সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-লন্ডন থেকে
ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকার প্রশ্নে ইন এন্ড আউট এই দুই গ্রুপের বিতর্কের মাঝখানে খোদ সরকারের বিরুদ্ধে রয়াল ফ্যামিলিকে ও কুইনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের বিতর্ক এখন তুঙ্গে। যা ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র সদস্যদের ভিতরেও ক্ষোভ ফুঁসে উঠছে। ব্রাসেলসের “বড় ধরনের সংস্কার” আর “ব্রিটেনের বিশেষ মর্যাদার” প্রশ্নে ডেভিড ক্যামেরনের ইউরোপিয় ইউনিয়নের ভিতরে থাকার ক্যাম্পেইন ইন গ্রুপের প্রচারে শেষ পর্যন্ত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৯০তম জন্মবার্ষিকী সরকারীভাবে পালনের সময়ে যে ভাষণ দেবেন, তাতে “হাই-জ্যাক” তথা রাজনীতিকীকরনের সমূহ ব্যাপক তোড়জোড় এর প্রেক্ষিতে টোরি পার্টি থেকে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। সিনিয়র টোরি এমপি, কমন্স কন্সটিটিউশনাল এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান বার্ণার্ড জেনকিন এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যদি এমন করা হয়, তাহলে সেটা হবে সম্পূর্ণ অপব্যবহার। আর ব্রিটিশ রাজনীতিতে সরকারের এমন ইঙ্গিতের ব্যাপারে ঝড় তুলেছে এই কারণে যে, বিগত ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ড রেফারেন্ডামের আগ মুহুর্তে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ষ্ট্যাট ভাষণের সময়ে এই ইস্যুতে ইন্টারভেনশন করেছিলেন, যা অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। অবশ্য বাকিংহাম প্রাসাদ এমন ইন্টারভেনশনের বিষয়ে তখন কোন মন্তব্য করতে চায়নি। সমালোচকদের অনেকেই বলেছিলেন ডাউনিং ষ্ট্রীট অফিস রানীর ভাষণে সেই সব শব্দাবলী ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন হয়তো।
এই জুন মাসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ডাউনিং ষ্ট্রীট রানীর ৯০তম জন্মবার্ষিকী অত্যন্ত সম্মান ও ঝাকঝমকভাবে পালন করবে জুন মাসে। আগামী ১০ই জুন সেন্ট ক্যাথেড্রেলে ইতোমধ্যেই নির্ধারিত আছে রয়াল ফ্যামিলির দ্বারা ১০,০০০ লোকের ষ্ট্রীট পার্টির। ২১শে এপ্রিল রয়্যাল ট্র্যাডিশনাল পার্টি অনুষ্ঠিত হবে।
আউট গ্রুপের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে বলাবলি হচ্ছে রানীর ভাষণকে ইন গ্রুপ তথা সরকারের তরফ থেকে “অতি রাজনীতিকীকরনের” মাধ্যমে ব্রিটেনের ব্রাসেলস এর সাথে থাকার বিষয়ে ব্যবহার করা হবে। তারা এর পক্ষে গত মাসে ডিউক অব ক্যামব্রিজ ডিপ্লোম্যাট ও ব্যবসায়ীদের সমাবেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে ছুতা হিসেবে খুঁজছেন।যদিও সরকারকে সংসদীয় কমিটি ইতোমধ্যেই জিজ্ঞেস করেছে প্রিন্স উইলিয়ামের বক্তব্য নিয়ে।
তাই ব্রেক্সিট ইস্যুতে রানীর জন্মদিনের ভাষণ নিয়ে কানাঘুষা সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয়ে গিয়েছে। সত্যি সত্যি কি সরকার এই ইস্যুতে রানীর বক্তব্যকে রাজনীতিকীকরন করতে যাচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে রাজ পরিবারকে বিতর্কিত করার ক্ষেত্রে শত বছরের ইতিহাসকে কলংকিত করার ক্ষেত্রে ক্যামেরন সরকার বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থাকবেন- সন্দেহ নাই। আর এতে ক্যামেরনের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়বে সেটাও বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সিনিয়র টোরি এমপি বলেছেন, এ ধরনের কোন কিছুর পূণরাবৃত্তি সংসদীয় ডিমান্ড কমিটি ডাউনিং ষ্ট্রীটের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে।
আর ইউকিপ ডেপুটি চেয়ারম্যান উইলিয়াম ডারটমাউথ বলেছেন, “কুইন হচ্ছেন হেড অব ষ্ট্যাট এবং এটা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত ও সকল সাংবিধানিক বিধানের বিরুদ্ধে যাবে, যদি স্পিন করা হয়। রাজ পরিবারকে রাজনীতিকীকরন করা হবে ভুল সিদ্ধান্ত”।
অবশ্য কেবিনেট অফিস মুখপাত্র, এরকম স্পেক্যুলেশন “সম্পূর্ণ অসত্য” এবং “স্রেফ আরো এক রাজনৈতিক প্রচার”- “যা কোন সত্য ভিত্তি নেই” বলে মন্তব্য করেছেন।এখন দেখার বিষয় জন্মদিনের ভাষণে আসলেই কি থাকছে ?