চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফের মৃত্যুদণ্ড রায় হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ব্রিটেনের সর্বাধিক প্রচারিত গার্ডিয়ান তাদের অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে চৌধুরী মঈনুদ্দিনের আইনজীবী টমি ক্যাডমেনের সাক্ষাতকার ভিত্তিক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে শুরুতে ব্রিটেনের ভাবী রাজা রাণীর বড় ছেলে প্রিন্স চার্লসের এর সাথে এই দণ্ডিত দুই ব্যক্তির ছবি সহ ক্যাপশনে লেস্টারের ইসলামিক সেন্টারের প্রিন্স চার্লসের ভিজিটের সময়ের বর্ণনা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
গার্ডিয়ান লিখেছে, একজন ইউকে বেইসড মুসলিম লিডারকে বাংলাদেশ সেন্টেন্স দিয়েছে, যার আইনজীবী এই ট্রাইব্যুনালকে পক্ষপাতমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ( তার ভাষায় ক্যাঙ্গারু)।
গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, চৌধুরী মঈনুদ্দিন ব্রিটেনে বসবাসকারী ব্রিটিশ সাবজেক্ট এবং ইউ এস সিটিজেন আশরাফকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ডেথ সেন্টেন্স প্রদান করেছে। এই দুজনের অনুপস্থিতে ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করেছে। উভয়েই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৮ ব্যক্তি সহ নয়জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ছয় সাংবাদিক, তিনজন ডাক্তারকে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
মঈনুদ্দিনের আইনজীবী টমি ক্যাডমেন গার্ডিয়ানকে বলেন, “তিনি এই রায়ে হতভম্ব, বিচলিত যদিও গত দুই বছর ধরে এই ট্রাইব্যুনাল যে পদ্ধতিতে চলে আসছে ও বিচার কার্য পরিচালিত করছে, তাতে তিনি এর স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বিগ্ন” বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল এবং বাংলাদেশ গভর্ণম্যান্ট যে ভাবে বিচার কার্য ও রায় কার্যক্রম পরিচালিত করছে, যাতে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সব বন্দোবস্ত করে রেখেছে। কিন্তু ব্রিটিশ আদালত মৃত্যুদণ্ডের মতো বিচারের রায়ের ব্যাপারে এবং ফেয়ার ট্রায়ালের ব্যাপারে কনসার্ন রয়েছে, তাই তিনি মনে করছেননা ব্রিটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।
তার আইনজীবী আরো বলেছেন, ডেথ সেন্টেন্স পাওয়ার পরে এবং পক্ষপাতমূলক ট্রাইব্যুনাল এর স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ ও কোয়েশ্চান থাকায়, তিনি নিজে এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে পয়েন্ট অব অর্ডার উত্তাপন করে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, যাতে তাকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানো হয়-বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের মতো দণ্ড জড়িত থাকায়।
লর্ড কার্লাইল সহ হাউস অব লর্ডসের আট জন সদস্য এবং আন্তর্জাতিক লইয়াররা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ উইলিয়ামকে হেগকে এবিষয়ে ইন্টারভেন করার আহবান জানিয়েছেন, যেহেতু ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে তাদের সকলের বিশেষ কনসার্ণ রয়েছে। টমি ক্যাডমেন এতে আরো যোগ করে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এব্যাপারের আরো অধিক একশন নেয়ারও দাবী” তিনি জানিয়েছেন গার্ডিয়ানে।
টমি আরো বলেন, “আমি জানিনা আর কতো সিরিয়াস হলে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির ঘুম ভাঙবে এই ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্যে।“
মঈনুদ্দিন গার্ডিয়ানের কাছে এব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন। তবে গত মে মাসে তিনি এক স্ট্যাটম্যান্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আনীত প্রত্যেকটি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে গার্ডিয়ান লিখেছে।
গার্ডিয়ান মইনুদ্দিনের ওয়েবসাইট থেকে মন্তব্য জুড়ে দিয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন তার সন্দেহ বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল “ফেয়ার হিয়ারিং, ফেয়ার ট্রায়াল” হবেনা।মইনুদ্দিনের ওয়েব সাইট থেকে গার্ডিয়ান তুলে ধরেছে, তিনি বলেছেন, “১৯৭১ সালে তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতির জন্য কাজ করেছিলেন। পাকিস্তানের ঐক্য ও স্বাধীনতা রাখতে গিয়ে তিনি তার কাজ ও ভূমিকাকে দুষের কিছু দেখছেননা।“
মঈনুদ্দিন আরো লিখেছেন, “তিনি এখনো বাংলাদেশের ঐ ঘটনার ব্যাপারে ইন্টারেস্ট রাখেন এবং বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি কমিউনিটির সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি এবং তার সন্তানেরা তাই “ব্রিটেনকে নিজেদের আবাসস্থল”, “দেশ মনে করেন।“
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বা হোম অফিস এখনো তাকে এক্সট্রাডাইট করার জন্য রিকুয়েস্ট করেনি। তবে ব্রিটেনের আইনে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ থাকায়, মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে ব্রিটেন এক্সট্রাডাইট করবেনা, যদি না হোম সেক্রেটারি যথেষ্ট পরিমাণে আস্বস্থ হন যে, আসামীকে কোন অবস্থাতেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবেনা।
গার্ডিয়ানের কাছে হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এটা একটা লং প্রসেস, এবং এক্সট্রাডাইট করা হবে কিংবা হবেনা অথবা এরকম কোন রিকুয়েস্ট আদৌ প্লেস হয়েছে বা হয়নি-এরকম কোন মন্তব্য করা সঙ্গত হবেনা, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিদ্যমান এক্সট্রাডাইট আইনে একজনকে এরেস্ট করা হয়েছে অনুরোধের প্রেক্ষিতে।
নিউইয়র্কের বাসিন্দা আশারাফুজ্জামান খানও সেন্টেন্স পেয়েছেন এবং এ দুজন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন, যারা পাকিস্তানী সৈন্যদের সহযোগী হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। যার বিচার কার্য পরিচালনা করার জন্য হাসিনার সরকার ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন।
মঈনুদ্দিনের পরিচয় দিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, মঈনুদ্দিন মুসলিম এইডের চেয়ার, ইষ্ট লন্ডন মুসলিম সেন্টার ও মস্কের ভাইস চেয়ার ছাড়াও মাল্টিফেইথ এর হেলথ চ্যাপল্যায়েন্সীর দায়িত্বে রয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও ছাত্র ছিলো বলে গার্ডিয়ান লিখেছে।
মঈনুদ্দিন ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লসের সাথে সাক্ষাত করেছিলো ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে, যখন প্রিন্স চার্লস মার্ক ফিল্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভিজিট করতে গিয়েছিলেন বলে গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
এদিকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিস আহমেদ জেপি এবং ব্যারিস্টার এন ইসলাম জানিয়েছেন, বিদ্যমান আইনেই সাজা প্রাপ্ত আসামীকে এক্সট্রাডাইট করা সম্ভব।গত কিছুদিন আগে চ্যানেল এস এর সাথে এক বিস্তারিত সাক্ষাতকারে উভয় আইনজীবী এক্সট্রাডাইট প্রসেস নিয়ে বিস্তারিত মতামত জানিয়েছিলেন, যা আমাদের সময় ডট কম-এ প্রকাশিত হয়েছিলো।
বাংলা টিভির নিউজ এডিটর মিল্টন রহমান আমাকে জানিয়েছেন, বাংলা টিভির পক্ষ থেকে তার বক্তব্য জানার জন্যে ইতিপূর্বে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাক্ষাতকার প্রদান করেননি।
Salim932@googlemail.com
4th November 2013.london.