মহাসমাবেশ থেকে রাজনীতির টার্ণিং পয়েন্ট-ধন্যবাদ খালেদা জিয়া,হাসিনার জন্য কন্সিকোয়েন্স-

মহাসমাবেশ থেকে রাজনীতির টার্ণিং পয়েন্ট-ধন্যবাদ খালেদা জিয়া,হাসিনার জন্য কন্সিকোয়েন্স-

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,ইউ,কে,থেকে-

 

বি,এন,পি এবং তার মিত্রদের ডাকে ঢাকা চলো কর্মসূচীর লক্ষ্যে মহাসমাবেশ ঘিরে সরকারের আচরন মোটেই গণতান্ত্রিক এবং পরমত সহিষ্ণূ যে ছিলোনা,তা যে কেউই একবাক্যে স্বীকার করবেন।বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটির জন্মেরও বহু আগ থেকেই এই ব-দ্বীপ এর বাসিন্দাদের মহাসমাবেশ নামক রাজনৈতিক কর্মসূচীর সাথে বিশেষভাবে পরিচিতি রয়েছে।আমার ক্ষুদ্র এই রাজনৈতিক জীবনেও অসংখ্য মহাসমাবেশ দেখে এসেছি।কিন্তু ১২-ই মার্চ হয়ে যাওয়া বি,এন,পি,র এই মহাসমাবেশ এর সাথে পূর্বের কোণ মহাসমাবেশের মিল খুজেই পাওয়া যাচ্ছেনা,অন্তত গণতান্ত্রিক সরকারের আচার-আচরণ এবং সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের শোডাউন আর খালেদা জিয়ার গঠণমূলক রাজনৈতিক বক্তৃতার মধ্যদিয়ে এই সমাবেশ রাজনীতির ময়দানে এক বিশাল গুণগত পরিবর্তনের সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে।

০২) মহাসমাবেশ ঘিরে সরকারের দমণ-পীড়ন এবং পথে-পথে বাধা,নৌ-পথ,সড়ক পথ বন্ধ করে দেওয়া,হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ করে দেওয়া,পুলিশী নানা একশন সহ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের গুন্ডা-পান্ডা দিয়ে বাধা প্রধান সহ নানা নেক্কারজনক এবং নেতিবাচক রাজনীতি, কোন কিছুই সমাবেশে লোকসমাগম উপস্থিতি বন্ধ করা যায়নাই।মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি উচ্চারণ,খবর আছে বলে ধমক প্রদান,আওয়ামীলিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো হানিফের স্বৈরাচারী কায়দায় বি,এন,পি,কে নয়া পল্টন ছাড়া আর কোথাও উপস্থিত হতে না দেওয়ার হুংকার প্রধান-ছাত্রলীগ নামধারী মাসলম্যানদের দ্বারা সমাবেশ স্থলের আশ-পাশে পেশীশক্তি প্রদর্শনী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউশনের কাছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিনা উস্কানিতে ধাওয়া করা-কোন কিছুই মহাসমাবেশকে পন্ড করতে পারেনাই।শুধু কি তাই।মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ডিএমপি কমিশনারের নানা টালবাহানা এবং শর্তযুক্ত অনুমতি প্রদান,সমাবেশ স্থলে পুলিশের যথেচ্ছ উপস্থিতি,বর্ডার গার্ড-কে রাস্তায়-রাস্তায় টহলদিতে নামানো-এ যেন পাকিস্তানী জংলী শাসনের কথা গোটা নগরবাসীকে ৭১ এর পর আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলো।ইয়াহিয়ার নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের কথাই বার-বার মনে করিয়ে দিতেছিলো।এই কি আমাদের গণতন্ত্র?, এই জন্য কি ডাঃ মিলন,জাহিদ,ময়েজউদ্দীন,সেলিম,দেলোয়ার,তিতাস,শাহজাহান সিরাজ,মুনীর,তপনরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলেন?বড় আফসোস,কবে যে আমাদের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে স্ব-কীয়তা এবং আত্ব-সম্মান বোধ জাগ্রত হবে,কবে যে পুলিশ স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে? সরকার এবং তার নেতা-নেত্রী এবং মন্ত্রী বাহাদুরেরা কথায় কথায় জঙ্গী আর যুদ্বাপরাধ বিচার বানচালের ধুয়া তুলে বিরুধীদলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচীকে বাধাগ্রস্থ করার প্রাণান্ত চেষ্টায় সদা লিপ্ত অথচ এখনো প্রশাসন এবং সর্বত্র পাকিস্তানী প্রেতাত্বারা ভর করে আছে,অন্তত সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছের নের্তৃবৃন্দের কথায় এবং আচরণে জনগণ শিউরে উঠে এই ভেবে যে এরা বাঙ্গালীর লেবাসে পাকিস্থানের আদিম উম্মত্ত খোলস পড়ে আছে,যা রীতিমতো ভয়ংকর।গোটা জাতিকে এর জন্য আর কতো মাশুল দিতে হবে-আল্লাহই ভালো করে জানেন।

০৩) আমি কারো সমর্থক কিংবা দলবাজীর অন্ধ সমর্থক নই।তবে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তার আজ্ঞাবহ সরকারের মন্ত্রীমহোদয় এবং প্রশাসনের কাছ থেকে এই রকম চরম অসহিষ্ণূ আচরণ কোন অবস্থাতেই কাম্য ছিলোনা।  সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা প্রশাসনকে ব্যাবহারকে এমন জঘন্য কায়দায় বলা যায় নতুন-নতুন ফন্দীফিকির করে সমাবেশ পন্ড করে দেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার সরকার তাই করে বরং নিজেদের দেউলিয়াত্ত্বই প্রমাণ করেছে।অতীতে দেশ পরিচালনায় যাই করে থাকেননা কেন,খালেদা জিয়া  মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং সমাবেশস্থলে পরিশীলিত,উন্নত,রাজনৈতিক বক্তব্যদিয়ে অবশ্যই প্রমাণ করেছেন,দেশ এবং এর জনগণ তার কাছে অনেক বড়।এই একটিমাত্র মহাসমাবেশ এর মাধ্যমে খালেদা জিয়া নিজের রাজনৈতিক ইমেজ এবং আগামী সরকার গঠণে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলিগের থেকে বেশ এক ধাপ উপরে এগিয়ে গেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।খালেদা জিয়ার উন্নত সহনশীল রাজনৈতিক আচরণ এবং বক্তব্যই প্রমাণ করে বাংলাদেশের জনগণের জন্যই তিনি এবং তার দল আন্দোলনে নেমেছেন।দেশ-বিদেশের সর্ব মহলে মহাসমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্য উচ্ছসিত প্রশংসিত হয়েছে।বি,এন,পি এবং এর সমমনা দলগুলোর আওয়ামীলীগ এবং সরকারের গোটা প্রশাসন যন্ত্রের নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে সহনশীল,উন্নত,রুচিশীল রাজনৈতিক আচরণ এবং সরকারের পাতা ফাদে ও কৌশলে পা না ফেলে যে রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন,নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের আগামীদিনের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে।

০৪) খালেদা জিয়া এবং বি,এন,পি,কে ধন্যবাদ এ জন্য যে,সরকারের গণগ্রেপ্তার সত্তেও তারা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে সমাবেশ করেছেন,কোন প্রকার নেতিবাচক কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেননাই।খালেদা জিয়া চাইলে পারতেন মহাসমাবেশকে তাহরীর স্কোয়ারে পরিণত করতে,কিন্ত একজন দক্ষ রাজনীতিক এবং দক্ষ প্রশাসকের মতোই সরকারকে আরো সময় দিয়ে যে রাজনৈতিক উদারতার পরিচয় দিয়েছেন,দেশকে একভয়াবহ সহিংশ অবস্থা থেকে নতুন এক রাজনীতির টার্ণিং পয়েন্টের দিকে নিয়ে গেছেন,সরকারের অযাচিত কূটকৌশলের ফাদে পা না দিয়ে রাজনৈতিক পরিপক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন,নিঃসন্দেহে তা আগামীদিনের রাজনীতিকে এক নয়া মোড়েরদিকে ধাবিত করবে সন্দেহ নেই।খালেদা জিয়া অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে যে রাজনৈতিক দাবি জনতার সামনে তুলে ধরেছেন,সরকারকে সময় বেধে দিয়েছেন,নিঃসন্দেহে রাজনীতিতে এক বিশাল গুণগত পরিবর্তন আনয়ন করবে।আওয়ামীলীগের ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন,খুন-রাহাজানি,অতিমাত্রায় স্বজন প্রীতি,দলবাজী, টেন্ডারবাজী,সর্বত্র দলীয়করণ,আইন-শৃংখলার ভায়াবহ অবনতি,জোর যার মুল্লুক তার এমন প্রশাসনিক আচার-আচরণে গোটা দেশবাসী এমনিতেই আওয়ামীলীগের উপর ক্ষুব্ধ,তার উপর মহাসমাবেশ ঘিরে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের গোটা বাংলাদেশে যে আলোড়ন তুলেছে,জনতার বাধ-ভাঙ্গা জোয়ারে আওয়ামীলীগের যথেচ্ছাচার,স্বেচ্ছাচারিতা,স্বজন-প্রীতি,দলবাজীমার্কা প্রশাসন পানিতে ভেস্তে যাবে,খালেদা জিয়া এবং তার মিত্ররা মহাসমাবেশের মাধ্যমে সেই ম্যাসেজটাই জনগণ এবং সরকারকে সুস্পষ্টভাবেই দিয়েছেন,আশা করা যায় সরকারের টনক নড়বে,নয়তো কন্সিকোয়েন্সকেই ফেইস করতে হবে-এটাই নিয়তি,এই আশা আর সুদূঢ় পরাহত নয়।

Salim932@googlemail.com

12 March 2012/UK

PUBLISHED Amadersylhet.com,Barta24.com,deshebideshe.com,banglanews

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *