নন্দিত কথা শিল্পী হূমায়ূনের চলে যাওয়ার চার বছর…

নন্দিত কথা শিল্পী হূমায়ূনের চলে যাওয়ার চার বছর…

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-

 

২০১২ সালের এই দিনে হূমায়ূন স্যার বাংলাদেশের লাখো কোটি ভক্ত, অনুরাগী, নাটক, সাহিত্য প্রেমিদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে চলে গিয়েছিলেন। হূমায়ূনের এভাবে চলে যাওয়াতে হলুদ হিমু, মিসির আলী, কিংবা   ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘রজনী’, ‘এপিটাফ’, ‘পাখি আমার একলা পাখি’, ‘ফেরা’, ‘নিষাদ’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নির্বাসন’, ‘অমানুষ’, ‘রূপালী দ্বীপ’,‘শ্রাবণমেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’কে চিরদিনের জন্য হারিয়েছি, তা নয় বরং বাংলা সাহিত্য ও নাট্য জগতের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে, যা সহজে পূরণীয় নয়। সেদিন হূমায়ূব স্যারের চলে যাওয়াতে আমার স্মৃতিচারণ থেকে তুলে আনা গুড বাই হূমায়ূন আহমেদ থেকে কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম-

 

আগুনের পরশ মণি-লও হে মোদের সালাম-

 

একজন হুমায়ূন আহমেদ,নন্দিত নরকের লীলাবতী থেকে একেবারে রুপা হয়ে হলুদ হিমু আর জোৎস্না রাতের তারার অবগাহনে কিংবা হাবলঙ্গের বাজারে যে নামেই চেনা যাক, বাংলার এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত, খেটে খাওয়া কুঁড়ে ঘর কিংবা গুলশান-বনানী-উত্তরা-রাজউক হয়ে একেবারে তিতাস-পদ্মাপাড়ের দেশ, আরো একটু এগিয়ে গেলে উত্তর আমেরিকা হয়ে ব্রিটেন,ফ্রান্স, জার্মনী, আর আমাদের এই ভারত উপমহাদেশের এমন কোন বাঙালি নেই,যে কিনা হুমায়ুনের নানান সৃষ্টির সাথে কোন না কোন ভাবেই পরিচিত-নির্দ্বিধায় একথা বুক ভরে উচ্চারণ করার মতো এক দুর্দমনীয় সাহসী উচ্চারণের নাম—হুমায়ূন আহমদ। হুমায়ুনের জনপ্রিয়তা কখনো কখনো ইংরেজ কবি এলিয়েট, বায়রন, শেলী,আর ভারতের শতাব্দীর জনপ্রিয় লেখক-সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রকেও কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যেমন যায়, একই সাথে বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে সমান দক্ষতার সাথে বিচরণ ও পাঠক শ্রেনী কিংবা সিনেমা বোদ্ধাদের বা নাটক দর্শকদের এতো সম্মোহিত ও বিমোহিত করে রাখার এমন দুর্দমনীয় ক্ষমতার অধিকারী এমন করে আর কেউ হতে পারেননি।যে কারণে অনেকের কাছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হুমায়ূন বেশ ঈর্ষনীয় ছিলেন, তা অনেকেই স্বীকার করবেন।

 

 

হূমায়ূনের মৃত্যুতে সব চাইতে সুন্দর কথাটি সাহসের সাথে বলেছেন ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস।তিনি বলেছেন, হুমায়ূন সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।সৃজনশীলতাকে তিনি সত্যি অসাধারণভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন। সন্দেহ নাই, হুমায়ূনের সকল শ্রেণীর পাঠক ও দর্শকের মনের গভীরে ঢুকে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন, এমন করে আমাদের সকল শ্রেণীর দর্শক ও পাঠকের হৃদয়ে আলোড়ন বিগত দশকে বলা যায় নজরুলের পরে আর কেউ তুলতে পারেননি।আজকে অনেকেই জীবিত হুমায়ূনের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা নিয়ে মৃত হূমায়ূনকে পাঠক শ্রেণীর এক সীমাবদ্ধ শ্রেণীতে আবদ্ধ করে দেখার প্রেক্ষিতে বরং নিজেরাই হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছেন ।

 

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে তখনকার প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপটে যেমন শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালির হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারুদের জন্ম দিয়েছিল, নিরস্ত্র বাঙালিকে সাহসী ও প্রত্যয় দীপ্ত করে তুলেছিলো, স্বাধীনতা পরবর্তী একজন হুমায়ুন আহমদই কেবল পেরেছিলেন তেমন করে ঘুমন্ত ও প্রাণহীন বাঙালির হৃদয়ে বই পড়া,গল্প পড়া,নাটক আর সৃজনশীল সিনেমা দেখার জন্য তেমনি সারা বাংলায় এক অভূতপূর্ব নীরব এক বিপ্লব তথা সৃজনশীল চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।

 

 

 

টেলিভিশনে মানুষ যখন বহুব্রীহি সিরিয়াল দেখে,প্রতিবাদী যুবক বাকের ভাই যখন মৃত্যু বরণ করে, তখন দেখেছি সারা বাংলায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই শুধু নয়, একজন দোকানি, একজন শ্রম-কর্ম-পেশার মানুষ, একজন গৃহিনী,একজন স্বামী,একজন উচ্চ-পদস্থ সরকারী আমলা,একজন ব্যাংকার তথা সর্ব শ্রেণীর মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং করে এমন করে উচ্ছ্বাস আর আবেগ বাংলাদেশের কিংবা উপমহাদেশের অথবা বিশ্বের তাবত কোন লেখক-সাহিত্যিক-নাট্যকার-পরিচালকের ভাগ্যে জোটেনি।এ ক্ষেত্রে হুমায়ূন স্যার এক ব্যাতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন,থাকবেন,যতদিন না তার জনপ্রিয়তকে আর কেউ ছোঁয়ার বা ভাঙ্গতে পারবেন।

 

 

আগুনের পরশ মণির স্ক্রিপ্ট যখন লেখেন, তখন হুমায়ূন স্যারকে বেশ অন্যরকম মনে হতো, কেমন যেন এক অস্থিরতায় পেয়ে বসেছিলো, রসায়ন বিভাগের বারান্দায় এক সকালে স্যার বললেন, আগুনের পরশ মণির যুতসই চরিত্র ফুটে তোলার মতো ইতিহাস কথন  সংলাপ নির্ভর না করে সত্যিকার ইতিহাসের অংশ পরিস্ফূটনে আমাকে প্রচন্ড অস্থিরতায় পেয়ে বসেছে। হুমায়ূন স্যার চাইতেন, স্বাধীনতার সত্যিকার গল্পটি নতুন প্রজন্মের জন্য সিনেমায় নিয়ে আসতে  অনেক চেষ্টা করেছিলেন, তিনি তাই করেছিলেনও।আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের এক অনবদ্য প্রামাণ্য দলিল আগুনের পরশ মণি, এটা যে কেউ এক বাক্যে স্বীকার করবেন। ছবিটি যখন রিলিজ হয়ে দর্শক প্রিয়তা পায়, সেদিন স্যারকে দারুণ উজ্জীবিত ও হাসি-খুশী লাগছিলো,ব্যাক্তিগত ভাবে খুব রাসলো মানুষও ছিলেন, সে জন্যই তো এতো সব জনপ্রিয় অনবদ্য সৃষ্টির সফল ও স্বার্থক জন্ম দিতে পেরেছিলেন।

 

 

পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় লেখক,কবি, সাহিত্যিক সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়  সুন্দর করে তাই বলেছেন, জনপ্রিয়তায় হূমায়ূন শরৎচন্দ্রকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।একবার কলকাতায় বুদ্ধদেব আর প্রয়াত চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায় পশ্চিমবঙ্গের বইমেলার এক আড্ডায় দেখা হলে আমাদের এই হুমায়ূন আহমদের জনপ্রিয়তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, এই রকম জনপ্রিয় লেখক কালে-ভদ্রে দেশ-কালের বিচারে বারে-বারে জন্ম নেয়না, হুমায়ূন তো বহুমাত্রিক প্রতিভার এক অনন্ত আধার। সত্যজিত হূমায়ূনের অকুন্ঠ সমর্থক ছিলেন, তিনি হূমায়ূন স্যার কে দেখতেন বাংলাদেশে গল্প উপস্থাপণের ক্ষেত্রে এক নয়া বাংলার নয়া রূপকার হিসেবে। হুমায়ূন আহমদের দেওয়াল পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশের আগে এটা নিয়ে মাতামাতি খুব একটা সমীচিন হয়েছে বলে মনে হয়না।তবে হুমায়ূনের সব চাইতে বড় যে অবদান, এই দেশের মধ্য-বিত্ত, নিম্ন মধ্য-বিত্ত থেকে শুরু করে অধা ও উচ্চ-বিত্তদের বই কেনা, বই পড়া আর উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এক নব দিকের উম্মোচন করেই ক্ষান্ত হননি, একে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাত্রা দিয়ে ক্রমাগত ভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে গল্প-নাটক-সিনেমায় হলুদ হিমু-মিসির আলী-রুপা-বাকেরে একীভূত করে এতোই নিমজ্জিত করেছিলেন যে,গল্পের রেশ প্রতিটি বাঙালির হ্নদয়ে এমন করে দাগ কেটেছিলো,যেন এক একজন নিজেদের সমস্যা-সমাধানে কিংবা আবেগ-উচ্ছাসে হিমু-মিসির আলী আর রুপা হয়ে প্রতিবিম্বিত করে চলেছিলেন,যে কারণে বাস্তবেও হুমায়ুনের মৃত্যুতে সকল শ্রেণীর পাঠক হুমায়ুনের মৃত্যুতে তার সৃষ্টি এবং নবতর চরিত্র সৃষ্টিকেও হারানো এবং  না পাওয়ার সমবেদনায় ব্যথিত।

 

 

শুধু কি তাই, এদেশের প্রকাশনা জগতে যে অসাধারণ বিপ্লব হুমায়ূন করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাতো আর পূরণ হবার নয়।

 

 

হুমায়ূন শুধু নিজ দেশেই জনপ্রিয় ছিলেন না, সমান ভাবে তার উপস্থিতি মিলে পশ্চিম বঙ্গ, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, জাপান, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, মধ্য প্রাচ্য তথা যেখানেই বাংলা ভাষা-ভাসি উপস্থিতি, সেখানকার এমন একটি পরিবার ও বাসস্থান খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যেখানে হুমায়ূনের বই এর উপস্থিতি নেই।কোন-কোন শহরের সিটি লাইব্রেরিগুলোর বাংলা বইয়ের র‍্যাক  হুমায়ুনের বইয়ে সচল।হূমায়ূনের মৃত্যুর পরে   লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে ৫০ বছরেরও অধিক পুরনো লাইব্রেরীর কিউরেটর আগাস্থিন এবং টাওয়ার হেমলেটস-এর মেয়র লুতফুর রাহমান লন্ডনের জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেল, চ্যানেল কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কিউরেটর তাকে অবহিত করেছেন, ঐ সময়ে( মাসে)  বই ল্যান্ডিং যে পরিমাণ হয়েছে, তার মধ্যে ৬৫% বাংলা বই, যার মধ্যে ৪১% এরও বেশী হুমায়ূন আহমদের বই ল্যান্ডিং হয়েছে।  বই ল্যান্ডিং আর বই বিক্রির  অবস্থানেই নয়, যে কোন চ্যানেলের নাটক এবং সিনেমা দর্শক প্রিয়তায় হূমায়ূন স্যার সর্বাগ্রে। যিনি মানুষের প্রাণের গভীর থেকে একেবারে অন্তঃকরণে পৌছে গিয়ে নানান বিচিত্র অবস্থানের চারিত্রিক রূপায়নে সত্যাশ্রয়ীর রুপকে, কল্পনাকে বিজ্ঞানাশ্রয়ী রুপে অতিমাত্রিক বাস্তবতায় নিয়ে আসতে পারেন ও পৌছে দেবার ক্ষমতা রাখেন,তার বই পাঠক প্রিয় এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে না হওয়ারতো কোন কারণ দেখিনা-একজন বিদেশী কিউরেটর যখন এমন করে হূমায়ূনকে মূল্যায়ন করেন, তখন বুঝতে বাকী থাকেনা, হূমায়ূন স্যার দেশের মাত্রা ছাড়িয়ে বিশ্বমন্ডলেও কতো গভীর রেখাপাত করতে পেরেছিলেন।  কিছুদিন আগে আর্নেষ্ট হোমিংওয়ের লেখার বিচার-বিশ্লেষণের এক পাঠক ফোরামের অতি উচু-মার্গের এক আলোচনায় শরিক হওয়ার এক বিরল সৌভাগ্য হয়েছিলো।কথা প্রসঙ্গে আমাদের দুই বাংলার নানা লেখকের আলাপে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্ত-কে নিয়ে যেমন করে আলোচনা মেতেছিলেন, তেমনি করে দ্দেশী-বিদেশীদের মুখে সাহিত্যের গল্প আর নাটকের ছাত্র-ছাত্রী আর নামকরা গবেষকদের মুখে আমাদের এই বাংলাদেশের হূমায়ূন স্যারের নানান সৃষ্টি এবং তার নির্মিত চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণির প্রশংসা যখন শুনি,তখন নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, হূমায়ূন আহমদ তার সৃষ্টি ও কর্ম দিয়ে আমাদেরকে এতো উপরে নিয়ে গেছেন,যে হোমিংওয়ের আলোচনা ছাড়িয়ে হূমায়ূন আজ সেই স্থানের শিরোমণি হয়ে ছিলেন।

 

 

নাটকে যেমন দর্শক চরিত্রের প্রয়োজনে মাথা গরমের কারণে পানিতে থাকা বা পানিতে যাপণ, কিংবা স্বাধীন খসরুকে দিয়ে অসাধারণ চরিত্র রূপায়ন করতেন, একইভাবে বাস্তবেও হুমায়ূন স্যার ছিলেন এক অসাধারণ ব্যাক্তি। হূমায়ূনের নারী চরিত্র বলা যায় অনেকটা হুমায়ুনের জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী গুলতেকিন বেগম কেন্দ্রিকতায় আবর্তিত হতো, যা দর্শক জনপ্রিয়তার আরো এক কারণ বলে অনেক বোদ্ধা পাঠকের অন্তর্নিহিত সার- বক্তব্যে ফূটে উঠেছে।আসলেও তাই,কারণ তার লেখা সব গল্প, নাটক উপন্যাসে নায়িকা যেন প্রায়ই নিজেদের জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে গুলতেকিন আহমদাশ্রিত রূপে ফুটে উঠতো, এখানেও হুমায়ুনের গুলতেকিন আহমদের প্রতি অসম্ভব এক ভালোবাসার অপরূপ প্রকাশ ব্যাক্ত করার দারুন এক ক্ষমতা, যা গল্প নাটক কে করে তুলতো প্রাণবন্ত।

 

 

প্রয়াত মুনীর চৌধুরী যেভাবে নাটকে বিধৃত করতেন, যেন শেষ হয়েও হইলো না, কিন্তু রেশ টেনে নেওয়ার দুঃসাধ্য কাজটি কেবল হুমায়ূন স্যারই করতে পেরেছিলেন, কেননা তার নাটক কখনো শেষ হয়েও শেষ কিংবা পরবর্তী উপাখ্যানের জন্য ভিন্ন অঙ্গিকে, ভিন্ন মাত্রায় সেই রেশ ও ক্রেজের ধারাবাহিকতা এতো জনপ্রিয় ভাবে কেবল তিনিই ধরে রাখতে ও পর্যায়ক্রমে টেনে নিয়ে গিয়ে নতুন-নতুন সৃষ্টি করতে পারতেন,আবার একই নামে, একই চরিত্রের ভিন্ন মাত্রা কেবল তিনিই নিখুঁত ভাবে উপস্থাপনের অতি-অসাধারণ ক্ষমতা রাখতেন,যা কখনো অতি বাগ্মিতা কিংবা অতি-কথন বা পুনরাবৃত্তি থেকে থাকতো একেবারে মুক্ত- এখানেই হুমায়ুনের বিশেষত্ব।

 

 

হুমায়ূন স্যারের মৃত্যুতে জাতি হারালো তার অসাধারণ এক সন্তানকে,যা কখনো পূরণ হবার নয়। আমাদের গল্প,সাহিত্য,নাটক,সিনেমার জগতে এক সৃজনশীল মহা-নায়কের প্রয়ানে বড় শূন্য এবং হাহাকার করছে, নূহাশ পল্লীতে আজ বড় ছিমছাম নীরবতা, হলুদ হিমু আর মিসির আলী রূপাকে জড়িয়ে এক নাগাড়ে কেঁদে চলছে, তাদেরকে নব-নব রুপে কে করবে সৃষ্টি? আর যে কেউ রইলো না?বারে বারে কে তাদেরকে ফিরিয়ে আনবে বাংলার পথে-ঘাটে,মাঠে-ময়দানে, চায়ের টেবিলে,স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে, বইয়ের অগণিত দোকানের শেলফে-আর কেউ এমন করে তাদের নিয়ে লিখবে না, বাকের ভাই বড় অসহায়, তার মতো প্রতিবাদী চরিত্র বাংলার সর্বত্র আর কে ছড়িয়ে দিবে? হুমায়ূন বিহীন নাটক-গল্প-উপন্যাস আর এই নুহাশ পল্লীতে শোকের ছায়া বিরাজমান, এ শোক, এ কষ্ট যেন আজ বইতে বড় ভারী ও কষ্ট হচ্ছে, তাইতো বাংলাদেশ আজ কেঁদে চলেছে।

 

 

হুমায়ূন স্যার, তুমি শুধু মিসির আলী, হলুদ হিমু কিংবা রূপার স্যার নও, তুমি আমাদের অগণিত ভক্তের, এই বাংলার তথা সারা বিশ্বের বাংলা ভাসাভাসির। জ্যোৎস্নারাতের মায়াবি অগণিত তারার সাথে রাতের আধারে আলোকজ্জলতার সাথে হলুদ হিমু আর মিসির আলীকে নিয়ে আমরা তোমাকে খুজে ফিরবো,বাংলার ধান শালিক আর পাখির কিচির-মিচির ডাকের কলতানে, তোমার নূহাশ পল্লীতে মিসির আলী, রূপা,হলুদ হিমূকে আমরা পূণপ্রতিষ্টিত করে ছড়িয়ে দেবো তোমার সৃষ্টিকে দিক হতে দিগন্তে।তুমি রাতের তারা হয়ে আকাশের নীলিমার মতো আমাদের সাথে মিতালী গড়বে প্রতি নিয়ত, যেমন করে গড়তে নতুন নতুন সৃষ্টি।তোমাকে তাই বিদায় দিতে বড় কষ্ট হচ্ছে, বুকের মাঝে এক রাশ কষ্ট আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তোমাকে তাই বিদায়, বিদায় হে বাংলার নন্দিত কথা শিল্পী, বিদায় লগ্নে আগুনের পরশমনি লও হে মোদের সালাম, ফুলের অগ্র ডালি সাজিয়ে তোমাকে চির বিদায়, এলটন জনের গানের কলি হয়ে বলতে চাই গুড বাই বাংলার রোজ…………।গুড বাই প্রিয় স্যার হুমায়ূন আহমদ, আল্লাহ তোমাকে জান্নাতবাসী করুণ-আমীন।

 

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
Salim932@googlemail.com
21st July 2012,UK

 

ঈষৎ পরিবর্তীত ১৯ জুলাই  ২০১৬

 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *