ্ঠপোষকতাঃ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এদেশে তিন স্তরের বা ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষকতা চলছে। যে পৃষ্টপোষকতা অস্পৃশ্যতা ও ভেতরের কঠিণ শক্তির কাছে সরকারও অসহায় বা জিম্মি অথবা ক্ষমতার স্বাদ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্যে লাভ এন্ড ওয়ার– সব কিছুই হালাল- এমন নীতিতে চলতে অভ্যস্থ।
ক) তিন স্তরের জঙ্গিবাদ বা সমর্থকদের মধ্যে বলা হচ্ছে জামায়াত-বিএনপি জঙ্গিবাদ উস্কে দিচ্ছে।বিশেষ করে ক্ষেত্র বা এভিডেন্স হিসেবে ১৯৭১ সালের অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধকে পটভুমি ও ক্ষেত্র হিসেবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। সেই ষ্ট্রং এভিডেন্সের উপস্থিতিহেতু আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা স্বচ্ছন্দে জামায়াত-বিএনপিকে জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক, আর তা প্রমাণ করতে দোষের রাজনীতি নিয়ে আইএসএস এর উপস্থিতি দৃশ্যমান ঢাকতে জামায়াত-বিএনপিকে সামনে রেখে তীর-বন্দুক চালাচ্ছেন। দৃশ্যমান এবং সংগঠিত ঘটনাগুলো সরকারি বক্তব্যে বিএনপি–জামায়াত প্রথম ধাপের জঙ্গিবাদের সমর্থক ও আমদানীতে ব্যস্ত। যেকারণে বিগত দশ বছরের জঙ্গিবাদী কার্যক্রম ও ঘটনাগুলোর সাথে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িত হওয়া সত্যেও কোন সরকারই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে গোয়েন্দা ভিজিল্যান্স বা রিফর্ম কার্যক্রম সম্বন্ধে ভাবতেও পারেনি। একেবারে রাজধানীর হার্টের মধ্যে যখন আঘাত করলো, তখন কেবল টনক নড়লো।
খ) দ্বিতীয় ধাপের জঙ্গিবাদের সমর্থক ও পৃষ্টপোষক যদি আমরা দেখি, একটু সরকারের অস্থির কার্যক্রমের আলোকে, সহজেই চোখে পড়ে, আর সেটা বিএনপি, জামায়াত এর যারা আওয়ামীলীগে আশ্রিত এবং আওয়ামীলীগের ভেতরের নতুন বা সংস্কারপন্থীগ্রুপের বা আশ্রিত যে অংশটি- যাদেরকে ধরা যায়না, ছোয়া যায়না- এমন নিরাপদ এক শক্তিশালী সংস্কার গ্রুপ পশ্চিমা কানেকশনের জোরে জঙ্গিবাদ উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশে। যারা সরকারের ভেতরের লোক অথচ পশ্চিমাদের চোখে এরা অনেক প্রিয় ও কাছের এবং বিশ্বাসযোগ্য গণতন্ত্রী হিসেবে খ্যাত। এদের পৃষ্টপোষকতায় জঙ্গিবাদ এখন ছোবল মারছে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে- এরা পশ্চিমা শক্তি ও ভারতীয় শক্তিকে বাংলাদেশে ইন্টারভেন করার আমদানীতে অগ্রসেনার কাজ করছে। এই ইন্টারভেনশন হবে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক, কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতার আড়ালে সামরিক ইন্টারভেনশন বা জঙ্গিবাদ দমনে সহযোগিতা। কারণ বাংলাদেশের পুলিশ, অধাসামরিক ও সেনাবাহিনী আধুনিক এই জঙ্গিবাদ বা আইএসএস দমনে অভ্যস্থ নয়-সহযোগিতা প্রয়োজন।এই শক্তিশালী গ্রুপ কিন্তু উভয় দলের নেত্রীর নেতৃত্ব বিরোধী- কিন্তু সেটা প্রকাশিত নয়, অপ্রকাশিত। যেকোন সময় ফুসে উঠবে- শুধু সময়ের অপেক্ষা।সেজন্যে চাই অস্থির রাজনীতি ও অস্থির সময়।
গ) ভারতীয় উলফা, আফগানিস্তানের তালেবান, সিরিয়ার আইএসএস, ইরাকের আইএসএস- এখন পশ্চিমাদের তাড়া খেয়ে নিজ নিজ দেশ থেকে ছড়িয়ে বাংলাদেশের ভুমিকে নিরাপদ ও উর্বর মনে করছে। এদের সহযোগি এদেশের প্রতিষ্ঠিত ফ্রন্ট লাইনের সুযোগ সন্ধানী জ্ঞানী, এক্টিভিস্ট, রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন– যারা আওয়ামীলীগকে দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির সহায়ক এবং সেক্যুলার রাজনীতির সহায়ক হিসেবে প্রচার করছিলো সুশৃঙ্খলভাবে।তারা যেমন আওয়ামীলীগ সরকারের মিত্র, একইভাবে মিডিয়ারও মিত্র, সুশীল সমাজেরও মিত্র। এরা ছদ্মবেশী নয়। ভাসমানও নয়। কারণ এরা উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, অর্থনীতির বিশ্লেষক, রাজনীতি কর্মকান্ডের সংগঠক, আবার দক্ষিণ এশিয়ার সেভেন সিস্টারের আপ–রাইজিং এর বিরোধী ভেতর থেকে, রাজনৈতিক কারণে মোটিভেটেড।
বঙ্গোপসাগর, বান্দরবন, সেন্টমার্টিন(নিঝুম দ্বীপ) নতুন রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টঃ
বিশ্ব রাজনীতির ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও কূটনীতির চালে বঙ্গোপসাগর, কক্সবাজার(আরাকান–মিয়ানমারের অংশে)বান্দরবন, সেন্টমার্টিন নিঝুম দ্বীপ– নয়া অদৃশ্য এক রাজনীতির সূক্ষ্ম খেলা্র টার্গেট। এই খেলায় নয়াদিল্লী, গণচীন, জাপান, মায়ানমার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। আর এই তিন বিশেষ অঞ্চলের রাজনীতির সাংগঠনিক সুবিধার জন্যে প্রয়োজন সামনে থাকা শেখ হাসিনার সরকারের।শেখ হাসিনা না চাইলে বিকল্প চয়েসের রাজনীতিও ড্রেস রিহার্সাল হচ্ছে দেশে ঘন ঘন।সেটাও একটা কারণ। এই রাজনীতিতে খালেদা জিয়া আসলেও সামনে থাকতে হবে। কারণ এই ছক এখন বাংলাদেশ ভুল করে হউক, আর সজ্ঞানে ফায়দা উঠানোর জন্যে হউক, শরিক হয়ে গিয়েছে। যেখান থেকে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। কারণ পেছনে ফেরা মানেই এই তিন অঞ্চলে চরম অশান্তি– যা বাংলাদেশ এই মুহুর্তে সামাল দিতে প্রস্তুত নয়। এখানে যেমন অর্থনীতি জড়িত, তেমনি জড়িত রাজনীতি, একই সাথে সামরিক অবস্থাও জড়িত। ৬২ সালের ব্রিটিশের দ্বারা ইউনেস্কোর রিপোর্টের পর থেকে যে চাল এই তিন অঞ্চল কে কেন্দ্র করে দানা বেধেছিলো, ধীরে ধীরে আজ তা ভারত, চীন, মার্কিনীদের নিজেদের প্রতিযোগীতার ক্ষেত্র হিসেবে উর্বর এক ক্ষেত্র হিসেবে সামনে চলে এসেছে। এই খেলায় কোন কোন ক্ষেত্রে চরম বৈরিতা সত্যেও একে অন্যের সাথে পার্টনারশিপের ও অর্থনৈতিক সমঝোতার রাজনীতি ও কূটনৈতিক খেলা দৃশ্যপটে মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
এবং জাতীয় ঐক্যের ডাক-
প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দল, বিএনপি, জেএস ডি, ডঃ কামাল হোসেন, বিকল্প ধারা সহ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুজন সকলেই এই সময়ে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির ডাক দিয়েছেন। আওয়ামীলীগ কী সেই ডাকে সাড়া দিবে ?
জঙ্গিবাদ আছে আবার জঙ্গিবাদ নেই, আইএস আছে, আইএস নেই– এমন রাজনীতির চালে এখন শেখ হাসিনার সরকার অস্থির করার নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এতে আরো হামলা,আরো প্রাণহানি হবে। বলা হচ্ছে সিকিম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই রাজনীতির খেলা সিকিম নয়, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, পাকিস্তানের দিকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তাকাতে হবে।সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে শুধু মাত্র আইএস ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক ফ্রন্টের আফটার ম্যাথের খেলা নিয়ে ভাবতে হবে।হাসিনা সরকারের ভিতরের ও বাইরের এই শত্রুদের ডিপ্লোম্যাটিক কায়দায় ফেস করে আইএস বিরোধী কঠিণ জাতীয় ঐক্যের সঠিক রাজনীতির সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়তে না পারলে- বাংলাদেশ আইএসের নিরাপদ উর্বর চর্চার ও গিনিপিগ হিসেবে পরিণত হবে সন্দেহ নাই।এখন আর সন্দেহ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করলে হবেনা, সঠিক একশন নিতে হবে।
7th July 2016, London.
লেখাটি বাংলাদেশের জাতীয় ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক -এ বর্ষ ৯, সংখ্যা ৭ প্রকাশিত হয়, প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সন থেকে-
লিংক- http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=11441
দেশের বাইরে] আইএস-জঙ্গিবাদ-প্রেক্ষিত বাংলাদেশ ব্রিটেনের বাংলাদেশি -সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ | |||
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, লন্ডন থেকে বেশ কিছুদিন থেকেই মুক্তমনা, ব্লগার, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ইত্যাদি নামের তকমায় বাংলাদেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছিল। হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটার পর মার্কিনিভিত্তিক সাইট অনলাইন থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি বা দায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই সব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আইএসের সম্পৃক্ততা শুধু নাকচই নয়, বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রে আইএসের অস্তিত্ব স্বীকার করা হচ্ছিল না। শেখ হাসিনার সরকারের তরফ থেকে এই সিগন্যাল আইএসের মুরুব্বিরাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল- ধরেই নেয়া যায়। আবার সরকারের কতিপয় মন্ত্রী যেভাবে মাদরাসা কেন্দ্রিক জঙ্গিবাদকে দায়ী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যস্ত, ঠিক সেখানে শেখ হাসিনার সরকারের একেবারে ভিতরের অংশ এই মতের সাথে একমত নয়, যেমন নয় পেন্টাগন এবং নয়াদিল্লি ও ব্রিটেনের এমআইসিক্স। আবার ভারতীয় গোয়েন্দা ‘র’ এর দক্ষিণ ব্লক আর ওয়াশিংটন (পেন্টাগনের লবি নয়) আর ব্রিটিশ সোয়াত- জঙ্গিবাদের সাথে মাদরাসার সম্পৃক্ততা বড় করে দেখছেন বা দেখাতে ব্যস্ত। শেখ হাসিনার ইনার লবি, পেন্টাগন, নয়াদিল্লি, এমআইসিক্স-এর বক্তব্য ২০০ বছরের উপরের পুরনো মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে না। গোয়েন্দা খেলার ও চালের জগতে কাউকে না কাউকে তো হারতেই হবে- তার খেসারতও দিতে হয় কঠোর ও ভয়াবহভাবে। বাংলাদেশ এখন সেই খেলার নির্মম ট্র্যাজেডির গল্পের উপাখ্যান শুধু নয়, বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করার আগে আমাদেরকে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। লন্ডনসহ বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের একই সাথে ধনীর দুলালদের আইএসের সাথে জড়িয়ে পড়ার কিছু সিনারিও আমরা দেখে আসি। ব্রিটেন এবং বাংলাদেশি কমিউনিটি রেহেনা সন্তানদের নিয়ে সিরিয়া গেছেন রশিদের গ্রেপ্তার রেহেনার স্বামী আজিজুল বলেন প্রাথমিক লক্ষণগুলো ‘আইএসে’ যোগ দেয়া বা সাপোর্ট করা হারাম’ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত এবং ইউএন চ্যাপ্টার এইট তিন স্তরের সন্ত্রাস ও পৃষ্ঠপোষক জাতীয় ঐক্যের ডাক |