সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: বিশ্ব রাজনীতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল লন্ডন এবার আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে এটাই হবে লন্ডনে তার প্রথম সরকারি সফর। চীনের প্রেসিডেন্ট জিংপিং এর বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় লাল গালিচায় সমৃদ্ধ কালারফুল সফরের পরে ব্রিটেনে আসবেন দক্ষিণ এশিয়ার আরেক শক্তিশালী উদীয়মান দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আসবেন নভেম্বর মাসে।
ডেভিড ক্যামেরনের এমপ্লয়ম্যান্ট মিনিস্টার প্রীতি প্যাটেল বিজনেস লাইনের সাথে এক ইন্টারভিউয়ের সময়ে এই তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, চায়নিজ প্রেসিডেন্টের সফরের সাথে নরেন্দ্র মোদীর সফরের তুলনা করা যাবেনা। প্রীতি প্যাটেল বলেছেন এই সফর হবে অনেক অনেক পার্সোনাল এবং মোদির সরকারের ব্রিটেন যাত্রা সূচনার এই কনট্যাক্সট মাত্র শুরু, সেই সাথে তিনি বলেন এই সফর ডেভিড ক্যামেরনের একান্ত ব্যক্তিগত আগ্রহের প্রেক্ষিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রীতি প্যাটেল বিজনেস লাইনকে আরো বলেছেন, এই সফর হচ্ছে গভর্ণম্যান্ট টু গভর্ণম্যান্ট এর মধ্যেকার ভেরি হাই লেভেল সফর।
জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সফরের সময়ে পিপল টু পিপল সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ভারতীয় ডায়াসপোরা ৭০,০০০ হাজার আসন বিশিষ্ট ওয়েম্বলি ষ্টেডিয়ামে সম্বর্ধনা দেয়া হবে।
সফরের সময়ে চীনের মতো নিউক্লিয়ার ডিল না হলেও ভারতের সাথে ব্রিটেনের ট্রেড এন্ড ইনভেস্টম্যান্ট এর নতুন দরজা উম্মুক্ত হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।
চীনের প্রেসিডেন্টের ভেরি হাই প্রোফাইল কালারফুল রাষ্ট্রীয় সম্বর্ধনা ও সফরের প্রেক্ষিতে পশ্চিমাদের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্কের যে শংকা তৈরি হয়েছে,গণতান্ত্রিক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাই প্রোফাইল সফরের মধ্য দিয়ে ডেভিড ক্যামেরন আমেরিকার সেই শংকায় ইতিবাচক সিগন্যাল দেয়ার চেষ্ঠা করবেন সেটা বলাই বাহুল্য। কেননা মার্কিনীদের হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এখন ক্যাপ্টেনের ভুমিকায় আছে। সেই স্থানে চীন ভাগ বসাতে প্রস্তুত। এমন অবস্থায় চীন ব্রিটেন এর নিউক্লিয়ার সম্পর্কের সূচনার পর পরই ব্রিটেন ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দরজা খোলার উদ্যোগ- দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে ব্রিটেনের পলিসি দেখতে আগামী মাসে নরেন্দ্র মোদির সফর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এবং বেগম খালেদা জিয়া-
এদিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াচিকিৎসার জন্যে লন্ডনে অবস্থান করছেন। নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফর পর্যন্ত বেগম জিয়ার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া পিছিয়ে যাবে সন্দেহ নাই।যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ব্রিটেনে এই হাই প্রোফাইল সফরের সাথেবেগম জিয়ার কোন ধরনের কানেকশন স্থাপনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, তথাপি, বিএনপি চাইবে,আপ্রান চেষ্টা করবে, নরেন্দ্র মোদির হাই প্রোফাইল টিমের কোন না কোন সদস্যের সাথে কোনভাবে লিয়াজো করার, যাতে আগামীতে বিএনপির সাথে একটি যোগসূত্র স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়। সেজন্য বিজেপি লন্ডন অফিসের মাধ্যমে আরেকটু যোগাযোগ স্থাপনের সময় সুযোগ কাজে লাগাতে চান বেগম জিয়া- অবস্থা দৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। কেননা, ঢাকার রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে বেগম জিয়ার রাজনীতির কোন স্পেসই আর খোলা থাকছেনা। বেগম জিয়ার জন্যে এখন সব চাইতে বড় যে দরকার শেখ হাসিনার রাজনীতির বিপরীতে শক্তি সঞ্চয় করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় স্পেস তৈরি করে নেয়া। ক্ষয়িঞ্চু বিএনপির নিজের পক্ষে নতুন কোন স্পেস করা অনেকটাই দুঃসাধ্য, বিশেষ করে সুবিধাবাদী নেতৃত্বের দ্বারা। কেননা বিএনপির নেতৃত্ব এতো সুবিধাভোগি যে, সরকার অজস্র বল বিএনপির কোর্টে ছুড়ে দেয়ার পরেও এই বিএনপি সরকারের একটি বলেরও কিক দেয়াতো দূরে থাকুক, নকও পর্যন্ত করতে পারেনি। শেখ হাসিনা ধরেই নিয়েছেন, বিএনপির এই সুবিধাভোগি নেতৃত্বের সাথে তাই যেকোন উপায়ে বল খেলতে কোন বাধা নেই। বেগম জিয়া সেটা ভালোভাবেই সেটা জেনেছেন। রাজনীতির এই কট্রর এবং সেই সাথে কুশলী খেলাতে শেষ পর্যন্ত একজন আরেকজনকে পরাভূত করতে চেষ্টা চালাবেন- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই স্বাভাবিক খেলার মধ্যেও অস্বাভাবিকতা যখন ভর করে,তখনি ভাবনার কারণ হয়ে যায়। রাজনীতির দাবা খেলায় এখন চলছে সেই অস্বাভাবিকতা।
চলবে….
24th October 2015, London.