ইউনিপে টু থেকে ডাচ বাংলা বিকাশঃ এইভাবে আর কতো?বাংলাদেশ ব্যাংক কী একটু ভেবে দেখবেন-

ইউনিপে টু থেকে ডাচ বাংলা বিকাশঃ এইভাবে আর কতো?বাংলাদেশ ব্যাংক কী একটু ভেবে দেখবেন-

ইউনিপে টু থেকে ডাচ-বাংলা হয়ে বিকাশঃ এই ভাবে আর কতো-বাংলাদেশ ব্যাংক কী ভেবে দেখবেন?

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

এরশাদ সরকারের সময় সন্দ্বীপের এক ব্যাবসায়ী কাম রাজনীতিক ছিলেন, রাজধানী সহ গোটা ব্যাবসায়ী মহলে তখন বেশ দাপুটে ও রসিকজন হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি ছিলো, এরশাদ সাহেবের অন্দর মহলের সাথে তার খুব দহরম মহরম ছিলো, ফলে তিনি নন-ব্যাংকিং এক আর্থিক সংস্থা খুলে সারা দেশে এর শাখা-প্রশাখা খুলে বসলেন,লাইসেন্স যখন নিলেন, তখন ঘোষণা দিলেন তার এই প্রতিষ্টান শুধু সেবা ধর্মী কাজ ও গ্রামীন উন্নয়নে লোন প্রদান করবে, কিন্ত প্রচলিত কোন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেনা।অথচ সেই রসিক ব্যাবসায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের হর্তা-কর্তা সহ মন্ত্রী মহোদয়দের দিয়ে একের পর এক শাখা খুলে চলেন,রেডিও,টেলিভিশন ও সংবাদ পত্রে প্রচলিত সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ও আকর্ষণীয় সুদের হার দিয়ে সঞ্চয়ী আমানতের বিজ্ঞাপন অবাধে দিতে থাকেন।এরশাদের নয় বৎসর শাসনকালে আওয়ামীলীগের ঐ প্রভাবশালী সাংসদ (একসময় দল বদলও করেছিলেন)বেশ আরাম-আয়েশেই ঐ অন্যায় ও অন্যায্য অ-ব্যাংকিং এবং অসৎ উপায়ে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।কিন্ত বাধ সাধেন শাহাবউদ্দীনের তত্বাবধায়ক সরকার।অনৈতিক কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন তার বিরুদ্ধ্বে নড়ে চড়ে বসলে এবং শাহাবউদ্দীন সরকারের জোরালো পদক্ষেপের ফলে তাকে জেলে যেতে হয়েছিলো, যদিও বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ এর সময় তিনি আবার জেল থেকে যথানিয়মে বেরিয়ে এসেছিলেন।আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এতো বড় প্রতারণামূলক ব্যাবসার কারণে সন্দ্বীপের ঐ ব্যাবসায়ী সাংসদকে বড় দুই দল কোন তীরস্কার করাতো দূরে থাকুক, তাকে বরং আদরে-আহ্লাদে আরো হ্রষ্ট-পুষ্ট করে তুলেছিলেন-পাঠকদের সুবিধার্থে তাই আরেকবার এখানে অবতারণা করলাম, এই কারণে যে, বার বার কিছু দুষ্টু প্রকৃতির অব্যাবসায়ী রাজনৈতিক দলের ছত্র-ছায়ায় থেকে সাধারণ জনগণকে ধোকা ও প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কেটে পড়ে, অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা যেন তা দেখেও না দেখার ভান করে, সংবাদ পত্রে যখন এই সব ভূক্তভোগীর কাহিনী ছাপা হয়, তখনি কেবল তাদের ঠনক নড়ে।কিন্ত কেন? এই কী তাদের দায় দায়িত্ব?

০২)

বেশ কিছুদিন হলো অনলাইন বাংলা নিউজ সহ প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রলিক মিডিয়া ইউনি পে টু, ব্র্যাক, বিকাশ, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ষ্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সহ কতিপয় দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক সংস্থা, এনজিও ইত্যাদির নানান প্রতারণা ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের প্রতিবেদন,সংবাদ, গ্রাহকদের নানান ভোগান্তির কথা ফলাও করে প্রকাশ করে আসছিলো।গত সপ্তাহেও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নানা অনৈতিক কর্মকান্ড,আর আজকে বিকাশের অনৈতিক কাজ ও সরকারী আইনের বিশেষ সুবিধা দানের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা রীতি মতো প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।ষ্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকতো রীতিমতো টাকার বিনিমিয়ে টিআইএন নম্বর প্রদানের ভয়াবহ এক জালিয়াতির খবর প্রকাশে শিউরে না উঠে পারিনি।কিছুদিন আগেও ইউনিপেটু নামক সংস্থা জালিয়াতি করে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কোটি টাকা সংগ্রহ করে তার প্রায় সব কটা অফিস তালাদিয়ে উধাও হওয়ার খবর প্রায় সকল সংবাদ পত্রের শিরোনাম ছিলো।আর ডেসটিনির অবৈধ ব্যাংকিং এর খবরতো কম বেশী সবাই অবগত, আজকেও খবরে প্রকাশ ডাচ-বাংলা অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা চার্জ করেছে। এ যেন এক ভোজভাজির খেলা,যেন-তেন ভাবেই টাকা বানানোর এই খেলা রোখার যেন কেউ নেই।এ যেন ক্যারল ভোর্ডাম্যনের ক্যারিশম্যাটিক ব্রেইন বক্সকেও হার মানায়।ক্যারল ভোর্ডাম্যান কে নিয়ে ব্রিটেনের জনপ্রিয় এক টেলিভিশন সিরিয়াল আছে, যেখানে দেখানো হয়, প্রতিনিয়ত যে কোন অংকের সহজ সমাধান, তা যত জটিলই হউক না কেন, ক্যারল ভোর্ডাম্যান অতি সহজেই সমাধান করে দেন।বাস্তবেও তাই।ভোর্ডাম্যানকে বলা হয় ব্রিটেনের ব্রেইন বক্স।অংকের জটিল সমাধানে সিদ্ধ্বহস্ত।বিবিসি টেলিভিশনের প্রতিদিনকার মধ্যাহ্নের কাউন্ট ডাউন অনুষ্টান সকল বয়সী মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।আমাদের এই ইউনিপে,ডাচবাংলা কিংবা বিকাশরা যেন এই ভোর্ডাম্যনের জটিল সমীকরণকেও পেছনে ফেলে দিয়ে ভোজভাজির মতো হঠাৎ করে উদয় হয়ে জনগণের পকেট হাতিয়ে আবার আকাশে বিজলীর চমকানোর মতো নাই হয়ে যাওয়ার ঘটনা বাস্তবে বার বার ঘটে চলায় বড় অবাক হয়ে যাই,আর ভাবি এই সব অন্যায় ব্যাবসা রোখার কী কেউ নেই?এই সব অন্যায় ব্যাবসা যেন কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না, কিন্ত কেন?

অথচ এই সব সংস্থা ও প্রতিষ্টান বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়েই জনগণের সাথে প্রতারণামূলক ব্যাবসা করে যাচ্ছে।প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক নামক রাষ্ট্রীয় এই সংস্থায় সব ধরনের আইন-কানুন সহ এতো পর্যাপ্ত লোকবল থাকা স্বত্ত্বেও মাসের পর মাস এই ধরনের আর্থিক সংস্থা প্রকাশ্যে কি করে অবৈধ প্রতারণামূলক ব্যাবসা চালিয়ে যায়?বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই তাদের বিজনেস ক্লোজিং রিপোর্ট প্রধান অফিসে প্রেরণ বাধ্যতামূলক, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সেই সব আবার নিয়মিত অডিট হওয়ারও কথা এবং হয়ও।তার পরেও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অনৈতিক অহেতুক হয়রানীমূলক চার্জ ও প্রতারণামূলক লুকিয়ে অতি মুনাফালোভী ব্যাবসা গ্রাহকদের সাথে কী করে করে চলে?বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ থেকে কোন বিশেষ পদ্ধতিতে তারা সেই বিষয়টি সুচতুরতার সাথে আড়াল করে চলে?জনগণের একটু জানা দরকার, কী সেই সমঝোতা? ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মধ্যে কিংবা এতে আর কারা বেনিফিসিয়ারী-একটু জানা দরকার, তাতে জনগণ অন্তত কিছুটা হলেও বুঝতে পারবে কোথায় কিভাবে তারা প্রতারিত হচ্ছে।

সরকারী বিভিন্ন সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক নামক নিয়ন্ত্রণ ও মণিটরিং সংস্থা থাকা সত্তেও দুদিন পর-পরই ইউনিপেটু সহ নানান ছদ্মনামে আর্থিক প্রতিষ্টান খুলে প্রচলিত ব্যাবসার বিপরীতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বানানোর লোভ দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে কী করে ডিপোজিট মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সংগ্রহ করে চলে?বাংলাদেশ ব্যাংক কী করে?

কারণ সরকারের উচ্ছ মহলের সংশ্লিষ্টতা ও ছত্র-ছায়া না পেলে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সহযোগীতা না পেলে দিনের পর দিন এই রকম ভূই ফোড় প্রতারণামূলক সংস্থা গড়ে উঠার সাহস পেতনা?

আইন প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য যেমন সমান হওয়া উচিৎ, তেমনি বিকাশ কিংবা ব্র্যাকের জন্য, এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ত্ব বা শীতলতা প্রদর্শন কিংবা নীতিমালা পরিবর্তন করে বিশেষ সুযোগ দেওয়াটাও বড় ধরনের অন্যায়।ঐ ব্যাংকের সাথে সরকারের নেতা-নেত্রী কিংবা দহরম-মহরম দেখে বিশেষ আনুকল্য প্রদর্শন, আর্থিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃংখলা ডেকে আনবে, কারণ এই রকম অন্যায় সুযোগ-সুবিধার ফলেই দিনের পর দিন অনৈতিক প্রতারণামূলক সংস্থা যেমন গড়ে উঠছে, অন্যদিকে কোন কোন বাণিজ্যিক ব্যাংককে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরতে উৎসাহ যোগাচ্ছে, ফলে জনগণ প্রতিনিয়তই হচ্ছে প্রতারণার স্বীকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজই হলো একটা দেশের আর্থিক খাত সুষ্টুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা সুষ্টুভাবে দেখ-ভাল করা, কেবল মাত্র মুদ্রানীতি প্রণয়ন আর নীতিবাক্য আওড়িয়েই দায়িত্ত্ব শেষ হয়ে যায়না।আর্থিক প্রতিষ্টানগুলোতে শৃংখলা বিধানের লক্ষ্যে প্রচলিত আইন-কানুন কতটুকু মেনে চলছে, এই সব বিষয় মনিটর করার দায়িত্ত্বও বাংলাদেশ ব্যাংকের।আর এই সব বিষয়ে কোন ধরনের শীতলতা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্টানসমূহ যদি অনৈতিক ও অপেশাসুলভ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে তবে গোটা আর্থিক খাতেই ধ্বস নেমে আসবে।বাংলাদেশ ব্যাংক কী এই সব ভেবে দেখবেন?

০৩)

ব্যাংকিং ব্যাবসায় কোন রকম জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক ব্যাবসা যারা করেন বা যারা জড়িত তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।এই সব ক্ষেত্রে কোন ধরনের পক্ষ পাতিত্ত্বের সুযোগ নেই।কে আওয়ামীলীগ, কে বিএনপি-এই সব কোন অবস্থাতেই বিবেচনায় আনা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অন্যায্য।আমাদের দূর্ভাগ্য যে, ব্যাংকিং ব্যাবসার মতো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ব্যবসার ক্ষেত্রেও আমরা দলীয় আনুগত্য ও দলীয় মনোভাব প্রদর্শন করে চলি। এখানে দলীয় লোক ছাড়া লাইসেন্স প্রদানের কোন বাছ-বচারই করা হয়না।কখনো দেখা হয়না একটা ব্যাংক খোলার মতো তার টাকার উৎস হূট করে কোথা থেকে এলো?কি তার অতীত ব্যাবসায়ী রেকর্ড, কিংবা কি তার আয়-ব্যায় বার্ষিক হিসাব-নিকাশ কখনোই বাছ-বিচার এখানে প্রাধান্য পায়না-অথচ এই না দেখাই সবচাইতে বড় অসততা। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্র দেশে অসংখ্য ব্যাংক ও নানান আর্থিক প্রতিষ্টান, যখন যে সরকার আসে, সেই সরকারের অনুকল্য নিয়ে দলীয় লোকগুলোই ব্যাংকের শীর্ষ পদে দখল করে ব্যাংকগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিয়ে যায়।একটি দেশের ব্লাড লাইন তার বাণিজ্যিক কিংবা সরকারী ব্যাংক, এগুলো যদি শৃংখলা পূর্ণভাবে না চলে, তবে দেশের প্রবৃদ্ধ্বির হার কিভাবে উন্নতি হবে?শুধু সমীকরণ আর সমীক্ষা দিয়েতো আর চলেনা, কিছুদূর হয়তো যাওয়া যায়, কিন্তু ঐ পর্যন্তই, তারপরে মুখ থুবড়ে পড়ে।আর্থিক প্রতিষ্টাগুলো সুষ্টুভাবে চলুক, প্রকৃত ব্যাবসার মনোভাব নিয়ে ব্যবসা করুক-আমরা সেটাই চাই।বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণিত আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী সকল আর্থিক সংস্থা ও প্রতিষ্টান পরিচালিত হউক ও ব্যাবসা করুক আমরা এটাই চাই।

Salim932@googlemail.com

5th August 2012.UK

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *