Home » কলাম » ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে বিদেশী এনজিওদের সাথে এবার বিবিসি বাংলাও-একটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে বিদেশী এনজিওদের সাথে এবার বিবিসি বাংলাও-একটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি বিবিসি বাংলা(২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১) তাদের অনলাইন ভার্সনে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর নিয়ে এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টটি বিবিসি বাংলা লন্ডন অফিস থেকে করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সাধারণতঃ ঢাকা কিংবা বিবিসি চট্রগ্রাম বা স্থানীয় প্রতিনিধির করা রিপোর্ট হলে সেভাবেই প্রকাশ করে থাকে। যখন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় রিপোর্ট প্রকাশ করে তখন বিবিসি বাংলা সাধারণতঃ প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করে থাকে। বিবিসি বাংলা তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে রোহিঙ্গারা ভাসানচর থেকে আগের ক্যাম্পে ফিরে আসতে চায়। সেখানে স্থানান্তরের ও কোয়ারান্টিনের নামে বরং নির্বাসনে রাখা হয়েছে। এরকম কিছু বিষয় তাদের রিপোর্টে তারা উল্লেখ করেছে। যেহেতু লন্ডন অফিসের রিপোর্ট(সরেজমিনে নয়) সেহেতু অফকম ঢাকতে বিবিসি বাংলা শাহ রেজওয়ান নামে মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার বক্তব্যও সরকারি বক্তব্য অথবা বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা ডেস্কের বক্তব্য বলে চালিয়ে দিতে চাইছে।এখানে মনে রাখা উচিৎ হবে আন্তর্জাতিক এই ইস্যুতে বক্তব্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ফরেন অফিস রয়েছে, আইন শৃঙ্খলা সার্বিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় রয়েছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সেলও রয়েছে, এমনকি রোহিঙ্গা বিষয়ক ডেস্ক যেমন ঢাকায় রয়েছে, তেমনি লন্ডনেও রোহিঙ্গা বিষয়ক সংশ্লিষ্ট এসাইনম্যান্ট অফিসার এবং ডেস্ক রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে কিনা- নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমার এই তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া বিবিসি বাংলা বা ব্যক্তিগত কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং বিবিসি বাংলা যাতে আরেকটু সতর্ক হয়ে এরকম ইস্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, যাতে সংবাদের সঠিকতা নিয়ে বিভ্রান্তি কিংবা বিতর্কের ইস্যু না হয়ে। কারণ মানুষ বিবিসি বাংলাকে এখনও আস্থায় নিয়ে পড়ে এবং শুনে(রেডিও)। তা না হলে, বিবিসি বাংলার সূত্র ধরে আল জাজিরা( করতে যাচ্ছে)ও ফের বিতর্কিত রিপোর্ট প্রচার করবে- এক ধরনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, রোহিঙ্গাদের কল্যাণ চায়না যারা-বরং তারাই ফায়দা লুটবে। যাতে চাপা পরে যাবে বৃহত্তর রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা চলমান প্রক্রিয়া।আমার ভয়ের আশংকা সেখানেই।

প্রায় ১১ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা বাসস্থান ও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। এখন কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন যাপন থেকে উন্নত, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন, তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা, স্বাবলম্বী করার নিমিত্তে বাংলাদেশ সরকার যখন ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করছে পাইলট প্রকল্প হিসেবে, শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সাহায্যকারী(যারা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভুমিকা রাখতে অক্ষম) বিরোধীতা করে আসছেন। বোধগম্য কারণেই এ বিরোধীতা। বাংলাদেশ সরকার যেখানে কোন ধরনের চাপ বা জোর জবরদস্তিতো নয়ই বরং যারা স্বেচ্ছায় উন্নত জীবন যাপনের জন্য সেখানে যেতে চান তাদের সব ধরনের সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে চায়-এমন নীতিতে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে সেখানে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে, সাথে সাথে মোটিভেশনাল ও প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে, যা দেখে এবং পেয়ে খোদ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের সন্তুষ্ঠির কথা জানাচ্ছেন, ঠিক তখনি কোথাকার কোন এক রোহিঙ্গার সূত্র ধরে এবং তৃতীয় পক্ষের ভিডিও(যা ভাসানচরের বাইরে থেকে করা)নিয়ে বিবিসি বাংলা এমন ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশ-আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর বিরোধীতার সূত্রে গ্রথিত বুঝাই যায়। ভিডিও ব্যাপারে বিবিসি বাংলা নিজেদের রিপোর্টে বলেছে তারা সেটা যাচাই করার সুযোগ হয়নি।

জানতে চাই, আপনার দুই হাতের সব আঙ্গুলের দিকে তাকান। তাবদ পৃথিবীর যত মানব সম্প্রদায় আছে, তাদের হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকান। দেখুন পাচ আঙ্গুল সমান কিনা? যদি তাই না হয়, তাহলে কি করে ভাবলেন, ১১ লক্ষের রোহিঙ্গাদের ১০০ শতাংশই সরকারের কিংবা ভালো কাজের প্রশংসা করবে বা সমর্থন করবে? পৃথিবীর কোথাও আজ পর্যন্ত একশতভাগ সেটিসফেকশন আশা করাটা কি সম্ভব? মাসলো তার হায়ারার্কিতে সেজন্যই ইস্টিম নিড সহ বিভিন্ন স্তরের নিডের কথা বলে গেছেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য সমগ্র পৃথিবীতে বাংলাদেশ ছাড়া কিংবা বাংলাদেশের নিরীহ জনগোষ্ঠী ছাড়া আর কোথাও কেউ সামান্যতম মায়া বা দরদ দেখায়নি। সেটা দেখানোর জন্য বাংলাদেশের কিংবা বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের নতুন কোন পরীক্ষার প্রশ্ন পত্রের উত্তর দেয়ার দরকার নেই। আজও মালয়েশিয়া তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। বেন ফারমার এবং নিকোলা স্মীথ টেলিগ্রাফ (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১) ইউএন কল ফর আর্জেন্ট রেসকিউ নামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে বলেছেন “কক্সবাজারের আমরা পার স্কয়ার মাইলের মধ্যে ৮৪,০০০ রোহিঙ্গাকে স্থান দিয়েছি।“ বাংলাদেশের সম্পদ, স্থান দুটোই সীমিত। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে বুঝতে হবে সেই বাস্তবতা। রোহিঙ্গাদের রেসকিউয়ের জন্য বাংলাদেশ কেবল পৃথিবীতে একা দায়বদ্ধ নয়।

সকলেই সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, হালের ক্যালেস বর্ডার সহ ইউরোপে এসাইলাম গ্রহণকারীদের ক্যাম্পের লাইন এবং অবর্ণনীয় অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তুলনামূলক বিচারে বিশ্বের যেকোন রিফিউজি ক্যাম্পের সুযোগ সুবিধা, অবস্থার চাইতে বাংলাদেশের ভাসানচর অধিক উন্নতমানের-বাংলাদেশ বিনীত হওয়ার কারণে এমনটা দাবী না করলেও রোহিঙ্গারা যারা সেখানে গিয়েছে, তারা সময় টিভি, একুশে টিভি সহ আরটিভি সকল গণমাধ্যমের সাথে স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়ায় স্বেচ্ছায় এমনটাই বলেছে-যা বাংলাদেশের তাবদ জনগন এবং বিশ্বের সব ভাসাভাসি সকলেই দেখেছেন।

আমি এটা বলছিনা যে, বাংলাদেশ সরকারের একক প্রচেষ্ঠায় করা এই নতুন উদ্যোগের শতভাগ সফল। যেখানে সব কটা বিদেশী সংস্থা সাহায্যের পরিবর্তে(সব ধরনের রিহাবিলিটেশনে ও রিপাট্রিয়েট) শুধু বিরোধীতা(কেন বিরোধীতা সেটা কেউ বলছেনা) করে আসছে। সেকারণে সরকারের একক চেষ্টার মধ্যে শুরুতে ত্রুটি বিচ্যুতি কিছুটা থাকতে পারে, যা স্বাভাবিক। কিন্তু সেগুলো ক্রমান্বয়ে অবশ্যই কাঠিয়ে উঠা সম্ভব। এমন না যে সরকার ত্রুটি বিচ্যুতির কোন উন্নয়ন করতে চায় না। বরং ফরেন অফিস রোহিঙ্গা ডেস্ক প্রতি নিয়ত কনসাল্টেশন ও যোগাযোগ করে চলেছে কিভাবে পূণর্বাসন প্রকল্পের কাজ উন্নত ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়। পূণর্বাসন কাজ সম্পন্ন হলেইতো অন্যান্য সকল কার্যক্রমও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন ও চলমান করা সক্ষম হবে। ফরেন অফিস সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশী বিদেশী সংবাদ মাধ্যম সবাইকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে দেখভাল করার জন্য-সরে জমিনে। বিভিন্ন এনজিও(দেশীয়, যেহেতু বিদেশীরা কক্সবাজারের দামী মোটেল রিসোর্ট ছাড়তে রাজী নয়) সেখানে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যাতে সার্বিক কার্যক্রম ও সেবামূলক সকল কার্যক্রম চালু করা যায়। এখন সরকার একা সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।সরকার যা করছে, সবাই মিলে এটাকে আরও টেকসই করতে বাধা কোথায়? কক্সবাজারের ক্যাম্পে করা গেলে ভাসানচরে নয় কেন?

শুনা যাচ্ছে, বিবিসি বাংলার পথ ধরে আল জাজিরা এই সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে থাকতে চায়না এমন থিম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করবে। আল জাজিরা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একের পর এক তাদের বিতর্কিত তথ্য নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, লন্ডন ।

Please follow and like us:
Pin Share

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!