যে গল্পের শুরু আছে শেষ নেই: হাসিনা খালেদার রাজনীতি আর হেফাজতের পাকিস্তান বানানোর নির্বাচন

যে গল্পের শুরু আছে শেষ নেই: হাসিনা খালেদার রাজনীতি আর হেফাজতের পাকিস্তান বানানোর নির্বাচন

দৃশ্যপট: পঙ্কজ শরণের বাসভবন-প্রসঙ্গ সমঝোতার নির্বাচন 
হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবে যেমন করে আশার আলো সকল পক্ষের কাছে দেখা দিয়েছিলো, একইভাবে হাসিনার সংবিধানের অপব্যাখ্যাও রাজনীতির অন্ধর মহলে নানা গুপ্ত সূত্রের রেখাপাত টানতে থাকে, যা সকলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে।ডিপ্লোম্যাটিকরা আশার আলো দেখছিলেন, ভাবছিলেন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রস্তাবের সূত্র ধরে স্পেসের মধ্যে খালেদা জিয়া ঢুকে পড়বেন-এমন আশা মার্কিন ও ইউরোপীয়রা যখন করছিলেন, একই সাথে এই সুযোগে আলোচনার দ্বার খুলে যাবে, কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ ও কৌশল নির্ধারণে জরুরী বৈঠকের করণীয় নিয়ে পঙ্কজ শরণের বাসভবনে নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য মিলিতও হয়েছিলেন।

কিন্তু সকলকে আশাহত করে খালেদার উপদেষ্টারা ইচ্ছে হউক, আর অজান্তেই হউক কিংবা হাসিনার রোষানলে পড়ার ভয় থেকেই হউক, তারা খালেদাকে উপদেশ দিয়ে বসলেন, প্রস্তাবের বিকল্প সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেয়ার। রাজনীতির কূটচালে খালেদার এমন চালে মজীনা হয়ে পড়েন একেবারে হতাশ ও উদ্বিগ্ন।মজীনা তাই দৌড়ে পৌঁছেন পঙ্কজ শরণের বাসায়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর হতাশা নিয়ে পঙ্কজ শরণকে দিয়ে হাসিনার মনোভাব পুরোপুরি জানার চেষ্টা করেন।কিন্তু ইতিমধ্যে যা হওয়ার হয়ে গেছে। রাজনীতির চালে হাসিনা হয়ে পড়েন অপরিহার্য। মার্কিন সংকেত পেয়ে মজীনা চলে আসেন দূতাবাসে।পঙ্কজ শরণের হয়ে খবর পৌঁছে যায় এরশাদের কাছে। এরশাদ সবেমাত্র গণভবন থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত। তার উপর সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যে বিরক্ত ও কষ্ট নিয়ে নিজ রুমে বসেছিলেন। ভারতীয় দূতের টেলিফোনে নড়ে চড়ে বসেন।তারপরের বক্তব্য পরদিন পত্র-পত্রিকায় চলে আসে।

দৃশ্যপটঃস্টেট ডিপার্টম্যান্টঃ (ডেভিডের কার্যালয়)!-প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

প্রভাবশালী মার্কিন কূটনীতিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অত্যন্ত সুন্দর করে উপস্থাপন করে ঘরোয়া এক আলোচনায় বলেছেন, স্টেট ডিপার্টম্যান্ট সব সময় ভিসিবল এবং ইনভিজিবল( আমাদের বাংলায় সহজে দ্বিমুখী নীতি)দুধরনের ডিপ্লোম্যাসি সংকট এবং জরুরী মুহুর্তে প্লে করে থাকে।ভিজিবল রোল যা সকলেই সহজেই দেখতে পারেন, একই প্রশ্নে ইনিভিজিবল রোল-যা খালি চোখে দেখা যায়না, স্নোডেন হতে হয়।বাংলাদেশের আগামীর নির্বাচন এবং এর গণতন্ত্রের প্রশ্নে ভারতের উপর মুরুব্বীয়ানা ছেড়ে দিয়ে বিশ্ব মানবাধিকারের একচ্ছত্র প্রতিভূর ধ্বজাধারী যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে, তা থেকে গতি ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যে, নিজেকে সাফ-সুতরো করার জন্যে ইনিভিজিবল নীতি, দেরীতে একই ক্ষেত্রে প্লে করে থাকে। যেমন করে ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের ক্যাপ্টেন্সী দিয়েও বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিশ্বাসের মাত্রায় নতুন সংযোজন করতে মজীনাকে ক্রান্তিকালে দিল্লী পাঠায়-মার্কিনীরা জানে ততোক্ষণে পদ্মায় অনেক জল গড়িয়ে গেছে, নিজেদের পাতানো খেলায় নিজেরা এন্টি রোল করতে যায়, তাও লোক দেখানো।

 

আর আধ্যক্ষরের প্রভাবশালী এই মার্কিন কূটনীতিক আরো যোগ করেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে, ভারতীয়দের সাথে তাল মিলিয়ে জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন, পাকিস্তানী স্টাইলের রাজনীতি ও তাদের মতে কট্রর পন্থী হেফাজত ও দেওবন্দী রুখতে তারা হাসিনার সরকারকে পাশে পাওয়ার অঙ্গীকার থেকেই আগামীর সরকার ও গণতন্ত্রকে তারা মন্দের ভালো হিসেবে হাসিনার সরকারকেই আশ্বাসে ও কাছে পেতে চায়।এই কূটনীতিক আরো বলেন, ইউনুস কেন্দ্রিক বলয় খুব একটা সাড়া গ্রামে গঞ্জে ফেলতে পারেনি, যতটুকু ফেলেছে হেফাজত ও দেওবন্দীরা।আন্তর্জাতিক পিআর লবিষ্টের বাইরে ইউনুস ম্যাজিক বাংলাদেশের মাটিতে দৃঢ় ভিত্তির উপর না গেঁথে উঠায়, তারাও আর সময় নিয়ে এগুতে চায়, ২০২০ পর্যন্ত মার্কিনীরা অপেক্ষার প্রহরের ক্ষণগণনা শুরু করে দিয়েছে বলে জানালেন।

মজীনার পর এবার দিল্লী যাচ্ছেন এরশাদ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিল্লীর অপরিহার্যতা কতো ভয়াবহভাবে প্রতীয়মান, তা মজীনার দিল্লী গমনের পর এবার এরশাদের দিল্লী যাওয়ার সংবাদই তাই প্রমাণ করে।আগামীর সরকার দিল্লীর গ্রিন সিগন্যাল ব্যতীত ক্ষমতায় আরোহণ যে অসম্ভব- তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

খালেদার গণতন্ত্রের নির্বাচন আর হেফাজত-জামায়াতের পাকিস্তান বানানোর নির্বাচন-প্রভাবশালী ভারতীয় কূটনীতিক

এই অবস্থা যখন চলছিলো, তখনি কূটনীতিকরা আবারো বসলেন গুলশানের এক হোটেলে। লক্ষ্য সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে সকলের অংশ গ্রহণের নির্বাচন। প্রভাবশালী ভারতীয় কূটনীতিক বলেছেন, নির্বাচন অবশ্যই হবে, সেটা ২৪ কিংবা ২৫ শে জানুয়ারি। তাতে কোন সন্দেহ নাই। বিএনপি যেকোন অবস্থাতেই নির্বাচনে আসবে।এটাও একশোতভাগের উপরেও যদি কিছু থাকে তাও সত্যি।মার্কিন কূটনীতিকও একই অভিমত জানালেন।বিএনপির উপরের লেভেলের মনোভাব এটাই। তারা নির্বাচন যেকোন ফ্রেমের মধ্যে করবে।তবে প্রভাবশালী ভারতীয় কূটনীতিক বোমা ফাটানোর মতো করে বললেন, প্রশ্ন হলো, আওয়ামীলীগ নির্বাচন চায়, যেকোন ভাবেই নির্বাচন করবে।জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মোল্লাতন্ত্র আর তালেবানী রুখতে নির্বাচন করবে।প্রশ্নের সমাধান বাংলাদেশীদের করা উচিত তারা কি এসবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিবে, নাকি বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর জন্য আগামীর নির্বাচন করবে? একেতো প্রভাবশালী, তার উপর আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যার বই বহু কূটনীতিক ও এম্বাসাডারের জন্য সহায়কগ্রন্থ হিসেবে কোরামনের মতো কাজ করে-তিনি যখন এমন মন্তব্য সোজা-সাপ্টা করে বসলেন, একেবারে কূটনীতিকদের সভায়, তখন কেউ আর টু শব্দটিও করার ছিলোনা। কেননা, এমন বক্তব্য তিনি সাধারণত: করেননা আবার কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া এখন পর্যন্ত তিনি কোন বক্তব্য-বিশ্লেষণও করেননা। তাই সকলেই একেবারে চুপসে যান।তিনি আরো বললেন, বাংলাদেশের জনগণকে ডিসাইড করতে হবে, তারা কি গণতন্ত্র চান নাকি দেশকে পাকিস্তান বানাতে চান?

বিএনপির আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশ্লেষক:

হাসিনা জানেন, বিএনপি যেকোন অবস্থাতেই হাসিনার অধীনে হলেও নির্বাচনে আসবে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি বিপুলভোটে জয়লাভ করবে।হাসিনার ভয় মূলত এখানেই-মার্কিন কূটনীতিক তাতে সায় দিলেন।ব এবং এন এর সমাভিব্যবহারের নামের বিএনপির এই তাত্বিক আরো বললেন, হাসিনা একথা জেনেশুনেই, আগাম তথ্যের উপর ভরসা করেই, তিনি নির্বাচনের শিডিউল যথাসময়ে ঘোষণা করতে নানা ফন্দি-ফিকির করে দীর্ঘায়িত করছেন। খালেদা হাসিনার এই কৌশল বুঝতে পেরেই মূলত: হার্ড লাইনে সরাসরি যেতে ইতস্তত করে আছেন।হাসিনা যেকোনভাবেই চাচ্ছেন, বিএনপি হাসিনার চালে ভুল করুক, কঠিন আন্দোলনের কর্মসূচীর দিকে চলে যাক।কেননা, হাসিনার একটাই লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকারে ফিরে আসা। সেজন্যে তিনি খালেদা ও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এরশাদ গংদের নিয়ে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা খেলে জয়ী হয়ে আসতে চান। কিছু কূটনীতিক এতে না সূচক মতামত থাকেন।তিনি আরো যোগ করেন, মার্কিনীদের চাপে খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসলে মধ্যপ্রাচ্য ও চীন,ইউরোপীয়রা কারচুপির আশংকা করলেও তিনি মনে করেন, আজকের অবস্থায়, হাসিনার সরকার সমস্ত প্রশাসন ইনভলভ করেও এককভাবে কারচুপি করে পার পেয়ে যেতে পারবেননা। আর এখনকার অবস্থায় কতো আর কারচুপিই বা করবেন। লক্ষ ভোটের ব্যবধান হবে একেকটা আসনে, এমন তথ্য তার কাছে রয়েছে বললেন। সেক্ষেত্রে লক্ষাধিক ভোটের উপরে ব্যালটে সীল মেরে বাক্সে ঢুকানো এতো সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।

তৃতীয় মাত্রার রাজনীতিকঃ বিএনপি নয়, আওয়ামীলীগের ভয় হেফাজত আর দেওবন্দী

বিএনপির আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিকের বক্তব্য শেষ হলে পরে তৃতীয় মাত্রার জনপ্রিয় তৃতীয় শক্তির স ম রাজনীতিক বলতে থাকলেন, আওয়ামীলীগের ভয় বিএনপিকে নয়। আওয়ামীলীগের ভয় মূলত হেফাজত, দেওবন্দী আর জামায়াতকে নিয়ে। বিএনপি সম্পর্কে আওয়ামীলীগের কাছে কিংবা অতি সম্প্রতি জয়ের ডেডিকেটেড ১৫ সদস্যের ওয়েব টিমের কাছে তথ্য থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ হেফাজত, দেওবন্দী আর জামায়াতের অগণিত কর্মীদের ব্যাপারের কোন তথ্য নেই।বিজিবি, র্যা ব, পুলিশের ডিবি এব্যাপারের সরকার ও প্রশাসনকে আগাম কোন তথ্যও প্রদান করতে অপারগ বা ব্যর্থ। কেননা এই বিজিবি, র্যা ব, পুলিশের সোর্সদের অধিকাংশই দেওবন্দী আলেম উলামাদের মুরিদ।আওয়ামীলীগের জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে আছে হেফাজত আর দেওবন্দীরা।এরাই বিএনপির সাথে মিলে মিশে যেমন আন্দোলন করবে, একইসাথে ভোটের যুদ্ধে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে সিল মারবে। হাসিনার মূলত সেখানেই ভয়।মার্কিন ও ভারতীয় কূটনীতিক এই তৃতীয় শক্তির ব্যাপারে বরাবর উষ্মা প্রকাশ করলেও তৃতীয় মাত্রার তৃতীয় রাজনীতিকের এই মূল্যায়ন ও তথ্যের জন্য ধন্যবাদ জানালেন এবং একমত পোষণ করলেন।

হাসিনার কৌশলে বিএনপি ধরাশায়ী- সচিব

বাংলাদেশ সরকারের হাই প্রোফাইল কর্মকর্তা উপসংহার টানতে চাইলেন, ২৫ তারিখের সমাবেশ বিএনপি নয়া পল্টনে করার জন্য দ্ব্যার্থহীন ঘোষণা দিয়ে হাসিনার সরকারের কৌশলের কাছে মাথানত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে বাধ্য হয়েছে।তিনি আরো বললেন, হাসিনার সরকার বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে দিবেনা। নয়া পল্টনে করতে দেয়া মানেই আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ভিসুভিয়াসের জন্ম দেয়া।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার মানেই চতুর্দিকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকি গড়ে তুলা যাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখন কেবল সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে, জামায়াত আর হেফাজতের চোরাগুপ্তা হামলা যেমন ঠেকানো যাবে, তেমনি জামায়াত-হেফাজত আর দেওবন্দী দেখে দেখে সনাক্ত করে বন্দী করে জেলে ঢুকানো যাবে।আর সোহরাওয়ার্দীর উদ্যানের সমাবেশের আইন শৃঙ্খলার নিবিড় অবস্থানের মধ্য দিয়ে এই সিগন্যাল সারা দেশেই দেয়া যাবে, যেখানেই গণ্ডগোল, সেখানেই র্যা ব-বিজিবির দ্বারা খবর করা যাবে।(চলবে)

Salim932@googlemail.com
24th October 2013.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *