সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বে যে সব বিদেশী বন্ধুরা নানাভাবে সহযোগীতা করেছিলেন,সেই সব বন্ধুদেরকে স্বাধীনতার ৪১ বছর পরে হলেও জাতীয়ভাবে সম্মান প্রদান করা হয়েছে।দেরিতে হলেও সরকারের এহেন সুন্দর কাজকে অবশ্যই প্রসংশা করতে হয়,সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাইনা।
মহাজোট সরকারের এহেন সুন্দর উদ্যোগকে অনেকেই নানানভাবে বিশ্লেষন করার চেষ্টা করতেছেন,আলোচনা,সমালোচনা করে চলেছেন,যা খুবই ইতিবাচক বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।গণতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থায় যা নিতান্তই অপরিহার্য।এরকম আলোচনা,বিশ্লেষণ গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে আরো জোরালো ভিত্তির উপর দাড় করিয়ে থাকে।আর গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই হলো নানান মত,নানান পথের মধ্যে দিয়েই কল্যাণমূলক সমাজব্যাবস্থা গড়ে উঠবে।গণতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থার সবচাইতে সুন্দর এবং উদ্দীপকমূলক বক্তব্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিষ্টঠল যথার্থই বলেছেন,মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব,সমাজবদ্দ্বভাবে চলতে ভালোবাসে,আরেকটু এগিয়ে তিনি বলেছেন,যে সমাজে বাস করেনা,সে হয় পশু না হয় দেবতা।
আমরাতো মানুষমাত্রই তাই সমাজবদ্দ্ব ভাবে সমাজেই বাস করি।আর সমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান অবস্থা,আর বিরাজমান ঘটনাবলী আর ঘটনাপ্রবাহের মধ্যদিয়েই হয়ে থাকে,এতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে,সেটাকে বাস্তবতার কষ্টিপাথরে নিয়ে এবং ইতিহাসের নানান তথ্য,উপাত্ত্য, সংগ্রহ করে,যাচাই-বাচাই করে পরিশীলিত করাতো সমাজবদ্দ্ব মানুষেরই কাজ।রাষ্ট্র কেবল মাত্র সেখানে নির্দেশকের বা পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে পারে।
০২) দাউদ হায়দার এক সময়ের সাড়া জাগানো সম্মানিত কবি,যার কবিতায় ঝড়ে পড়তো একসময় অজশ্র প্রাণের সশশ্র কবিতার কাব্যমালা।আজকের ইউরোপ প্রবাসী কবি দাউদ হায়দার তার গত লেখনীতে বেশ কিছু খুটি-নাটি বিষয় তুলে ধরেছেন,যা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।কবি দাউদ হায়দার যথার্থই বলেছেন বদরুদ্দিন ওমরের বইয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বে বিদেশী সেই অজানা বন্ধুদের সাহায্য-সহায়তার অনেক গল্প যথার্থই বর্ণিত আছে।সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সেই দিকটা অবশ্যই আগে থেকে ভেবে দেখা উচিৎ ছিলো।কবি দাউদ হায়দার এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবীদার,কারণ তিনি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন,এবারকার সম্মাননায় বেশ কিছু অহেতুক লোককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছেন,যা দেওয়া উচিৎ হয়নি।কিন্তু কবি দাউদ হায়দার,আপনারও কি উচিৎ ছিলোনা,আগে থেকে একজন দায়িত্ত সচেতন নামকরা কবি হিসেবে সরকারের সংশ্লিষ্টমহলে যোগাযোগ করে যথার্থ এবং সঠিক ব্যাক্তিকে যাতে সম্মাননা দেওয়া হয়-সেই ব্যাবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা,তাহলে আজকে অন্তত বিবেকের ধংশনে ধংশিত হতে হতোনা?
০৩) আকিদূল ইসলাম সিডনী প্রবাসী স্বনামধন্য কলাম লেখক,গবেষক। আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বে বিদেশীদের অবদানে সম্মাননা প্রদানে বেশ সুন্দর মানানসই কলাম লিখেছেন,সাথে সাথে এটাও লিখেছেন দেশের মুক্তিযোদ্দ্বাদের প্রতি অসম্মান দেখানোর কথা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন,যা বাস্তবতার নিরিখে যথার্থই এবং বলা যায় একেবারে টু দ্য পয়েন্ট এবং ডাইরেক্ট।কিন্তু আকিদুল ভাই,এটাতো স্বীকার করবেন,আমাদের বিজয়ের ৪১ বছর পরে হলেও এরকম একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত সরকার সারা বিশ্বের জনগণের সামনে তুলে ধরেছে,পাশা-পাশি মুক্তিযুদ্দ্বে বিদেশীবন্ধুদের অবদানের একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সাথে রাষ্ট্র কর্তৃক সম্মাননা প্রদানের যে সূত্রপাত করলো, সেটাকে আগামী প্রজন্ম এবং সরকার সমানভাবে আরো উন্নত এবং আরো আধুনিক ধ্যান-ধারনায় এবং যথাযথ সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবে,বিকশিত করে তুলবে।তাই কি নয়?
সবকিছুতেই সরকারের সমালোচনা করতে হবে-এই মানষিকতা থেকে অন্তত আপনারা যারা বিদেশ বিভূইয়ে,বিশেষকরে উন্নত বিশ্বে থাকেন,তাদের কাছথেকে এমনটা আশা করা বাতুলতা মাত্র,কারণ তাদের কাছ থেকে সমালোচনার সাথে সুন্দর,পজিটিভ দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য জাতি আশা করে।
০৪)কানাডা প্রবাসী মোল্লা বাহাউদ্দীন আরেকটু এগিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বের সম্মাননা দাতাদের মাফিয়াদের সাথে তুলনা করেছেন,যা রীতিমতো হলুদ সাংবাদিকতার নামান্তর।কানাডার মতো আধুনিক,উন্নত,রুচি সম্মত দেশের আলো-বাতাসে থেকে মাফিয়ার মতো এতো পচা,সস্তা শব্দ চয়ন মোল্লা বাহাউদ্দীনের কাছথেকে কিছুতেই কাম্য ছিলোনা।তবে তিনি যথার্থই বলেছেন, মুখ খোলার জন্য,যাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,তারা কি বললেই সব হয়ে যেত।কারণ অনেকের স্মৃতিশক্তিওতো দূর্বল হয়ে যেতে পারে,যেহেতু ৪১ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেইসব স্মৃতির জন্য তাদেরকে আরেকটু সময় দেওয়া কি যথার্থ নয়? বিদ্যমান সমাজ এবং রাজনৈতিক ব্যাবস্থায় আর যাই হোক অন্তত তারাতো একটা শুভ উদ্দোগের সূচনা করে দিতে পেরেছেন।তাই বলেকি তারা মাফিয়াদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলেন?
সবচাইতে বড় আশ্চর্যের বিষয়,প্রিয় তিন কলাম লেখকদের কেউই সুন্দর এই উদ্দোগকে কোনভাবেই শুভ সূচনা কিংবা ধন্যবাদের বিষয় হিসেবে দেখতে পাননাই।উন্নত বিশ্বের আলো-বাতাসে থেকে নিরন্তর সংগ্রামরত হাজারো-লাখো বাংলাদেশীর প্রাণের ভাষা এবং তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়না,কলামের সুন্দর পংক্তিমালা দিয়ে তা কেবল বিবৃত করা যায়।
০৫) তার অর্থ এই নয় যে, আমি সরকারের এই কাজের একনিষ্ট সমর্থক হয়ে গেলাম।আমি শুধু ভালো কাজের প্রশংসা করলাম।প্রথমবারের মতো সুন্দর একটি কাজ করতে গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে,আর থাকাটাই স্বাভাবিক।কিছু কিছু স্বজনপ্রীতিও হতে পারে,আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে যা একেবারে স্বাভাবিক(তার অর্থ এই নয় যে সমর্থন করি),আমাদের কোন মন্ত্রণালয়ে উন্নত বিশ্বেরমতো কোন ডাটাবেজ এখনো তৈরি হয়নি,সকল ইনফরমেশন এখনো সহজলভ্য নয়,এখনো সরকারী দপ্তর সেই ব্রিটিশ আমলের মান্দাতার ধরনের যদিও আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি, তার পরেও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণাল্য় বিশেষকরে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে বেশ ধন্যবাদের প্রাপ্য।অনেক অকর্মের মাঝে এ ক্ষেত্রে তারা বেশ সুন্দর,গোছানো একটা কাজ বেশ সার্থকভাবে করতে পেরেছেন।এক্ষেত্রে আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ আব্দুল মোমেন এবং তার টিম বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন,স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক খাটাখাটি করে যুক্তরাষ্ট্রের এবং অনেক বিদেশীমেহমানদের খোজখবর নিয়ে উপযুক্ত তথ্যাবলী নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে প্রদান করেছেন যা বিশেষ ধন্যবাদের দাবী রাখেন।
স্বীকার করি, এবং সকলেই মানবেন যে, বড় কোন কাজ করতে গেলে ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে,অনেক তথ্য-উপাত্ত ঘাটতি এবং যথাযথভাবে বিন্যস্ত নাও হয়ে থাকতে পারে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক আবেগ এবং বিশেষ ব্যাবস্থা প্রাধান্য পেয়ে সঠিকতার মাত্রায় একটু হলেও কালিমা লেপে দিয়েছে।কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন,এটা চলমান প্রক্রিয়া,সবকিছু একসাথে সঠিকভাবে হয়তো করা সম্ভব হয়নাই। আমরা চাই আগামীতে সরকার এবং সংশ্লিষ্টমন্ত্রণালয় এদিকটা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন,সাথে-সাথে প্রকৃত মুক্তিযোদ্দ্বাদের দেশের এবং দেশের বাইরের সকলের ন্যায্য সম্মান যথাযথভাবে দিবেন,একই সাথে যে সব প্রবাসী বাংলাদেশী শত কষ্টের মাঝেও প্রবাসজীবনে থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্দ্বে জান-মাল-সবকিছুদিয়ে প্রবাসী সরকারকে সহযোগীতা করেছেন,জাতির একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আশা করবো সরকার তাদেরকে সহ সকলের সম্মাননা আগামীতে প্রদান করবেন,পরিকল্পিতভাবে,সুন্দর পরিকল্পণা এবং ব্যাবস্থাপণার মাধ্যমে।ধন্যবাদ আকিদুল,বাহাউদ্দীন,এবং কবি দাউদ হায়দার সহ সকলকে।
5th April 2012,fromuk