Home » Featured » ফোর্সড ম্যারিজঃকেইসষ্টাডি ব্রিটেনের বাংলাদেশী পরিবার ও ছেলে-মেয়েরা

ফোর্সড ম্যারিজঃকেইসষ্টাডি ব্রিটেনের বাংলাদেশী পরিবার ও ছেলে-মেয়েরা

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

আজকের নর্থ ইস্ট অব ইংল্যান্ড তথা গোটা ইংলিশ মিডিয়া এবং সব কটা সহযোগী এজেন্সীর লীড শিরোনাম বাংলাদেশী পরিবার এবং মেয়েদের বিবাহ সংক্রান্ত ঘটনাবলী এবং এর নানান ব্যাবস্থার উদ্যোগ।এটা কেবল বাংলাদেশী পরিবার এর সীমাবদ্দ্ব নয়,বরং এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন পাকিস্তান,ভারত,শ্রীলক্ষা ছাড়াও কমবেশী সকল দেশেই আছে।ব্যাবধান হলো,কোথাও কম,কোথাও এর মাত্রা বেশী।শিক্ষা,সংস্কৃতি,অর্থনৈতিক অবস্থান,সামাজিক এবং পারিবারিক আবহ ও পরিবেশ এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী,যা সাধারণত ধর্মীয় যাতাকলের তথাকথিত মিথ্যা(সর্ব ক্ষেত্রে নয়,কিছু,কিছু ক্ষেত্রে)অজুহাতকে দায়ী করে প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করে ফায়দা লুটার ফন্দি-ফিকিরে সব জায়গায়ই প্রায় সমানভাবে দেখা যায়।ব্রিটেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের ডকুমেন্টারীতে,এমনকি খোদ বিবিসির জনপ্রিয় প্যানোরোমা অনুস্টানেও বেশ কয়েকবার এই সব বিষয় সবিস্তারে উপস্থাপন করা হয়েছে।কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে ছিলো,সেই তিমিরেই রয়েই শুধু থাকেনি,বরং এর ডাল-পালা বিস্তার লাভ করে আজকে আমাদের সমাজে এক বিরাট বোঝা হয়েই দেখা দিয়েছে,ফলশ্রুতিতে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিকগুলোর প্রধান-প্রধান শিরোনাম আজ আমাদের বাংলাদেশী পরিবার,যা রীতি-মতো এক ভয়ানক অবস্থারই ইঙ্গিত দিয়ে জানান দিলো।

আমাদের ট্রাডিশনাল পারিবারিক ব্যাবস্থা ও এর বন্ধন বলতে গেলে গোটা বিশ্বব্যাপী এক গৌরব ও সুনামের অধিকারী হয়ে আছে।সেই পারিবারিক বন্ধন যেন আজ ক্ষয় হতে-হতে এই ফোর্সড ম্যারিজের দূর্ণামের ভাগীদার বা এর মর্যাদায় এসে ঠেকেছে।

কেইস স্টাডিঃএক-বাবা,মা জন্মগত ভাবে বাংলাদেশী,জীবিকার তাগিদে সেই বহুকাল আগে থেকে ইংল্যান্ডে এসে পাড়ি জমান,প্রথমে একক ভাবে,পরবর্তিতে আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে স্থায়ীভাবে আবাস গড়ে তুলেন।এরই মধ্যে পরিবারের কোল বেধে আসে একের পর এক সন্তান।ব্যাবসা প্রতিস্টান গড়ে তুলে প্রতিষ্টা পেতে থাকেন শনৈ,শনৈ করে,এর পর ইচ্ছে হয় সমাজসেবা ও রাজনীতি করার।কমিউনিটি কর্মকান্ডের পাশাপাশি এক সময় জড়িয়ে পরেন মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠণে।রাত-বিরাত ব্যাবসা,আড্ডা,রাজনীতি – এই যখন উনার প্রতিদিনকার ডায়রী,তখন স্ত্রীও উনাকে পাল্লা দিয়ে ব্যাস্থ হয়ে পড়েন সামাজিকতায়।ঊভয়েই বেমালুম ভুলে যান ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক শিক্ষা,আদর্শ, এর সামাজিক মূল্যবোধ আর প্রাচ্যের সাথে প্রতিচ্চের সামঞ্জস্য রেখে পারিবারিক জীবনযাপন করা উচিত,বরং তার বদলে সব বাঞ্জালী নষ্ট হয়ে গেছে,অন্যকে নাস্তিক,মূর্তাদ,নানা আখ্যা ছাড়াও ইসলাম কেবল উনাদের মাঝেই,এমন ভাব-ফলশ্রুতিতে নিজ সন্তান-সন্তুতি বিগড়ে গিয়ে একে বারে যখন ঘর থেকে বের হয়ে পত্রিকার হেড লাইন হলো,ফোর্সড ম্যারিজ নামের উদ্ভট তকমাটা পুরো বাংলাদেশীদের ললাটে স্থাপন করলো,তখনই টনক নড়ে,আর দূষ গিয়ে পড়ে ইসলামের নামে ধর্মীয় বিধানের উপর।কি যুক্তিহীন সস্তা প্রচারনা,নিজের ভুলের নাশুল ভিন দেশী সংস্কৃতি আর নিজ ধর্মের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার ইউরোপীয় বাংলাদেশী নামকরণ,পত্রিকার শিরোনাম ফোর্সড ম্যারিজ।আমি বলিনা যে এই রকম ফোর্সড ম্যারিজ হয়না,হয়,কিন্ত সামাজিক অবক্ষয়,পারিবারিক যথাযথ মূল্যবোধের অভাব,যথোপযুক্ত শিক্ষার অভাব,আর্থিক টানা-পোড়েন,অন্ধ-গোড়ামী সব মিলিয়েই তা হয়ে থাকে।সেটা হয় অন্ধকার সমাজে,যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাব যেখানে,সেখানে বা সেই সমজে,কিন্ত তাই বলে এই ব্রিটেনে-সেটা একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই রইলো।

কেইস স্টাডিঃদুই-একই রকম পারিবারিক পরিবেশ,পরিস্থিতি,বাবা ব্যাবসায়ী,মা গৃহিনী।মেয়ে ব্রিটেনের শিক্ষায় এবং পরিবেশে লালিত।বাবা-মা মেয়ের মতামতের তোয়াক্ষা না করে বাংলাদেশ থেকে আগত সনভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলে হাতের কাছে পেয়ে মেয়েকে বিয়ে দিলেন,কাবিন নামায় নিলেন হাজার-হাজার ক্যাশ স্টার্লিং,ঝাক-ঝমক করে বিয়ের আয়োজন করলেন,বিয়েও হলো,বিয়ের রাতেই মেয়ে বাবা-মা-আত্তীয়-স্বজন কাউকে না জানিয়ে স্বামী বেচারাকে ফেলে উদাও।সোজা গিয়ে উঠলো ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে,বিভিন্ন এজেন্সী নড়ে-চড়ে বসলো,পুলিশকে জানানো হলো,পুলিশ ততপর হলো,ঘটনা অনুসন্ধানে,পাশাপাশি ভিকটিমকে ব্যাপক নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হলো।এত কিছুর পরও পরিবার হার মানতে নারাজ।বাংলাদেশী মাতব্বররী স্টাইলে তখনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদা ব্যাস্থ,ততক্ষণে টেমস নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।কারণ ইতিমধ্যে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ভিকটিম কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে ঊঠেছে,গোটা বাংলাদেশের সামাজিক,কালচারাল চরিত্র উদ্দ্বারে ব্যাতিব্যাস্থ।

কেইস স্টাডিঃতিন– মাধুরী নামের(ছদ্ম নাম)মেয়েটি ভালোবাসে তার সহপাঠি বন্ধু শেখরকে(ছদ্ম নাম)।যখন-তখন মেলামেশার ফলশ্রুতিতে মাধুরী যখন গর্ভবতী হয়ে পড়ে,মা-বাবা তখন মাধুরীর অমতে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় অন্য একজনের সাথে,তাও আবার একজন আলেম এর সাথে,যা কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয় গোটা বিষয়টি।কিন্ত মাধুরী বিয়ের রাতেই নব বরকে খুলে বলে সব কিছু,মাধুরী নব বরকে এটাও বলে তার গর্ভে তার প্রেমিকের সন্তান।নব বর তা মানতে চায়না,কারণ বাবা-মা বলে এটা ফালতু,শয়তানী কথা,বরও ভাবে এত টাকা-পয়সা খরচ করে বিয়ে করেছে,তার উপর দেশে মা-বাবা,ভাই-বোন তার উপর আশায় বসে আছে।তাই চুপ-চাপ থাকে।কিন্ত বিপত্তি বাধে মাধুরী চায় ডিএনএ টেস্ট করে এর সত্যাসত্য যাচাই করে নববরের কাছ থেকে ও পরিবারের কাছ থেকে চলে যেতে।ফলশ্রুতিতে ডিএনএ টেস্টে রেজাল্ট আসে মাধুরী প্রেগন্যান্ট,আবং এর পিতা নববিবাহিত বর নয়,বরং প্রেমিক।ফলশ্রুতিতে বরের ঘর ত্যাগ,আর মাধুরী গিয়ে উঠে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।

মোটামুটি এই হলো গোটা ইংল্যান্ডের ফোর্সড ম্যারিজের এই হালচিত্র,ব্যাতিক্রম যে নয় তা বলবনা।

এই নিয়ে আজ ইংল্যান্ডে তুলকালাম কান্ড মিডিয়াতে,সব কটা পত্রিকার সকালের সংস্করনে বাংলাদেশী মেয়েদের এই ফোর্সড ম্যারিজের উপর প্রধান শিরোনাম।ঘটনার বিবরনে উইয়ার সাইড উইমেন ইন নিড এর ডাইরেক্টর ক্লেয়ার ফিলিপসন বলেন,বর্তমানে বেশ কিছু বাংলাদেশী ইয়ং ওমেনরা তার সংগঠনের সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করার ফলে তিনি এবং তার সংগঠণ এই সব মেয়েদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।তিনি আরো বলেন,এই সব মেয়েরা তাদের পরিবার এবং নববিবাহিত স্বামীদের দ্বারা শারীরিক,মানষিক এবং যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।

ক্লেয়ার ফিলিপসন বলেন,এটা কোন কালচারাল ইস্যূ নয়,বরং এটা হিউম্যান রাইটস এবং নারীদের নির্যাতনের বিরুদ্দ্বে তাদের অধিকারের মানবিক এবং আইনগত অধিকারের বিষয়।তিনি আরো বলেন,এটা কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় কিংবা গোত্র,বর্ণ বা কোন নৃতাত্তিক কোন বিষয় নয়,বরং সম্পূর্ণ নারী নির্যাতনের বিষয়,যা সিরিয়াস ইস্যু।

ক্লেয়ার একটা কেইস উদাহরন হিসেবে টেনে বলেন,ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশী এই মেয়েকে জোর করে তার পরিবার গ্রামের এক বাংলাদেশীর সাথে বিয়ে দিতে যাচ্ছেন,যিনি দুই সপ্তাহ পর এখানে আসবেন এবং বিয়ে সম্পন্ন হবে খুব তড়িঘড়ি করে।যে কারনে ক্লেয়ার বলেন এটা কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়,কারণ প্রত্যেকেরই রয়েছে বেসিক মানবাধিকারের আইনগত অধিকার।

ক্লেয়ার ফিলিপস এবং তার উইমেন ইন নিড সংগঠণ মনে করে,তারা সম্প্রতি যে মেয়েটিকে ফোর্সড ম্যারিজের দুস্ট গ্রহ থেকে রক্ষা করেছেন,তারা মনে করেন,এই রকম আরো অনেক বাংলাদেশী মেইয়েদেরকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে,যা তাদের কাছে যথেস্ট তথ্যভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে।সে কারণে তারা মনে করেন বিষয়টিকে হাইলাইটেড করার দায়িত্ত সচেতন নাগরিক,সাংবাদিক,মিডিয়া মহলের এবং পুলিশের ও সাহায্য যথাসময়ে নেওয়ার জন্য সমাজ ও পরিবারে উদবুদ্দ্বকরণ প্রচারণা চালানো উচিত,নারীদের নৃগ্রহের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

তিনি বলেন,যদি কেউ এই ধরনের ফোর্সড ম্যারিজের স্বীকার হন,তবে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে প্রটেক্টিং ভালনারেবল পিপল ডিপার্টম্যান্ট এর পক্ষে পুলিশের ডিসিআই গ্যারি হিথারিংটন বলেন, আমারা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারতেছি উদ্ভূত সমস্যা এবং যে সব ইয়ং উইম্যান তাদের পরিবার থেকে এই রকম ফোর্সড ম্যারিজের সম্মুখিন হচ্ছেন,পুরোপুরিভাবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।আমাদের রয়েছে এই ব্যাপারে দক্ষ স্পেশাল টিম,যারা এই ভয়ংকর অবস্থা এবং রিস্ক সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়ে সাপোর্ট এন্ড এডভাইস এর পাশাপাশি আইনগত ব্যাবস্থা নিবে এবং উইম্যান ইন নিড সহ সকল গ্রুপের সাথে মিলে কাজ করে ভিক্টিমদের প্রটেক্ট করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

২০০৮ সালে দ্য চয়েস হেল্প লাইন লঞ্চ করা হয় গোটা দেশের ভিকটিম নারীদের ফোর্সড ম্যারিজের বিরুদ্দ্বে।স্পেশাল ট্রেইন্ড স্টাফ রয়েছে টেলিফোন হেল্প লাইনে সহায়তা করার জন্য।

তথ্যসূত্রঃসান্ডারল্যান্ড একো-৬/০২/২০১২ (মারিসা ক্যারাথুস),

ঊইয়ার সাইড উইমেন ইন নিড ৬/২/২০১২

Salim932@googlemail.com

6th  February 2012.

Please follow and like us:
Pin Share

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Follow by Email
YouTube
Pinterest
LinkedIn
Share
Instagram
error: Content is protected !!