আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের আগাম নির্বাচনী ষ্ট্রাটেজীঃএবার ভারতীয় নয়া মডেল -রাজনীতির নয়া সমীকরণঃবিএনপি আউট, এরশাদ সহ ছোট দলগুলো ইন-
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
tweet@salim1689
রাজনীতির মাঠ আবার ধীরে ধীরে সরগরম হতে শুরু করেছে, মাঝখানে রোজা ও ইফতার রাজনীতি করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মী সমর্থক ও জনগণকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা বেশ লক্ষ্যণীয় ছিলো।মাঝে-মধ্যে বিএনপির ফখরুল আর আওয়ামীলীগের হানিফের দুএকটি তীর্যক ও জোরালো বক্তব্য ছাড়া মাঠের রাজনীতি একেবারেই স্থবির ছিলো, একথা নির্দ্দ্বিধায় বলা যায়।এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফর, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়ার সৌদী আরব সফর আর এরশাদের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সহ ক্ষমতাসীন সকল উর্ধতন মহলের সাথে সাক্ষাৎ রাজনীতির মঞ্চে বেশ নাটকীয় ঘটনার আগাম আলামত হিসেবে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।সকল সফর ছাড়িয়ে এরশাদ সাহেবের ভারত সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। এরশাদের এই সফর আমাদের আগামী রাজনীতির গতি-পথের অনেক বন্ধ জানালার নতুন মাত্রা কিনা এনিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে রয়েছে নানান মত, তবে ক্ষমতাসীন ভারতীয় মহলে এরশাদের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে নতুন এক সিগন্যাল হিসেবে ডিপ্লোম্যাট বিশ্লেষকদের প্রায় সকলেই একমত পোষণ করেছেন।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বছর খানেক পর অনেকটা নাটকীয়ভাবে সংবিধান সংশোধনী এবং তড়িঘড়ি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধান থেকে বাতিল সহ ক্ষমতাসীন নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বুঝতে বাকী থাকেনা যে, আওয়ামীলীগ বেশ আগে থেকে তার নিজস্ব প্ল্যান-পরিকল্পণা মোতাবেক বিএনিপকে সব সময় বেকায়দায় ফেলে আগামী নির্বাচনী যেকোন ভাবেই হউক পার পেতে চায়।আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক পরিকল্পণার অংশ হিসেবেই আস্তে-আস্তে বিএনপিকে একের পর এক বেকায়দায় ফেলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে কোনভাবেই দল এবং আন্দোলন ও জোট গোছানোর কোন ধরনের সুযোগ দিতে চাচ্ছেনা।সে কারণে সরকারের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে, যেন তেন ভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে অথবা বিশেষকরে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় সকল নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রেখে সাধারণ নির্বাচন করতে চায়।এলক্ষ্যে আওয়ামীলীগ তার ষ্ট্র্যাটেজী বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।অবস্থা বেগতিক দেখলে সরকার যেকোন মুহূর্তে আগাম নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সব ধরনের ব্যাবস্থাই করে রেখেছে।খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও জোট নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ছাড়াও দুদুক নামক নখ-দন্তহীন সরকারের আরো এক আজ্ঞাবহ প্রতিষ্টান এখন বেশ সক্রিয়।এ ছাড়াও রাজনীতির মাঠে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপ, দল, জোট, ও নাগরিক ঐক্যের নামে বিভিন্ন সংগঠণের জন্ম, জনমত যাচাই-বাছাই একের পর এক করে চলেছে।হঠাৎ করে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার নের্তৃত্ত্বে নতুন ফ্রন্ট ঘোষণা, মাত্র কিছুদিন আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নের্তৃত্ত্বাধীন নাগরিক ঐক্য আত্নপ্রকাশ, নির্বাচনে এই সব ফ্রন্ট ও ঐক্যের তিনশত আসনের প্রতিদ্বন্ধিতার ঘোষণা আওয়ামীলীগের আগাম নির্বাচনী প্রচারের প্রাক-রিহার্সাল হিসেবেই মনে হচ্ছে।
আওয়ামীলীগ এবং তাদের ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও সাংসদদের অনেকেই জানেন যে বিএনপি সহ বিরোধীদলীয় জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জোরালোভাবে উপস্থিতি তাদের জন্য ভরাডুবির কারণ হবে, কেননা মিডিয়ার বদৌলতে এখনকার বিশ্ব কোন না কোন ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনেক স্বচ্ছ ভুমিকা রাখার ও জ্ঞাত হওয়ার ফলে আগের মতো ব্যালটবাক্স যথেচ্ছভাবে ভোট ভরা সকল ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে।আবার নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাবস্থা হলে এরশাদ সহ ছোট-বড় অনেক দলগুলোর অবস্থান শেষমুহূর্তে কোন দিকে যাবে, তা নির্ভরতার সাথে এখনো বলা মুস্কিল।আর সেই পথ পরিস্কারের সকল বন্দোবস্ত আওয়ামীলীগ বেশ ভালোভাবেই করে রেখেছে।
আওয়ামীলীগের টার্গেট লিষ্টে যেমন আছেন মওদূদ আহমদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু,মুফতী ফজলুল হক আমিনী, নতুন প্রজন্মের জামায়াত নের্তৃবৃন্দ, তেমনি আছেন কাদের সিদ্দীকী, আ স ম আব্দুর রব, ডঃ কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী সহ আরো অনেকেই।সে লক্ষ্যেই আওয়ামীলীগ তার নির্বাচনী পরিকল্পণা গুছিয়ে রেখেছে, আপাতত এই সব দলগূলোর কর্মকান্ডে তাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
রাজনীতিতে হঠাৎ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ সাহেবের ভারত সরকার কর্তৃক আতিথেয়তা নতুন কোন বিষয় নয়, বরং বলা যায়, আওয়ামীলীগ ও তার ভারতীয় বলয়ের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সময় এরশাদ সাহেবকে ভারত কর্তৃক লাইম লাইটে আনা হয়েছে, আওয়ামীলীগের আগাম নির্বাচনী পরিকল্পণার অংশ হিসেবেই।এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি একক কিংবা জোটগতভাবে মহাজোটের ভিতর কিংবা বাইরে থেকে নির্বাচন যেভাবেই করুন না কেন, তাতে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী পারপাস সার্ভ ছাড়া অন্য কিছুই হবেনা।আওয়ামীলীগ এবং ভারত সরকার দুভাবেই নির্বাচনী ট্রাম্প কার্ড এরশাদ সাহেবের টেবিলে দিয়ে রেখেছে, যেদিকে খেলবেন, আওয়ামীলীগ এবং এরশাদের লাভ বৈ ভিন্ন কিছু হবেনা।তবে সকল হিসাব-নিকাশ উলোট-পালট করে দিতে পারে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ্ব নির্বাচনমুখী আন্দোলন ও প্রস্তুতি।
বাংলাদেশের উত্থান-পতন ও রাজনীতির সকল ঘটনায় যিনি পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে থাকেন, সেই কাপালিক দাদা সিরাজুল আলম খান আবারো রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সক্রিয় হওয়াতে রাজনৈতিক ফর্মুলার এই নয়া সমীকরণ নতুন মোড় নিতে চলেছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের প্রাক্কালে সেখানে চিকিৎসাধীন সিরাজুল আলম খানের খোজ-খবর, নিউইইয়র্কের খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের সাথে লিয়াজোর অংশ হিসেবেই আ স ম আব্দুর রব, কাদের সিদ্দীকী, ডঃ কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আর ভারতের আশীর্বাদে শেষ মুহুর্তে এরশাদ সহ জাতীয় পার্টির অংশ গ্রহণে জোটবদ্ধ্বভাবে নির্বাচনী ষ্ট্র্যাটেজী বলা যায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।যেখানে মান্নার নাগরিক ঐক্য, আর হুদার নয়া ফ্রন্টের ও আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না।আমিনীর নের্তৃত্তে ইসলাম পন্থী জোট সহ তরুণ প্রজন্মের জামায়াতীদেরও একীভূত হওয়ার ফর্মূলা নিয়ে এখন সরকারের এজেন্ট ও আন্তর্জাতিক লবী মাঠে সক্রিয় বলা যায়, দেখা যাক সে উদ্যোগ কতোটুকু সফল হয়।এর বাইরে কিছু নাগরিক ও এনজিও ভিত্তিক সংগঠণকে এর অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে জামায়াত দলগতভাবে অনেক নাকাল অবস্থায় রয়েছে, আন্তর্জাতিক মুরুব্বীরাও চাইছে, এর বিচারের মাধ্যমে জামায়াতের স্বচ্ছতার চারিত্রিক প্রকাশ, জামায়াত তার রাজনৈতিক কৌশল তাই স্বভাবগত কারণেই বিএনপির উপর ভর করে পার পেতে চাইছে, পাশাপাশি সরকারকে চাপে রাখার কৌশল জামায়াতের জন্য এখন অনেকটা বুমেরাং হতে চলেছে।কারণ সরকার জামায়াতের জন্য নমনীয় এবং হার্ডলাইন-দুই নীতিতে অগ্রসর হওয়ার ফলে আগাম নির্বাচনের এই ইস্যূতে এখন আর জামায়াতকে খুব একটা ছাড় দিতে রাজী নয়।বিএনপি বোধগম্য কারণে এবং দলীয় কোন্দল ও সন্দেহ অবিশ্বাসের দোলা চলে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন বেশীদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা দেখছেনা।তার উপর রয়েছে, কেন্দ্রীয় দলীয় নেতাদের সুবিধাবাদী ও সরকারের সাথে লিয়াজো মেইনটেইনের ভূমিকার কারণে এই নের্তৃত্ত্ব নিয়ে আগামীদিনে সরকার বিরোধী আন্দোলন খুব একটা চাঙ্গা করা যে খুব একটা সহজ সাধ্য নয়, বিএনপি হাই কমান্ড তা ভালো করেই জানে, সরকারও তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেই বিএনপিকে তাই নির্বাচনের বাইরে কিংবা নাস্তানাবুদ অবস্থায় যেন-তেন ভাবে রাজনৈতিক ট্র্যাপে ফেলে নির্বাচনী বৈতরণী পার পাওয়ার সব ব্যাবস্থা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
প্রশ্ন হলো বিএনপির অনুপস্থিতিতে আগাম নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে? আজকের যুগে ভারত এক বৃহৎ শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ, ভারতের রয়েছে শক্তিশালী মার্কিন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য লবী ও কূটনৈতিক শক্তিশালী অবস্থান, যেমন করে রয়েছে এই সব দেশের সাথে তার আর্থিক, রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক শক্তিশালী বন্ধন ও স্বার্থ সমানভাবে, আর ভারতের স্বার্থের সাথে অভিন্ন স্বার্থ মার্কিন ও ইউরোপীয়দের থাকার ফলে আগাম নির্বাচনে আন্তর্জাতিক প্রভাব আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার যে করবেনা, তা অনেকটা ধরেই নেওয়া যায়।কিন্ত তার পরেও বলা যায়, সকল হিসাব-নিকাশ কিন্ত তার পরিকল্পণা ধরে এগুয়না।মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপী লবী যদি হূট করে বিএনপির বলয়ে চলে যায়, আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অভাবনীয় সাফল্য সব হিসাব-নিকাশকেই উলোট-পালট করে দিতে পারে।স্বাস্থ্যগত কারণে বেগম জিয়ার নের্তৃত্ত্ব যদিও এখন অনেকটা ঝুকিপূর্ণ ও প্রশ্নসাপেক্ষ তথাপি, আন্দোলন, সংগ্রাম ও দলগোছাতে তার অতীত অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য সরকারের হিসেবে ও কৌশলে কুঠারাঘাত করার জন্য যে যথেষ্ট- একথা অকপটে অনেকেই স্বীকার করবেন।তাছাড়া, কাপালিক বলে খ্যাত সিরাজুল আলম খান তার নিজস্ব ফর্মূলা বাস্তবায়নে শিষ্য আ স ম আব্দুর রবকে দিয়ে যেকোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে এখনো সিদ্ধহস্ত, তা অবিশ্বাস করা দুস্কর।সরকারের আগাম সিগন্যাল ও সমঝোতা মোতাবেক সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমদের দেশে আগমণের সংবাদ অনেক নতুন নতুন রাজনীতির স্থবির ও বন্ধ দোয়ার খোলার ইঙ্গিত বহন করে।
tweet@salim1689
21st August 2012.