বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই চলছে। আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে মোড়ল হিসেবে এতদিন অবস্থানকারী কোনো কোনো দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। আবার কোনো কোনো দেশ বিস্ময়করভাবে উন্নতি অর্জন করতে পারে।
একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর আগে তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর প্রক্রিয়া সংগঠিত হতে যাচ্ছে।
এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থান দখল করে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে। তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা হারাতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, ২০৫০ সালের মধ্যেই চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে নেবে। একইভাবে ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসবে।
এতে আরও বলা হয়েছিল, জাপান তার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থান নিশ্চিতভাবেই হারাতে বসেছে। তবে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের মধ্যেই আগামীতে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা চলবে।
এই প্রক্ষেপণের সত্যতা ইতিমধ্যেই আমরা কিছুটা হলেও টের পেতে শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যে প্রক্ষেপণ করেছিল তার চেয়েও দ্রুত গতিতে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেই এখন মনে হচ্ছে।
কয়েক বছর আগে চীন পারচেজিং পাওয়ার প্যারেটি বা পিপিপি হিসাবের বিবেচনায় বিস্ময়করভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বের ‘এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি’তে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ সূদ হার ঘোষণা করেছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, ভোগ্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় সূদ হার বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প উপায় ছিল না। মার্চ মাসের পর এটি তৃতীয় দফা সূদ হার বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় এই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে, গত মাসেও মুদ্রাস্ফীতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ভোক্তাদের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে।
গত কয়েক দশক যাবত যে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দেখতে অভ্যস্ত তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে এবং বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।’
যুক্তরাজ্যে ভোগ্যপন্যের মূল্য গত এপ্রিল মাসে ৯ শতাংশ বেড়েছে। গত দেড় মাসে মূল্য সূচক আরও বেড়েছে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত সূদ হার পঞ্চম দফা বৃদ্ধি করেছে। ব্রাজিল, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সুদ হার বাড়িয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক আভাস দিয়েছে, আসছে গ্রীষ্মে তারা সূদ হার বৃদ্ধি করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত অধিকাংশ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। তারা মনে করছেন যে ফেডারেল রিজার্ভ দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তাদের পক্ষে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা হয়ত সম্ভব হবে না (সংকলিত)।