আল জাজিরা্র ইনভেস্টিগেশন, সেনা প্রধানের যুক্তরাষ্ট্রে রাজকীয় সফর, রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগ এবং বাংলাদেশ ইসরাইল-বাইডেন প্রশাসন:রাজনীতির নতুন পাঠ

আল জাজিরা্র ইনভেস্টিগেশন, সেনা প্রধানের যুক্তরাষ্ট্রে রাজকীয় সফর, রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগ এবং বাংলাদেশ ইসরাইল-বাইডেন প্রশাসন:রাজনীতির নতুন পাঠ

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

বিগত ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাউকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন করে( সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ এর মতো) রাষ্ট্রীয় অতিথি করে সর্বোচ্চ সংস্থার প্রধানদের সাথে বৈঠক করেনি

 

বর্তমান সময়কালীন বিশ্বে, এমনকি দীর্ঘ যুগের ইতিহাস বলে, বিশ্বের যেখানেই উন্নয়ন বিপ্লব, কাজ কর্মযজ্ঞ চলে, অর্থনীতি শনৈ শনৈ করে উন্নীত হতে চলে, সেখানে তাবদ বিশ্বের চোখ যেমন পরে, তেমনি হালের পার্সেন্টিজ, আগেকার সময়ে আমার হিস্যা, তারও আগে রাজার খুশীর( করের) অংশ বিশেষ, আর বাংলাদেশে এক সময়ে চালু হওয়া উপরি আর আজকের টুয়েন্টি পার্সেন্টেজের কদর বেড়েই চলে।বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল আর মনিটর বা পর্যবেক্ষকদের কাছে এই পার্সেন্টেজ যেন অঘোষিত এক আইনি মারপ্যাচে স্বীকৃত আয়ের অংশ হয়ে আছে। তবে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ রচনায় ও প্রকাশে এই পার্সেন্টেজ বাণিজ্য এখনো অচ্যুত এবং দুষণীয় বিষয়, আইন আদালতের কেতাবেও তা বলাই বাহুল্য।বাংলাদেশে গত এক যুগ ধরে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে, মুহিতের ক্যারিশম্যাটিক রাবিশ উচ্চারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অসম্ভব এক শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যান, যা থেকে ঢাকার উন্নয়ন আর অর্থনীতির শনৈ উর্ধগতি বিশ্ব মহারথিদের কাছে এক লোভনীয় বিষয় হয়ে ধরা দেয়। উন্নয়ন আর অর্থনীতি বিকশিত করার বাণিজ্যে পার্সেন্টেজ হয়ে পরে এক মহালোভনীয় বাণিজ্য-অঘোষিত এবং কখনও কখনও ঘোষিত স্বীকৃত মাপকাঠি।কেউ স্বীকার করেন আর নাই করেন, বড় বড় প্রজেক্ট ম্যানেজম্যান্টের(উন্নয়ন, প্রাক্কলন) সাথে জড়িত থাকেন, তারা জানেন, সারা বিশ্বের কোথাও(সেটা মার্কিন মুল্লুক হউক, গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্য হউক, ধর্মীয় তীর্থস্থান সৌদিআরব কিংবা বিশ্বব্যাংক বা অন্য যেখানেই হউক-পার্সেন্টেজ বিশ্বের দেশে দেশে নানা নামে, সুন্দর শব্দ চয়নের আড়ালে, নানা আইনি বৈধতার কেতাবে থাকে স্বীকৃত এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 

 

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র জন্মের পর থেকে সংবাদ সংস্থা বিবিসি একচ্ছত্রভাবে ঢাকা ও দক্ষিণ এশিয়া মিডিয়া জগতে খুব ঝেঁকে বসেছে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম স্কাই নিউজ গত ৮ বছর ধরে ঢাকায় অফিস খোলার চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি। সম্প্রতি (২০২০-২০২১) স্কাই বি নিউজ ঢাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সাড়া ঢাকার উর্ধতন মহলের কাছ থেকে পেয়েছে। তাই তারা এখন একটু নড়ে চড়ে বসেছে। কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাও বিবিসির পথ ধরে ঢাকায় আল জাজিরা প্রসার করতে চায়। বর্তমান বিশ্বে মিডিয়া বাণিজ্য এক নতুন রূপ পরিগ্রহ লাভ করেছে-অনলাইন বিপ্লব সকল বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে সংবাদ ও পরিচালনা ও প্রচারে স্ট্র্যাটেজী সাজাতে হচ্ছে।যে কারণে আমরা দেখি শত বছরের পুরনো সংবাদ প্রতিষ্ঠান নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড যেমন অনলাইন বিপ্লবের কাছে মুখ থুবড়ে পরে যায়, তেমনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, গার্ডিয়ান, টাইমস, টেলিগ্রাফ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোষ্টের মতো প্রভাবশালী বড় বড় সংবাদ শিল্প নিজের প্রিন্ট ভার্সন গুছিয়ে বা শিথিল, কোথাও কোথাও সীমিত আকারে করে ডিজিটাল ভার্সনে নতুন করে নতুন পরিকল্পণা নিয়ে প্রচারে আছে।

 

সম্প্রতি আল-জাজিরা অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন নামে তাদের এক ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেয়। যদিও যুক্তির কষ্টিপাথরে ইনভেস্টিগেশন জার্ণালিজমের মাপকাঠিতে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স  প্রোগ্রামটি অনেক প্রশ্নবিদ্ধ এবং  অধিক সেনসেনালাইজ এর দিকে অতিমাত্রায় ঝুকে পরেছে। স্মরণযোগ্য যে, অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন রিপোর্টটি অনেকটা ১৯৭২ সালে নিক্সন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন পোষ্টের দ্বারা বিখ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড এবং কার্লবার্ণষ্টেইন এর অল দ্য প্রেসিডেন্ট মেন (ওয়াটার গেইট ষ্টোরি) এর আদলে করা হলে দুটি ডকুম্যান্টারিতে আকাশ পাতাল ব্যবধান।ওয়াশিংটন পোষ্টের অল দ্য প্রেসিডেন্ট মেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। কারণ ডকুম্যান্টারিটির পরতে পরতে তথ্য যেমন ছিল সমৃদ্ধ , একই সাথে তথ্যের উৎস এবং এভিডেন্স ছিল যুক্তিনির্ভর এবং অকাট্য। ইনভেস্টিগেশন জার্ণালিজমের অকাট্য সূত্র হলো তথ্যের নিখুততা এবং আবেগ বিবর্জিত কাউন্টার যুক্তি তথ্যের অকাট্য ও ব্যাপক সমাহার, তথ্য এবং এভিডেন্স সেনসেনলাইজ বিবর্জিত। অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন সেক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে এবং সাদা মাটা, তবে শ্বাশত বাঙালির আবেগকে নাড়া দেয়ার সকল মসলা (আবেগের) ব্যাপকভাবে মিশ্রণ, অনুরনন, নিরাকরণের সমারোহ করেছেন বার্গম্যান এবং তার টিম।

 

 

০২) মজার ব্যাপার হলো, জো বাইডেন যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ উৎসাহ এবং উদ্দীপনা দেখা গেছে। স্বাভাবিকভাবে ডেমোক্রেটরা যখন ক্ষমতায় আসেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্রেটদের আগমণে কিছু উৎসাহ, অতি উৎসাহ লক্ষ করা যায়। আল জাজিরায় অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন যখন প্রচারিত হয় ( তারও আগে আল জাজিরা তাদের এই রিপোর্ট প্রকাশের অগ্রিম তারিখ যেমন ঘোষণা করে), ঠিক তেমনি আটলান্টিকের অপর প্রান্ত থেকে একই সময়ে, একই সময়ের ব্যবধানে অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে আল জাজিরার বার্গম্যান কথিত  বাংলাদেশ সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সফরের চূড়ান্ত ঘোষণাও দেয়। আল জাজিরা যখন তাদের রিপোর্টটি অন এয়ারে দেয়, সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদও রাষ্ট্রীয়ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকেন বা যান। আরেকটি কাকতালীয় বিষয় ( বাংলাদেশের দুজন ব্যক্তি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থেকে কাজ করেছেন) ডঃ রেজা কিবরিয়াও আচমকা ডঃ কামালকে ছেড়ে দিয়ে গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন আনুষ্ঠানিকভাবে।

 

 

বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার আগেই ভারতীয় এবং বাংলাদেশী অরিজিন মার্কিনীদের নিজ প্রশাসনে বড় সড় পদে অধিষ্টিত করেন, যা উভয় দেশ এবং বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। বাইডেন যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, তার দুদিনের ভিতরে তার প্রশাসনে আরো কয়েকজন বাংলাদেশী মার্কিনীদের নিয়োগ দেন।

 

 

বিশ্ব এবং সকলেই জানেন মার্কিন এবং ভারতের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক দহরম মহরম। বাংলাদেশের সাথে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর এবং চীনের বেল্ট এন্ড রোড সিল্ক রোড অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যেমন ভারত, চীন, তেমনি ইসরাইল, ব্রিটেন এবং মার্কিনীদের জন্যও।বিশ্বের কোথাও ইসরাইল যাওয়ার আগে তাদের হয়ে ভারত, মার্কিন আর হালের মধ্যপ্রাচ্যের শাসকেরা যান। ইসরাইলের হয়ে মার্কিন সরকার বলা যায় মুখপাত্রের ভুমিকায় এগিয়ে থাকেন, যেমন থাকে ভারত সরকার। ২০১৫ সালে বিশ্বের বেশ কিছু মিডিয়ায় ছোট করে বক্স নিউজ ছিল ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের সূচনা হতে যাচ্ছে। ভারত ও মার্কিন লবিষ্টের ভুমিকায় আছে। ২০১৬ সালের জুনের পর সেই সম্পর্ক জোড়াতে মার্কিন প্রশাসন এবং ভারত সরকার কেন পিছিয়ে যায়, সেটা অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। এমনি অবস্থায় ইউরোপের একটি দেশ হাঙ্গেরির বুদাপেষ্টে সেনা প্রধানের ভাইয়ের মাধ্যমে ইসরাইল সরকারের দূতদের অত্যাধুনিক সিকিউরিটি  ইকুইপম্যান্ট ক্রয়ের জন্য বৈঠক-আল জাজিরা তাদের অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন এর রিপোর্টে সাইড লাইনে নিয়ে আসলেও মূলতঃ সেটাকে ফোকাসের জন্যই তাদের রিপোর্ট-মেরিটসের বিবেচনায় সেটা ধরেই নেয়া যায়। তবে সাইড লাইনে নিয়ে আসায় বোধগম্য কারণ রয়েছে, যথেষ্ট ক্রেডিবল এভিডেন্স বার্গম্যানের হাতে না থাকা। কিন্তু বোমরুলের ঢেরায় টুকা দিয়ে ঘুমন্ত বারুদ জ্বালানোর এক ধরনের নাটকীয় চেষ্টা-সেটা নেহায়েত কম নয়। এ ক্ষেত্রে ডঃ গওহর রিজভী (৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, লিংক https://londontimesnews.com/archives/18246  বেশ গুছিয়ে জবাব দিয়েছেন, যদিও ফাক ফোকর জেনে শুনেই তিনিও তার বক্তব্যে অনেকটাই খোলা রেখেছেন। তার মানে ইসরাইলের সাথে কিছু একটা যোগাযোগ হয়ত স্থাপিত হয়েও থাকতে পারে তৃতীয় কোন দেশের বা এজেন্টের মাধ্যমে, যা  ইসরাইল-বাংলাদেশ কাউকেই আচ করাটা হবে অনেক কষ্টকর। ইসরাইল এবং বাংলাদেশ দুজনই জানে, ভারত কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে না জানিয়ে সরাসরি ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক করা হবে আত্মঘাতি। আবার ইসরাইল তার নিজস্ব পলিসি বাস্তবায়নে হেন কোন পন্থা নেই যে সে অনুসরণ করেনা। সে এমন এক দেশ বিশ্বের কাউকেই কোন কোন ক্ষেত্রে তোয়াক্কাও করেনা। বাংলাদেশ সম্পর্ক করতে আগ্রহী হলে, ইসরাইল দুই ধাপ এগিয়ে আসবে। কিন্তু তারপরেও ইসরাইল লুকোচুরি ডিপ্লোম্যাসিতে বেশ পারঙ্গম এবং পছন্দও করে।

 

 

প্রয়াত আ`লীগের অর্থমন্ত্রী এ এস এম কিবরিয়াও ছিলেন বিশ্বব্যাংক ও মার্কিনীদের বিশ্বস্থ।ঢাকায় অনেকেই বলেন, তার ছেলে ডঃ রেজা কিবরিয়াও বিশ্বব্যাংকের ছকেই মার্কিন মুল্লুক ছেড়ে ঢাকার রাজনীতিতে ফেরেন। তিনিও বিশ্বব্যাংক এবং মার্কিনীদের আস্থাভাজন। ভারত এবং মার্কিনীদের সাথে বাংলাদেশের যেমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক, একইভাবে নিরাপদ বিশ্ব বাণিজ্য, সমরাস্ত্র বিক্রি, বঙ্গোপসাগরের সম্পদরাশি করায়ত্ব, নিঝুম দ্বীপ, ভাসান চর,  সিল্ক এন্ড বেল্ট ওয়ান রোড রুখতে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ কেন্দ্রিক পলিসি ও নীতিতে একাট্রা এবং এক কেন্দ্রেই অবস্থান করছে। ট্রাম্প প্রশাসন যা পারেনি, দক্ষ এবং তুখোড় বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বিপরীতে ভারতকে সাথে নিয়ে ঝাকিয়ে বসবে সন্দেহ অমূলক নয়। তার উপ মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আছে মিয়ানমারের সামরিক শাসিত সরকার। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার যে ব্যবহ্নত হবে বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশ সরকার সব কিছু ভালোভাবে পর্যালোচনায় নিয়েই তার স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে এগুচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশ খুব সজাগ এবং এক ধাপ এগিয়ে। এখানেই বাংলাদেশ সরকারের রিলাক্স মুডের আসল হেতু।

 

 

ডঃ রেজা কিবরিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মার্কিন এসাইনম্যান্টে ডঃ  কামালের সীমাহীন ব্যর্থতায় ( অন্যভাবে বলা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী খেলায় চরম ব্যর্থ) এক সুদূঢ়প্রসারি চিন্তা থেকে হয়তো তিনি আবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এমন দাবি কেউ কেউ করতেই পারেন। জেনারেল আজিজ আহমদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে সর্বোচ্চ সমর বিশারদ, সমর ট্যাকটিকস, চীফ অফ স্টাফ জেনারেল এবং জেনারেলদের সাথে রাজকীয়ভাবে বৈঠক করা হয়েছে, বিগত ৫০ বছরেও বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করেনি।

 

 

মনে রাখা দরকার, বর্তমান সরকারের প্রতি দেশপ্রেমিক সকল বাহিনী অত্যন্ত আস্থাবান এবং বিশ্বস্থ।স্বাধীনতার পর কোন সরকার প্রধান দেশপ্রেমিক সকল বাহিনীকে এই প্রথম এমন আস্থায় নিয়েছেন।দুর্যোগ দুর্বিপাকে দেশপ্রেমিক সকল বাহিনী বাংলাদেশে যেভাবে এক কাতারে দাঁড়িয়ে কান্ডারির ভুমিকায় থাকে, সরকারের লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে সদা প্রস্তুত থাকে, যা দেখে অনেকেরই ইর্ষা হলেও হতে পারে। কিন্তু সরকার তার উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে দেশ প্রেমিক বাহিনীদের সাথে নিয়ে দেশ গড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।

 

 

বাংলাদেশ এমন এক দেশ একের পর এক মহা তাজ্জব ঘটনা সারাদেশ ও দেশে বিদেশে আলোড়ন তুলে আবার দুদিনেই জার্মুনির ফেনার ন্যায় মিলিয়ে যায়।যেমন ভ্যাকসিন উতসব আর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ খেতাবে আল জাজিরার বুদবুদ ফেনা হারিয়ে গেছে।তার মানে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা যখন থাকে, তখন এসব তাজ্জব ঘটনা কেবল আলোড়ন তুলে,৯০ এর ন্যায় বিপ্লব ঘটায়না।

 

 

ঢাকার হাইব্রীড ঘরানার লেবাসের আড়ালে বুদ্ধিজীবিরা আড়ালে আবডালে বলছেন, রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তির খেলায় আলজাজিরায় সেনা প্রধানের #ঢাকামাফিয়া শীর্ষক প্রচারণার কৌশলে এক ঢিলে চার পাখি কুপোকাত করার কৌশলী খেলা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।এটাও এক ধরনের কায়েমী স্বার্থবাদীদের সাথে সুর মেলানো। সেনা প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মধ্যে স্বার্থান্বেষীদের ন্যায় দুরত্ব সৃষ্টির অপ-প্রয়াসের মতোই, যেভাবে বিদেশী স্বার্থান্বেষীরা মরিয়া হয়ে উঠে পরে লেগেছে। তারা আড়ালে উদাহরণ দিয়ে শিহরণ জাগাতে চান,পাকিস্তানের তৎকালীন সরকার নওয়াজ শরীফ ও সেনা প্রধান পারভেজ মোশাররফের( ইন দ্য লাইন অব ফায়ার) কৌশলী দ্বন্ধের খেলার পরিণতির ফলে নওয়াজের বিদায়। ইনফ্যাক্ট হিপোক্রেটরা এমনই হয়।

 

 

ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলে স্মুথ ট্রানজিশনের(ডিফেন্স স্ট্রাটেজি ২০১৮-২০১৯) শব্দে বাংলা অভিধানের নিরব বিপ্লবের কথা বলে। সিনারিও নির্দেশ করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প ঢাকার রাজনীতিতে যেমন অনুপস্থিত, সেটা দেশ বিদেশের রাজনীতি বিজ্ঞানের সকলেই যেমন জানেন , তেমনি বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশের দেশ ভারতও অবগত।

 

 

নব্বই এর দশকের পর ওবামার পরিবর্তনের জন্য রাজনীতির দর্শন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেবিলে বার বার আমরা সক্রিয় হতে দেখি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী খেলার কাছে সেই পরিবর্তনের দর্শনও বার বার মুখ থুবড়ে পরে থাকতে দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী হয়তো তার টার্ম বা মেয়াদ শেষ করলেও আগামী মেয়াদে( বেশী হলে) বা পরের মেয়াদে আর ক্ষমতায় থাকতে চাইবেননা। এটাই স্বাভাবিক নিয়মের ইতি।

 

 

কিন্তু কোভিড উত্তর রাজনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতি নতুন এক বাস্তবতা পরিগ্রহ লাভ করেছে। কোভিডের টাল মাটাল পরিস্থিতিতে বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি(ব্যবসা বাণিজ্য সহ) কূটনীতিতে অনেক নাটকীয় সিনারীও উদ্ভব হয়েছে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ঢাকার রাজনীতি অর্থনীতি সমরনীতি খাপ খাইয়ে নিতে কোন এক পরিবর্তনের খেলায় উপরে বিশ্লেষিত তিন পক্ষের কোন এক পক্ষ সামনে এলেও পুরনো বোতলে নতুন মদ ঢেলে(মাইনাস টু ফর্মুলা সক্রিয় করে) নতুন আদলে বাইডেন-মোদির ক্যারিশম্যাটিক ভোটের রাজনীতির খেলার নিরাকরণে নিরাকরণ চালানোর এক প্রয়াস অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন রিপোর্টের অন্তর্নিহিত মূলে ইঙ্গিতবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ । কিন্তু সেক্ষেত্রেও মনে রাখা উচিৎ হবে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ উত্তর ক্ষমতার পরিবর্তনের দর্শনে আলীগই ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় থাকছে। অন্ততঃ কূটনীতির অন্দর মহলের খেলায় এমনটাই ইঙ্গিতবহ। কোভিড উত্তর রাজনীতিতে বলা যায় বিরোধীদল বিএনপি সব কিছুর বা সিনারিওর বাইরেই থাকছে, যদিও তারা সকল সময় বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে নিজেদের জানান দিচ্ছে।

 

 

০৪) বাংলাদেশ সরকার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ বেশ কঠোর ভাষায় আল জাজিরার রিপোর্ট শুধু প্রত্যাখ্যান করেছে। আ`লীগ ঘরানার অনেকেই আল জাজিরার রিপোর্টের জবাবের বিপরীতে কথিত বিষয়গুলোর অবতারনা বা জবাব না দিয়ে চিরাচরিত কেচ্ছা কাহিনী নির্ভর সমালোচনা করে আল জাজিরার রিপোর্টের সাধারণের আগ্রহের মাত্রা যেমন বাড়িয়ে দেন, তেমনি জাস্টিফিকেশনের মাত্রা হয়ে পরে সীমিত এবং গৌণ।আল জাজিরা গ্লোবাল জার্ণালিজম এর শ্বাশত, চিরন্তন থিমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুরো সপ্তাহ তাদের অনলাইন ভার্সনের একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ করতে থাকে, যা পড়ে এবং দেখে মনে হয়েছে-আল জাজিরা এককভাবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার, সেনা প্রধান, প্রেসিডেন্টকে হটানোর একচ্ছত্র লাইসেন্স (লাইসেন্স টু দ্য কিল) নিয়েছে।সমস্ত ঘটনা প্রবাহে বিরোধীদল বিএনপি যেন স্বাক্ষী গোপালের ভুমিকায় থেকে যায়, যা দেখে শুনে পড়ে যে কারও মনে হতে পারে, ২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত সরকারের সেই মাইনাস টু ফর্মূলা এখনো পশ্চিমা ও গ্লোবাল মিডিয়া রাজনীতিতে সক্রিয়।তবে আল জাজিরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শক্তি নিয়ে নাড়াচাড়া করার যে সুদূঢ় প্রসারি এক তাৎপর্য সেটা বলাই বাহুল্য। সরকার প্রধানও সেটা আঁচ করতে পেরে বেশ নাটকীয়ভাবে দাবার চাল দিচ্ছেন। তবে এখন দেখার বিষয় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে এবং শক্তিশালী উচ্চ ক্ষমতার প্রযুক্তি নিয়ে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন এর অভিযোগ কিভাবে মোকাবেলা করে, তার উপর নির্ভর করছে আগামীর কূটনীতি রাজনীতি, ব্যবসা বাণিজ্যের সিনারিও।

 

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, লন্ডন