সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেক প্রবাসী বিভিন্নভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, প্রবাসী সেই সব নেতৃস্থানীয়দের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও স্বীকৃতির বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনাধীন। যারা এখনো গেজেটে নাম উঠাননিনি, তাদেরকে এখনো বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ফর্ম পূরণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সেটাও বিবেচনা করা হবে। গত শনিবার ৬ই আগস্ট লন্ডন সফরকালে চ্যালেন আইয়ের স্পেশাল এক্সক্লূসিভ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক সেলিম আহমেদের সাথে সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী একথাগুলো বলেন। মন্ত্রী এ সময় আরো বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হলে, বুঝতে হলে এর গভীরে যেতে হবে। ১৯৪৭-১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয়ভাবে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে ৬৮ সালে ছাত্রলীগের একটি অংশের সাথে নিউক্লিয়াস গঠন করে স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু, ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধু নিয়মমাফিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্র শ্রমিক জনতা সহ সমগ্র বাঙালি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবীত করে চূড়ান্ত স্বাধীনতার দিকে ধাপে ধাপে নিয়ে বিজয় অর্জন করে আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দেন। এখানেই বঙ্গবন্ধুর অনবদ্য এক মাহাত্ম। যা ইতিহাসে বিরল এমন এক মহানায়কের আসনে আসীন হয়ে আছেন।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যদি কঠাক্ষ করে, তাহলে কেমন অনুভূত হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত এবং তার নেতা গোলাম আযম গং কখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেনি। বরং গণহত্যা, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের সাথে জড়িত ছিলো। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই।
মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, সাজাপ্রাপ্ত আসামী যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে তাদের ব্যাপারে সরকারের ও তার মন্ত্রণালয়ের কী ভুমিকা- এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাজাপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য সাজা প্রাপ্ত মামলায় তারেক রহমান সহ বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাজা প্রাপ্ত খুনীরা যারা ব্রিটেন সহ বিশ্বের যে সব দেশে পালিয়ে আছে, আমরা সেই সব দেশের সাথে যোগাযোগ করছি, পত্র লেখা হচ্ছে। তাদেরকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে। এ সময় তিনি লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিটেনের সরকারের কাছে এই সব অপরাধীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদনও জানান।
বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারে মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকার তাদেরও স্বীকৃতি এবং ভাতা প্রদানের ব্যাবস্থা করছে। এখনো যদি কেউ থেকে থাকেন বা কারো জানা থাকে, তাদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের দেশে হোমগ্রোন নানা নামে যে সব সন্ত্রাসী হচ্ছে, আমরা কঠোরভাবে সেই সব মোকাবেলা করছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এখন দেশের জনগনও সচেতন হচ্ছেন, জঙ্গিদের তাই দেশের কোথাও স্থান হবেনা।
উল্লেখ্য মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক ১৯৭১ সালের ১৯শে মার্চ গাজীপুরে প্রথম সশস্র প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানী জেনারেল জেবকে পরাস্ত করেছিলেন। সেই ঘটনার স্মৃতিমন্থন করার সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।চারবারের পৌরসভা চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে এমপি, সেই সাথে ১৯ বছরের অধিক স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালনের বিরল গৌরবের অধিকারী মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক।
চ্যানেল আইয়ের এক্সক্লূসিভ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়ে থাকে প্রতি শুক্রবার রাত ১১.৩০ থেকে ০১.০০টা অবধি।ইংল্যান্ড ও ইউরোপের দর্শকেরা এই অনুষ্ঠানটি স্কাই ৮৩৩ নম্বর থেকে সরাসরি দেখতে ও লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানানোয় এসময় তিনি চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও প্রবাসীদেরকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। এর আগে চ্যানেল আই অফিসে পৌছলে মন্ত্রীকে স্বাগত জানান চ্যানেল আই ইউকে ইউরোপের এমডি রেজা আহমেদ ফয়সল চৌধুরী শোয়েব। মন্ত্রী চ্যানেল আই এমডির সাথে কিছুক্ষন মতবিনিময়ও করেন। প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী বিষয়ে চ্যানেল আই এমডি নজরে আনলে মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক আশ্বস্থ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করবেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের স্বার্থ বিরোধী কোন পদক্ষেপ নিবেননা।
মন্ত্রী লন্ডন সফরের সপ্তাহের শুরুতে বেতার বাংলা ১৫০৩ এ মুক্তিযুদ্ধ আমার গৌরব অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মুক্তিযূদ্ধা সৈয়দ এ কায়সারের সাথে সাক্ষাতকার প্রদান করেন। এ সময় মন্ত্রীকে স্বাগত জানান বেতার বাংলায় উপস্থিত প্রেজেন্টার, কলা-কুশলীরা ।
08th August 2016, London