tweet@salim1689- দ্য উইকে(ভারতীয়) পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন-৩১ মে ২০২০। সেখানে সাংবাদিক রবি ব্যানার্জী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যে সব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর অধিকাংশ বঙ্গবন্ধুর খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসি এবং একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী প্রফেসর তাজ হাসমী তার কাউন্টার কারেন্ট ডট অর্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জড়িয়ে বেশ ব্যক্তিগত এবং অসংলগ্ন কিছু লেখা লিখেছেন। তিনি লিখতেই পারেন। এটা তার স্বাধীনতা। কিন্তু এটা লিখতে গিয়ে অনেক অযাচিত, ব্যক্তিগত, ক্রোধ ও আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অত্যন্ত কৌশলে এমন কিছু তথ্যের সন্নিবেশ করেছেন, যা আদৌ শুধু মিথ্যায় ভরপুর নয়, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য যেমন যথেষ্ট, তেমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের একে একে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ দিনের দেশে বিদেশে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর যে হ্নদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে-সেটা একটু সহজে বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায়। আর একশ্রেণীর লোক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু একটা পেলেই লাফিয়ে পরে। এই মানবজমিন আবুল মাল আব্দুল মুহিতের চারদলীয় জোটের বিপরীতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সময়ে ডঃ আবদুল মোমেনের দ্বারা নির্বাচনী তহবিলের জন্য প্রবাসীদের কাছে আপিলের জন্য আবদুল মোমেনকে চাদাবাজ আবদুল মোমেন বলে হেডলাইন করেছিল(২০০১)।সুতরাং তাজ হাশমীর মত একজন রিটায়ার্ড অধ্যাপক আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিবেন-সেটা নতুন কিছু নয়।
আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ১৯৭১ সালেও হয়েছিল। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকার এনএসএফের সহায়তায় ধোপাদীঘির পারের আবদুল মোমেনের বাসায় বোমার শেল মেরে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।বঙ্গবন্ধুর খুনীদের একে একে যখন ট্র্যাক এন্ড ট্রেসের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করা হচ্ছে, তখনি বলেছিলাম, আবদুল মোমেন, পরিরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি কঠিণ ষড়যন্ত্রের মুখে পা দিলেন-আদতেও তাই। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা এখন একাট্রা আবদুল মোমেনের বিরুদ্ধে।
তাজ হাসমী দ্য উইকের ৩১ মের আবদুল মোমেনের সাক্ষাতকার এর ভিত্তিতে অনেক কথাই লিখেছেন। আপনি লিখেছেন আবদুল মোমেন আপনার মতই এনএসএফ করতেন, এসএম হলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাজ হাসমী আপনার এই তথ্য শুধু মিথ্যা নয়, সত্যের অপলাপ মাত্র। আবদুল মোমেন কখনই বলেননি, এমনকি তিনি এনএসএফের এসএম হলের প্রেসিডেন্ট ছিলেননা। নিজের সাফাইয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় একজন ক্ষমতাসীনের রেফারেন্স দরকার লাগে। আপনি সুচতুরতার সাথে সেই রেফারেন্স মিথ্যার বেড়াজালে ঠিকই বানিয়ে নিয়েছেন।
আপনি দাবি করেছেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে আবদুল মোমেন ১৯৭০ সালে দেখা হওয়ার, কিন্তু সত্য হল আব্দুল মোমেন ১৯৭০ সাল দাবী করেননি। ভারতীয় সাংবাদিক নিজের ভুলে অথবা তথ্য যাচাই না করেই লিখেছেন ১৯৭০, ব্র্যাকেট বন্দী রেফারেন্স হিসেবে ব্যানার্জি দিয়েছেন। আবদুল মোমেন সেই দাবী করেননি। মূলতঃ রাওয়াল পিন্ডির আরটিসিতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ১৯৬৯ সালে আবদুল মোমেনের কাজের রেকর্ড রয়েছে। রাওয়াল পিন্ডিতে আরটিসির মিটিং এ বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন ডঃ আবদুল মোমেন। ঐ সময়ের অসংখ্য বই, জার্ণাল, আর্টিকলসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে(আরটিসি)।ড. মোমেন কখনো বলেননি যে তিনি ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে বা সফরসঙ্গী হয়ে পিণ্ডি গিয়েছিলেন।
আমরা জানি আবদুল মোমেন তখন রাওয়াল পিন্ডিতে বসবাস করতেন। ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। বঙ্গবন্ধু যখন পিণ্ডিতে পৌছেন, তখনি তিনি তাঁর সার্বক্ষনিক সেবাদানে নিয়োজিত হয়ে ধন্য মনে করেন। সেই থেকে তার সাথে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টতা জন্মায়। ঐতিহাসিক এই সত্যকে আপনি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে কতিপয় মিষ্টি মধুর শব্দের বেড়াজালে আবদুল মোমেনের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন-যা একজন প্রাক্তন শিক্ষকের এথিকসের সাথে মানায় কিনা, সেই বিচারের ভার আপনার বিবেকের কাছে দিলাম।
আব্দুল মোমেন তার জীবনে কখনও সিনিয়র আমলা দাবী করেননি। এটাও ভারতীয় সাংবাদিকের দাবী-আবদুল মোমেনের নয়। আর ফরিদ গাজীর তিনি পিএ ছিলেননা- ছিলেন প্রাইভেট সেক্রেটারি।বয়সের ভারে আপনার মত অধ্যাপকদের অনেকেই পিএ এবং পিএসকে একাকার করে ফেলেন। ডাক্তাররা এটাকে আলজাইমার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তাজ হাসমী আপনি লিখেছেন, আব্দুল মোমেনের সাথে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠি ছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হল-বিশ্ববিদ্যালয়ে একই একাডেমিক সালে অনেকেই পড়তে পারে-এটাই স্বাভাবিক। একই সালের অজুহাতে কেউ যখন খ্যাতির শিখরে পৌছে যায়, তখন অনেকেই এভাবে দাবী করে উনি আমার সহপাঠি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী হিসেবে সেটা মানানসই। তাই বলে, আপনাকে যিনি মনেই করতে পারেননা কখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছেন-তখন সেই ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র মাখিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোটা কি যুক্তিসঙ্গত?