রব,কাদের,মান্না,কামাল,বি চৌধুরী, সুলতান,ইউনুস-এখন কোথায় ?

রব,কাদের,মান্না,কামাল,বি চৌধুরী, সুলতান,ইউনুস-এখন কোথায় ?

সব সময় যারা পরিশুদ্ধ ও সংবেদনশীল রাজনীতি ও নতুন দিনের কথা জনগণকে শুনান, নতুন বার্তা জনমনে ছড়িয়ে দেয়ার উদগ্র বাসনা নিয়ে দিন রাত পত্রিকা, টক শো আর মিডিয়া অঙ্গন মাতিয়ে রাখেন, গনতন্ত্র ও উন্নত আদর্শ ও জীবনের কথা বলেন- সেই আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডঃ কামাল হোসেন, নুরে আলম সিদ্দিকী, সারা বিশ্ব চষে বেড়ানো, বক্তৃতা দিয়ে সারা বিশ্বকে মাতিয়ে রাখা-সেই ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস, ডাঃ বি চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সহ হালের কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি, ব্যারিস্টার পার্থ, মাহি বি চৌধুরী, শিক্ষক ডঃ আসিফ নজরুল, সাংবাদিক টকশোর বক্তা নূরুল কবির, ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, বয়োবৃদ্ধ বিবেক ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম সহ আরো অনেকেই যারা জাতিকে সারাক্ষণ নসিহত করেন, নতুন নতুন নীতি বাক্য শুনান, নতুন দিনের কথা বলেন- তারা আজ কোথায় ? জাতি জানতে চায়, তাদের বক্তব্য।

বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, কারো অঙ্গ রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব জাতীয় পতাকা, নিজস্ব পরিচিতি- হতে পারে এ জাতি গরীব এবং নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত। কিন্তু সেই সুদূর কাল থেকে ইতিহাসের নানা যাত্রাপথে ও ঐতিহাসিকভাবে জাতির ক্রান্তিকালে এই জাতি ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে বিদেশী সকল হায়েনা আর জংলী শাসনের বিরুদ্ধে এক সাগর রক্ত আর বাঙালির তাজা প্রাণের শহীদের বিনিময়ে আজ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম এক রাষ্ট্র।এটা এখন আর কেউ জোর করে মুছে দিতে পারবেনা, সম্ভবও নয়।

ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে আমাদের জাতীয় এই সব নেতৃত্বের রয়েছে অসামান্য ঐতিহাসিক ভূমিকা।

কিন্তু বড় আফসোস স্বাধীনতার ৪২ বছরের মাথায় এসে এই সব জাতীয় নেতৃত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা আর আজকের তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্বরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে এসে জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে পাকিস্তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসাংবিধানিক, অরাজনৈতিক, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত রাষ্ট্রীয় আচরণের প্রতিবাদ করার মতো সৎ সাহসও আজ যেন উনারা হারিয়ে ফেলেছেন।

নাহলে এতোবড় ধৃষ্টতা পাকিস্তান দেখালো, আর আমাদের জাতীয় বীর সেই সব মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসী ও অমিত তেজী সৈনিকেরা আর আজকের টকশোর জনপ্রিয় বক্তারা জাতীয় এই ইস্যুতে নীরব কেন ? জাতি জানতে চায়।

একজন কাদের মোল্লার জন্য পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ রাষ্ট্রীয় ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শোক প্রস্তাব পাশ করে, বাংলাদেশ আক্রমণ করার ঔদ্ধত্য দেখায় পরাজিত পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী, আর তেহরিক নামক সন্ত্রাসী সংগঠন বাংলাদেশ দূতাবাস উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়- আর আমাদের বীর মুক্তি সৈনিকেরা আর জাতির বিবেকেরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ আর বিরাজমান রাজনৈতিক ডামাডোলের অবস্থানের প্রেক্ষিতে থাকেন নীরব-জাতি তখন হতাশ হয়।বাংলাদেশ তখন লজ্জায় মুখ লুকায়।

পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা মানেই শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানো নয়। শেখ হাসিনার যত দুষ-ত্রুটি থাকুক, সেটা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ মোকাবেলা করবে।

ইতিহাস শেখ হাসিনার কাজ ও আওয়ামীলীগের কর্ম ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করবে, বিচার করবে।

কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধিতা করতে গিয়ে আজকে ১৯৭১ সালে পরাজিত সেই পাকিস্তান তাদের পরাজিত ও বর্বর মানসিকতা নিয়ে আজকে যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে, জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করে, তখন একজন বাঙালি, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ, একজন টেলিভিশনের টকশোর বক্তা প্রতিবাদ না করে নীরব থাকতে পারেননা।

কেননা যারা বা যেই সব রাজনীতিবিদেরা ও মুক্তিযোদ্ধারা নতুন রাজনীতি, দেশ পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলেন, তারা অবশ্যই পাকিস্তানের এই ঘৃণ্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ সমর্থন করতে পারেননা কিংবা নীরব দর্শক হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারেননা।

পারেননা এই কারণে, পাকিস্তানের এই নিন্দা প্রস্তাব, আমার বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও (জীবিত এবং মৃত) অপমান করেছে।

পাকিস্তানের নিন্দা প্রস্তাবের বিপরীতে শেখ হাসিনা যেমন সাহসের সাথে দাঁড়িয়েছেন, একজন বিরোধীদলীয় নেত্রী, একজন নেতা হিসেবে সমগ্র বাঙালি এক হয়ে সোচ্চার হয়ে ম্যাসেজ দেয়া প্রয়োজন- বাঙালি প্রয়োজনের মুহূর্তে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার। এজাতি বীরের জাতি, বার বার তাই প্রমাণিত হয়েছে। কারো তর্জনী, গর্জনী এজাতিকে দমিয়ে রাখা যাবেনা।

ইতিহাস স্বাক্ষী, সেই পাল আমল, মোঘল শাসন, সম্রাট বাবর, আওরঙ্গজেব, তিতুমীর, বখতিয়ার খিলজী, ব্রিটিশ শাসন এবং বাংলার শেষ নবাব সিরাজ উদ দৌলা, পাকিস্তান আমল সর্বদাই ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে নৃতাত্বিক জগতের এই বাঙালির উত্থান ধাপে ধাপে উন্নীত হয়ে ৭১ এ নব জাগরনের উন্মেষ ঘটিয়ে বিশ্ব সভায় নয়া এক জাতির জন্ম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পুরোভাগে ছিলেন বাঙালির সেই অমিথ সাহসী যোদ্ধা শেরে বাংলা ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী হয়ে তরুণ সফল বিশ্ব রাজনীতির নয়া দিকপাল, যার অঙ্গুলি হেলনে একটি জাতির আত্মপ্রকাশ, হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু্র রহমান এবং তাকে ঘিরে তরুণ ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, প্রয়াত আবদুল কুদ্দুস মাখন আর রনাঙ্গনের সফল নায়ক মরহুম কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানি, এ কে খন্দকার, আমি মেজর জিয়া বলছির মরহুম জিয়াউর রহমান, প্রয়াত কর্ণেল তাহের, মরহুম মেজর জলিল সহ আজকের ইতিহাসের সেই সব বীরেরা এখনো জাতিকে নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের সীমাহীন এই নীরবতা ও ক্রমাগত রাজনৈতিক বক্তব্যে যতোটানা সরব, কেন জানি এই প্রশ্নে এখন অধিকতর নীরব এক দর্শক-যা জাতিকে অবাক ও বিস্মিত করে তুলে। এই কি আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব ও বীরদের বর্তমান অবস্থান? জাতি তাহলে সঠিক রাজনৈতিক পথ কিভাবে দেখবে ?

লন্ডনের গণজাগরণ মঞ্চ আর ৭১ সংগঠন একাত্তরের ন্যায় ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে জানান দিয়েছে, প্রবাসী বাঙালিরা আজো মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় অনড় এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার। যেমন সোচ্চার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর।

পাশের দেশ ভারত এবং তার রাজনৈতিক দল এবং বহুধা বিভক্ত জনগণ তাদের কূটনীতিক দেবযানীর হেনস্থায় মার্কিনীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার, অথচ আমাদের রাজনৈতিক দল এবং জনগণ দেবযানীর চাইতেও বাংলা মায়ের পবিত্রতা ও মর্যাদার প্রশ্নে পাকিস্তানের অরাজনৈতিক ও অযাচিত আচরণের প্রতিবাদ করারমতো সৎ সাহস যখন হারিয়ে ফেলেন, তখন বুঝে নিতে হয় জাতি হিসেবে আমরা কতো অধঃপতনের দিকে ধাবিত হতে চলেছি।

আইএসআই এর টাকায় যেসব রাজনৈতিক নেতাদের আর মিডিয়াওয়ালাদের প্রকাশনী ও জীবন জীবিকা চলে, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু প্রতিনিয়ত যারা নতুন বক্তব্য ও নতুন কথা বলেন, জাতিকে উদ্দীপ্ত করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজী রেখে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে খালি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার ঐ লাল সূর্য ছিনিয়ে এনে বাঙালি জাতিকে নতুন একটি দেশ, নতুন একটি পতাকা, নতুন একটি সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছিলেন-তারা কেন আজ এই প্রশ্নে মাছের মতো মিন মিন করে এড়িয়ে চলছেন ? তবে কি বীর বাঙালি প্রতিবাদের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে ? বিএনপি এবং প্রধান বিরোধীদল হিসেবে পাকিস্তানের এই নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করা উচিৎ। মাননীয় নেত্রী আর নিরব থাকার সময় এখন নয়।

মনে রাখা দরকার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করা মানেই গোটা পাকিস্তানের জনগণের বিরোধিতা করা নয়। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং রাও ফরমান আলী ও টিক্কাখানের দুষর সেই নিসার আলী ও প্লে বয় খ্যাত ইমরান খান আর পরাজিত মওদূদীর জামায়াতে ইসলামীর অরাজনৈতিক ও নোংরা রাজনীতির বিরোধিতা করা সকল দেশপ্রেমিক বাঙালির নৈতিক দায়িত্ব। এখানে অন্য কোন রাজনীতি বা দেশীয় রাজনীতির বিরোধিতায় জাতি বিরোধী পাকিস্তানের অপরাজনীতির বিপরীতে নীরব থাকা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালির অস্তিত্বের ও নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি-তেহরিক সেকথাটাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

আমরা পাকিস্তানের ঐ বর্বর আচরণের নিন্দা জানাই। জয় হউক বাঙালির, জয় হউক মানবতার।

পাদটিকাঃ3659_f5.jpg পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দ্য নেশান গতকাল এবং আজকে এক্সপ্রেস ট্রাইবুন তাদের সম্পাদকীয় ও বিশেষ রিপোর্টে পাকিস্তানের এই অপরাজনীতির সমালোচনা করে বলছে, পাকিস্তানের অতীত রাজনীতির জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।দ্য নেশন পাকিস্তানের বর্তমান ভুমিকাকে ভুল হিসেবে তুলে ধরে সমালোচনা করেছে।

২০ ডিসেম্বর ২০১৩ .

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *