সারা দেশের জনগণ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। দেশী বিদেশী তিন তিনটি জরিপের ফলাফল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে। জনগণ আওয়ামীলীগ সরকারের অতি দাম্ভিকতা, লুটের মহাউৎসব, ছাত্রলীগের তাণ্ডব আর আলেম-উলামাদের প্রতি বিদ্রূপ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আওয়ামীলীগের উপর নাখোশ। জনগণ আওয়ামীলীগের স্বেচ্ছাচার আর দলীয়করণের একতরফা নির্বাচনেরও বিরুদ্ধে। জনমত কখনোই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা শেখ হাসিনার বা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে-এমন ভাবনা ভুলেও কল্পনাও করেনা।
প্রধানমন্ত্রী যখন জাতির উদ্দেশ্যে এই সর্বদলীয় সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব করেন, বিএনপি এবং ১৮ দলের তখনি উচিত ছিলো সারা বাংলাদেশ থেকে একটাই আওয়াজ তোলা, মানিনা মানবোনা, হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন মানিনা। বিএনপি তা না করে দেরী করে প্রতিক্রিয়া দেয়ার নামে জনমতকেও বিভ্রান্ত করার সুযোগ সরকারি দলের কোর্টে দিয়ে কেমন করে আন্দোলন করবে বোধগম্য নয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেখলাম, সকল নেতাদের চুল এতো পরিপাটি করে আঁচড়ানো-এমন শো-আপ টিভি পর্দায়, আওয়ামীলীগ ঘরানার কাছে কি সিগন্যাল দিয়ে চলেছে ! প্রতিকূল পরিবেশ এবং হাজারো-লাখো বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে অভ্যস্ত নব্বইয়ের আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া কি বুঝতে অক্ষম হয়ে আছেন ? সুন্দর গোছানো কাপড়, স্যুট আর পরিপাটি চুল-টিভি পর্দায় এমন ছবি প্রদর্শনী করা ঐ নেতারা খালেদা জিয়ার নতুন সরকারের আন্দোলন কেমন করে সফল করে তুলবে, সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
খালেদা জিয়া– জীবনে প্রথমবারের মতো ৯০এর আন্দোলনে রাজপথে এসে, ভেঙ্গে পড়া, ক্ষয়িঞ্চু বিএনপিকে নিয়ে সদ্য বিধবা একজন প্রয়াত জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর পরিচয়ে, এমনকি বাঙালি গৃহবধূর শাশ্বত রূপ নিয়ে, শুধুমাত্র আন্দোলনে সৎ ও আপোষহীন দৃঢ় মনোবলের কারণে, সেদিন ৯০ এর আন্দোলনের পীঠে ছুরিকাঘাত করে ১৫ দলীয় জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের সাথে আপোষকরে জাতিকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করে ফেলেছিলেন, ঐ সময় নবাগতা রাজনৈতিক নেত্রী হয়েও, এমনকি ছোট জোট ৭ দলের নেত্রী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের সামরিক বাহিনী আর ডিজিএফআই এর লেলিয়ে দেয়া পেটুয়াবাহিনীর নিপীড়ন আর নির্যাতনের মুখে সারা জাতির জনগণকে আন্দোলনের এক কেন্দ্রে নিয়ে এসে যে বিশাল সাহসী ও ঐকান্তিক স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় চেতনার যে আন্দোলনের সূচনা করে সফলতা নিয়ে এসেছিলেন, সেই আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া আজ নীরব কেন? আপোষহীন জননেত্রীর কণ্ঠ আজ হাসিনার স্বৈরাচারী মনোভাবের ও নীল নক্সার নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে কেঁপে উঠে কেন? খালেদা জিয়া কি আন্দোলনের খৈ হারিয়ে ফেলেছেন ? তা না হলে শেখ হাসিনা বার বার উচ্চারণে যখন সংবিধানের দোহাই আর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, স্যার নিনিয়ানের সেই পুরনো ফর্মুলা, যে ফর্মুলা নিনিয়ান এরশাদের সময় দিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার সময় দিয়েছিলেন, আজকে শেখ হাসিনা ও দিলেন-অথচ সেই নিনিয়ান ফর্মুলা মৃত এক ডেড হর্স ছাড়া আর কিছুই নয়-এমন এক তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের নামে হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব কেন সাথে সাথে প্রতিবাদে সোচ্চার হলেননা ? গোটা বাংলাদেশ যার নির্দেশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে, সেটা খালেদা জিয়া যেমন জানেন, শেখ হাসিনার সরকারের গোয়েন্দা তথ্যও তার আগাম রিপোর্ট দিয়েছে। তাহলে দেশনেত্রী আপনি নীরব কেন? কেন এতো বুঝা পড়া? হাসিনা তার অধীনে নির্বাচন থেকে একচুলও সরবেননা। এটা তাবৎ দুনিয়া এখন জানে। হাসিনা দুনিয়াকে ম্যাসেজ দেয়ার জন্যই সর্বদলীয় সরকারের নাটকীয় ফর্মুলা উপস্থাপন করে জাতিকে ও বিশ্বকে বিভ্রান্ত করছেন।
আন্দোলনের শত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবির সাথে, জনতার পালস বুঝে জাতীয়তাবাদী ঘরানার সকলকে এক ছাদের নীচে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিন- জনগণ আপনার পাশে পাবেন। জনগণ আওয়ামীলীগের লুট-পাট, সীমাহীন নিপীড়ন, নির্যাতন, অশ্লীলতা, অহংকারের বিপরীতে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে একতরফা আর ইচ্ছামাফিক ব্যবসার সোল এজেন্ট বনে যাওয়ার বিরুদ্ধে এখন ফুঁসে উঠার অপেক্ষায় আছে। দেশনেত্রী জনগণের এই মনের ভিসুভিয়াসকে বুঝার চেষ্টা করুন।আর দেরী নয়- এখনি সময় আন্দোলনের ডাক দেয়ার। আর জেনে-শুনে চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, সুন্দর করে প্যান্ট-টাইপরা ঐ নেতাদের দিকে না চেয়ে তৃণমূলের লাখো-কোটি জনতার বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের সাথে তাল মেলান,বিজয় আপনার নেতৃত্বে সুনিশ্চিত। আর যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তবে ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবেনা। কারণ এ জাতি আর নিপীড়ন, গুম, হত্যা, নির্যাতন, চাদাবাজ, দখলবাজ আর অশ্লীলতার দায় বহন করতে অক্ষম।
১৯ অক্টোবর ২০১৩ .