খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্স, আনন্দ বাজারের মূল্যায়ন আর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি

খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্স, আনন্দ বাজারের মূল্যায়ন আর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি

খালেদা জিয়া যখন প্রেস কনফারেন্স করে তার মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঘোষণা করেন, তার কিছুক্ষণ আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা ঢাকা টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্টতই বলেছেন, সম্ভবত: দশম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা, সংলাপ এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। সংলাপ এবং আলোচনা দশম-একাদশ নিয়ে হতে হবে এবং বিরোধীদলকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে হবে। প্রেসের সামনে মজীনা এই বক্তব্য উপস্থাপনের আগে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে সাক্ষাত করে একই মনোভাব পেশ করেছেন, ওবায়দুল কাদেরও প্রেসের সামনে সে রকম বক্তব্যই তুলে ধরেছেন।

খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্সের আগে রাজধানীতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে যায় আর তাহলো সারাদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশী দূত আর ডোনারদের কাছে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ ডোনারদের আলোচনা পরবর্তী বক্তব্যে এর ইঙ্গিত স্পষ্টই প্রকাশিত।

ঢাকার রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে এই দুই ইতিবাচক অবস্থা যখন ঘটে যায়, তার কিছু পরেই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। অথচ এই দুই তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্সের মধ্যে থেকে যায় অনুপস্থিত।

সন্দেহ নেই খালেদা জিয়া একজন আপোষহীন জননেত্রী।বিএনপির মতো একটি বিশাল জাতীয়তাবাদী দলের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী।

বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে, আনাচে-কানাচে, শহরে-বন্দরে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধ্বস নেমেছে, তাদের সীমাহীন স্বেচ্ছাচার, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, লুটপাট ইত্যাদি নানাবিধ কারণে। বাংলাদেশের মানুষ বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকেই আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ, হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। মানুষ বিকল্প কিছুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামীলীগের বিপরীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি জনতার কাতারে এসে জনগণের আন্দোলনের ডাক দেয়ার সুযোগের আশায় বুক বেধে অপেক্ষায় ছিলো। রাজনৈতিক নানা সমীকরণ আর জোটের রাজনীতির হিসেব-নিকেশে, ব্যক্তিগত কর্মচারী, আর তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেগম জিয়া কতিপয় স্যুট, কোট, চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো আর জোটের এক বিশেষ শ্রেণীর রাজনৈতিক দলের হাতে সীমাহীনভাবে ব্যবহ্রত হয়ে রাজনীতির খেলার চালে অনেক পেছনে পড়ে যান-যা বুঝে উঠতে অনেক দেরী করে ফেলেন। একের পর এক মোক্ষম সুযোগ হাতের কাছে পেয়েও বেগম জিয়া শুধুমাত্র মার্কিন রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানের নেপথ্যের কুশীলব আর কতিপয় স্বার্থান্বেষী, আর ব্যক্তিগত স্টাফদের ঘিরে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করে যে সীমাহীন ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত একের পর নিচ্ছিলেন- সেই বোধটুকু যাতে বেগম জিয়া উপলব্ধি করতে সক্ষম না হন, ঐ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এমনভাবে গুলশানের চেয়ারপার্সনের কার্যালয় ঘিরে রেখেছিলো, অথচ মাঠে বিএনপির লাখো কর্মী, নেতা একের পর মার খেয়ে চলেছিলো আওয়ামীলীগ এবং তাদের জোটের শরীক জামায়াতের হিংস্র রাজনীতির রোষানলের খেসারত সেই সব তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা দিচ্ছিলো। খালেদা জিয়া তখনো মাঠের নেতা-কর্মীদের পালস অনুধাবনে থেকে যান অক্ষম বা ধরা ছুঁয়ার বাইরে।

আবার একই উদ্দেশ্যে মিডিয়া নামক আজকের যুগের প্রভাবশালী ও শক্তিশালী অংশ বেগম জিয়ার রাজনৈতিক কৌশলে মাঠের রাজনীতিতে একের পর এক মার খাওয়া দেখে আবার জামায়াতের কাছে নিঃশর্ত ভাবে বিএনপি মুখ তুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে তারা হয়ে যায় বিএনপির জন্য অবান্ধবসূলব- এক সবচাইতে জরুরী অথচ প্রয়োজনীয় এই অংশ হয়ে উঠে সুকৌশলে বিএনপি বিরোধী। অথচ একটিমাত্র অনলাইন দৈনিকের সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে ছলচাতুরী ও চাতুর্য পূর্ণ সংবাদ ও কেবলমাত্র গুলশান আর সংবাদ সম্মেলন এবং ঢাকার দূতাবাস নির্ভর রাজনৈতিক কর্মকৌশলের বিপরীতে আওয়ামীলীগ কুশলী ও দক্ষ রাজনৈতিক চাল চেলে ট্রেনের অগ্রভাগে দ্রুতবেগে আরোহণ করে সময় এবং রাজনৈতিক স্রোতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলে। খালেদা জিয়া তখনো রয়ে যান, মিস ট্রেনের চালক হয়ে।

০২) বহির্বিশ্বে বিএনপি এবং জামায়াতের বাংলাদেশী অংশ যেমন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জনপ্রিয়তারও শীর্ষে। আর এই জনপ্রিয়তার পারদের মাত্রার উপর ভর করে বিএনপির গুলশানের চেয়ারপার্সনের ঐ সার্কেল বেগম জিয়াকে বহির্বিশ্বের সমর্থনের কথা কানভারী ও সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক সরকার বিরোধী সংবাদে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জোরালো প্রতিবাদের সংবাদে ম্যাডামকে করে তুলে অতি উৎসাহী ও তাদের স্বার্থের অনুকূলে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে করে তুলে নেতিবাচক ভাবে বেপরোয়া। কিন্তু খালেদা জিয়া বেমালুম ভুলে যান, বহির্বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাখো কোটি সমর্থন বাংলাদেশের তথা ঢাকার রাজনীতিতে সামান্যতম প্রভাব ফেলার মতো অবস্থা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি বা অদূর ভবিষ্যতে হওয়ার মতো তেমন নিশ্চয়তাও নেই।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসী সংগঠনের ঐ সব নেতাদের পেট্রন আর জামায়াতের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর মার্কিন মুল্লুকের লবি(যারা একই সাথে ইউনূসেরও লবিষ্ট বহু আগ থেকেই-তাদের সার্ভিস চার্জ আকাশছুয়ী) মিলে বিশ্বের নামকরা প্রভাবশালী মিডিয়ায় একের পর এক শক্তিশালী জোরালো প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেবলমাত্র যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামীলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ধরাশায়ী করা গেলেও ঢাকার রাজনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনার জন্যে কিংবা সেরকম মেজাজের রাজনৈতিক কালচার এখনো আমাদের রাজনীতিতে গড়ে উঠেনি- খালেদা জিয়া সেটা জেনে শুনেও ঐ শ্রেণীর কুশীলবদের উপর ভর করে ভুল কৌশল বারে বার করে চলেন, যার পরিণতি বিএনপি এখনো দিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামীলীগ যখন ১৫৪ আসনের মতো আসন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়ে আছে, এমতাবস্থায় নির্বাচনী তফসিল চরম তামাশার নির্বাচন হলেও পেছানোর কিংবা বাতিলের যেমন সুযোগ নেই, এটা খালেদা জিয়া যেমন জানেন, যারা সমালোচনা করছি, তারাও জানি। আওয়ামীলীগের সামনে একটাই পথ হয় আত্মহত্যা নয়তো পালানো। আর দুটোর কোনটাই এখন আওয়ামীলীগের সামনেতো নয়ই, বরং এই তামাশার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের সামনে এখন অসংখ্য বিকল্পের পথ খুলে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সুযোগে আওয়ামীলীগ যেমন এমন নির্বাচনের বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে, একই সাথে আগামী তিন চার বছর শত বাধাঁর মুখেও দেশ শাসনের সুযোগ সহজেই পেয়ে গেলো।

বাংলাদেশ কেন্দ্রিক রাজনৈতিক ডামাডোলে যে দিল্লী ওয়াশিংটনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছিলো, বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা আর জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী অংশের সীমাহীন তান্ডবের আর পাকিস্তানের অযাচিত অ-কূটনৈতিক রাজনীতির বিপরীতে একেবারে নীরব থেকে খালেদা জিয়া এদেশের তরুণ ভোটারদের মনে যেমন সংশয় ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন, একই সাথে বিশ্ব কূটনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মেরুকরণের সুযোগ করে দিয়েছেন।

০৩) খালেদা জিয়া আন্দোলনের নয়া কৌশল উপস্থাপন নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নয়া বাতাস বইবে। যদিও প্রেস কনফারেন্সের পর পরই আনন্দ বাজার খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পিছুটান ও নরম সুর হিসেবে বর্ণনা করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলার মধ্যে জামায়াতের নৃশংস তাণ্ডবের উপর ভর করে চেয়ার পার্সনের গুলশানের অফিসের সার্কেল ও কতিপয় উপদেষ্টা ও ব্যক্তিগত স্টাফ মিলে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিযাত্রার যে নয়া রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন, তা সফল করার জন্য যে আন্দোলনের শক্তি এবং কাঠামো দরকার- এই মুহূর্তে কি বিএনপির মধ্যে আছে ? বিশেষ করে ১১টি জেলার মধ্যে জামায়াত শিবিরের ধ্বংসলীলার বিপরীতে ইসি যখন সেনাবাহিনী ডিপ্লোয়েট করে ফেলেছে, তখন আরব বসন্তের ন্যায় ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে সরকার পতনে কতোটুকু সফল হবেন-বিএনপি এবং খালেদা জিয়া কতোটুকু অবগত আছেন- এনিয়ে অনেকের কাছেই রয়েছে সংশয়।

যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় কার্যকর এবং তাকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যে যে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়ে গেছে, ঐ স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বেগম জিয়াকে রেখেছে অন্ধকারে। জামায়াতের নৃশংসতা আর নিজ দেশের জনগণের সাথে যুদ্ধংদেহী মনোভাব এবং কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিন্দা প্রস্তাবের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের পত্নী খালেদা জিয়ার সীমাহীন নীরবতা তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সাথে সিংহভাগ তরুণ-তরুণীদের করেছে ব্যথিত।

সেনাবাহিনীর টহলের মধ্য দিয়ে সরকারের কঠোর মনোভাবের বিপরীতে জামায়াত শিবির পিছু হটবে-সন্দেহ নাই। তখন বিপর্যস্ত বিএনপির তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বহীন অবস্থায় মাঠে রেখে আরো বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত করার জন্য যারা খালেদা জিয়াকে সত্যের ধারে কাছ থেকে সরিয়ে কাল্পনিক এবং দূতাবাস নির্ভর ও কতিপয় প্রবাসী সংগঠন নির্ভর রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়নে প্রলুব্ধ করে চলেছে, তারাতো থাকবে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার মাঠে বিগত আন্দোলন, অবরোধের সময় কৌশল হিসেবে অনুপস্থিত। তখন কি হবে? বিএনপির লাখো কর্মী সমর্থকদের যারা সরকারের দমন-পীড়নের মুখে ছেড়ে দিয়ে, নেত্রীকে একেবারে একা ফেলে গা ডাকা দিবে-তখন কে নিবে এর দায় দায়িত্ব। কেননা আওয়ামীলীগ আজকে যেভাবে খালি মাঠে গোল দিচ্ছে, এই সব স্যুটেড আর পরিপাটি করে চুল আঁচড়ানো আমলা ও অরাজনৈতিক ট্র্যাক রেকর্ডধারী আধুনিক নেতারা তখনো ফাঁকা মাঠে আওয়ামীলীগকে গোল পোষ্টে পর্যন্ত বল ঢুকিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবে- তা অনেকটাই পরিষ্কার।

গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা-শুনতে যেমন ভালো, আন্দোলনের জন্য নয়া এক মাত্রা। সব চাইতে ভালো হতো খালেদা জিয়া যদি তৃণমূলের প্রতিনিধি সভা ডেকে আন্দোলনের কৌশল জেলায়, উপজেলায় ভাগ ভাগ করে দিয়ে সমন্বিত আন্দোলনের রূপ রেখা হিসেবে প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে এক কেন্দ্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতেন, তাহলে তা সংবাদ সম্মেলনের এই একদিনের বাড়তি প্রচারণার চাইতে লক্ষ গুণ এফিক্টিভ এবং আওয়ামীলীগ সরকারের কম্পন ধরানোর জন্য যথেষ্ট হতো।

কিন্তু জনগণ আরো বেশী আশ্বস্ত হতো যদি খালেদা জিয়া তার প্রেস ব্রিফিং এ দেশ ব্যাপী তাণ্ডব, রেল লাইন ধ্বংস, বাসে রেলে আগুনে পুড়ে লাশ হওয়া জনগণ আর ব্যবসা বাণিজ্যের ধ্বংসের বিপরীতে দুচারটি ইতিবাচক বক্তব্য রাখতেন। চেয়ারপার্সনের বক্তব্য যারা তৈরি করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে সেই সব বিষয় এড়িয়ে গেছেন বলেই মনে হচ্ছে।

বিগত সময়ে জনগণ দেখেছে, খালেদা জিয়াও দেখেছেন অবরোধ ডেকে রিজভী আহমেদ ছাড়া(জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত)মাঠেতো নয়ই, বিএনপি অফিসে যাওয়ার মতো একজন নেতাকে জোর করেও নেয়া সম্ভব হয়নি।যৌথ বাহিনীর তাড়া খেয়ে এখন এই সব নেতারা কে কোনদিকে যাবে তারও রয়েছে বিরাট প্রশ্ন।

০৪) আর এরশাদের ভূমিকায় অনেকেই আহ্লাদে আটকান। কিন্তু একটা কথা খুব সচেতনতার সাথে জেনে রাখা ভালো, এরশাদ দিল্লী ও র-এর ছকের বাইরে তার জীবনের একটি দিনও সে পার করেনি। এমনকি এরশাদ তার খাবারের মেন্যু পর্যন্ত হজম করে তাদের ছকে(এটা কূটনীতিক পাড়ায় অনেকেই মজা করে বলে থাকেন)। মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে বাংলার দামাল ছেলেরা যখন একের পর জান দিয়ে চলছিলো, এরশাদ তখনো দেরাদুনে আরামে আয়েশে ছিলো। স্বাধীনতা পূর্বে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এরশাদের ভূমিকা আর বিনা বাধায় সাত্তার সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতারোহন এবং রাজীব গান্ধীর বিশেষ আনুকূল্য লাভ, ৯০ এর অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা থেকে পদত্যাগের পর সাহাবুদ্দিনের সরকার যে দেশটির অনুরোধে বিশেষ কোন শক্তিশালী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি- আজ পর্যন্ত এরশাদ তাদের নির্দেশ মতোই সকল খেলা খেলে চলেছে। এরশাদের এই খেলা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের পর থেকেই। এরশাদকে নিয়ে র- যেভাবে খেলতে চাইবে, এরশাদ সেভাবেই খেলবে।কাজী জাফরের ভূমিকাও অনেক প্রশ্নবোধক। সহজেই কাজীকে এখনি সমীকরণের খাতায় নিয়ে আসাটাও ঠিক হবেনা। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সব চাইতে বড় বড় অস্র ব্যবহার করেও নির্ধিধায় পার পেয়ে যাচ্ছেন-অথচ বাংলাদেশের সাধারণ কোন কর্মীও আওয়ামীলীগের কঠিন সমালোচনা করে জান বাঁচানো মুস্কিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই কাদের সিদ্দিকী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আর দেশের দুর্দিনের সময় প্রণব বাবু আবার এই কাদের সিদ্দেকীকে সেবা যত্ন করেছেন দিল্লী নিয়ে। এরশাদ ছক, কাজী জাফর, কাদের সিদ্দেকীর ছক- রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে কেন জানি একই সূত্রের গাঁথা বলে মনে হচ্ছে। একজন যখন কঠিন হন, অপরজন তখন নরম হন, তৃতীয় জন তখন ডিগবাজী দেন- ত্রিভুজ খেলায় র-বড় ওস্তাদ। আইএসআই ভালো করেই জানে বলেই এবারকার ঢাকা মিশনে সুবিধা করতে পারছেনা। তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে বেছে নিয়েছে জামায়াত-শিবির-হেফাজতকে।

বিএনপির বড় অস্র তারেক রহমানের তৃনমূলের রাজনৈতিক দর্শন-

বিএনপির সব চাইতে বড় ব্যর্থতা, তাদের এসেট তৃণমূলের নয়া রাজনৈতিক দর্শনের রূপকার তারেক রহমানের রাজনীতি ধারণ,লালন ও পরিশীলন করতে চরমভাবে ব্যর্থ। তারেক রহমানের তৃণমূলের নয়া রাজনীতির দর্শন বিএনপির বাইরের শক্তির চাইতে ভেতরের ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী এবং অ-মুক্তিযোদ্ধাদের অংশই সব চাইতে বড় বাধা। খালেদা জিয়া এই অরাজনৈতিক শ্রেণীর ফ্রেমে সূক্ষ্মভাবে পেঁচিয়ে আছেন। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি সারা বাংলাদেশে ম্যাজিকের মতো কাজ দিতো, যদি তারেক জিয়ার নয়া এই দর্শন-তৃণমূলের রাজনীতিকে বিএনপি এগিয়ে নিতো। স্বচ্ছ, ত্যাগী, দক্ষ রাজনৈতিক নেতা আর তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনকে আরো উন্নত ও আধুনিক এবং যুগের চাহিদার সাথে সমন্বয় সাধন করে বিএনপি এগিয়ে গেলে সেটাই হতো খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় ফিরে আসার মোক্ষম অস্র এবং জামায়াত শিবিরের তাণ্ডবের বিপরীতে সুন্দরের সহাবস্থান। আওয়ামীলীগের রাজনীতির বারোটা বাজানোর জন্য খালেদা জিয়ার কাছে অন্য কিছু বিকল্প আছে কি ?

যেমন করে বলেছিলাম- এরশাদের অবস্থান জানা যাবে জানুয়ারির শেষের দিকে, তার আগেই এরশাদ …ভিডিও


25th December 2013.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *