বেশ কিছুদিন আগে অনেকটা ঘটা করেই নতুন সরকারের কথা বলতে গিয়েই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সিপিডির ফেলো ডঃ দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বদের আগামীর সরকারে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, এমন চিন্তা-ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। রাজনীতির অন্ধর মহলে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের এই উভয় দলকে সমঝোতার টেবিলে নিয়ে এসে কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের প্রক্রিয়ায় তখন থেকেই জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে ডঃ দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্য নিয়ামকের ভূমিকায় চলে আসেন। ইতিমধ্যে ডঃ ইউনূস কেন্দ্রিক তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি বা স্রোত যখন অনেকটাই সংবাদের লাইম লাইটে আসতে শুরু করে, তখনি আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অন্তর্বর্তী সরকারের ধারনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।
মার্কিন ও ভারতীয় কূটনৈতিক মহল অনেকটা নাছোড়বান্দার মতোই বিএনপি নেত্রীকে তখন থেকেই জয়ের মূলা ঝুলিয়ে রেখে হাসিনার অধীনে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে শরীক হওয়ার চাপ অব্যাহত রাখতে থাকেন। এই অবস্থা যখন চলছিলো, ঠিক তখনি বিএনপি তাদের নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখার ধারণা কূটনীতিকদের গোচরীভূত করতে উদ্যোগী হলে নিরপেক্ষ সরকারের ধরন নিয়ে ভারত ও আমেরিকা বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ স্মরণের উদ্যোগে ডঃ দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় পর্দার আড়ালে সমঝোতার চেষ্টা এখন ওপেন-সিক্রেট।
তারই আলোকে গত বৃহস্পতিবার দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের গুলশানের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ স্মরণ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ একান্ত বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এসময় ডঃ রেহমান সোবহান, ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান সহ আরো কজন উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনার উত্থাপিত অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের তেমন একটা বিরোধ না থাকলেও মূলত শেখ হাসিনার অধীনে সংসদ ও মন্ত্রী সভা বলবত রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও ১৮ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত- আর এখানেই সমঝোতার সকল সম্ভাবনাই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। এহেন অবস্থায়, আলোর মুখ না দেখা, বিএনপির প্রস্তাবিত ১১ সদস্যের অন্তর্বর্তী বা নিরপেক্ষ সরকারের ধরন কূটনীতিক ও দেবপ্রিয় বাবুর গুলশানের বাসায় উভয় পক্ষের সাথেই বিস্তর আলোকপাত চলছে বলেই আমরা ধরে নিতে পারি। বিএনপি প্রস্তাবিত উভয় দল থেকে পাঁচ জন করে দশ জন এবং একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে এই নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করার ফর্মুলা নিয়েই এখন মার্কিন ও ভারতীয় কূটনীতিকদের ও ডঃ দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের মধ্যস্থতায় নিরপেক্ষ এক সরকারের আলোচনা বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি উভয় দলকেই এই সংকেত দেয়া হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে আগামী সংসদ নির্বাচন না হলে যে সংকট ঘনীভূত হবে, সেই প্লটের আপেক্ষিক মাত্রাও এখন অনেকটাই পরিণত লাভ করে চলেছে, যা আমরা কেউই চাইনা।
গুলশানের বৈঠকে উপস্থিত অতি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন, উভয় দলই মূলত সমঝোতার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে, এবং নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখার ধরন নিয়ে উভয় দল অনেকটাই একমত, যা আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক শুভ সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। নীতিগতভাবে উভয় দলের হাইকমান্ড উভয় দল থেকে পাঁচজন করে নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে খুব একটা আপত্তি নেই। বাধা হিসেবে শুধু রয়ে গেছে, একজন মাত্র ব্যক্তিকে এই নিরপেক্ষ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান থেকে সরিয়ে বিএনপির দাবী অনুযায়ী একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের, যা দফায় দফায় বৈঠক ও টেলিফোন সংলাপের মধ্যদিয়ে এখন অনেক নমনীয় ও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরই আলোকে আজকেও দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের বাসায় ডঃ ইউনূস, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ড্যান মজীনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত কূটনৈতিক সূত্র আভাস দিয়েছেন, দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তী ( যে নামেই ডাকা হউক না কেন )সরকারের ধরন নিয়ে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছেন। সিপিডির রেহমান সোবহান, ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও সিপিডির ফেলো ডঃ দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্য উভয় দলের কাছেই এখন অনেকটাই গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে চলে এসেছেন, তাদের সাথে আছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস। কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন, এই ধরনের নিরপেক্ষ সরকারের বা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস তার গ্রামীণ পার্টি অব বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ করবেননা। দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের মধ্যস্থতা যদি বিফলে যায়, তবে ১২ই সেপ্টেম্বরের পরে যে কোন দিন ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গ্রামীণ পার্টি অব বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ হবে, যাতে মার্কিন ও ভারত এবং অধিকাংশ সুশীল ও রাজনৈতিক দলসমূহের অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং কম বিতর্কিত রাজনীতিবিদেরা যোগ দিবেন।
ভারত এবং মার্কিনলবী এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে সরকার এবং বিরোধীদল কে এই চাপ ও সিগন্যালই অব্যাহত রেখে চলেছেন, দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের মধ্যস্থতায় উভয় দলের সমঝোতার মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীর গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা। এর বিপরীতে সুশীল সমাজ ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও কম বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আগামীর সরকারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় আরোহণ এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবায়নের পথে শুধুমাত্র সময়ের দিন-ক্ষণ-ঘন্টার হিসেবে আটকে আছে।দেবপ্রিয় ভূট্রাচার্যের মধ্যস্থতায় উভয় দলই নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে আগামীর নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবেন-গুলশানের বৈঠকের এই কূটনৈতিক এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন।
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ .