সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
প্রিয় সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের পরে আপনি খুনীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।৪৮ ঘন্টা পার হওয়ার পরে সাংবাদিক বন্ধুগন আপনাকে ৪৮ ঘন্টার কথা মনে করিয়ে দিলে বললেন,এই সাংবাদিকদের চাপাচাপিতে আপনি সময় বেধে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন (কি সেলুকাস!)।আর আজকে আপনি জনসমাবেশে থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বললেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাইতে আর কে বড় প্রভাবশালী হতে পারে,তা আপনার জানা নাই।
মাননীয় মন্ত্রী,আপনার মন্ত্রীত্তের তিন বছরের কর্মময় জীবনে এই একটি খাটি কথা যথার্থই বলেছেন,সত্য বলার জন্য আপনাকে সে জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
আমাদের দুর্ভাগ্য,রাস্তা-ঘাটে,ঘরে-বাইরে মানুষ যত্র-তত্র খুন,জখম, মারামারি, কাটাকাটি, সংঘর্ষ,রক্তপাত হওয়ার পরে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়,তখন মন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত সাবলীল ভাবে এক গাল হাসি দিয়ে, লাজ-শরম ভুলে গিয়ে বলেন, দেশের আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক আছে।বিশ্ববিদ্যালয় গুলো চর দখলের মতো ছাত্র নামধারী তথাকথিত ছাত্রনেতাদের দৌরাত্তে প্রকাশ্যে দা,কিরিচ,বন্ধুক হাতে নিয়ে সংঘর্ষ,খুন-খারাবি করে বেড়াচ্ছে,যুবতী ছাত্রীদের সনভ্রম হানি হচ্ছে,ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে,প্রতিদিনই মানুষকে গুম করে হত্যা করা হচ্ছে,আর আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন,সব কিছু ঠিক আছে,শুধু কি তাই,খোদ জাতীয় সংসদে সদম্ভে উনি সাফাই গেয়ে চলছেন,গুম বলে কোন শব্দ দেশে নেই।আশ্চর্য হই,ভেবে অবাক হই জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় মহাজোটের অনেক বাঘা,বাঘা নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মাননীয় মন্ত্রী কি করে অবলিলায় এমন নির্বিঘ্নে বিবৃতি দিতে পারলেন।সবই কি তাহলে সংসদে কুম্ভকর্ণের ঘুমেই কাঠিয়ে দেন!
বিগত জোট সরকারের সময় শিশু হত্যাকান্ডের সংবাদে ত্যকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে নিয়েছেন।কি বিচিত্র আমাদের মন্ত্রী মহোদয়দের দেশ সেবার নমুনা!
সাগর-রুনির খুন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন চলে গেলো,খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে একেবারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সব বাহিনীর উপস্থিতি যেখানে দৃশ্যমান,এতো গোয়েন্দা বাহিনী রাজধানীকে একেবারে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন,কারণ প্রতিদিনই রাজধানীতে জঙ্গী আর বিচিত্র কাহিনীর ঘটনার অপরাধীদের ধরে আনার পর ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স করে জানান দেওয়া,কৈ এতোসব পারফরমেন্স থাকা সত্ত্বেও আপনার এতোসব বাহিনীর কেউই এখন পর্যন্ত সামান্যতম কূল-কিনারা করতে না পারাটাই কি ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত কিংবা প্রভাবশালীর দ্বারা প্রভাবিত করার নমুনা নয় কি?
হত্যাকান্ড ঘটার পর এটা নিয়ে যেখানে চুল-চেরা বিশ্লেষণ করার কথা,সেখানে অযাচিত ব্যাক্তিগত তথ্যাবলী এবং উদ্ভট কাহিনী প্রকাশের ব্যাবস্থা করাটা কি নাটক নয়?
আপনার বাহিনীগুলো পারেনা এমন কিছু কি কারো অজানা আছে?নাটকের পর নাটক জন্ম দেওয়া কি একমাত্র কাজ?
প্রভাবশালীর তদারকি,সেটাতো একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে।কারণ বাংলাদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ জনগন ভালো করেই জানে এই প্রভাবশালী(?) এবং প্রভাবশালীদের কারণেই পচিশ লক্ষ নিরিহ গরীব জনগণ পুজিবাজারে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে এমন পর্যায়ে এসেছে যে,প্রতিনিয়ত কাউকে না কাউকে পরিবার-পরিজনকে গহীন সাগরে ভাসিয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে।জানিনা কাল আবার কোন বেলায়েতের আত্নহত্যার সংবাদ পত্রিকার শিরোনাম হয়ে আসে।বিধবস্ত পুজিবাজারের ভয়াবহ অবস্থার প্রেক্ষিতে গোটা দেশের অর্থনীতিই আজ একেবারে ধবংসের প্রান্তে এসে ঠেকেছে।অথচ দেশ সুন্দর ভাবেই চলতেছে বলে আত্নপ্রসাদে ভুগতেছেন!মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আর কতো আত্নপ্রসাদে থাকবেন?
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার এই প্রভাবশালীর না জানাটাই বলে দেয় সাগর-রুনির হত্যাকান্ডকে আপনারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় আছেন।
সোনামণি মেঘ কে নিয়ে নানা খেলা শুরু হয়ে গেছে।দয়া করে ছোট্র মণি মা মেঘকে নিয়ে কেউ কোন ধরনের খেলা খেলার চেষ্টা করবেননা।মেঘকে মেঘের মতোই থাকতে দিন।যদি পারেন মেঘের পরিপূর্ণ বেড়ে উঠা এবং সুন্দর ঝামেলামুক্ত নিরবচ্ছিন্ন নির্মল পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্ত্বার ব্যাবস্থা এমন করে দিন,যাতে তার দৈনন্দিন চলার পথে,বেড়ে উঠার পথে কোন বাধার সৃষ্টি না হয়।সকল প্রকার প্রশাসনিক জটিলতা,আমলাতান্রিক ঘেড়াটোপ থেকে মেঘমালা এবং পরিবারকে মুক্ত রাখুন।
মাননীয় মন্ত্রী,আমরা জজ মিয়া সহ অসংখ্য নাটকের নিরব স্বাক্ষী,তার মানে এই নয় যে সাগর-রুনি হত্যা কান্ড কে ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করে কেউ পার পেয়ে যাবেন,এটা ভেবে আত্নতুষ্টি নিয়ে থকবেন না প্লিজ।কারণ,বি,এন,পি এবং জামায়াত জোট যা চেষ্টা করেও(আন্দোলন)পারেনি,সাগর-রুনির হত্যাকান্ড নিয়ে কোন ধরনের ঠালবাহানা বিশাল বহরের জোট মহাজোটের গতিকে টালমাটাল করে তুলবে,এতে কোন সন্দেহ নাই।মনে রাখবেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জনগণের পালস ভালো করেই বুঝতেন,জনগণের মনের কথা ভালো করেই পড়তে পারতেন বলেই তিনি বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত মুক্তির দূত,কান্ডারী হতে পেরেছিলেন।মহাজোট সরকার দিনে-দিনে জনগণ থেকে যে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে,জনগণের চাহিদার কথা বেমালুম ভুলে যেতে বসেছে,জনগণ কি চাচ্ছে,তা বুঝতে এই সরকার ব্যার্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে,সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে টালবাহানা,সেই ব্যার্থতাকে আরো প্রকট করে তুলেছে।ভুলে গেলে চলবেনা,পৃথিবীতে যত জনজোয়ার হয়েছে,তার বেশীর ভাগই ছোট্র ঘটানা থেকে ফুসে উঠে জোয়ারে পরিণত হয়ে সব দুয়ে মুছে পরিস্কার করে দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।আমরা চাই সাগর-রুনির হত্যার সুষ্টু এবং যথাযথ বিচার এবং মেঘের সুন্দর,আগামী ভবিষ্যতের পরিপূর্ণ নিশয়তা এবং তার সুন্দর,সাবলীল বিকাশ।
19th February 2012,UK.