স্থান কেবিনেট কক্ষ
মন্ত্রী সভার বৈঠক। তবে আগের মতো নেই ঝাঁক ঝমক, নেই সেই তরুণ-বৃদ্ধদের সমারোহ। এখনকার মন্ত্রী সভা অবশ্য তারকা রাজনৈতিক আর চটকদার বক্তাদের সমন্বয়ে গড়া।তবে মজার ব্যাপার সাধের জাপার শীর্ষ মন্ত্রীরা অনুপস্থিত, নাটকের পর নাটক চলছে। পিন পতন নীরবতা।
মন্ত্রীসভার নেতা বৈঠকে জানালেন নির্বাচন হবেই। সবাইকে নির্বাচনী কাজে আরো উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিলেন। রুটিন মাফিক কাজ করলেন। যথারীতি মন্ত্রী পরিষদ সচিব সাংবাদিকদের ব্রীফ করলেন। এই পর্যন্ত কোন চমক ছিলোনা।
বোমা ফাটালেন টুকু, কামরুল:
মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মন্ত্রীপরিষদ নেতা বললেন যুদ্ধাপরাধীর রায়ে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসি আজ রাতেই কার্যকর করা হবে।মন্ত্রীপরিষদের নেতা এই পর্যন্ত বললেন, কিন্তু কথা শেষ না করেই সভা শেষ করলেন।এখানেই নেতা তার চাল উহ্য রাখলেন। বরাবরের মতোই গেইম খেললেন।কারণ তিনি জানেন, ৪২ বছর আর তার আগে পাকিস্তানের ২৩ বছর যুদ্ধাপরাধীদের নেতারা বাংলাদেশ ও বাঙালির সাথে খেলেছে।অনেক খেলা, যে খেলায় বঙ্গোপসাগরের নোনা জল বেড়েছে, স্ফীত হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে বাঙালির চোখের পানি।আকাশ বাতাস ভারী হয়েছে লাশের স্তূপে, স্বামী হারা বোন, সন্তান হারা মা, ছেলে হারা পিতার চোখের পানিতে বাংলা হয়েছে শুধু সিক্ত। অনেক রক্তের ঋণ দিনে দিনে জমা হয়েছে শুধু। অপরাধী বীর দর্পে সেই কান্নার রোলে বাঁশী বাজিয়েছে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে। বাংলাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, বলেছে স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম গণ্ডগোল আর অসহযোগের মতো শব্দ জুড়ে তাচ্ছিল্য করে দৃষ্টতা দেখিয়েছে। অনেক সাফাই গেয়েছে। লরেন্স লিফসুলুৎস যখন এ লিগেসী অব ব্লাড লিখে সব প্রকাশ করে দেয়, তখনো বলে এ গণ্ডগোলের ইতিহাস না লেখা, না পড়াই ভালো। তবুও একবারের জন্যেও বলেনা, অতীত বড় ভুল আর ভুলে ভরা রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য অনুতপ্ত।তাই মন্ত্রী পরিষদ নেতা ভাবেন, ৪২ বছরের সেই খেলার সাথে একটু হিসেবি খেলা না খেললেই নয়। বেছে নেন টুকু কামরুলকে। জানেন, আর যাই হউক এই দুজন শত চেষ্টা করেও হজম করে রাখতে পারবেনা। প্রেসকে জানাবেই। মন্ত্রী পরিষদ নেতা এটাই চান-যুদ্ধাপরাধীদের সেনাপতি আইনজীবী, সাইবার আর্মি, বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের সাথে মন্ত্রীপরিষদ নেতা ফাঁদ পাতলেন।ফল হলোও তাই। অফিসে ফিরেই মন্ত্রী টুকু, কামরুল সাংবাদিকদের ডেকে বোমা ফাটালেন। জানিয়ে দিলেন আজ রাতেই ফাঁসী হবে কাদের মোল্লার। সেজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
ব্যারিস্টার মাহবুব আর রাজ্জাক লুফে নিয়ে ব্রেকিং নিউজ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন-
মন্ত্রী পরিষদ নেতা দেখলেন, তার পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বিএনপির মাহবুব এবং জামায়াতের রাজ্জাক। দুজনেই আন্তর্জাতিক মুরুব্বীদের পরামর্শ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন কি করে ফাঁসি স্থগিত করে দেয়া যায়।আমেরিকায় বসে টবি কেডম্যান ইমেইল, টেক্সট বার্তার পর বার্তায় বিশ্বব্যাপী নেট ওয়ার্ক সক্রিয় করে তুলেন উল্কার বেগে।মন্ত্রী টুকু ও কামরুল অতি উৎসাহী হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেন। মন্ত্রী পরিষদ নেতা জানেন, আজ রাতে ফাঁসী হচ্ছেনা। আজ রাত ড্রেস রিহার্সাল। প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোন রাষ্ট্র কখনো আসামীর ফাঁসীর দণ্ড কার্যকর করেনা। যেমন করেনি কর্নেল তাহেরের ফাঁসীর দণ্ড মরহুম জিয়াউর রহমানের সরকার। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সরকারও করেছে আচমকা, যদিও প্রস্তুতি থাকে আগে থেকে।
সরকার জানে, রাজ্জাক যদিও খ্যাতিমান আইনজীবী, সাথে মাহবুবও খ্যাতিমান ও দক্ষ।কিন্তু যুদ্ধাপরাধ মামলা হ্যান্ডলিং এ কারো নেই কোন ট্র্যাক রেকর্ড। নেই কোন উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রকাশনী কিংবা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা। অতি আত্মবিশ্বাস আর নিজের উপর অধিক রাজনৈতিক প্রেসার ও কনফিডেন্স নির্ভরতার খবর সরকারের নখদর্পণে। সেকারণে যে ব্যারিস্টারকে নিয়ে সরকারের এই সিগন্যালের খেলা ধরতে বা বুঝে নিতে সক্ষত হতেন, সেই নাটের গুরু মওদুদ আহমদের সাথে সকল যোগাযোগ ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। মওদুদ যদি জেলের বাইরে অবস্থান করতেন, তবে একই শ্রেণীর রাজনৈতিক গেইম খেলার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে সরকারের এই পাতানো ফাঁদ সহজেই বুঝে নিতেন।
মন্ত্রী পরিষদ নেতা জানেন, কাদের মোল্লার রায় যদিও উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন, তথাপি আইসিটি এক্টের গ্যাঁড়াকলে পরে সংসদ নেতা আইনি জটিলতার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নিজের কাঁধে চাপ নিতে চাননা।
সংসদ নেতার এক পাতানো ফাঁদে যেমন রাজ্জাক-মাহবুব তড়িঘড়ি করে পা দেন, জামায়াতের আন্তর্জাতিক লবিষ্টের সহায়তা নাভি পিল্লাইয়ের ষ্ট্যাটম্যান্টও দ্রুত চলে আসে। সংসদ নেতা তখনো অবিচল। নিজের পাতানো ফাঁদ ও ছক ভালমতোই কাজ করছে দেখে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন।
ফাঁদে পা দিয়ে রাজ্জাক মাহবুব ছুটে চলেন বিচারপতির বাসভবনে-
ব্যারিস্টার রাজ্জাক ও মাহবুব ভাবেন, কোন মতে চেম্বার জজের বাসায় পিটিশন সাবমিট করা গেলেই ফাঁসি স্থগিত হয়ে যাবে। রিভিউ পিটিশনের শুনানির অজুহাতে সুপ্রীম কোর্টের শীতকালীন ছুটির ফাঁদে ফেলে ফাঁসি অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করার ব্রেকিং নিউজ নিয়ে নিবেন। জেল থেকে বের হওয়ার আগেই মোবাইলে এমন সংবাদ পেয়েই কাদের মোল্লার পরিবার ভি চিহ্ন প্রদর্শন-সবই একই সূত্রে গাঁথা। ব্রেকিংও নিয়েছেন। এটর্নীও জানেননা রিভিউ সুযোগ কেন দেয়া হচ্ছে। তিনিও বিচলিত বোধ করেন।ইতিমধ্যে প্রধান জেল সুপারের বদলি আদেশ কার্যকর হয়ে যায়। সরকার চাচ্ছে, রাজ্জাক মাহবুব সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ দায়ের করুক, আইসিটি আইনতো পরিষ্কার। মামলা খারিজ হবে, সুপ্রিম কোর্টের উপর ভর করে আইনের লেবাসেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে মন্ত্রী পরিষদ নেতার ফাঁদ মাহবুব রাজ্জাক যখন বুঝতে পারেন, তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। ততোক্ষণে কাদের মোল্লার মাথায় কালো টুপি পড়িয়ে দেয়া হয়ে যায়। তবে যাবার আগে জেনে যান তার আইনি টিম আজকের যুগে বড় দুর্বল ও অতি রাজনৈতিক, যতটানা যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিষয়ে হওয়া উচিৎ ছিলো, ততোটা নয়। মওদুদের অনুপস্থিতি হাড়ে হাড়ে টের পেলেন, মওদুদ থাকলে টিএইচ খান উপস্থিত হতেন।টিএইচ খান গেলে জমির উদ্দিন যেতেন। রিভিউ পিটিশনে শক্ত যুক্তি তর্ক হতো, অন্তত: কালক্ষেপণের সুযোগ পেয়ে যেতেন কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই। সুপ্রিম কোর্টের ফায়সালা না হলে দণ্ড কার্যকর হতোনা-যাবার আগে তাও যেমন জেনে গেলেন, একই সাথে বুঝে গেলেন, যে বিএনপির জন্য এত কাট খড় পোড়ালেন, নিজের বিপদের দিনে সেই দল ও তার নেত্রী আজ আর তার পাশেতো নেইই, রাজনৈতিক সৌজন্যতা বশত একটা বিবৃতি দেয়ার মতো সৎ সাহসও সেই বিএনপি হারিয়ে ফেলেছে, মৃত্যুর আগে বড় অসহায় ভাবে সেই দৃশ্য অবলোকন করে গেলেন।
কারণ বিএনপি ও জানে, আওয়ামীলীগও জানে, পাকিস্তানও জানে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, তুমি যে দেশে থাকো, সেই দেশের প্রতি আনুগত্য করো, সেই দেশের নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা মুমিনের কর্তব্য।মৃত্যুর আগেও সেই প্রিয় দেশটির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেও সম্মান ও আনুগত্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েও কাদের মোল্লা করলেননা।শেষ মুহুর্তেও মওদূদীর ভ্রান্ত ইসলামী নীতি আর পাকিস্তানের অখন্ডতার প্রতি বিশ্বাসভাজন বাংলাদেশ ও বাঙালির প্রতি চিরন্তন ঘৃণার প্রকাশ বৈ আর কিছু নয়।
খালেদা জানেন-
খালেদা জানেন আন্দোলনের তুঙ্গে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসলে যুদ্ধাপরাধ মামলার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দেয়া যাবেনা। আর ঘোষিত রায় বাস্তবায়নে তার উপরও চাপ আসবে। খালেদা তাই যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় বাস্তবায়ন করে জোটের মিত্রদের বিরাগভাজন যেমন হতে চাননা, একই সাথে জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিব্রত করতে চাননা। খালেদাও চান আওয়ামীলীগের ঘাড়ে যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর দেখতে। কেননা আজ হউক কাল হউক রাজনীতির ময়দানে ও সরকারের কার্যক্রমে খালেদা জিয়াকেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কঠোর হতেই হবে। খালেদা চান রেখে যাওয়া পূর্বসূরিদের কার্যক্রম জাতীয় ঐক্য ও চেতনার ভিত্তিতেই এগিয়ে যাক।এই মুহূর্তে নিজের অবস্থান পরিষ্কারে জোটের মধ্যে যেমন টানাপোড়েন শুরু হবে, আন্তর্জাতিক মুরুব্বীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে।
ক্র্যাচের কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ও সমর সেনের ব্যর্থ হাইজ্যাক-
জিয়াউর রহমান যখন তারই মুক্তিদাতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার তথাকথিত সাজানো মামলার মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিলেন, তখনো সারা বিশ্ব ও এমনেষ্টিওয়ালারা প্রতিবাদে সোচ্চার এবং ফাঁসি না দিতে অনুরোধ করেছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচাইতে শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং তরুণ-তরুণীদের সর্ববৃহৎ অংশের ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে জাসদ ও তাদের সামরিক সংগঠন গণবাহিনী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও অসম্ভব শক্তিশালী অবস্থানে থেকেও তাদের নেতা ও তাত্ত্বিক ক্র্যাচের কর্নেল তাহেরকে রক্ষা করতে পারেনি। তাহেরের ফাঁসি ঠেকাতে ও তাহের-রব-জলিল-সিরাজুল আলম খানকে সহ অগণিত নেতা-কর্মীকে জেল মুক্ত করতে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার সমর সেনকে হাইজ্যাকের পরিকল্পনা নিদারুনভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার তড়িঘড়ি করে তাহেরকে রাতের অন্ধকারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে, রব-জলিল-সিরাজুল আলম খানকে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড প্রদান করে। সেদিন তাহেরের ফাঁসিতে জাসদ এবং গণবাহিনী কুষ্টিয়া, দিনাজপুর,পটুয়াখালী, সহ সারা দেশে সামরিক শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেক নাশকতা ও প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলো। কেন জানি কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে জামায়াত শিবিরের তাণ্ডব, নৃশংসতা, বোমাবাজি, রাজপথ কেটে দেয়া, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি দেখে ফিরে দেখা সেই ক্র্যাচের কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ও ফাঁসি পরবর্তী রাজনৈতিক ডামাডোলের কথা বারে বার মনে পড়ছে। তফাৎ এইখানে, ক্র্যাচের কর্নেল ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি দেশ মাতৃকাকে পাকিস্তানী হানাদারদের কাছ থেকে মুক্ত করে ছিলেন, আরেক মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টরে বন্ধুত্বের ও পেশাদারী সৈনিকের মহানুভবতা ও রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজের জীবনবাজী রেখে সেদিন মুক্ত করেছিলেন, আর জিয়াউর রহমান সেদিন মুক্ত হয়েই প্রিয় সহকর্মী ও বন্ধুটিকে প্রাণ বাঁচানোর পুরস্কার হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও তাহের আতঙ্ক থেকে মুক্ত করতে। আর আজকে একজন ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক ও পরাজিত রাজনৈতিক দলের নেতা, সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশনে পরাজিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জীবন প্রদীপ চলে যাওয়া- এ দু-এর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তারপরেও রাজনৈতিক দর্শন বিস্তর তফাৎ হেতু বলা যায়, সেদিন যেভাবে জাসদ অসম্ভব শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল হয়েও তাহেরকে রক্ষা ও তাহের হত্যার বদলা নিতে পারেনি, বরং নিজেরা হারিয়ে ক্ষীয় থেকে ক্ষীয়মাণ হয়ে আছে, একইভাবে জামায়াত-শিবির যত আদর্শ ও ক্যাডার ভিত্তিক দল হউক না কেন, অরাজকতা, সন্ত্রাস এবং নিজ দেশের জনগণের সাথে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করে নিজেদের অস্তিত্ব ক্রমেই শেষ হয়ে যাবে, যদিনা তারা ক্রমাগত সন্ত্রাস ও গুপ্ত হত্যা থেকে বেরিয়ে না আসে। কেননা, শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা বড় করুণ এবং নির্মম ও নিষ্ঠুর। এটা যত তাড়াতাড়ি মানতের পারবে, ততো তাড়াতাড়ি তাদের মঙ্গল।
তালেবান, লাদেনের পর মার্কিনীদের বরপুত্র জামায়াত-শিবির-
রাশিয়ান ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর মার্কিনীদের অস্র ও পারমাণবিক বোমা, স্নায়ুযুদ্ধ আর বিশ্ব নেতৃত্বের একচ্ছত্র ক্ষমতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ইন্টারভেনশনের পর, ও মিশরের মোবারকের পতন, সিরিয়ার যুদ্ধাবস্থা বিরাজমানের পরে এখন পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে মার্কিন, ব্রিটিশ কূটনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য আর সমরনীতি সফট ডিপ্লোম্যাসির আড়ালে বাজার খুঁজছে বাংলাদেশের জামায়াত শিবিরের মতো কট্রর ইসলামী অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রবর্তিত ত্বরিকা, সুন্নতের সাথে সাংঘর্ষিক, মওদূদী প্রণীত ইসলামের ধবজব্জাধারীদের, যাতে সহজেই সত্যিকারের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে নিজেদের ফায়দা হাসিল ও মারণাস্র প্রয়োগের গিনিপিগ করা যাবে।আমেরিকা ব্রিটেন সেই ঐতিহাসিক যুগ থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাহহুয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ইসলাম ও কোরআন-হাদিসের বিপরীতে নিজেদের মনগড়া ও সুবিধার আলোকে নানান নামে সেই আগা খান,কাদিয়ানী, আহমদিয়া, মুসলিম জামায়াত, ইত্যাদি নামে বেনামে অঢেল টাকা পয়সা ও নানা কৌশলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত ও ঈমান লুটে নেয়ার জন্যে, তথা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নত-ত্বরীকার বিপরীতে ইসলামিক নামকরণে মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার নানা কসরত অনবরত করে যাচ্ছে। সেই একই ধারাবাহিকতায় আজকের প্রেক্ষাপটে তালেবানী, লাদেন তৈরি করে খতম হয়ে যাওয়ার পরে, নতুন করে ইসলামিক শক্তি খুঁজতে আজ জামায়াত শিবিরকে প্রচ্ছন্ন সাহস, শক্তি, সমর্থন, ইত্যাদি করে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে জামায়াত-শিবিরের সার্টিফিকেটে ব্রিটেন আমেরিকায় সেটেলড এবং লোভনীয় রাজকীয় লাইফের ছক নিয়েই ব্রিটেন আমেরিকার দূতিয়ালি জামায়াত শিবিরের পেছনে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। কেননা ব্রিটেন আমেরিকা জানে, লাদেনকে তৈরি করে যেভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ধোয়া তুলে খতম করা গেছে, জামায়াত শিবিরকেও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদের শত শত বোম্বিং ফাইটার আর মাউন্টেন বাহিনী দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আরো বেশ কিছুকাল বাংলাদেশের জনগণের জন্য দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই কপালে জুটবেনা, যদিনা এখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব অত্যধিক দক্ষ ও প্রফেশনাল ভাবে সমগ্র রাজনীতি ও কূটনীতিকে হ্যান্ডিলং না করে।
আনন্দ বাজার, নয়াদিল্লী, নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি আর বাংলাদেশ-(চলবে)
salim932@googlemail.com
15th December 2013.