ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর বর্বর আচরণের প্রতিবাদে

ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর বর্বর আচরণের প্রতিবাদে

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ

অতি সম্প্রতি ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদের মৌশরদীতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তথা বিএসএফ কর্তৃক অযাচিত ভাবে যে ভাবে বাংলাদেশের সাধারন এক নিরিহ নাগরিককে, সাধারণ এক তথাকথিত গরু চুরির ঘটনায়, সন্দেহ বশত অত্যন্ত অমানবিক,পৈশাচিকভাবে হাত-পা বেধে,বিবস্র করে, গোপনাঙ্গে পেট্রল ঢেলে, অতি আদিম কায়দায় পেঠানোর ভিডিও প্রকাশের নিমিত্তে হতবাক হয়ে যাই,ভেবে অবাক হই বিএসএফ এর মতো একটি সুশৃংখল আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কি করে এতো জঘন্য,জংলী-জানোয়ারের মতো আচরণ করতে পারলো,সমস্ত সভ্যতা,বভ্যতা কে বৃদ্ধ্বাঙ্গুলী দেখিয়ে কি করে সাধারণ নিরিহ নাগরিক,তাও বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী নাগরিকের সাথে এমন আচরণ কি করে করতে পারলো?ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে কি কোন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন কোন ধরনের শৃংখলা একে বারেই লোপ পেয়েছে?বড় অবাক হই,এই কি আমাদের সভ্যতা,এই কি আমাদের মানবিকতা!একজন নিরিহ নাগরিককে নিরেট সন্দেহের বশবর্তি হয়ে ৮,৮ জন জোয়ান মিলে হাত পা বেধে জংলী কায়দায় পেঠাতে হবে,তারপর ঐ দৃশ্য আবার ভিডিওতে ধারণ করে প্রচার করে নিজেদের বাহবা নিতে হবে।

এতদিন শুধু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আর ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের বদৌলতে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের নিরিহ লোকজনের উপর অত্যাচার,নির্যাতনের কথাই শুনে এবং পত্রিকার পাতায় তা পড়ে আসছিলাম।কখনো শুনিনি ভারতের উর্ধতন কোন কর্তৃপক্ষ বিএসএফ এর এই অন্যায় শুটিং,নির্যাতন বন্ধে কোন দুঃখ কিংবা কোন যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন।বরং এর বিপরীতে লোক দেখানো ঐ পতাকা বৈঠক ছাড়া তেমন কোন ব্যাবস্থার কথা কেউ কখনো শুনেছেন কিংবা দেখাছেন বলে মনে হয়না।

সভ্যতার পিঠে চরম ছুরিকাঘাত করে বিএসএফ যে উল্লম্ফন করে বাংলাদেশের নিরিহ নাগরিককে বিবশ্র করে হাত পা বেধে যে ভাবে পিঠিয়েছে,সেই ঘটনা গত ৯ ই ডিসেম্বর ২০১১ ঘটনা,অথচ আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা রিপোর্টে কখনো এর কোন ইঙ্গিত কিংবা এত বড় অমানবিক ঘটনা বিএসএফ করেছে,তার কোথাও কোন উল্লেখনেই।আমাদের সাধারণ নিরিহ নাগরিকরা কি শুধু মার খেয়েই যাবে,এরা কি বার বার ফেলানী হয়েই সংবাদপত্রের শিরোনাম হবে?এদের কি কোন মানবিক মর্যাদা পাওয়ার যে সাধারণ অধিকার,তা থেকেও কি বঞ্চিত হবে?এই সব নিরিহ জনগণকে দেখভাল করার জন্য কি কেউ নাই?সরকারের কি কোন দায় দায়িত্ব নেই?যদি তাই হতো,তা হলে এখন পর্যন্ত এতোদিন হয়ে গেলো,সরকার বাহাদুরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কূটনৈতিক ত্যপরতা গ্রহণ করা হয়েছে বলেতো দৃশ্যমান হয় নাই।

বার-বার প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিনা উস্কানীতে নিরিহ জনগণকে এই রকম নির্মমভাবে হত্যা করবে,নির্যাতন করবে,ধরে নিয়ে যাবে,যা ইচ্ছে তাই করবে,আর আমাদের পররাষ্ঠ্র মন্ত্রণালয় আছে কি জন্য,মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব,এবং মানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় বলবেন কি,কি হচ্ছে আমাদের বর্ডারগুলোতে?আমরা কি আমাদের নাগরিকদের জান-মালের সাধারণ নিরাপত্তাও বিধান করতে পারবোনা?

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেলো অভিযুক্ত ৮ জোয়ানকে বিএসএফ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য।ধন্যবাদ সে জন্য ভারতের কর্তৃপক্ষকে।তবে এটাই একমাত্র ব্যাবস্থা যেন না হয়।কেননা লক্ষ্যণীয় ভাবে দৃশ্যমান যে বিএসএফ এর মধ্যে মুল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে,নতুবা বারেবার এই রকম অমানবিক কর্মকান্ড বিএসএফ কর্তৃক কখনো সাধিত হতোনা, নতুবা বলাই যায় উর্ধতনদের আস্কারা পেয়েই বিএসএফ এই রকম নৃশংস অমানবিক হত্যাযজ্ঞ ও নিপিড়ন মূলক কর্মকান্ড করেই পার পেয়ে যাচ্ছে।আমরা চাই এই অমানবিক,বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রকৃত বিচার এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ।

মনে রাখা দরকার ক্ষেতে খামারে খেটে খাওয়া এই দিন-মজুর জনগণই সর্বকালে সকল দেশেরই সকল উৎপাদন ও উন্নয়নের চাবিকাঠি সচল রেখে চলেছে,যে কারণে আপনি-আমি সকলেই আলোর মুখে অবগাহিত করে চলেছি।কোন সভ্য দেশই তার এই সব সোনার জনগণকে কখনো অপমান এবং নির্যাতন করে মাথা উচু করে দাড়াতে পারেনা।

জয় হোক মানবতার,জয় হোক সভ্যতার।

Salim932@googlemail.com

18th January,2012/UK

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *