বাংলা নিউজের সাথে হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে দুটি কথা-

বাংলা নিউজের সাথে হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে দুটি কথা-

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,যুক্তরাজ্য থেকে-

গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে সংসদ সদস্য জনাব হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাৎকার বাংলা নিউজের বদৌলতে পড়ার সুযোগ হয়েছে।বাংলা নিউজকে সেজন্য ধন্যবাদ,মোটামূটি সেন্সরবিহিন অবস্থায় হাসানুল হক ইনুর সাক্ষাৎকারটি

প্রকাশ করার জন্য।ধন্যবাদ এই কারণে,এই ধরনের সাক্ষাৎকার প্রকাশের মাধ্যমে দেশ ও সচেতন জনগণ যেমন চলমান নেতৃত্ত্বসম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করার সুযোগ হয়,একইসাথে সরকারের অন্তর্নিহিত নানান খুটি-নাটি বিষয় সম্পর্কেও জনগণ অবগত হওয়ার সুযোগ লাভ করে থাকেন,বাংলা নিউজের সাংবাদিক বন্ধুরাও সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্দ্বতা ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও আরো একধাপ এগিয়ে যান বলে প্রতিভাত হয়।

বাংলা নিউজ এর যারা সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন,তারা শুরুতেই লিখেছেন হাসানুল হক ইনু চৌকস রাজনীতিবিদ।চৌকস কিনা জানিনা,তবে বোধহয় অঘটন-ঘটন পঠিয়সী বললে বোধহয় আরো বেশী মানানসই হতো।মহাজোট সরকারের শরিক হিসেবে অবশ্যই তিনি এবং তার দল সরকারের অংশ,সুতরাং সরকারের সাফল্য,ব্যার্থতার সমান অংশীদার তিনি এবং তার দল।এই দায়-দায়িত্ত্ব কতিপয় শব্দের মার-প্যাচ দিয়ে এড়ানো যাবেনা।

আমাদের সবচাইতে দূর্ভাগ্য যে,আমাদের নেতা-নেত্রীরা জনগণের কাছে জবাবদিহি থেকে বেশ ভালোভাবেই এড়িয়ে চলেন বা বলা যায় এক্ষেত্রে তারা সবচাইতে স্বাধীন,যেন তাদের কাজের কথা জিজ্ঞেস করার কেউ এখানে আর বর্তমান নেই।নাহলে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য যেখানে এতো রক্তপাত আর এতো আন্দোলনের পর যে সংসদীয় সরকার ব্যাবস্থা গড়ে উঠলো বা আমরা চর্চা করে চলেছি,তাকে সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু করার ক্ষেত্রে কেউই কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেননি,বরং একে অন্যের ঘাড়ে দূষ চাপিয়ে নিজে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন।

আওয়ামীলিগের সমালোচনা করে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরে পাশাপাশি এর বিকল্প কিংবা যে সমস্যা সরকার কতৃক সৃষ্টি সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা বা উপদেশ তুলে ধরাইতো একজন সাংসদের কাজ।সাংসদ যেমন আইন-প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন,তেমনি সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতিও তুলে ধরবেন।সমাধানের পথও বাতলে দিবেন।আওয়ামীলীগ বিভিন্ন সমাজগোষ্টী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বলে যথার্থই মত ব্যাক্ত করছেন,এক্ষেত্রে ধন্যবাদের দাবীদার ইনু ভাই।তবে শুধু কি তাই বললেই চলে,আওয়ামীলিগকে তথা মহাজোট সরকারকে সঠিক পথে চালানোর জন্য দলগত এবং জোটগত ভাবে বিগত তিনটি বৎসর আপনি কি করেছেন,তা কি খোলাসা করে বলা উচিৎ ছিলোনা?পত্র-পত্রিকা কিংবা সংসদ সচিবালয়ের রেকর্ড বা ডায়রীতে কিন্তু এক্ষেত্রে পজিটিভ কোন তথ্য আছে বলে কারো জানা নেই।আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা আপনাকে যথেষ্ট রিলাক্স মোডে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন,না হলে জনগণের জবাবদিহিতার এই ব্যাপক অংশটুকুতে আপনার কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করে নিতেন।

আপনি ১৪ দল এবং সাম্প্রদায়িক বিরুধী অবস্থানের কথা বলেছেন,জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থানের কথা বলেছেন,বেশ ভালো কথা।কিন্তু মহাজোট সরকার গঠণের পর ১৪ দলের কোন কার্যক্রমতো ভুলেও জনগণের চোখে পড়েনি।১৪ দলের মূল ঘোষণার কোন কিছুইতো বাস্তবায়নের জন্য আপনি এবং আপনার দল কোন ভূমিকা পালন করেননি।রাজনীতিতে স্ব-বিরুধীতা রেখে জনগণের জন্য কল্যাণ করা দূরহ ইনু ভাই।

আপনার বক্তব্যের সবচাইতে মারাত্নক ভ্রান্তি যেখানে অতিমাত্রায় শব্দদূষে দূষিত,আর তা হলো আমাদের অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে তীর্যক মন্তব্য।আপনার বক্তব্য পড়ে আমার মনে হয়েছে,আপনি খোদ অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে হয় অজ্ঞ,নয়তো চিরাচরিত বিরুধীতার খাতিরে এবং সেই আপনার অঘটন-ঘটন এর মুদ্রা-দূষের তত্ব বা ফর্মুলা বাস্তবায়নে আপনি ব্যাতিব্যাস্ত।আপনার ভালো করে জানা থাকার কথা যে হার্ভার্ড এবং অক্সফোর্ডে যারা পড়ে বা রিসার্চফেলো হিসেবে কাজ করে,ডিজিটালাইজড সম্পর্কে তারা অবশ্যই যে কোন সাধারণের চাইতে বেশী ধারণা রাখেন।আর আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়তো বিশ্বের এই নামকরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন,গবেষণা করেছেন,ছিলেন একসময় বিশ্বব্যাংকের জাদরেল কর্মকর্তা,তৃতীয় বিশ্বে যখন ইউএনডিপির বিভিন্ন ঋনদানবিষয়ক প্রজেক্ট কার্যক্রম চলতো,তার মূল এডভাইসার আর এর দায়িত্তে ছিলেন আজকের এই অর্থমন্ত্রী,এছাড়া সবচাইতে মর্যাদাকর যে পদ সবসময় একজন অর্থনীতিবিদের কাছে লোভনীয় হয়ে থাকে,সেই এসকাপের একজন নামকরা নির্বাহীও একসময় এই অর্থমন্ত্রী ছিলেন।বয়সের ভারে হয়তো একটু ব্যাতিক্রম ধর্মী বক্তব্য দিয়ে থাকেন,তাই বলে তার যোগ্যতার প্রশ্নে সন্দেহ করাটা কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়।ডিজিটাল শব্দটি যতনা মুখে-মুখে উচ্চারণ যত সহজে করা যায়,একটি গুণে ধরা,বহু পুরনো,মান্দাতার আমলের প্রশাসন ও সমাজব্যাবস্থায় কোন প্রকারের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত সমাজে তার প্রচলন অনেক দুঃসাধ্য কাজ।গোটা সমাজের,গোটা প্রশাসনের সিষ্টেম এর ভার কেবলমাত্র খোদ অর্থমন্ত্রীর ঘাড়ে চাপানোর কোন মানে হয়না।আপনাদের সরকারের নানান ভ্রান্ত পলিসি এই অর্থমন্ত্রীর ঘাড়ে সওয়ার করে চালিয়ে দেওয়ার দূর্বিনীত প্রয়াস,তাতো আমরা দেখতে পাচ্ছি।অর্থমন্ত্রী মহোদয় নেহায়েত ভালো মানুষ,আর এই ভালো মানুষটিকে আপনারা কলূষিত করার সবটূকু চেষ্টা করেও যখন কাবু করতে পারেননাই,তখন ডিজিটালাইজড এর অজ্ঞতার ধোয়া তুলার ব্যার্থ চেষ্টা না করলেই কি নয়? অবশ্য এক্ষেত্রে আপনাদের মেলা ভার,কারণ,সত্তর-আশির দশকে এই আপনারাই বাংলাদেশের আরো এক প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডঃ আখলাকুর রহমানকে আপনাদের তথাকথিত কৃষিতে ধনতন্ত্রের বিকাশ নামক আজগুবি থিওরী প্রকাশ করে তাকে আবার ছূড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।আপনারা সবই পারেন।আপনিতো সারাজীবন এনভেলাপ মার্কা রাজনৈতিক বিরুধীদলের ভূমিকা রেখে চলেছেন,যখন এনভেলাপ আপনার হাতে পৌছেনা,তখনই আপনার বক্তব্য বিরুধীতায় চলে যায়।আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নিশ্চয় আপনি এখনো কোন এনভেলাপ আদায় করতে পারেননি,তাই এমন উঠকো বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।বেচারা অর্থমন্ত্রীও,সব ক্ষেত্রে যখন সমঝোতা করে চলেছেন,তাহলে এক্ষেত্রে করলে আর কি হয়,অবশ্য এক্ষেত্রেও নেত্রীর অনুমোদন দরকার আছে।ইনু ভাইতো মহাজোট নেত্রীর কৃপা দর্শন পাওয়ার জন্য অনেক কসরত করে চলেছেন,খালেদা জিয়াকে নিয়েও চমকপ্রদ,উদ্ভট বিক্তব্য দিয়েছিলেন,সে যাত্রায়ও কাজ হয়নি,এখন আবার অর্থমন্ত্রীর পেছনে লেগেছেন,দেখাযাক ইনু সাহেবের আশা শেখ হাসিনা পূরণ করেন কিনা।কারণ উনি যখন চোখ মুজেন,তখন দেখেন তার পূর্বসূরীরা এই রকম খন্ডিত জাসদের নেতা হয়ে সরকারের মন্ত্রী হয়ে পতাকা উড়িয়ে দাপটের সাথে চলেছিলেন,সরকারের তিনবছর হয়ে গেলো, তার এই সাধটুকু অপূর্ণই রয়ে গেলো।

টেলিকমিউনিকেশনের দায়িত্ত্ব নেওয়ার পর এই সংস্থাটিকে ডিজিটালাইজড করার নামে আপনারা যে কি অবস্থা করেছেন,তাতো দেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছেন।বাংলাদেশে যে কয়টা সংস্থা সবচাইতে বেশী দূর্ণীতিগ্রস্থ এই সংস্থাটি তার মধ্যে অন্যতম।এই সংস্থাটিকে যোগোপযোগী এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্টানে পরিণত করতে আপনার ভূমিকা কোথায়? আজ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সাথে রাষ্ট্রীয় এই বৃহৎ সংস্থাটি কোনভাবেই পেরে উঠতেছেনা,তারপরেওতো আপনি মহাজোট সরকারের টেলিযোগাযোগ সংসদীয় কমিটির সভাপতি।আজকেতো ফ্রি সার্ভিস দিয়েও এই সংস্থার একটা ল্যান্ড লাইন জনগণের কাছে দেওয়া যাচ্ছেনা।এই হলো হাসানুল হক ইনু ভাইয়ের উন্নত সেবার নমুনা।গোড়াতে গলদ রেখে পুরো সমাজ ও দেশ বদলানোর ব্যর্থ চেষ্টাতে কেবল আপনাদের এনভেলাপের পকেট ভারি হবে ছাড়া আর কিছুই হবেনা। অন্যের সমালোচনা করার আগে সব সময় নিজের চেহারা আয়নায় দেখা উচিৎ।অপরের কাজের সমালোচনা করার আগে,আমি নিজে কতটুকু দায়িত্ত্ব পালন করেছি বা নিজে কতটুকু দায়িত্ত্ব সচেতন ও অর্পিত দায়িত্ত্ব কতটূকু সুচারুভাবে করতে পেরেছি,তা দেখা উচিৎ।

কারণ আজকের যুগ,আপনার ভাষায় ডিজিটালের যুগ,তথ্যের অবাধ প্রবাহ বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অনায়াসে চলে যায় মুহুর্তে।

তারপরেও খোলাখুলি অনেক কথা বলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Salim932@googlemail.com,Twitter@salim1689

19th June 2012.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *