আওয়ামীলীগের প্রথম দিককার শাসনের কিছুদিন বাদ দিলে, লক্ষ্য করার মতো যে, আওয়ামীলীগ শুরু থেকে বেশ গুছিয়ে গাছিয়ে একের পর মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো কল্প-কাহিনী বাজারে প্রমোট করে আসছিলো। কিন্তু বাধ সেধে যায়, শাহবাগের জাগরণ মঞ্চ আর তা সামলাতে গিয়ে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারে হেফাজতকে ডেকে নিয়ে এসে, আবার তাদের ঢাকা অবরোধ নস্যাতের নামে নারকীয় তাণ্ডব করতে গিয়ে আওয়ামীলীগ নিজেই নিজের ছকে ধরা খেয়ে বসে। আর একটি মিথ্যা গল্পকে সাজাতে গিয়ে বা একটি মিথ্যাকে ডাকতে গিয়ে আওয়ামীলীগ দশটি, হাজারো মিথ্যা কল্প-কাহিনী সাজিয়ে পরিস্থিতিকে করে তুলেছে বিষময়, জাতিকে করেছে বিভ্রান্ত, সমাজ-সভ্যতার পীঠে করেছে ছুরিকাঘাত।
মিথ্যা বানোয়াট আর এই সব গোয়েবলসীয় আজগুবি তত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দলের ভিতর থেকে শুরু করে দল ও জোটের বাইরে, দেশের ভিতর ও বাইরে, মিত্রদের মধ্যে অবিশ্বাস, সন্দেহ আর শত্রুতা তৈরি করেই ক্ষান্ত হয়নি, সেই সব পজিশনকে করে তুলেছে আরো ভয়ংকর। এখন তাই আওয়ামীলীগের কু-কর্মের ভাগীদার কেউ হতে রাজি হচ্ছেনা। খোদ জাতীয় পার্টির মতো আওয়ামীলীগের লয়াল শক্তিও আওয়ামীলীগের ব্যর্থতার দায়ভার নিতে চাচ্ছেনা।আওয়ামীলীগের মিথ্যা বানোয়াট গল্প আর দূর্ণীত, লুটপাট, মন্ত্রী এমপিদের দাম্ভিকতা, অহমিকা, ধরাকে সরা জ্ঞান করার প্রতিবাদে জনগণ আওয়ামীলীগের উপর থেকে আস্তা ও বিশ্বাস সরিয়ে নিয়েছে। জনগণ আবার মন্দের ভালো আওয়ামীলীগ বিরোধী জোটে নিজেদের আস্তা খুঁজে ফিরছে, যার প্রমাণ চারটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হেভি ওয়েট প্রার্থীদের সূচনীয় পরাজয়।
হেফাজতের অবরোধ নস্যাতের ঘটনায় সারা বিশ্বের মিডিয়ায় যখন তোলপাড় চলছিলো, আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তায় যখন সীমাহীন ফাটল ধরেছিলো, তখনি মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আসে রানা প্লাজার ধ্বসে হাজারের উপর গার্মেন্টস শ্রমিকের অকাল মৃত্যু।আওয়ামীলীগ যখন এই উভয় সংকটে নিজেদের জাত-কূল-মান রক্ষায় দিশেহারা, তখনি নাটকীয়ভাবে রেশমা নামক গার্মেন্টস কর্মীর অলৌকিক উদ্ধারের ঘটনা সারা বিশ্বের মিডিয়া লুফে নেয়।এটিএন বাংলার সাংবাদিক মুন্নী সাহা ছাড়া দেশের ভিতরেতো নয়ই, সারা পৃথিবীর কোন সাংবাদিক রেশমা উদ্ধারের এই অলৌকিক প্রাণে বাচার ঘটনায় বিস্মিত হওয়া ছাড়া কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। করেনি এই কারণে যে, এর আগে চিলি, হাইতি, হংকং এ এই রকম অলৌকিকভাবে জীবিত উদ্ধারের ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
মুন্নী যেমন প্রশ্ন করেছিলেন, ১৭ দিন ধ্বসের নীচে থাকলো, অথচ দাঁতের মধ্যে কোন ময়লা নেই, মুখে দুর্গন্ধ নেই, শরীরের কাপড় ছেড়া ও নোংরা নয়, নখ পরিপাটি-খটকা লাগারই কথা ছিলো। কিন্তু মিডিয়া এবং কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে জড়িত থাকায় এবং তাদের নিষ্টা ও আন্তরিকতায় দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কোন প্রশ্ন না থাকার ফলেই সেদিন মুন্নী সাহার ঐ রকম প্রশ্নে অনেকেই নাক উঁচু করে বরং মুন্নী সাহাকে তাচ্ছিল্য করেছিলেন। এমনকি অনেকে অনলাইনে মুন্নীকে উপদেশ দিয়ে কলামও লিখেছিলেন। কিন্তু একটিবারও বাস্তবতার ধারে কাছে কেউই যেতে চাননি। বাস্তবতা বড় নির্মম, বাস্তবতা বড় কঠিন। সাংবাদিকের কাজই হলো বাস্তবতার উপর ভর করে সত্যানুসন্ধান। অনেকেই সেদিন বেমালুম ভুলে গিয়ে মুন্নীকে তাচ্ছিল্য করে নসিহত করেছিলেন। এতোদিন পর দেখা যাচ্ছে, মুন্নীর সেদিনের অনুমান নির্ভর, সন্দেহ নির্ভর(অনেকের ভাষায়)প্রশ্নের আলোকেই আজকে রেশমা উদ্ধারের ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো এক নাটক, যাতে আওয়ামীলীগের সাজানো মিথ্যা গল্প ও কল্প-কাহিনীর সাথে গোটা সেনাবাহিনীর ভাব-মূর্তিও প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আগামী আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার কর্মসূচিতে পড়বে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
আমাদের সময়, আমার দেশের অনুসন্ধানী সেই রিপোর্ট হুবহু প্রকাশ করে সারা বিশ্বে এক তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। রেশমাকে কতো মিডিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। আজ হউক কাল হউক মিডিয়ার কাছে রেশমাকে ফিরে আসতেই হবে। তার নিজের ও জীবনের প্রয়োজনে। আজকে মিডিয়া যাতে সেই সত্যানুসন্ধানী সংবাদ করতে না পারে, রেশমাকে কৌশলে ও কঠিন নজরদারির মধ্যে ওয়েষ্টিনের লোভনীয় চাকরীর মায়াজালে আটকিয়ে কিংবা সকলের অগোচরে আমেরিকা সপরিবারে পাঠিয়ে দিতে সফল হলেও এটা ভাববার কোন কারণ নেই বিশ্ব মিডিয়া থেকে রেশমার আসল ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাবে। বরং একদিন রেশমার সাজানো নাটক যখন বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় করবে, তখন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভেবে দেখেছেন কি ? এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? আর বিশ্ব মিডিয়ার দুই দিকপাল বিবিসি, সিএনএন আর তার সাথে অধুনা আল-জাজিরার অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকদের চোখ-কান এখন সর্বদাই বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহের দিকে ধাবমান। বাংলাদেশের মিডিয়ায় রেশমার উদ্ধারের সাজানো নাটক এখনো সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা ভাববার কোন কারণ নেই, ইতিমধ্যেই যে ঐ সব আলোচিত মিডিয়ার মোঘলদের অবগত করা হয়নি, এমন নিঃসন্দেহ থাকার কিছুই নেই। বরং আল-জাজিরা, বিবিসি,সিএনএন বলা যায় ইতিমধ্যেই সেই সিগন্যাল পেয়ে গেছে। তবে যেহেতু তাদের কাজের ধরণটাই আলাদা। উপযুক্ত তথ্য, প্রমাণ, বর্ণনা, সাক্ষ্য ছাড়া তারা এসব ঘাটাঘাটি করেনা সত্য, তবে তা যে উদ্ধারে তৎপর নয়, সেটাওতো ভাবাটা বোকামি হবে।
আওয়ামীলীগ নামক এই সরকার নিজেদের মিথ্যা, বানোয়াট ক্রেডেবেলিটির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল আর বহিঃর্বিশ্বে সুনামের অধিকারী এই প্রতিষ্ঠানটিকেও শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ করে ছাড়লো। আওয়ামীলীগের জন্য এবার নাজানি কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাকী আছে আল্লাহই জানেন।কারণ সরকারের উপর থেকে যখন পচন শুরু হয়ে যায়, তখন তার ভিত্তিমূলেও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। আর তা থেকে আপনি আমি কেউই নিস্তার পাবোনা- এই বেশামাল সরকারের পচন থেকে।
link: আমাদের সময়ের সেই নিউজের লিঙ্কhttp://www.amadershomoy1.com/content/2013/06/23/middle0541.htm
২৫শে জুন ২০১৩।