মীর্যা ফখরুল ইসলামঃ বাগ্মিতায় পটু, কিন্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে অপারগ-
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
কেলেংকারীর পর কেলেংকারীতে বাংলাদেশের গোটা রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অনেকটা রমাজান আর ঈদের আমেজ কাঠিয়ে উঠতে শুরু করেছে।বিশেষ করে হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেংকারীতে সরকার এবং বিরোধীদল উভয়ই যেমন সোচ্চার, সাধারণ মানুষও তেমনি বেশ উৎসুক, দূর্ণীতির রাগব-বোয়াল আর রুই-কাতলাদের গ্রেপ্তার আর বিচারের আশায়।বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস কিন্ত এই ক্ষেত্রে খুব একটা আশাবাদী করেনা। এখানে দূর্ণীতির হোতাদের আর শয়তানদের খুব কদর করা হয়, বিশেষত ক্ষমতাসীনদের পৃষ্টপোষকাতা নিয়ে সেই সব নাটের গুরু আর শয়তানের ভাইয়েরা বেশ আরামেই দিনাতিপাত করে থাকে।মাঝখানে কিছু হৈ-চৈ হয়, তার পর যেমন ছিলো, সব কিছুই যেন তেমনি রয়ে যায়।এই আমার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সকল ক্ষেত্রেই যেন আমরা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টিতে পারঙ্গম, এক্ষেত্রে আমাদের ঝুড়ি মেলা ভার।
মীর্যা ফখরুল ইসলাম- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।ছিলেন একসময় শিক্ষক,এক এগারোর কুশীলবদের কল্যাণে বিএনপি যখন তছ-নছ হয়ে যায়, তখন অনেকটা সময়ের সৌভাগ্যের টিপ যেন এই মীর্যার ললাটে লেপন করে দেয়, অতি মহামূল্যবান এক পদ-মহাসচিবের মতো ভারী এক পদ,যা বহন করার ক্ষমতা কতোটুকু তিনি রাখেন, খোদ বিএনপি মহলেই রয়েছে নানান প্রশ্ন।যে কারণে ভারপ্রাপ্তের তকমা তিনির কপাল থেকে আর সরতেছেনা। জাতীয়তাবাদী কৃষকলীগের এই নেতা বিএনপির মতো এতো বড় দলের মহাসচিবের দায়িত্ত্বে যে তিনি বড় বেমানান, তা তিনির কর্মকান্ডেই বুঝা যায়। এতোদিন হয়ে গেলো, দলীয় মহাসচিবের দায়িত্ত্বে আছেন, না পারছেন দলকে গোছাতে, না পারছেন আন্দোলন গড়ে তুলতে।সরকারের এতো এতো নেগেটিভ কর্মকান্ড হাতের কাছে পেয়েও এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘুণাক্ষরেও আন্দোলন কি ভাবে গড়ে তোলা যায়, সরকারের এতো গণ-বিরুধী কাজের কি করে যুৎসই সমালোচনা করে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়, তা যেন উনার অভিধানে জানা নেই । এতো বড় দলকে নিজের সাথে পেয়েও মীর্যা সাহেব বলা যায় এক রকম ব্যার্থ ও অথর্বতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন।প্রথম প্রথম মীর্যা ফখরুল ইসলাম যখন প্রেসের সামনে কথা বলতেন, তখন বেশ শালীন এবং যৌক্তিক বক্তব্য রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিলো।কিন্ত দিন যত যেতে লাগলো, ততো মীর্যা ফখরুলের অরাজনৈতিক বক্তব্য এবং অহেতুক আজগুবী সমালোচনার ধরণ দেখে এবং শুনে জনগণ বলা যায় অনেকটা এই মীর্যা সাহেবের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।১৮ দল নামক নাম সর্বস্ব জোট করে এই মীর্যা সাহেব যে রাজনীতির মাঠ খুব একটা গরম করতে পারেন নাই তাতো বুঝাই যাচ্ছে।আন্দোলন কী ভাবে করতে হয়- মীর্যা ফখরুলের যেন সেদিকে কোন খেয়াল আছে বলে মনে হয়না।নিজের এতো এতো ব্যার্থতার দিকে না থাকিয়ে উনি আছেন শুধু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের দিকে।শুধু এই দিকে ফোকাস করে কী আন্দোলন চাঙ্গা করা যাবে? অবশ্য সরকার একটু শক্ত হলেই তিনি যে নেতা-কর্মী ফেলে পালাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।সারা জীবন শিক্ষকতা করে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য এই মুহূর্তে মীর্যা ফখরুলের মতো ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিএনপির মতো দলের জন্য বড় বেমানান, এই কথাটা খালেদা জিয়াকে মানতেই হবে।শুধু মাত্র বিশ্বস্ততা দিয়ে দলের মহাসচিব এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ত্বে আনলে ফল যে এমন হবে, তা অনেক বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের একমত হতেই হবে।আন্দোলন ও দলকে চাঙ্গা করার জন্য দরকার একজন দক্ষ সংগঠক, অভিজ্ঞ রাজনীতিক, অবশ্যই দল ও জনগণের প্রতি বিশ্বস্থ, ত্যাগী ও সাহসী এক নেতার এই মুহূর্তে দরকার, যা মীর্যা ফখরুলকে দিয়ে হবেনা।আর যার রক্তে রাজাকারের আর যুদ্ধাপরাধের তকমা লাগানো, যার পূর্বসূরীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের সরাসরি বিরোধীতা করেছে, একজন মুক্তিযোদ্ধার দলের মহাসচিবের মতো গুরু দায়িত্ত্বে থেকে সফল আন্দোলন-সংগ্রামের সঠিক নেতৃত্ত্ব আর যাই হউক তার কাছ থেকে জাতি কিছুতেই আশা করতে পারেনা- বিগত দিনের বিএনপির দুরাবস্থা থেকে না উঠে আসার দৃশ্যমান বাস্তবতাই তাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।ইদানিং এই মীর্যা ফখরুল ইসলাম আবার আজগুবী সব তত্ব ও তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপণ করে চলেছেন, যা দলীয় মহাসচিব হিসেবে তার গ্রহণ যোগ্যতা শুন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে।কোথাকার ভুই-ফোড় অনলাইন সংবাদের তথাকথিত ঘাণার গুমেজ নামোল্লেখ করে খালেদা জিয়া হত্যার গুয়েবলসীয় তথ্য তিনি প্রচার করে চলেছেন।মিথ্যা তথ্যেরও কিছু ভিত্তি থাকে, মীর্যা সাহেব সকল মিথ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছেন।আশা করবো মীর্যা সাহেবের একটু বোধোদয় হবে, আর আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশলে নিপুণতা ও দক্ষতার পরিচয় দিবেন।নতুবা ব্যার্থতার দায় নিয়ে মহাসচিবের মতো গুরু দায়িত্ত্ব থেকে নিজ থেকে সরে গিয়ে সৃজনশীল নেতৃত্ব সৃষ্টির ব্যাবস্থা করে দিবেন।কারণ জাতি চায় পরিবর্তন, দক্ষ নেতৃত্ত্ব ছাড়া সেই কাংখিত পরিবর্তন সুদূঢ় পরাহত।