সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,ইউ,কে,থেকে-
অফুরন্ত সম্ভাবনার দেশ এই বাংলাদেশ, একদিকে যেমন রয়েছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,অপরদিকে রয়েছে এর বিশাল এক মানব সম্পদ,যাকে ইচ্ছা করলে,সুষ্টু পরিকল্পণা ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও কর্মউদ্দীপনার মাধ্যমে এই বিশাল মানব সম্পদকে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদে পরিণত করে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।কিন্তু কে নিবে সেই দায়িত্ব?কে করবে সেই কর্মী উদ্দীপনা?
পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশে আজ ষোল/সতের কোটি জনগণের বাস,আমাদের নগর,লোকালয়,গ্রামীন ও নাগরিক জীবন আজ বিপর্যস্ত ও বিধবস্ত এই বিশাল লোকবল নিয়ে,জাতীয় অর্থনীতি হিম-সিম খাচ্ছে,আমাদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড মুখ তুবড়ে পড়ছে মাঝপথে,একেতো দক্ষ নের্তৃত্ব,সুষ্টু পরিকল্পণা,স্বচ্ছতা,জাবাবদিহিতার অনুপস্থিতি,তার উপর আছে দলীয় সন্ত্রাস,জবরদস্তি,স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি।গার্মেন্টস সহ যে দু-চারটি ক্ষেত্রে আমরা ইর্ষনীয় সাফল্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে করতে পেরেছি এবং রপ্তানীবাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখে চলেছে এই সেক্টর,তা নিয়েও শুরু হয়ে গেছে নানামূখী ষড়যন্ত্র।যেখান থেকে আমার জাতীয় অর্থনীতির জিডিপিতে যোগান দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা হচ্ছে,সেক্ষেত্রেও আমরা আমাদের চিরায়ত রাজনৈতিক হানাহানি,বিদ্বেস,হিংসা আর প্রশাসনিক অবৈধ হস্তক্ষেপ করে এই সেক্টরকেও করে তুলতেছি বিপর্যস্ত।
দেশের সামগ্রিক আইন-শৃংখলার করুণ অবস্থার কথা সকলেই কম-বেশী অবগত।প্রশাসনের সর্বস্তরে দূর্ণীতি,স্বজনপ্রীতি,অদক্ষতা,রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এতো বেশী যে,আজ পুলিশের মতো জনগণের সেবামূলক এই প্রতিষ্টানের কর্মচারি থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা এতো বেপরোয়া ও বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা আচরণ করে চলেছে যে,জাতি হিসেবে আমরা বড় লজ্জিত ও আতংকিত না হয়ে পারিনা।সাংবাদিক সাগর-রুণি হত্যাকান্ড,চট্রগ্রামের স্কুল ছাত্র হিমু মজুমদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মম,আদিম,বর্বরোচিত কায়দায় হত্যা,খোদ রাজধানীর আদালত পাড়ায় দিনের আলোতে মা,বাবা,ও হাজারো জনতার সামনে পুলিশ কর্তৃক মেয়েকে শ্লীলতা হানি,রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে প্রতিনিয়ত চার/পাচজন লোকের প্রাণহানি,জাতির বিবেক সাংবাদিকদের উপর বেপরোয়া নির্যাতন,গার্মেন্টস সেক্টরে আন্দোলনের নামে ধংসাত্নক কার্যক্রম,রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের গুম,নির্যাতন,হত্যা—এই সব কোন কিছুই সুশাসনের আলামত বহন করেনা।সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠগুলো তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশের মানাবাধিকার লংঘণের ঘটনাগুলো নিয়ে বেশ উদ্ভেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে,সেটাও বড় বেশী করে ভাবিয়ে তুলে,জাতি হিসেবে কোথায় চলেছি আমরা?
বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন যে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে,তা যেমন আমাদের সুযোগ্য অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন,একই সাথে দেশী-বিদেশী সকল সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্টান,বিশেষজ্ঞ,এমনকি সরকারি ও বিরোধীদলের সকল রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দও একবাক্যে স্বীকার করে থাকেন।মজার ব্যাপার হলো বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের কেউই এটা বলেননা যে,এই যে এতো সহিংসতা,আদিম,বর্বরোচিত কায়দায় সাংবাদিক ও নারীর ইজ্জতের উপর হামলা ও হিমুর মতো নিরিহ ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে,রাস্তায় মানুষ মারা হচ্ছে,যে অসৎ,উচ্ছৃংখল সংস্কৃতি সারা দেশব্যাপী গড়ে উঠতেছে,এর বিরুদ্দ্বে ও এর ব্যাপকতা রোধে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পণা হাতে নিয়ে এর বিরুদ্দ্বে কঠোর আইনানুগ ও কার্যকর ব্যাবস্থা নেয়া হবে?আওয়ামীলিগ প্রধান শেখ হাসিনা যেমন বলতেছেননা,আমি ক্ষমতায় ঠিকে থেকে বা আরেকবার ফিরে এসে জাতিকে সুনির্দিষ্ট এই কাজ গুলো শুরু করে সমাপ্ত করে দিতে চাই,তেমনি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াও বলছেননা,ক্ষমতায় ফিরে এসে আমি জাতির জন্য এই কাজগুলো স্বচ্ছভাবে করতে চাই।অথচ দু-পক্ষুই একে অপরকে যেন-তেন ভাবে দূষারোপ করে এমন সব দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি করে চলেছেন,যা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে জাতির কপালে আরো অনেক দূর্ভোগ রয়ে গেছে।
এই যখন অবস্থা এর মাঝে শুরু হয়ে গেছে সংলাপ নিয়ে নানা শর্ত ও একে-অপরকে দুষারোপের সেই চিরন্তন রেষারেষির সংস্কৃতি।ব্রিটিশ গেলো,পাকিস্তানীরা গেলো,মুজিব,জিয়া,এরশাদ,হাসিনা,খালেদার শাসন গেলো,আবারো হাসিনার শাসন চলছে,কিন্তু আমরা এখনো দলীয় অন্ধ আনুগত্য,স্বজনপ্রীতি,রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত্বায়ন,দলীয় মাস্তানী,ঠেন্ডারবাজি,দলীয়ভাবে প্রশাসনকে ব্যাবহারের এই আদিম সংস্কৃতি থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনাই।
আমাদের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতার বড় অভাব,আমরা এতো অসহিষ্ণু যে কল্যাণমূলক হলেও বিরোধী কোন মতকে তোয়াক্কা করিনা,উপরন্ত নানা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করতে সিদ্দ্বহস্ত, আর এখনতো শুরু হয়েছে সেই হয়রানির নিত্য-নতুন ষ্টাইল গুম,হত্যা সহ রাস্তায়,বিলে,খালের কিনারে লাশ টুকরো, টুকরো করে ফেলে রাখা।
আমাদের এখানে গণতান্ত্রিক কাঠামোর সবচাইতে স্বচ্ছ ও সুন্দর যে জায়গাটি,সেই জাতীয় সংসদ থাকা স্বত্তেও সেখানে তর্ক-বিতর্ক,নীতি প্রণয়ন,বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পণা,ল্লক্ষ্য প্রণয়ণ,কোন কিছুতেই আমাদের সংসদ সদস্যদের আগ্রহ নেই,যতটুকু আগ্রহ রাস্তায় মিছিল-মিটিং করে বা সভা সমাবেশে বক্তৃতাবাজিতে।সেটা কি সরকারি, কি বিরোধীদ্ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ঘরে-বাইরে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা যখন বিঘ্নিত,তার মানবাধিকার যখন ভূলুন্ঠিত,পরিবারের সদস্যকে যখন সরকারের বিভিন্ন এজেন্সীর নাম নিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,কিছুদিন পরে তার লাশ খালে,বিলে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে,সাংবাদিকদের পেঠানো হচ্ছে,পুলিশের বেপরোয়া ও উচ্ছৃংখল আচরণের জন্য জনজীবনে যখন বিরাজ করছে এক ভীতিকর অবস্থা,তখন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন,দেশের আইন-শৃংখলা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো আছে,কিংবা পুলিশের কাছ থেকে দূরে থাকার নসিহত করেন,তখন লজ্জায় হতভম্ব হয়ে যাই।ভেবে অবাক হই একজন সুস্থ্য,স্বাভাবিক মানুষ হয়ে কি করে দেশের এতো বড় দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত হয়ে এমন অসুস্থ্য,বিকারগ্রস্থ রোগীর মতো কথা বলে আবার নির্বিগ্নে সেই দায়িত্তে বহাল অবস্থায় আছেন?আসলে অপাত্রে কখনো মধু ডালতে নেই,যার যে কাজ কিংবা যার দ্বারা যে কাজ যতটুকু সম্ভব তাকে সেই কাজের ভার দেওয়া উচিৎ।
সরকারি দল মনে করে দেশের মালিক আমরা,সুতরাং আমাদের যা ইচ্ছা খুশী তাই করবো,কে বাধা দিবে?সরকারি দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিয়ত নসিহত আর বাণী শুনলে যে কেউই তাই ভাবতেই পারেন।প্রকৃত অর্থে সরকার এখন পর্যন্ত এমন কোন ক্রেডেবিলিটি স্থাপণ করতে পারেনাই,যাতে দেশের মানুষ মনে করে যে,হ্যা সরকার বলছে তারা এই ভাবে কাজটা করবে।সরকার নিজেই সবকিছু তাল-গোল পাকিয়ে ফেলেছে।সরকার শুরুতেই,আদালতের রায় প্রকাশের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলে দিয়েছে।অথচ সরকার চাইলে পারতো আরো কিছু সময় নিয়ে,সকলের মতামত নিয়ে,সত্যিকারের কনসাল্টেসনের মাধ্যমে এই ব্যাপারে সিদ্দ্বান্তে উপনীত হতে।কিন্ত সরকার সে রকম কোন কিছুই করেনাই,তাড়াহূড়ো করে নিজেই এক্ষেত্রে সমালোচনার পথ উম্মুক্ত করে দিয়েছে।এখানেই সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যের ব্যাপারে বিশ্লেষকদের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।সরকারের যদি মহৎ উদ্দেশ্য থাকতো,তাহলে সরকার নিজে থেকেই এ ব্যাপারে কমিশন গঠণ করে দিতে পারতো,রাজনৈতিক কনসাল্টেশন শুরু করে দিতে পারতো,সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারতো,রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গোলটেবিল বৈঠক আহবান করে এর আলোচনার সূত্রপাত করতে পারতো,তত্ত্ববাধায়ক সরকারের বদলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আর কি গণতান্ত্রিক উন্নত ফর্মূলা ও ব্যাবস্থা করা যায়,সে লক্ষ্যে মতামত,আলোচনা আহবান করতে পারতো,অথচ সরকার তার কিছুই না করে সরাসরি নিরংকূশ সংখ্যাগরিষ্টতার সুযোগে তিনমিনিটের মাথায় কন্ঠভোঠে এই ব্যাবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে জাতিকে আজ এই সংকঠের মুখে এনে দিয়েছে।সুতরাং দায়িত্বশীল প্রতিষ্টান হিসেবে সরকারকেইতো এই ব্যাপারে বেশী দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে,পাশাপাশি আমাদের বিরোধীদলকেও আরো দায়িত্ত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সংলাপের পথে এগিয়ে আসতে হবে।আমাদের এই বিরাজমান রাজনৈতিক জটিলতার সূষ্টু অবসানের জন্য উভয় পক্ষকেই উদার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার পথে এগিয়ে আসতে হবে,কারণ গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এর কোন বিকল্প নেই।
০২) আজকের গণতন্ত্রিক ব্যাবস্থা এর রাষ্ট্র কাঠামো বিশাল ও ব্যাপক,এর ব্যাপ্তিও অনেক।ব্যাপক অর্থে গণতন্ত্র বলতে এমন একটি সমাজব্যাবস্থাকে বুঝায়,যেখানে রাজনৈতিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক প্রভৃতি অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রেই সাম্য প্রতিষ্টিত বুঝায়।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্ণস এক্ষেত্রে সুন্দরভাবে বলেছেন,” আদর্শ হিসেবে গণতন্ত্র হলো এমন একটি সমাজব্যাবস্থা,যেখানে সব মানুষ সমান না হলেও এক অর্থে সম-মর্যাদার অধিকারি।এইরুপ সমাজে প্রত্যেকেই সমাজের অবিচ্ছেদ্য এবং একান্ত প্রয়োজনীয় অংশ।“ আর বর্তমান গণতন্ত্রকে জনমত পরিচালিত শাসনব্যাবস্তা বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।কারণ, জনগণের মতামত,আশা,আকাঙ্ক্ষা,ইচ্ছা,অনিচ্ছার বাস্তব প্রকাশ ঘটে জনমতের মাধ্যমে,যা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়ে থাকে।তাই জনমতকে আস্বীকার কিংবা তোয়াক্কা করার সাধ্য কোন সরকারের নেই।নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাই জনমত বিরোধী কোন আইন প্রণয়নে সরকারকে প্রবল বিরোধীতার সম্মুখীন হতে হয়, কখনো নিজ পতন ত্বরান্বিত করে থাকে,আর যে সরকার জনতার সেই বাস্তব অবস্থানকে প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করতে পারে,সেই সরকারই কাংখিত লক্ষ্যে জনগণকে নিয়ে যেতে পারে,নতুবা প্রবল জনশ্রোতে ভেসে যায়।
০৩) গণতন্ত্রের ভিত্তিই হলো আলাপ-আলোচনা,সংলাপ করা,একে অপরের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া,অন্যের কল্যাণমূলক মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।বিরোধী মতকে দমন-পীড়ন,গুম,হত্যা,নির্যাতন,সাংবাদিক পেঠানো,জনতার বিরুদ্দ্বে পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া নয়,বরং সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতামূলক স্বচ্ছ প্রাতিষ্টানিক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা।নৈরাজ্যকর,অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা থেকে সহনশীল সুষ্টু রাজনৈতিক পরিবেশ চর্চা ও গড়ার লক্ষ্যে সংলাপের কোন বিকল্প নেই।সংলাপ-ই সভ্যতার ভিত্তি।আমাদের নিকট অতীত কিংবা রাজনৈতিক অতীত সংলাপের ক্ষেত্রে খুব একটা আশার সঞ্চার করেনা।তাই বলে চলমান অবস্থা থেকে উত্তরনে সংলাপের বিকল্পওতো এই মুহুর্তে নেই।আমাদের যে সব বিদেশী বন্ধু কিংবা প্রথিত যশা সকল বুদ্ধিজীবি,সাংবাদিক,রাজনীতিক সকলেই সংলাপের পক্ষে বলে তাদের বিক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রতীয়মান হচ্ছে।এমনকি বিরোধীদলও সংলাপে আগ্রহী,খোদ সরকারি দলও সংলাপের খুব একটা বিরোধী বলে মনে হচ্ছেনা।তাহলে প্রশ্ন হলো সংলাপ শুরু করতে বাধা কোথায়?সংলাপ শুরু হতে পারে যে কোন বিষয়ে,তত্ত্বাবধায়ক ইস্যূতে,সাগর-রুণি হত্যাকান্ড নিয়ে,সংসদ নির্বাচনের কাঠামো ও ব্যাবস্থা নিয়ে,সাংবাদিকদের উপর বর্বরোচিত হামলা নিয়ে,নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা,নিরপেক্ষতা,স্বাধীনতা নিয়ে,পুলিশের বেপরোয়া আচরণ নিয়ে,গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় যে কোন জনগুরুত্বপূর্ণবিষয় নিয়ে ,আনুষ্টানিক কিংবা অনানুষ্টানিকভাবে,প্রকাশ্যে কিংবা ভিতরে-ভিতরে বড় দুই দলের মধ্যে প্রাথমিক বা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক এর মাধ্যমে,রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতে পারে,তা থেকে সার-মর্ম নিয়ে সরকার নীতি-আইন প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বিএনপি সহ বিরোধীদল সংলাপের ব্যাপারে আহবান জানাতে পারে,সরকার নিজে থেকে বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে আগামী নির্বাচনের সুষ্টু ব্যাবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য বিরোধীদল ও সুশীল সমাজকে আহবান জানাতে পারে।কাউকে না কাউকেতো এগিয়ে আসতে হবে।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্টু ও অবাধভাবে করতে হলে সকল দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই করতে হবে,না হলে যেমন এর গ্রহণযোগ্যতা হবেনা,একইভাবে দেশের স্থিতিশীলতা যেমন বিনষ্ট হবে,আর্থিকভাবেও দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।এক কথায় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিনষ্ট হবে।সচেতন নাগরিক হিসেবে কেউই তা চাইনা।আবার এমন সংলাপ চাইনা, যা নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে থেকে চলমান অবস্থাকে আরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়,যেমন মান্নান-জলিলের সংলাপ।অন্যদিকে বাইরে থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে কোন প্রভূর মাধ্যমে সংলাপও চাইনা,যেমন সংলাপ করেছিলেন এরশাদ সরকার,কমনওয়েলথ প্রধান স্যার নিনিয়ান কে এনে ব্যার্থ সংলাপ করে।সংলাপ হওয়া দরকার দেশের ভিতরে,রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে,বাস্তব অবস্তার আলোকে,চলমান রাজনৈতিক অবস্থা থেকে উত্তরনের লক্ষ্যে সুষ্টু ও সুন্দরভাবে আগামী নির্বাচন পরিচালনা,দেশ পরিচালনা ও জনকল্যাণের লক্ষ্যে।
কেবলমাত্র শর্ত আর একে অপরকে দূষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের দূরভিসিন্ধি থেকে বড় উভয় দলকে বেরিয়ে আসতে হবে।আমাদের সুশীল সমাজের সম্মানিত প্রতিনিধি কিংবা ব্যাবসায়ীনের্তৃবৃন্দের অথবা জোটে থাকা ছোট-বড় রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দদের মধ্য থেকে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, বড় উভয় দলকে এক টেবিলে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফর্মূলা খুজে বের করে বাস্তবায়নের ব্যাবস্থা করতে হবে।
একসময়ের দক্ষিণ আফ্রিকার নির্যাতিত নেতা নেলসন মান্ডেলা আর তখনকার ক্ষমতাসীন বর্ণবাদি নেতা ডি ক্লার্ক নিজেদের ব্যাক্তিগত,গোষ্টিগত,দলীয় আহমিকা ভুলে গিয়ে জনকল্যাণের লক্ষ্যে সংলাপে বসেই আজকের আফ্রিকার চরম অস্থিতিশীল অবস্থার অবসান করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যাবস্থায় ফিরে এসেছিলেন।যেমনকরে সংলাপ চালু রেখেছিলেন ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত মরহুম ইয়াসির আরাফাত তার চিরশত্রু ইসরাইলের সাথে,শত নিপীড়ন,নির্যাতন ও ইসরাইল কর্তৃক পশ্চিত তীর ও গাজা উপত্যকায় একতরফা বসত বাড়ী গড়া সত্ত্বেও আব্বাস সরকার এবং তার পরবর্তী ফাতা সরকারও এই সংলাপ অব্যাহত রেখে চলেছেন।একসময় ব্রিটেনের আয়ারলয়ান্ডে সব সময় যুদ্দ্বাবস্থা বিরাজমান ছিলো,শত শত বুলেট বিদ্দ্ব হয়ে আয়ারল্যান্ডের রাস্তা এক সময় প্রকম্পিত করে রাখতো- যে জেরি এডামসের নিষিদ্ধ্ব আইআরএ,টনি ব্লেয়ারের লেবার সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সেই আইআরএর সাথে সংলাপ করে আয়ারল্যান্ডে শান্তিস্থাপনে সক্ষম হন।সুতরাং একসময়ের সেই সব চরম বৈরি সংগঠনগুলো যদি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক সমাধান করতে পারে,তবে আমরা কেন পারবোনা।আমরা অবশ্যই পারবো।কারণ আমরা পারিনা বলতে তাবৎ বিশ্বে এমন কিছুই নেই।আমরা গরীব হতে পারি,কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়েদের আর প্রফেশনালদের রয়েছে বিশ্বজোরা সুখ্যাতি।অতি সম্প্রতি আমাদের মেয়ে নিশাত,ইসরাত,আর তার আগে আমাদের সোনার ছেলে মুহিত বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেষ্ট জয়,আমেরিকার সর্বোচ্চ টু-ইন টাওয়ার এর স্থপতি আমাদেরই বাঙ্গালী আর্কিটেক্ট,আজকের জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইট ইউ টিউবের আবিস্কারক আমাদেরই বাঙ্গালী ছেলে,বিশ্ববিখ্যাত যুক্তরাজ্যের মিডল্যান্ডের মোটর ওয়ের সুবিন্যাস্থ ট্র্যাফিক ব্যাবস্থার শ্রষ্টা আমাদেরই বাংলাদেশী তরুণ।যে বাঙ্গালী বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে নিজের মার্তৃভাষা কে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্টিতই শুধু করেনাই,বাংগালীর স্বাধীকার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিলো,একাত্ত্বরে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে পাক হায়েনাদেরকে হঠিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্টিত করেছে,এরশাদের মতো চরম স্বৈরাচারি সামরিক জান্তাকে হঠিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্টিত করতে সক্ষম হয়েছিলো,সেই বাঙ্গালী আজ আবার দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সংলাপে বসে নিজেদের সমস্যা নিজেরা মোকাবেলা করে সমাধান করতে পারেবেনা,ভুল করে হলেও আমি অন্তত তা বিশ্বাস করিনা,করতে চাইও না।
তবে সংলাপ কেবলমাত্র নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্দ্ব রাখলে দেশের বিরাজমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন বা উন্নতি হবে বলে আমি মনে করিনা।সংলাপ হওয়া দরকার সামগ্রিক বিষয়ে,সুশাসন প্রতিষ্টার লক্ষ্যে,স্বেচ্ছাচারিতা,দুর্বৃত্তায়ন,সাংবাদিক পেঠানো বন্ধ,গুম-হত্যা-আতংক-অরাজকতা বন্ধ,গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রিকে রক্ষা ও বিকশিত করার লক্ষ্যে,শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকান্ডের বিচার এর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ সৃষ্টি,বিদ্যুতের অপব্যাবহার রোধ,বিদ্যুৎ উৎপাদন,বিতরণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে,রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন,প্রশাসনের স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতার লক্ষ্যে,স্কুল ছাত্র মুজুমদার হত্যার বিচার,সাগর-রুনির হত্যার সুষ্টু বিচার, এই সব অনাচার বন্ধের লক্ষ্যে এবং অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সকল দলের সমান অংশগ্রহণের লক্ষ্যে,নির্বাচন পরবর্তী গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা,সংসদীয় কার্যক্রম চালু,গনতান্ত্রিক আচরণ,সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সনদ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে একটি সুষ্টু সমন্বিত পরিকল্পণার আলোকে সংলাপ হওয়া দরকার,তাতে সবার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা চর্চার একটা ক্ষেত্র যেমন প্রতিষ্টিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে,দেশের সাধারণ জনগণও উপকৃত হবে।কারণ রাষ্ট্রের কাজইতো সাধারণ জনগণের কল্যাণ সাধন।
আওয়ামীলীগের মনে রাখা দরকার,ক্ষমতায় আওয়ামীলিগের নের্তৃত্ত্বাধীন মহাজোট সরকার,সুতরাং দায়-দায়িত্ত্ব আওয়ামীলীগের নের্তৃত্ত্বাধীন মহাজোট সরকারের বেশী।রাজনৈতিক বক্তব্য,আচার-আচরণে ও কার্যকলাপে আওয়ামীলীগকে আরো সংবেদনশীল ও গণতান্ত্রিক হতে হবে।কথায় কথায় অতীত উদাহরণ দিয়ে আজকের এই ক্রমবর্ধমান তথ্যপ্রবাহের যুগে পার পাওয়া যাবেনা।অতীতের সরকারগুলোর ব্যার্থতা আর অব্যাবস্থাপণার দরুণইতো বাংলাদেশের আপামর জনগণ আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে,তাই বলে যাচ্ছে তাই করার জন্য জনগণ ম্যান্ডেট দেয় নাই,বেফাস,বেহায়াপনা আর অরাজকতা,নির্যাতন আর আতংকজনক অবস্থা তৈরি করার জন্য জনগণ আপনাদেরকে ম্যন্ডেট দেয়নাই।দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন আর হানিফ-কামরুল-সাহারা-টুকুদের মতো অর্বাচিন আর অযোগ্য নেতা-নেত্রীদের ক্ষমতার মসনদে বসানোর জন্য ম্যান্ডেট দেয়নাই।আওয়ামীলীগ নিজে যদি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি না করে,অপরকে যদি সম্মান না দেয়,অন্যের মতামতকে যদি গুরুত্ত্ব না দেয়,তাহলে আস্থা ও সমঝোতার পরিবেশ কি করে সৃষ্টি হবে?প্রশাসনের দ্বারা কিংবা সরকারের বিভিন্ন এজেন্ট বা বাহিনী দিয়ে বিরোধীমত ও দল দমনের পথ থেকে ফিরে আসতে হবে,যে কোন মূল্যে দেশ ও জনগণের স্বার্থে গার্মেন্টস এর বিরাজমান সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণভাবে করে,নৈরাজ্য সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্দ্বে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে হবে।রাস্তা-ঘাটে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা নিতে হবে,বেপরোয়া গাড়ী চালক ও তার দোসরদের বিরুদ্দ্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস সহ সকল গুম নাগরিক ও রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের উদ্দ্বারে বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।দায়িত্ত্ব ও ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার মতো যোগ্যতা ও সাহস ছিলো বলেইতো নিজ কাধে দেশ ও জনগণের সেবার ভার বহন করে নিয়েছেন,তা হলে আজ কেন এতো অসহিষ্ণু আর উছৃংখলআচরণ? জনগণতো কেনো এতো হুমকি-ধামকি আর জনমতকে এতো ভয়?আওয়ামীলীগ যদি ভালো কাজ করে থাকে বলে মনে করে,তাহলে স্বচ্ছ,অবাধ,নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন এতো ভয়?আমি যদি ভালো কাজ করি,আমি যদি মানুষের সেবা আর উপকার করে থাকি,তাহলে আমাকে চাইবেই?এতে ভয় বা অন্য কিছু আসছে কেন?একই কথা প্রযোজ্য বিএনপির বেলায়,সব কিছু শর্ত দিয়ে আগে ভাগে ঠিক করা যায় না।আগে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে,সমঝোতার মনোভাব নিয়ে সংলাপে এগিয়ে যেতে হবে,আলোচনার টেবিলে গিয়ে এজেন্ডা,দাবি,ফর্মুলা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে হবে।
প্রকৃত কথা হলো,আমরা ভোটের রাজনীতি করি,মুখে গণতন্ত্রের কথা বলি,কিন্তু নিজেরা কখনো গণতন্ত্র চর্চা করিনা,অন্যকেও করতে দেইনা।কারণ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্টিত হলে আমাদের হালুয়া-রুটির ভাগ-ভাটয়ারার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।এখানেই আসল ভয়।
দলীয় আধিপত্যমুক্ত,দলীয় সন্ত্রাস,আর রাজনীতির দুর্বৃত্ত্বায়ন থেকে আমাদের গণতন্ত্র কবে যে মুক্ত হবে,তা কেবল আগামীদিনের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড ও অর্থবহ সংলাপের উপরই নির্ভর করছে।
2nd June 2012,UK.