রাজনীতিতে চুল নিয়ে যখন একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছিলো, ঠিক তখনি জাতি সংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোনে আলাপ ও রাজনৈতিক সমঝোতার তাগিদে জনমনে কিছুটা স্বস্তি এসেছিলো, এই ভেবে যে, হয়তো নেতা-নেত্রীরা আমাদের রাজনীতিতে জাতি সংঘে নিয়ে যাবেননা, নিজেরাই সমঝোতার একটা ব্যবস্থা করবেন, যাতে দেশ ভয়াবহ এক অনিশ্চিত ও সংঘাতের পথ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়।এর ফলে ইসি সহ উভয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতৃত্বের মধ্যে থেকে কিছুটা ইতিবাচক রাজনৈতিক সমঝোতার এক মনোভাব হঠাৎ করে লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যা অনেককেই বেশ আশাবাদী করে তুলেছিলো। কথায় বলে, চুলাচুলির রাজনীতি যখন একবার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তখন সেই বদঅভ্যাস থেকে বের হয়ে আসাটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, যেমন করে সমাজ বিজ্ঞান বলে, মানুষ অভ্যাসের দাস।
লন্ডনের সুধী এবং রাজনীতি সচেতন মহলে একটি কথা বেশ শক্তভাবেই প্রচলিত হয়ে আছে, শেখ হাসিনা যেন-তেন ভাবেই বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিংবা একান্ত অপারগ হলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে যেকোনভাবেই হউক বাইরে রেখে নির্বাচন করবেনই। মাঝখানে যদিও সংলাপ নামক ইতিবাচক সমঝোতার ফর্মুলা রাজনীতির টেবিলে ঝুলিয়ে রেখে এক ঝলক বিদ্যুতের ঝলকানির ন্যায় মূলা দেখিয়ে দেশ ও বিশ্ববাসীকে মূলত ধাঁধায় ফেলে দিয়েছেন, আসলে শেখ হাসিনা তিনি তার গোপন অভিসার মোতাবেকই তার করা নিজস্ব ছক অনুযায়ী তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে কার ক্ষতি কোথায় হলো, গণতন্ত্রের বারোটা-তেরোটা কোথায় বেজে চললো, দেশ ও দেশের জনগণ কি ভাবলো, বা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো, সারা বিশ্ব বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি নিয়ে কি ভাবলো- শেখ হাসিনার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ দেয়ার মতো সময় কিংবা প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করছেননা।তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করছেননা, কারো কথা শুনার মতো মন-মানসিকতা এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার আছে বলে মোটেই মনে হয়না। তিনি ব্লেয়ারের মতো বড় একরোখা ও জেদি মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।ধরেই নিয়েছেন, খালেদা জিয়া যদি কোনভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান বা বিএনপি যদি সদলবলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে পাঁচ সিটির ন্যায় তিনি এবং তার দলের ভরাডুবি কিছুতেই রোখা যাবেনা। সেকারণে তিনি সমঝোতার পথে এক পা এগোলেও পরমুহুর্তেই আবার উগ্র ও একরোখা জেদি নীতি রাজনীতির ময়দানে নিজ থেকে ছেড়ে দিয়ে সমঝোতার পথের অন্ধকারের সুড়ঙ্গের মুখে যে আলোর রেখা দেখা দেয়, তাকে বন্ধ করে দিয়ে রাজনীতিকে ঘোলাটে অবস্থার নিয়ন্ত্রণে তিনি আবার নিয়ে নেন।লন্ডনের অন্ধর মহলে শেখ হাসিনার একান্ত আপনজনের খেদোক্তি প্রকাশের সেই সারগর্ভ বক্তব্য থেকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সকল কার্যক্রম এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার- হাসিনা কোন অবস্থাতেই চাননা বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
০২) আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক থিওরি সংসদ ও মন্ত্রী পরিষদ রেখে নির্বাচন- বাংলাদেশের বিরাজমান সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে বড় বেমানান এবং ভয়াবহভাবে অকার্যকর, তা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। শেখ হাসিনা যদি বিরোধীদলে থাকতেন, তাহলে কেউ এমন ফর্মুলা দিলে সরাসরি পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিতেন। অন্তত শেখ হাসিনাকে যারা কাছে থেকে দেখেছেন, তারা তা স্বীকার করবেন। আপা চাননা, বিএনপি নির্বাচনে আসুক- আসলেই হাসিনার সাম্প্রতিক থিওরি তাই প্রমাণ করে। হাসিনা জানেন, এমন আজগুবি নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেনা, করতে পারেওনা। তিনি জেনে-শুনেই তার আজগুবি সরকারের ধরনের কথা সচিবদের সাথে বৈঠকে বলেছেন।হাসিনা হয়তো এমন জেদি মনোভাব নিয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু কতোটুকু সময়ের জন্য ? এমন অবস্থায় দেশের রাজনীতিতে যে ভয়াবহ সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খল অবস্থার জন্ম দিবে, তা শেখ হাসিনা কিকরে সামাল দিবেন ? হাসিনার ভুলে গেলে চলবেনা, রক্ষীবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীও সেদিন আওয়ামীলীগের দুর্দন্ড প্রতাপের শাসনকালকেও ঠিকিয়ে রাখতে পারেনি। তাছাড়া, সকল দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে দাতা বন্ধু ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। রোগের যথাযথ ডায়াগনোসিস না করে ভুল প্রেসক্রিপশনের ঔষধ সেবন করলে রোগীর রোগ নিরাময়ের বদলে বিপত্তি বাড়বে বৈ কমবেনা। হাসিনার সচিবদের বৈঠকে ঘোষিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফর্মুলা বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংঘাত বাড়বেই, কারণ এটা একটা ভুল প্রেসক্রিপশন। আর এই ভুল প্রেসক্রিপশনের ফলে সমঝোতার সকল পথ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহবে আমাদের রাজনীতির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য সবচাইতে বড় অশনি সংকেত। শেখ হাসিনার রকিব কমিশন এখন হাসিনার মতোই আজ এক পথে, কাল আরেক পথে চলছেন। হাসিনা যেমন এখনি সমঝোতার দরজা খোলেনতো, আবার বন্ধ করে দিয়ে জেদি ও উগ্র রাজনীতি শুরু করে সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দেন, তেমনি রকিব কমিশনও হাসিনার ন্যায় এখন তড়িঘড়ি(ডিসেম্বরে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে)করে নির্বাচন করার নীতিতে নড়েচড়ে বসেছে। এখনকার ইসি নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হতে চলেছে, তা তাদের কার্যকলাপেই প্রমাণ করে দিচ্ছে- যেন সরকারের আজ্ঞাবহ এজেন্সিতে নিজেদের শরিক করার জন্য এক নগ্ন প্রতিযোগিতার দৌড়ে নাম লেখাতে ব্যস্ত হয়ে আছে। যেন তেন ভাবে নির্বাচন কিংবা নির্বাচন পরবর্তী ডামাডোলের ও সংঘাতের সুযোগে অসাংবিধানিক শক্তিকে আমন্ত্রণ বা তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজেকে নিরাপদ করে রাখার এই ভুল এবং জগাখিচুড়ি অতি দাম্ভিক ষড়যন্ত্রমূলক থিওরি ও প্রেসক্রিপশনের খবর লন্ডনের রাজনীতির অন্ধর মহলে এখন ওপেন সিক্রেট। আপা শেষ পর্যন্ত জেদি মনোভাবের কাছে হেরে গেলে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়ে যাবেন- অতি আপনজনের এমন খেদোক্তি প্রকাশের যথার্থতাই আজকের শেখ হাসিনার সরকারের এই জেদি ও একচোখা নীতির কথাই বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়, আসলেই হাসিনার সরকার সেদিকেই দাবিত হচ্ছে। এখনকার মন্ত্রী সভা কিংবা আওয়ামীলীগ করেন এমন কোন নেতা-নেত্রী, সাংসদ কেউই জানেনা, কি হতে চলেছে দেশে? আগামী নির্বাচন কেমন করে হবে ? সবারই একটাই কথা, সব কিছুই জানেন কেবলমাত্র শেখ হাসিনা। আসলেই তাই। তিনিই জানেন, কি হতে যাচ্ছে ? তিনি বড় বেপরোয়া ও উদ্যত, যেমন তার ছাত্রলীগ উদ্যত ও তার মন্ত্রী, সাংসদ বড় বেপরোয়া। তাদের এই উদ্যত ও বেপরোয়াভাব তাদেরকে যে জনগণ থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, সেদিকে তাদের খেয়াল করার ফুসরতও নেই। সভা-সমাবেশে লোকসমাগম ঘটিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা যাচাই করা যায়না, একথা আমার-আপনার চাইতে শেখ হাসিনা ভালো করেই জানেন। তারপরেও তিনি বড় বেপরোয়া ও উদ্যত ও ভুল প্রেসক্রিপশন জোর করেই জাতিকে গিলাতে চাচ্ছেন।হাসিনার এই ভুল প্রেসক্রিপশন আর ভুল নির্বাচনী থিওরি জাতিকে কোথায় নিয়ে চলে, তা দেখার জন্যে আমাদের আরো অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, শেখ হাসিনার এই ভুল প্রেসক্রিপশন আর ভুল ফর্মুলায় বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্র ১৮ দল কেমন কৌশলে খেলে ? বিএনপি হাসিনার ভুল প্রেসক্রিপশনে আত্মাহুতি দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবে, নাকি আন্দোলন ও নির্বাচনী কৌশলে হাসিনাকে তার ভুল থিওরি ও জেদি ও একরোখা নীতি থেকে সরে এসে সকলের অংশ গ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধ্য করার সুকৌশলী খেলা কেমন করে খেলে-সেটাই দেখার বিষয়। হাসিনা যেমন দুই বারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরবের অধিকারি, বেগম জিয়াও দুইবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুর্লভ গৌরবের অধিকারি, দুজনেরই রয়েছে সরকার পরিচালনা ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। অসহনীয় ও সংঘাতময়ের আশু ইঙ্গিতপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থায় কে কতো কৌশলী খেলা খেলে রাজনীতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফল ঘরে তুলতে পারেন-এখন সেটাই দেখার বিষয়, নয়তো আপা যেমন চাননা, তেমনি যদি না পারেন, অসাংবিধানিক শক্তির কাছে দেশ ছেড়ে দিবেন- সেই খেদোক্তির দিকে দেশ ও জাতিকে ছেড়ে দিবেন কিনা হাসিনার সেই কুটিল রাজনীতির বিপরীতে বিএনপির চেয়ার বেগম খালেদা জিয়া কেমন করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে সাথে নিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষাকল্পে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার বাঙালির নিরন্তর সংগ্রামের ফসল বাঙালির ঘরে পৌঁছে দিবেন- সেটাই এখন মুখ্য বিষয়। ১৯৯০ সালের সারা জাতির দেয়া খেতাব গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া এখন কোন চালে খেলবেন-জাতি সেই দিকেই চেয়ে আছে।
৩রা সেপ্টেম্বর ২০১৩ .