বাংলাদেশের দুঃস্থ, অসহায়, নিপীড়িত মহিলাদের জন্য সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক ও আইনি কাঠামোর সহায়তা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যে কটা সংস্থা অত্যন্ত নিবিড় ভাবে একেবারে মাঠ পর্যায়ে থেকে প্রান্তিক মহিলাদের সাথে মিলে-মিশে কাজ করে তাদের অধিকার, জীবন-মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে, ব্র্যাক এবং তার সাথে জড়িত একজন বিদুষী মহিলা সীপা হাফিজা অন্যতম।সীপা হাফিজা একাধারে উঁচুমানের শিক্ষায় শিক্ষিত, ব্র্যাকের একজন ডিরেক্টর(জেন্ডার, জাস্টিস, ডাউভার্সিটি এবং মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম) ছাড়াও বিগত ২০১০ সাল থেকে জাতি সংঘ মহাসচিব বান কি মুনের পিস বিল্ডিং ফান্ডের একজন এডভাইসার হিসেবেও কাজ করছেন।
এর বাইরেও তিনি কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের হয়ে, ইউএস ভিত্তিক সিট(গ্রাজুয়েট ইন্সটিটিউট ভারমন্ট)এর একজন ফেলোশিপ হিসেবেও কাজের বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে।বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমীর গভর্নিং বডির একজন মেম্বারও তিনি।
বাংলাদেশের বহুমুখী প্রতিভা আর নারী ও শিশুদের জনকল্যাণে সর্বদা নিবেদিত এই অসীম ধৈর্য্য আর সাহসী বিদুষী এই মহীয়সী সীপা হাফিজা গত সপ্তাহে লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বাংলাদেশের ব্র্যাকের প্রতিনিধিত্ব করে গেলেন। কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই সেমিনার ও ওয়ার্কশপে বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা গবেষক, নারীদের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ কর্মী ও ব্যক্তিত্বদের সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে ১৬ অক্টোবর লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারের এক হোটেলের কনফারেন্স রুমে সীপা হাফিজা কমনওয়েলথ পারস্পেক্টিভঃআইডিয়স ফর এ নিউ ডেভেলপম্যান্ট এজেন্ডা সার গর্ভ ও তথ্য নির্ভর উপস্থাপনা করেন, যা উপস্থিত ৪০টিরও অধিক দেশের প্রতিনিধিদের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে।
অত্যন্ত ব্যস্ত এবং প্রচার বিমুখ বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুদের কল্যাণে কাজে নিবেদিত সীপা হাফিজা একমুহুর্তের জন্য হোটেল লবিতে সাক্ষাতে অনর্গল বলতে থাকেন, কেমন করে ব্র্যাক প্রথম বারের মতো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ড লাভ করলো, গ্রামীণ ও বস্তির মহিলা ও শিশুদের এওয়ারনেস, ফোর্স ম্যারিজ, ডোমেস্টিক ভায়োল্যান্স, কমিউনিটি পুলিশ এবং ঢাকা শহরে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ যাত্রার পথে পুলিশের ভূমিকা ও ফ্রেন্ডলি পরিবেশ কি করে জাগ্রত করা সম্ভব ও সাফল্য-স্ট্যাটিস্টিক ও ডাটা তথ্যের ভিত্তিতে এমন করে তুলে ধরলেন, যেন মনে হলো এই মুহূর্তে আমরা ঢাকা শহরের কোন ব্যস্ততম রাস্তা অতিক্রম করছি দুঃস্থ মহিলা ও পথচারী শিশুদের নিয়ে।
সীপার বর্তমান টার্গেট কি করে ঢাকা শহরের বস্তির শিশিদের যথাযথ প্রক্রিয়া ও নীতি মালার আওতায় নিয়ে এসে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে স্কুলের গন্ডির মধ্যে নিয়ে এসে লেখা পড়ার আওতায় নিয়ে আসা যায় ও কন্টিনিউ এক সার্ভিস প্রদান করা যায়। সাথে সাথে মাও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন, শিশুদের মানবিক ও পরিপুষ্ট সম্মত চর্চা করার ব্যবস্থা করে দেয়া যায়। সে লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ঢাকা শহরের ১৫টির অধিক স্পট বেছে নিয়ে সীপা কাজ শুরু করতে চান, যার আওতায় পুরো ঢাকা শহরের বস্তির মা ও শিশুদের অন্তত স্বাভাবিক জীবন মানের নিশ্চয়তা সমূহ উপলব্ধিতে এনে তাদের উন্নয়নে কাজ চালু রাখা।
সীপা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টম্যান্ট থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে কাজের ফাকে ফাকে ইউএস থেকে ইন্টার কালচারাল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজম্যান্টের উপর পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী ধারী সীপা হাফিজা এক সময় নিউক্যাসল আপন টাইনে ওয়েষ্টহিল গেইট হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।২০১২ সালে আমেরিকা থেকে পাবলিক পলিসি-অন বিল্ডিং এডভোকেসী ক্যাপাসিটর উপর কুমারিয়ান প্রেস থেকে প্রফেসর জেফ আনসিকার এর তত্বাবধানে প্রকাশনী বের হয়েছে। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে এডভোকেসী ক্যাপাসিটি ও পাবলিক পলিসি, বিল্ডিং রিলেশনশিপ ইত্যাদির উপর তার একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
সীপা হাফিজা পারিবারিকভাবে আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জাতি সংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ আব্দুল মোমেন, জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর শাহলা খাতুন, সাবেক সচিব ডঃ এ কে আব্দুল মুবিনের ছোট বোন। সীপার প্রয়াত আব্বা এডভোকেট এ এ হাফিজ ছিলেন একজন বিদ্যুতসাহী ব্যক্তিত্ব, যার তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো আজকের সিলেটের মহিলা কলেজ, বখতিয়ার বিবি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ইত্যাদি। সীপা হাফিজার মাতা ছিলেন প্রয়াত সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী- সিলেটের আওয়ামী মুসলিম মহিলা লীগের নেত্রী, সৈয়দপুরের প্রয়াত জমিদার চৌধুরী আবুল বশরের প্রথম কন্যা।
Salim932@googlemail.com
20th October 2013 .