ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট- ব্রিটেনের প্রধান শহরে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা সংখ্যালঘু

ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট- ব্রিটেনের প্রধান শহরে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা সংখ্যালঘু

বলা হয়ে থাকে ব্রিটেন হলও বহুজাতিক সমাজের সমন্বয়ের আধুনিক এক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। বাস্তবেও তাই। সারা বিশ্বের যেকোনো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের তুলনায় ব্রিটেনের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সংজ্ঞায় অবশ্যই অনেক রাষ্ট্র ও জাতি রাষ্ট্রের কাছে ইর্ষণীয়-একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।কেননা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের তুলনায় এর গণতান্ত্রিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক চর্চা, রাষ্ট্রীয় কল্যাণমূলক প্রশাসন ও সেবা ব্যবস্থা আজও কাট-নীতির মারপ্যাঁচে পরেও অনেক মাইলফলক হয়ে আছে।

সম্প্রতি ব্রিটেনের খ্যাতনামা এক বিশ্ববিদ্যালয়-ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি তাদের এক গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে।২০১১ সালের আদম শুমারি গবেষকদের গবেষণার ভিত্তি হিসেবে ধরে বিগত ২০০৪ সাল পর্যন্ত সময়কাল ধরে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক দল তাদের গবেষণা পরিচালনা করে এক চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ইমিগ্র্যান্ট এবং ইমিগ্র্যান্ট বংশধরদের কারণে ব্রিটেনের পুরো চিত্রটাই পাল্টে গেছে। ব্রিটেনের কেন্দ্রস্থল লন্ডন এবং তার নিকটবর্তী শহর লুটন, লেস্টার, স্লাও- এই চার শহরে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা বলা যায় অনেকটাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। এসব শহরে হয় শ্বেতাঙ্গরা অন্যত্র মাইগ্রেন্ট হয়ে চলে গেছেন নয়তো অধিকহারে ইমিগ্র্যান্ট পরিবার ও তাদের ইমিগ্র্যান্ট বংশবিস্তারের প্রভাবে অথবা ইউরোপ থেকে হটাত করে আগতদের অব্যাহত সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ হিসেবে শীগ্রই বুলগেরিয়া ও রুমানিয়ার নাগরিকরা ব্রিটেনে দলে দলে প্রবেশের ফলে ব্রিটেনে বসবাস এবং কাজের সমান সুযোগ-সুবিধা হেতু ব্রিটেনের বেনিফিট সিস্টেমে ব্যাপক প্রভাব পড়বে, যেমন করে পড়েছিলো বিগত সময়ে (২০০৪)পোলিশ নাগরিকদের দলে দলে ব্রিটেন গমনের ফলে।গবেষণায় এ ক্ষেত্রে পূর্বেকার লেবারের ইউরোপীয় নীতিকে অনেকটা দায়ী করা হয়েছে-বিশেষ করে এই আপাত: সমস্যা সৃষ্টির ক্ষেত্রে।

রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, উল্লেখিত চারটি শহরে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশের সংখ্যা ৫০% এর নীচে।২০২০ সাল নাগাদ ব্রিটেনের আরও এক বড় শহর বার্মিংহামে জনসংখ্যার দিক থেকে এই শ্বেতাঙ্গরা হবেন কম বা নীচের দিকে। বিগত আদম শুমারি বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পেয়েছেন, স্লাও-তে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ মাত্র ৩৫%। এই শহরের অর্ধেক জনগণ এখন ভারতীয় ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত। সেক্ষেত্রে লুটন এবং লেস্টারে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ ৪৫% বলে তাদের রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে।লেস্টারে এক তৃতীয়াংশ মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আর লুটনে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন পাকিস্তানী কিংবা বাংলাদেশী জনগণ বলে তাদের রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে লেস্টারে সাদা ব্রিটিশ জনগণের বাস ৫০% এর কিছু উপরে বলে তাদের অভিমত। একই পদ্ধতিতে অন্যান্য শহরেও পূর্ব ইউরোপের জনগণকে ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েই তাদের গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তবে এই তিনিটির কোন শহরেই একক কোন জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে তারা দেখতে পাননি। তাদের রিপোর্টে দেখা যায়, প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজারের মতো লোক এসেছেন ২০০৪ সালের পরে, যখন পূর্ব-ইউরোপের দেশ পোলিশ মিলিয়ন নাগরিক এক ইউরোপ নীতির ফলে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন। একই প্রক্রিয়ায় লুটনে ৬০ হাজারের মতো জনসংখ্যার ৪০% ২০০৪ সালের পরে এসে বসতি গড়েছেন ব্রিটেনে।

বিগত এক দশকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ইমিগ্র্যান্ট জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন। আর এই জনসংখ্যাই বদলে দিয়েছে ব্রিটেনের চাল-চিত্র।

এদিকে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারা হলও বাংলাদেশী জনগণের বৃহত্তম অংশের বসবাস।সিলেটের জনগণের একচ্ছত্র বসবাসের কারণে এই এলাকাকে অনেকে এমনকি মেইনষ্ট্রিম সংবাদ মিডিয়াও মিনি বাংলাদেশ বা বৃহত্তর সিলেটের এলাকা হিসেবে দেখে থাকেন।জানা যায় এই এলাকায় ৮২ হাজারের মতো বাংলাদেশীদের বসবাস। আর এই সংখ্যা সাদা ব্রিটিশদের তুলনায় মাত্র ২ হাজারের মতো বেশী। গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বৈচিত্র্যময় হওয়া সত্ত্বেও বেশীরভাগ জনগণ তাদের ব্রিটিশ বলে পরিচয় দিয়েছেন।

বিগত আদম শুমারির তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে চমকপ্রদ চিত্র হচ্ছে লন্ডনের একেবারে বুকের মধ্যে অবস্থিত নিউহাম বারা। এই বারার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ১৭% সাদা ব্রিটিশ।বারার ১৮টি এথনিক গ্রুপের মধ্যে ১৭টির জনসংখ্যা এক হাজারের উপরে।৮৭ শতাংশ জনগণ এসেছেন এখানে, ২০০৪ সালের পরে ৮টি প্রাক্তন সোভিয়েত ইইউতে প্রবেশের সুযোগের মাধ্যমে।

রিপোর্টের উপর মন্তব্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নাই। তবে এই রিপোর্টকে বেশ চমকপ্রদ ও মাল্টিকালচারাল সোসাইটির এক উজ্জ্বলতম পথের দিশা, একই সাথে আগামী প্রজন্ম ব্রিটিশ সোসাইটিতে মিশে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ও কন্ট্রিবিউশনকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে দেখছে রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাকারীতরুণ গবেষক বেলায়েত হোসেন ও তার সহযোগী নৃ-তাত্ত্বিক গবেষক স্যালিনি মৈত্রী ত্রয়ী। উভয়ে গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির রিসার্চ এসোসিয়েট। তাদের মতে এই রিপোর্ট বহুজাতিক সমাজের কল্যাণ সাধনে বেশ আশা ব্যঞ্জক এবং গবেষণার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ফুটনোট হিসেবে কাজ করবে, আগামী দিনে বহুজাতিক সমাজে কন্ট্রিবিউশন ও ইন্টেগ্রিটি ইমপ্লিম্যান্ট করার ক্ষেত্রে।তবে তারা মনে করেন, এই রিপোর্টের উপর আরও ব্যাপক গবেষণা করা যেমন উচিৎ, একই সাথে এর ক্ষেত্রও আরও ব্যাপকভাবে উপস্থাপিত করার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিআরআইএলএলএস, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি,ইউকে।
বাংলা মিডিয়া, লন্ডন।
আদম শুমারি রিপোর্ট-২০১১, ন্যাশনাল সেনসাস, ইউকে।
houseofparliament.jpg

Salim932@googlemail.com
20th January 2013.UK.

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *