মানুষের শেষ ঠিকানা এবং মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
বলা হয়ে থাকে মানুষ সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত।তো এই আমরা মনুষ্য সম্প্রদায় একটু খানি আরাম-আয়েশ এর জন্য, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি, সমৃদ্ধ্বি আনয়নের জন্য দিন-রাত কতইনা পরিশ্রম করে চলেছি।আমাদের পরিশ্রমের যেন কোন অন্ত নেই, চাহিদার যেন কোন সীমা নেই।একটি বাড়ী হলোতো, আরেকটি বাড়ী চাই, একটি ব্যাবসা হলোতো আরেকটি ব্যাবসা চাই, ব্যাংক ব্যালেন্স একটু তাজা হলোতো, আরো ব্যালেন্স বাড়ানো ও সঞ্চয় জমানোর উদগ্র বাসনা চরিতার্থ করতে হেন কোন কাজ নেই যে এই আমরা না করিনা।একটা কোম্পানী কিংবা একটা গাড়ী হল তো আরেকটি গাড়ী চাই, একটা ডিগ্রী নিলামতো, আরেকটি ডিগ্রী চাই, আরেকটি ডিগ্রী নিলাম তো এইবার পিএইচডি চাই, তো এই ভাবে চাইতে চাইতে কখন যে জীবন প্রদীপ একসময় এসে নিভে যায়, সব শেষ হয়ে যায়, তার কোন খবরই যেন আমাদের কারো নেই। একজনের মৃত্যু সংবাদে সবাই একত্রিত হলাম, কান্না-কাটি করলাম,শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করলাম,তারপর আবার যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম, এইতো আমাদের জীবন।এইভাবে চলছে জীবনের গতি, বিজ্ঞান বলে জীবনের গতি থেমে থাকেনা, চলাই তার ধর্ম।হ্যা জীবনের মানেই হলো চলা, মৃত্যুই কেবল পারে জীবন চলাকে থামিয়ে দিতে।
অর্থশাস্র বলে, একজন মানব শিশু কেবল তার উদর পিন্ডি নিয়েই জন্ম গ্রহণ করেনা, তার সাথে তার তার দেহ,রক্ত,লৌহ কণিকা, হাত,পা,নাক,কান,চোখ- আর এই সব কেন্দ্রিকই মানব শিশুর জীবন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, সে যত বাড়তে থাকে তার চাহিদা তত বাড়তে থাকে, তার যোগানও তত বাড়তে থাকে, চাহিদা ও যোগানের এই আপাত দ্বন্ধ-সংঘাত মিশ্রণ নিয়ে সে যেমন বেড়ে উঠে,চলতে থাকে, সমাজ বিজ্ঞানীরা সেখানে এসে বলেন এখান থেকে তার মূলত চাওয়া-পাওয়ার জীবন চলতে চলতে চাওয়া থেকে না পাওয়া কিংবা অতি পাওয়া থেকে সম্পদ কুক্ষিগত করার উদগ্র বাসনার জন্মলাভ এবং চলতে থাকা,আর এই দ্বন্ধ-সংঘাত থেকে বিজ্ঞান শাখা-প্রশাখা মেলে সাইকোলোজীর মাত্রিক হয়ে কখনোবা পদার্থ রসায়ন জীব বিজ্ঞানের নানা সূত্র জন্মলাভ ও ফলবান করে তুলে মানব সভ্যতা যেমন বিকশিত করে তুলেছে,একই সাথে জ্ঞানের আধার, জ্ঞানের ভান্ডার খুজতে ও প্রসারণে নানা বিজ্ঞানী, নানা সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, নৃতাত্ত্বিকদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে চলেছে, কর্মে সঞ্জীবনী শক্তি চালনা করে চলেছে-সবই জীবন ও জীবিকার তাগিদে, জীবন যেন বয়ে চলেছে অনবরত বহতা নদীর মতোই।
নানা বিজ্ঞানী নানা সমাজ বিজ্ঞানী নানা সাহিত্যিক শিল্পী তাই প্রতিনিয়ত চলতে থাকেন, যতক্ষণ না তার জীবন প্রদীপ মৃত্যু নামক অবধারিত চিরন্তন সত্যের কাছে পরাভূত ও হার না মানে।এইভাবে সারা জীবন উদগ্র বাসনা, প্রতিষ্টা-প্রতি-পত্তি পেতে চলতে চলতে একসময় এসে সব শেষ হয়ে যায়।নশ্বর পৃথিবীর সব মায়া-মমতা ছেড়ে সম্পূর্ণ একাকী, একেবারে একাকী, কেবল বাশের খাটিয়ায় শুয়ে সাদা কাপড়ে অসহায় ভাবে মাটির ঘরে চিরস্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা হয়ে যায়-যেতে হয়, এটাই যে একমাত্র নয়তি, তা থেকে রক্ষার কোন উপায় নেই, কোন পথ কোন সাইন্স, কোন শাস্র, কোন তত্ত্ব, কোন আধুনিক মারনাস্র রক্ষা করতে পারেনি, পারবেনা, সম্ভবও নয়।একদিন যে বিশাল সম্পদ, বিশাল ক্ষমতা, হাজারো লাখো সঙ্গী সাথী ছিলো, স্ত্রী,পুত্র,আত্মীয়-স্বজন বেষ্টিত ছিলো, তারা সব পর হয়ে যায় -কারণ কোন কিছুই সঙ্গে যায়না, যায় শুধু নিথর দেহ। অথচ মানুষ কখনো তার এই স্থায়ী ঠিকানা মাটির ঘরের সম্পদ বানানোর জন্য কখনো তেমন কোন প্রতিযোগীতা, তেমন কোন কসরত করেনা, যেমন করে থাকে এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া-মমতার জন্য।
মাটির এই কবরের ঘরে যখন একজন মানুষকে শোয়ানো হয়, তার অল্প কিছু পরেই মুনকীর-নাকীর নামক দুই ফেরেশতা এসে কবরে শায়িত সেই মানুষটিকে উঠিয়ে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন।কোরআন,হাদীস যে সব প্রশ্নের কোন কিছুই গোপণ করেনি, যেমন করে অজানা থাকে আমাদের বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন-পত্র।কোরআন ও হাদীস মানুষের কল্যাণের জন্যই অবতরণ হয়েছিলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারাজীবন মানুষের কল্যাণের জন্য অকাতরে নিজের আরাম-আয়েশের কথা ভুলে গিয়ে আল্লাহর দিকে মানুষকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফে পরিস্কারভাবে মুনকার-নাকীরের সওয়াল-জওয়াবের কথা যেমন বলা হয়েছে, হাদীস শরীফেও সেই ভাবে সওয়াল-জবাবের কথা বলা হয়েছে। তিনটি প্রশ্ন কোরআন ও হাদীসের আলোকে হলোঃ ১) তোমার রব কে? ২) তোমার দীন কি? ৩) মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় তুমি কি বিশ্বাস,আক্কিদা,ধারণা পোষণ করতে বা বলতে?
বলা বাহুল্য মুসলিম অমুসলিম সকলকেই আল্লাহ ওয়াজ্জাল্লা যেমন দুনিয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়েছেন, একইভাবে কবরের মধ্যে আল্লাহ ওয়াজাল্লাহ পর্দা উঠিয়ে দিয়ে লাইভ অবস্থায় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতিটি মানব সমাজের নর-নারী তথা মুসলিম-অমুসলিম সকলকেই মুনকীর নাকীর সওয়ালের সময় দেখিয়ে বলবেন, কাউকেই এক্ষেত্রে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দর্শন থেকে বঞ্চিত করা হবেনা, পার্থক্য শুধু মুসলমান ঈমানদারকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম ধরে দেখিয়ে বলবেন, অমুসলামান এবং বেঈমানদের হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু দেখিয়ে বলবেন, এই লোকটি সম্পর্কে দুনিয়াতে তুমি কী আক্কিদা পোষণ করতে?যারা ঈমানদার তারা তো সাথে সাথে আশ হাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশাহাদু আন্না মোহাম্মাদান আব্দুহু ওয়ারাসুলুহু- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজেই পড়ে ফেলবে। আর যারা অমুসলমান, মুসলমান অথচ নামায ক্কালাম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নত ও তরীকাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেননাই, তারাতো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিনতে পারবেননা। মূলত এই প্রশ্নের ফায়সালার উপরই একজনের বেহেশত-দোযখ নির্ধারিত হয়ে যাবে অনন্ত কালের জন্য, কবরের জীবনে।
সহীহ বোখারী শরীফে সাতাশ বার এসেছে এই তিন নম্বর সওয়াল জওয়াবের কথা, এবং মূলত তিন নম্বর প্রশ্নের কথাই বারে বার জোর দিয়ে বলা হয়েছে, বেহেশত-দোযখ এই প্রশ্নের উপরই নির্ধারিত হয়ে যাবে।মূনকার নাকীর তিন নম্বর প্রশ্নের জবাবে যদি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারেন, তখন মূনকার নাকীর দোযখের দরজা দেখিয়ে বলবেন তোমার জন্য নির্ধারিত ছিলো দোযখের আযাব, কিন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিনার কারণে দোযখের আযাব বদলিয়ে বেহেশতের দরজা উম্মুক্ত করে দিয়ে যাবেন অনন্ত কাল তথা ক্কেয়ামত অবধি।কারণ এক ও দুই নম্বর প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রায় সকলেই যেমন এক কথা বলবে, অর্থাৎ আল্লাহ পাককেতো প্রায় সকলেই মানে, কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন নামে গড, প্রভূ,দেবতা ইত্যাদি নামে আল্লাহর আস্তিত্ব স্বীকার করে, দ্বীনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন নবীর উম্মত বিভিন্ন উত্তর দিবে, যেমন ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতেরা বলবে ঈঞ্জিল কেতাব থেকে তাদের ধর্মের কথা বলবে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র মোমিন, মুসলমান এবং আল্লাহর নেক বান্দাই বলবেন আমার নবী শেষ নবী আল্লাহর রাসুল মোহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আর এই প্রশ্নের ফায়সালার উপরই বান্দার দোযখ-বেহেশত নির্ধারিত হবে কবরের জীবনে।
রাসূলুল্লহা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তারাই চিনতে পারবেন, যারা দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় হুজুরের সূন্নত ও তরীকা মোতাবেক জীবন যাপন করে চলেন, নামায,রোযা, হজ্জ্ব,যাকাত নিয়মিত হুজুরের তরীকা ও সূন্নত মোতাবেক আদায় করেন।বেশী বেশী করে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ করেন, সালাম পেশ করেন।মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ২২ পারার ২রা রুকুতে ৪১ নম্বর আয়াতে ঈয়া আইয়্যূহাল লাজিনা আমানুজকুরুল্লাহু জিকরান …আল্লাহ পাক তিনির জিকির করার কথা যখনই বলেছেন তখনই সাথে সাথে বলা হয়েছে,হে লোক সকল তোমরা মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ কর, কারণ আল্লাহ পাক স্বয়ং তিনির মাহবুবের উপর দুরুদ পেশ করেন, ফেরেশতা সকল এবং কূল-মাখলুকাতের সকল কিছুই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ শরীফ পেশ করে থাকেন।কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক তিনির মাহবুবের উপর ওরা ফায়না লাকা জিকরাক বলে রাসূলুল্লাহর জিকির করেছেন।কোরআন শরীফের ২২ পারার ২রা রুকুতে ৫৬ নম্বর আয়াতে যেমন বলা হয়েছে,ইন্নাল্লাহা ওয়ামালা ইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নাবিঈয়ী ইয়া আঈয়্যু হাল লাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লিমু তাসলীমা, এই রকম অনেক আয়াতে করীমা রয়েছে।আল্লাহ পাক নির্দেশ করেছেন, যখনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম নেওয়া হয় তখনই যেন সালাত ও দুরুদ পড়া হয়।স্বয়ং আল্লাহর রাসূল একদিন মসজিদে নববীতে যখন খুৎবা দিতে মিম্বরে উঠেন, দ্বিতীয় সিড়িতে যখন পা রাখেন তখন জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী নিয়ে এসে বলেন ধ্বংস হয়ে যাক সেই সকল, যার সামনে আল্লাহর নবীর নাম নেওয়া হলো অথচ দুরুদ পাঠ করলোনা,এর জবাবে আল্লাহর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমীন। জিব্রাইল বলেছেন, নবী করীম আমীন বলেছেন,এখানে একেবারে সীল মোহর মারা হয়ে গেছে। বোখারী শরীফ, তিরমিয শরীফ,মুসলিম শরীফ সহ প্রায় সকল হাদীস ব্যাখ্যাকারীদের বর্ণনায় এই হাদীসটি পাওয়া যায়।
সহীহ মুসলিম শরীফে পৃষ্টা নম্বর ২১৬, হাদীস নম্বর ৪০৮ এ সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত আছে যে, যে কেউ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা তার উপর দশ রহমত নাজিল করবেন।সাঈয়েদুনা আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত আছে যে, যে কেউ একবার দুরুদ পড়বেন, আল্লাহ পাক তার উপর দশ রহমত নাজিল করবেন, দশ গোনাহ মাফ করে দিবেন (সহীহ আল-ঈহসান বিত তারতীব, পৃষ্টা ১৩০, ভলিউম ০২, হাদীস ৯০১)।
সূনান ক্কুবরা পৃষ্টা নম্বর ৩৫৩, হাদীস নম্বর ৫৯৯৫ তে সাঈয়েদুনা আবু ঊম্মাহ রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি শুক্রবার তিনির উপর দুরুদ শরীফ কসরতের সাথে পাঠ করার জন্য, কারণ ঐদিন স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের দুরুদ শরীফ পেশ করা হয়ে থাকে,যে বেশী বেশী দুরুদ পড়বে ক্কিয়ামতের কঠিণ বিপদের দিনে সে বা তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হবে।আল-তারগীব ওর তারতীব এর ভলিউম নম্বর ০২ এর পেইজ নম্বর ১৩৩, হাদীস নম্বর ৯০৮ হতে সাঈইয়েদুনা আবু মূসাদের বর্ণনা হতে ও একই হাদীস পাওয়া যায়।একই বর্ণনা রয়েছে ফিরদাঊস আল আকবর এর হাদীস নম্বর ৮২১০, পেইজ নম্বর ৪৭১, ভলিউম নম্বর ২ তেও।দুরুদ শরীফ পাঠে গোনাহ যেমন মাফ হয়, কেয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যাবে, একই সাথে সকল প্রকারের হালাল মনোবাসনা ও মুসিবতের সময় এর বরকতে উদ্ধ্বারে মহৌষধের মতো কাজ করে।আর দুনিয়াতে যে প্রতিদিন কসরতের সাথে দুরুদ পেশ করবে, কবরে আল্লাহর রাসূলের পরিচয়ে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল মুনকার-নাকীরকে বলবেন, এই বান্দার পরিচয় বরং আমিই দেবো।
হাদীস শরীফ হতে বর্ণিত আছে যিনি দিনে হাজার বার দুরুদ শরীফ পড়বেন নিয়মিত, মৃত্যুর আগে জান্নাত দেখে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন।হাদীস শরীফে উল্লেখিত আছে যে, শুক্রবার জুমআর দিন আসরের নামাজের পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ৮০ বার- আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মাদানিন নাবিঊল ঊম্মিঈয়ী ওয়ালা আলিহী ওয়া সাল্লিম তাসলীমা – এই দুরুদ শরীফ পাঠ করলে ৮০ হাজার বৎসরের গোণাহ যেমন মাফ হবে, সওয়াব ও হবে এই পরিমাণ।শুক্রবার জুমআর দিনে ও ষোবে জুমাআর আগের রাতে ফেরেশতারা সোনার কলম-কাগজ হাতে নিয়ে জমিনে বেরিয়ে পড়েন যারা কসরতের সাথে দুরুদ পড়েন, তাদের নাম লিখে জমা করার জন্য।সুতরাং শুক্রবার বেশী বেশী করে দুরুদ পাঠ করা উচিৎ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বলেছেন, এট মুসনাদ ঈমাম আহমদ হাদীস নম্বর ১৬৬৪ এ ভলিউম ১ পেইজ নম্বর ৪০৭ তে বর্ণনা করেছেন, যা দারুল ফিকর, বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যে কেউ আল্লাহর নবীর উপর একবার দুরুদ পাঠ করলে আল্লাহ পাক তার উপর যেমন অগণিত রহমত নাযিল করবেন, তেমনি তাকে নিরাপদ রাখবেন।তিরমিয শরীফে (ভ-৪,পৃ-২০৭,হাদীস ২৪৬৫,দারুল ফিক্কর) সাঈয়েদুনা ঊবাইব বিন ক্কাব বলেছেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, আমি আমার সারাটা সময় দুরুদ শরীফ তেলাওয়াতে কাঠিয়েছি, জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এতেই তোমার সব চিন্তা, সমস্যা দূরীভূত করার জন্য যথেষ্ট।
মূসনাদ আবি ঈলা ভ-৩, পৃ-৯৫, হাদীস ২৯৫১, দারুল-কুতুবুল ইমিয়ায় বর্ণনা করা হয়েছে, দুই জন মুসলমান যখন মিলিত হন সাক্ষাতের জন্য, তখন একে অন্যের সাথে হেন্ড শেক করার সময় যদি দুরুদ শরীফ পড়েন, তবে সাক্ষাত শেষ হওয়ার আগেই তাদের দুজনের পেছনের সকল গোণাহ আল্লাহ পাক মাফ করে দেন।
কসরতের সাথে নিয়মিত যে বা যারা দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্কেয়ামতের দিন ঐ ব্যাক্তির জন্য শাফায়াত ওয়াজিব এবং ফিরদাউস আল আকবর, ভ-৫,পৃ-৩৭৫, হাদীস নম্বর ৮২১০ এর রেফারেন্স এই বর্ণনা উল্লেখিত আছে।
ক্কাণজুল ঈমান এ ভ-১, পেইজ ২৫৫, হাদীস ২২২৯ তে বলা হয়েছে, যে কেউ প্রতিদিন ১০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করলে, আল্লাহ পাক তার ঐ পরিমাণ ইচ্ছা পূরণ করবেন, যার তিরিশটি দুনিয়াতে এবং সত্তরটি আখেরাতের জন্য মওজুদ থাকবে।
ওলামায়ে কেরামদের বর্ণনাতে পাওয়া যায়, কোন দোয়াই আল্লাহর দরবারে ক্কবুল হয়না বা পৌছেনা, যদিনা সেই দোয়ার শুরুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরুদ শরীফ পড়া হয়, দোয়ার শেষ করাও উচিৎ দুরুদ শরীফ দিয়ে, তাহলে এর বরকতে আল্লাহ পাক বান্দার দোয়া কবুল করবেন বলে অসংখ্য রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে।একবার সাহাবী হাসান রাজিআল্লাহু তাআলা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে মসজীদে নববীতে নাত পড়েছিলেন, যাতে হূজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব খুশী হয়ে হযরত হাসানের জন্য দোয়া করেছিলেন, আর সেই নাতের ভাষা ছিলো এই রকম, আপনার মতো কেউ এই আসমান ও জমিনে না আমি দেখেছি, না কেউ আপনার মতো কাউওকে এখন পর্যন্ত দেখেছেন, আপনি যেমন চেয়েছিলেন, আল্লাহ পাক আপনাকে তেমনভাবেই পয়দা করেছেন।আমীরুল মোমেনীন দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনূল খাত্তাব বলেছেন, দুরুদ শরীফ পাঠ ব্যাতিত কোন দোয়াই আল্লাহর দরবারে পৌছেনা।
দালাইলাল খাইরা কিতাবে বর্ণিত আছে, যা খাশফুল ঘাম্মা অন জামি উল উম্মাহ কিতাবের পেইজ নম্বর ৩২৫ এর ভলিউম ১ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উর্দ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, যে বা যিনি এই দুরুদ শরীফ নিয়মিত পড়বেন, এশার নামাজের পরে, দোয়া দুরুদ তেলাওয়াত করে ওজুর সাথে এই দুরুদ পড়ে শুয়ে পড়বেন, আল্লাহর রহমতে তিনি বা তার পক্ষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে জিয়ারত নসীব লাভ করবেন, আর যিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জেয়ারত লাভ করবেন, কেয়ামতের দিন তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হবেন, আর যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হবেন, দর্শন লাভ করবেন, তিনির জন্য কেয়ামতের ময়দানে হুজুরের শাফায়াত, সুপারিশ লাভ করবেন, আর যার জন্য শাফায়াত হবে, তিনি হুজুরের হাতের দ্বারা হাউজে কয়সরেরে পানি পান করবেন। আর দুরুদ শরীফ হলো-
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা রোহী মোহাম্মাদিন ফীল আরোয়াহী ওয়ালা জাসাদী ফীল আজসাদী ওয়ালা ক্কাবরীহী ফীল ক্কুবুরী
সব শেষে প্রকৃত কথা হলো, একজন মোমিন, সাচ্ছা ঈমানদার মুসলমান কখনো অন্ধকার সাড়ে তিনহাত ঐ কবরের ঘর কে ভয় পায়না, কারণ সাচ্ছা ঈমানদার মুসলমান কবরের ঐ অনন্ত কালের বাড়ীতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সরাসরি দেখা-সাক্ষাতের স্থান হিসেবে মনে করে থাকেন।আর আসলেইতো কবর হলো মোমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নবীকে সামনা সামনি দেখার জায়গা।আর যে বা যারা আল্লাহর নবীর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদ্গ্রীব, তাদের জন্য কবরের ঐ জিন্দেগীতো বড় লোভনীয় বসত বাড়ী, তিনি বা তারাতো সারাক্ষণই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নত ও তরীকা মোতাবেক এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করে চলেন।মনে রাখা দরকার কবরের ঐ জিন্দেগীতে নিজের আমল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কসরতের সাথে দুরুদ শরীফ পড়া, কোরআন, সুন্নাহ মোতাবেক আমল ছাড়া আর কোন কিছুই সঙ্গী হবেনা।প্রত্যেকের তাই কবরের জীবনের জন্য ফিকির ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাল্লুক মজবুতের সাথে গড়ার ব্যবাস্থা করা উচিৎ।
(পূণশ্চঃ দালাইলা খাইরা (এটা মূলত হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে মোবারকের উপর দুরুদ পেশ) কিতাব খানি মিসরের যে প্রখ্যাত আলেম লিখেছেন, ২০ বছর পর সেই আলেমের কবর খুলে দেখা গেছে, তিনির লাশ কাফনের কাপড় সহ সব কিছুই একেবারে অক্ষত ও অবিকল অবস্থায় আছে, যেন সদ্য কিছু সময় আগে তাকে কবরে সমাহিত করা হয়েছে )।
6th August 2012, UK