শুভ জন্মদিন ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস-

শুভ জন্মদিন ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস-

গ্রামীণ ব্যাংকের জনক এবং ক্ষুদ্র ঋণ নামক এই ধারণাকে সারা বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে নতুন এক মাত্রায় পরিচিতি করে দিয়ে একে বাস্তবায়নের পথ বাতলে দিয়েছেন,নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র এবং এর জনগণকে যিনি অনন্য এক গৌরবের আসনে অধিষ্টিত করেছেন, আজ সেই ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের ৭৩ তম জন্মদিনে হাজারো লাখো-কোটি বাঙ্গালীর পক্ষ থেকে আজস্র-অগণিত ফুলেল শুভেচ্ছা।

আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ১৯৪০ সালের ২৮ শে জুন চট্রগ্রামের বাথুয়া গ্রামে জন্ম নিয়ে আপনিই প্রথম বাংলাদেশী,যিনি আমাদেরকে বিশ্ব সভায় এতো উপরে নিয়ে গেছেন,প্রতি নিয়ত খরা,বন্যা,জলোচ্ছ্বাস,টর্ণেডো,সিডর,আর হানা-হানি সংঘাতময়,চরম অসহিষ্ণু এক রাজনৈতিক সংবাদ ছাড়া বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম আমরা সাধারণতঃ হতে পারিনাই,এমনি এক সময়ে আপনি সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন বাঙ্গালীর অমর,অমিথ,অযুথ এক সংগ্রামের নিরন্তন নবতর কাহিনী,যা বিশ্বকে করেছে বিমুগ্ধ,বিমোহিত,একই সাথে আমরা হলাম সম্মানিত।

0২)

যুগ-যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত ব্যাংকিং ধারণা ও এর ঋণ প্রদান ব্যাবস্থাকে বলা যায় একরকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গরীব এবং প্রান্তিক জনগণের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সেটা পরিশোধের ব্যাবস্থা সম্বলিত নয়া এক ধারণার জন্ম দিয়ে ১৯৭৬ সালে আনুষ্টানিকভাবে জন্মদিলেন গ্রামীণ ব্যাংক নামক এক সুন্দর নয়া অর্থিক প্রতিষ্টানের,যা আজ আজকে বড় হতে হতে প্রায় ৫৩ লক্ষ গ্রাহককে ৫.১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ প্রদান করে চলেছেন।বাংলাদেশের প্রচলিত কোন ব্যাংক কিংবা কোন আর্থিক প্রতিষ্টান, এমনকি কোন এনজিও যেখানে হত-দরিদ্রদের মাঝে বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের কোন চিন্তাও করতে পারেনাই,আপনি সেক্ষেত্রে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশই শুধু নয়,সারা বিশ্বের কাছে অভূত পূর্ব এক নয়া এই মডেলের প্রতিস্থাপণ করে ভূয়সী প্রশংসিত হলেন।

০৩)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্দ্বের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনিসে ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বের সময় পালন করেছিলেন বিশ্ব জনমত গঠণে বলিষ্ট ভূমিকা,যে কারণে দেশ স্বাধীন হলে দেশ মাতৃকার টনে স্বপ্নের দেশ আমেরিকা ছেড়ে দেশে এসে যোগ দিয়েছিলেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।১৯৭৪ এর ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ আপনার চিন্তা-চেতনায় ও মনোজগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন আনে,ফলশ্রুতিতে শিক্ষকতা ছেড়ে চট্রগ্রামের জুবরা গ্রাম থেকে শুরু করেছিলেন,প্রান্তিক জনগণের জন্য, ব্যাংকে একেবারে তাদের দোর-গোড়ায় নিয়ে এসে অনেক ত্যাগ,অনেক কষ্ট,অনেক পরিশ্রমের ফলে তিলে-তিলে গড়ে তুলেন আজকের গ্রামীণ ব্যাংক।

আপনার এই নয়া মডেল আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত ও সমাদৃত।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্যের আয়ারল্যান্ড, সহ বিশ্বের অনেক দেশেই আজ আপনার প্রদর্শিত এই গ্রামীণ ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালু হয়েছে।ডঃ ইউনূসের কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরুস্কার অর্ডার অব ফ্রিডম পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন।এছাড়াও রয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরুস্কার।ভারত,জার্মানী, সহ আমেরিকার কংগ্রেসের উভয় সভাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদানের দূর্লভ গৌরবের অধিকারি আমাদের এই ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস।

০৪)

সারাবিশ্ব তার খ্যাতিমান কীর্তিমান ব্যাক্তিদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে থাকে,খ্যাতিমানদের সম্মানিত করে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ বরং নিজেদের ও নিজেদের জনগণকেই সম্মানিত করে থাকেন।বিশ্ব সব সময়ই তার দূর্লভ মেধা শক্তিকে সযত্নে লালন,পরিশীলন ও সম্মানিত করে থাকে।আজকের অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তের সর্বস্তরের জনগণ বিশ্বের এই সব সুখ্যাতির কদরের খবরা-খবর প্রতি মূহুর্তেই পেয়ে যান।ব্যাতিক্রম কেবল আমরা।আমরা যেন ব্যাক্তিগত রেষা-রেষি,জেদা-জেদি আর কোন্দলের কারনে একে অন্যকে সম্মানিত করাতো দূরে থাকুক,বরং কতোভাবে তাকে হেনস্থা করা যায়,সেই উৎসবে মেতে উঠি।এটা যেন আমাদের কালচারের অংশ হয়ে আছে।

ডঃ ইউনূস তার সারা জীবনের পরিশ্রম,মেধা,ঘাম,অকাতরে ঢেলে দিয়ে প্রচলিত ব্যাংকিং কাঠামোর বিরুদ্দ্বে মূলত সংগ্রাম করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্টাই শুধু করেননি,এই প্রতিষ্টানটিকে অনন্য এক অর্থিক লাভজনক বলা যায় এক বিশাল অর্থিক প্রতিষ্টানে পরিণত করেছেন।যত দূষ,ত্রুটি,বিচ্যুতি থাকুক না কেন,স্বীকার করতেই হবে ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের মতো প্রথিত যশা ব্যাক্তিত্ত না থাকলে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এতো বড় প্রতিষ্টান মজবুত আকারে গড়ে উঠতোনাই শুধু নয়,এই রকমের ব্যাংকিং ধারণার চিন্তাও করা যেতোনা।সুতরাং এই রকম অবস্থায় তারই গড়া প্রতিষ্টানে তাকে আজীবন এম,ডি করে রাখলে এমন কোন অন্যায় বা মহাযজ্ঞ কিংবা রাষ্ট্রের এমন কোন ক্ষতি হতোনা।আর ডঃ ইউনূসকে যদি তার পদ থেকে সরাতেই হবে,তাহলে অন্তত সসম্মানে সরানোর ব্যাবস্থা যে কোন ভাবেই হোক যে করা যেত-এটা সাধারণ জনগণও ভালো করে বুঝে।

০৫)

এখানে একটা বাস্তব ঘটনা না বলে লোভ সংবরণ করতে পারছিনা।আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের কাছে এক মা এসে বললেন, তার ছেলে গুড়ের প্রতি খুব আসক্ত,হুজুর যদি তাকে বলেন,মিষ্টি জাতীয় এই খাবার না খেতে তবে ছেলেটি হুজুরের কথায় তা ছেড়ে দিবে।হুজুর তাকে বললেন,কাল আসতে।কাল আসলে হুজুর বললেন,পরের দিন আবার আসতে।তৃতীয়দিন যখন উনি আসলেন তখন হুজুর ছেলেটিকে কাছে ডেকে নিয়ে যত্নের সাথে বুঝিয়ে বললেন মিষ্টির আসক্তি থেকে সরে আসতে।ছেলেটির মা পর-পর দুদিন আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে,হুজুর বললেন,তার কারণ আমি নিজেও তাতে আসক্ত ছিলাম,প্রথমে নিজে সেই অভ্যাস ত্যাগ করলাম,তারপর তোমার ছেলেকে উপদেশ দিলাম তা ছেড়ে দিতে।এই হলো আমাদের বিশ্ব মানবতার মুক্তির কান্ডারী বিশ্বনবীর কালচার।আমাদের নেতা-নেত্রীরা জন্মের পর থেকে অগণতান্ত্রিক ভাবে যুগের পর যুগ ধরে দলীয় প্রধানের পদ ধরে বসে আছেন,তাতে কিছু আসে যায়না,আর যিনি সৃষ্টিশীল কাজ করে দেখালেন,সফলতা আনলেন,সারা বিশ্বে আমাদেরকে সম্মানিত করলেন,তাকে তারই গড়া প্রতিষ্টান থেকে হেনস্থা করে নামানোর জন্য আমরা উঠে-পড়ে লেগে যাই।এই হলো আমাদের মেধার প্রতি সম্মান জানানো।এই যখন মন-মানসিকতা,তা হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কি করে সম্মানিত করবো?আফসোস আমাদের এই দীনতা,হীনতা,কবে যে আমরা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?

০৬)

আজকের জন্মদিনে বাঙ্গালীর অযুথ ভালোবাসা দিলাম আপনাকে,আপনি বেচে থাকুন আমাদের ভালোবাসায়,আমাদের পবিত্র শ্রদ্দ্বায়,শুভ হউক আপনার জন্মদিন ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস।আপনি এগিয়ে যান,আরো এগিয়ে যান,আমাদের নিরন্তর  ভালোবাসা রইলো আপনার চলার পথে।

Salim932@googlemail.com

tweet@salim1689

27th June 2012,UK

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *